এই শহরে আজম খান নেই ৯ বছর

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আজম খান, ছবি: সংগৃহীত

আজম খান, ছবি: সংগৃহীত

অন্যসব সকালের মতই শুরু হয়েছিলো ২০১১ সালের আজকের দিনের রোববারের সকালটাও। ঘুম থেকে উঠে সবাই ব্যস্ত যে যার কাজে যেতে। সব কিছুই চলছিল স্বাভাবিক নিয়মে। কিন্তু সকাল ১০টার কিছু সময় পর ঢাকাস্থ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থাকে আসা একটা খবরে যেনো সব কিছু থামকে গেলো; একটা স্বাভাবিক দিন বেদনায় ভার হয়ে উঠলো।

সেই দিন সিএমএইচ থাকে নিশ্চিত করা হয়েছিলো, ১০টা ২০ মিনিটে না ফেরার দেশে চলে গেছেন পপগুরু আজম খান। সেই হিসাবে এই শহরে আজম খান নেই ৯ বছর হলো আজ।

বিজ্ঞাপন

পুরো নাম মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান হলেও বাংলাদেশের সংগীত জগতে পপগুরু নামে পরিচিত ছিলেন তিনি। সঙ্গীতশিল্পীর বাইরে আজম খানের আরও বেশ কিছু পরিচয় আছে। তিনি ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা, অভিনয়ও করেছেন। এছাড়া খেলাধুলায় তার বেশ আগ্রহও ছিলো।

আজম খান, ছবি: সংগৃহীত

১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আজিমপুর সরকারি কলোনির ১০নং ভবনে জন্ম নেওয়া আজম খানকে বাংলাদেশের পপ ও ব্যান্ড সঙ্গীতের একজন অগ্রপথিক বা গুরু হিসেবে গণ্য করা হয়। তাঁর গানের বিশেষত্ব ছিল পশ্চিমা ধাঁচের পপগানে দেশজ বিষয়ের সংযোজন ও পরিবেশনার স্বতন্ত্র রীতি।

বিজ্ঞাপন

১৯৭২ সালে আজম খান তাঁর বন্ধুদের নিয়ে ‘উচ্চারণ’ ব্যান্ড গঠন করেন। তাঁর ব্যান্ড উচ্চারণ এবং আখন্দ (লাকী আখন্দ ও হ্যাপী আখন্দ) ভ্রাতৃদ্বয় দেশব্যাপী সঙ্গীতের জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। বন্ধু নিলু আর মনসুরকে গিটারে, সাদেক ড্রামে আর নিজেকে প্রধান ভোকালিস্ট করে অনুষ্ঠান করেছেন। ১৯৭২ সালে বিটিভিতে সেই অনুষ্ঠানের ‘এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে ও চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দু’টি সরাসরি প্রচার হলে ব্যাপক প্রশংসা আর তুমুল জনপ্রিয়তা পায় তাঁদের গানের দল। ১৯৭৪-১৯৭৫ সালের দিকে আজম খান বাংলাদেশ টেলিভিশনে বাংলাদেশ (রেললাইনের ঐ বস্তিতে) শিরোনামের গান গেয়ে হৈ-চৈ ফেলে দেন।

মঞ্চে গাইছেন আজম খান, ছবি: সংগৃহীত

আজম খানের জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘আমি যারে চাইরে’, ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’, ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘একসিডেন্ট’, ‘অনামিকা’, ‘অভিমানী’, ‘আসি আসি বলে’, ‘হাইকোর্টের মাজারে’, ‘পাপড়ি’, ‘বাধা দিও না’, ‘যে মেয়ে চোখে দেখে না’ ইত্যাদি।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময়ে আজম খান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ১৯৭১ সালে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন আজম খান। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ২ নম্বর সেক্টরে পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

সঙ্গীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার আজম খানকে মরণোত্তর দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করা হয়েছে।

পপসম্রাট আজম খান দীর্ঘদিন দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধির সাথে লড়াই করে ২০১১ সালের আজকের দিনে আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। এমন দিনে তাঁকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে বার্তা২৪.কম।