শিল্পী-কুশলীদের ঠকালে সার্টিফিকেট পাবে না সিনেমা!
সিনেমা নির্মাণের সঙ্গে জড়িত কোনো পক্ষের পারিশ্রমিক বকেয়া থাকলে ওই সিনেমাকে মুক্তির সার্টিফিকেট দেওয়া হবে না। সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন ২০২৩-এ সে রকম কিছু ধারা যুক্ত করার পরামর্শ প্রস্তুত করেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড।
গতকাল (১৩ নভেম্বর) বুধবার সকালে চলচ্চিত্রের অংশীজনদের নিয়ে তথ্য ভবনে এক কর্মশালায় নতুন সেই প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডের সদস্য অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ। বোর্ডের পক্ষে সেখানে উপস্থিত ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল ও উপ-পরিচালক মো. মঈনউদ্দীন।
একটি সিনেমা নির্মাণের সঙ্গে জড়িত থাকে অনেকগুলো পক্ষ। তাদের মধ্যে পরিচালক, অভিনয়শিল্পী, চিত্রগ্রাহক, মেকআপশিল্পী, লাইটম্যান, প্রোডাকশন বয় থেকে শুরু করে প্রযোজনা সংশ্লিষ্ট কেউ যদি তাদের পারিশ্রমিক বকেয়া নিয়ে আপত্তি তোলেন, তাহলে ওই সিনেমাকে সার্টিফিকেট দেবে না বোর্ড। এ রকম একটি ধারা সার্টিফিকেশন আইনে যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান নওশাবা।
কাজী নওশাবা আহমেদ বলেন, ‘আইনটিকে সংস্কারের মাধ্যমে আমরা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত করতে চাই। প্রথমত কাস্ট অ্যান্ড ক্রুর পারিশ্রমিক, দ্বিতীয়ত প্রাণীকল্যাণ ও তৃতীয়ত তামাক ও প্লাস্টিক ব্যবহারে সচেতনতা। এগুলো নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলব, তারপর সেটাকে আইনে যুক্ত করার অনুরোধ করব।’
তিনি জানান, প্রাণীকল্যাণ বিষয়ে প্রায় বিস্তারিত ব্যবস্থা প্রাণীকল্যাণ আইনে আছে, তবে চলচচ্চিত্র আইনে নেই। সে কারণে চলচ্চিত্র আইনে বিষয়টি যুক্ত করা জরুরি বলে মনে করেন এই অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘‘১৯৪৯ সাল থেকে হলিউডে এ রকম একটি নিয়ম চালু হয়। যে সিনেমায় পশুপাখি দেখানো হবে, সেটার শুটিং সেটে ‘হিউম্যান ইন হলিউড’ নামের একটি ফোরামের প্রতিনিধি হিসেবে পশু-পাখি চিকিৎসক, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ উপস্থিত থাকেন। সিনেমাটি মুক্তির জন্য ওই প্রতিষ্ঠানটির সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। তারাই লিখিত দেয় যে, ছবিতে কোনো প্রাণীর ক্ষতি করা হয়নি। আমরা সে রকম একটি ব্যবস্থা নিতে চাই। শিগগিরই প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে আলাপ করবো।’’
তামাক ও প্লাস্টিক বিষয়ক সচেতনা নিয়ে নওশাবা বলেন, ‘আমরা সচেতনতামূলক একটা ভিডিও বিজ্ঞাপন তৈরি করে দেব। সবগুলো প্ল্যাটফর্মে সিনেমা বা সিরিজের শুরু, মাঝামাঝি ও শেষে সেটি দেখানোর আইন করে দিতে অনুরোধ করব। তা ছাড়া আমরা সিনেমায় আর্ট ডিজাইনে প্লাস্টিকের ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সজাগ থাকারও নির্দেশনা রাখতে চাই।’
সংসদ নেই। এ রকম সময়ে আইনে নতুন ধারা যুক্ত করার প্রক্রিয়া কী? জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আইনে নতুন ধারা যুক্ত করা যাবে। যেটুকু যুক্ত করতে হবে, শুধু ওই ধারাটুকুর একটি অধ্যাদেশ জারি করবেন রাষ্ট্রপতি। তার অনুমোদন ও স্বাক্ষরের মাধ্যমে নতুন ধারা আইন হিসেবে বলবৎ হয়ে যাবে।’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন ২০২৩-এ পারিশ্রমকি বকেয়া সংক্রান্ত ধারা সংযুক্তিটি কেমন হতে পারে? জানতে চাইলে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন, ২০২৩-এর ৫-এর ১২ উপধারার সঙ্গে আরো একটি উপধারা যোগ করা যেতে পারে। সেখানে লেখা যেতে পারে — যদি সার্টিফিকেশনের জন্য আবেদনকৃত কোনো চলচ্চিত্র পরীক্ষণে বোর্ডের নিকট প্রতীয়মান হয় যে, চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা সঙ্গে জড়িত পক্ষগুলো — যথা পরিচালক, অভিনয়শিল্পী, মেকআপশিল্পী, লাইটম্যান, ক্যামেরাম্যান, সম্পাদক বা যে কোনো কলাকুশলী প্রযোজকের সঙ্গে তাদের সম্মানি বিষয়ে চুক্তিকৃত পারিশ্রমিক বকেয়া রয়েছে বলে দাবি করেন এবং তারা যদি সার্টিফিকেশন বোর্ডে অভিযোগ করেন, তাহা হইলে বোর্ড চলচ্চিত্রটির অনুকূলে সার্টিফিকেশন মঞ্জুর প্রত্যাখ্যান করিবে এবং এইরুপ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ১৫ (পনেরো) কার্যদিবসের মধ্যে উহা আবেদনকারীকে লিখিতভাবে অবহিত করিতে হইবে।’
সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণে শুদ্ধাচার অনুশীলন বিষয়ক ওই কর্মশালায় অংশীজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফডিসি, রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি, তামাক বিষয়ে সচেতনা সৃষ্টিতে কাজ করা সংস্থা, ফিল্ম আর্কাইভ, পিআইবির প্রতিনিধিরা।