পার্বত্য চট্টগ্রামের কোটা সুবিধা অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ মানুষের প্রাপ্য



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
পার্বত্য চট্টগ্রামের কোটা সুবিধা অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ মানুষের প্রাপ্য

পার্বত্য চট্টগ্রামের কোটা সুবিধা অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ মানুষের প্রাপ্য

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণের মতোই পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলো উচ্চশিক্ষা এবং চাকরি ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটাব্যবস্থার সুবিধা পেয়ে জীবনমান ও আর্থ-সামাজিক সূচকে অভূতপূর্ব অগ্রগতি করেছে। তবে সব নৃগোষ্ঠী সমভাবে কোটার সুবিধা পেয়ে নিজেদের ভাগ্য বদলাতে পারছে না এবং কিছু সম্প্রদায়ের দ্বারা একচ্ছত্রভাবে কোটা সুবিধা ব্যবহার করার মতো পরিস্থিতি চলছে। এতে পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বৈষম্য ও ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ছে বঞ্চিত উপজাতি গোষ্ঠীগুলো ও পার্বত্য বাঙালিদের মধ্যে ক্ষোভ, অসাম্য ও বঞ্চনা।

কয়েকটি গবেষণায় প্রাপ্ত্য তথ্যে জানা যায়, প্রধান কিছু উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আরও শক্তিশালী হয়ে অপরাপর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে পশ্চাৎপদ ও প্রান্তিক পরিস্থিতিতে ঠেলে দিচ্ছে, যা সুষম উন্নয়ন ও সব নাগরিকের সম-অধিকারের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে সামাজিক ও গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব ও বিভেদের অন্যতম মূল কারণ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সংবিধানের ২৯-এর ৩ (ক) অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশের উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়গুলোকে অনগ্রসর শ্রেণি হিসেবে বিবেচনা করে ১৯৮৫ সালে সরকারি চাকরিতে তাদের জন্য শতকরা পাঁচ ভাগ কোটা সংরক্ষণের বিধান রাখা হয়। এ ছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে উপজাতি কোটা রাখা হয়। ২০১৫ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বিধি-১ শাখা কর্তৃক সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সার্কুলারে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিসে নিয়োগের ক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত কোটার ক্ষেত্রে ‘উপজাতীয়’ শব্দ ব্যবহারের পরিবর্তে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ হিসেবে প্রতিস্থাপন করা হয়। উপরন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সরকারি চাকরি এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা বিদ্যমান থাকার পাশাপাশি ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সদস্যগণ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়ে থাকেন।

কিন্তু তথ্য-পরিসংখ্যানগত বাস্তবতা এই যে, উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য চাকরি ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রদত্ত কোটা সুবিধার দ্বারা পার্বত্য চট্টগ্রামের সব নৃগোষ্ঠী সমভাবে উপকৃত হচ্ছে না। কোটার সিংহভাগ সুবিধা এককভাবে চাকমা ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মারমা ও ত্রিপুরা উপজাতিরা পেয়ে থাকে আর বাকি ১০-১১টি উপজাতি বলতে গেলে বঞ্চিত হচ্ছে। সবচেয়ে বৈষম্যমূলক চিত্র এটাই যে, একই পাহাড়ের দুর্গম ও বিরূপ পরিস্থিতিতে বসবাস করলেও পার্বত্য বাঙালি জনগোষ্ঠী কোটা সুবিধাবঞ্চিত হয়ে শিক্ষা, চাকরি, আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদায় চরমভাবে পিছিয়ে পড়ছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে জনসংখ্যার অর্ধেক হয়েও পরিসংখ্যানগত বাস্তবতায় তারাই অবহেলিত, প্রান্তিক ও দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হচ্ছে বলে অভিযোগ করছে।

২০১৬ সালে খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট কর্তৃক পরিচালিত গবেষক সুগত চাকমার গবেষণায় বলা হয়, খাগড়াছড়ি জেলায় বসবাসকারী চাকমা জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থা, শিক্ষার হার ও পেশাগত ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। কোনো কোনো চাকমা গ্রামের সর্বোচ্চ শতকরা ৮০ থেকে সর্বনিম্ন শতকরা ৪০ ভাগ লোক শিক্ষিত। শিক্ষিত চাকমাদের একটি বড় অংশ বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি সংস্থা, ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে চাকরি করছেন। উদাহরণস্বরূপ, খাগড়াছড়ি জেলার ৯টি কলেজে চাকমা জনগোষ্ঠীর ৭০ জন শিক্ষকতায় নিয়োজিত। জেলায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে চাকমা নৃগোষ্ঠীর ৩০ চিকিৎসক কর্মরত। ৯টি ব্যাংকের শাখায় ৬৮ চাকমা কর্মরত, যার মধ্যে ৪৬ জন পুরুষ এবং ২২ জন নারী। স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন আর্থিক সেক্টরেও চাকমারা নেতৃস্থানীয় অবস্থানের অধিকারী। চাকমাদের উল্লেখযোগ্য উন্নতি চাকরি ও উচ্চশিক্ষায় কোটাব্যবস্থার সুফল।

তবে শহরে বসবাসকারী চাকমারা এসব ক্ষেত্রে যত সুবিধা পাচ্ছে, গ্রামের চাকমা সম্প্রদায় তা পাচ্ছে না। অনুরূপভাবে চাকমাদের উন্নতির নিরিখে পার্বত্য বাঙালি সম্প্রদায় এবং বাকি ১২-১৩টি উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অনেক পেছনে। এ কারণে বাঙালিরা কোটা ও চাকরিসহ অধিকার ও সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে সম-অধিকারের দাবি করছে। অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সম্প্রদায়, যেমন, বম, খুমি, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, মং, চাক প্রভৃতি কোটা ও চাকরির সুবিধার ক্ষেত্রে একচ্ছত্র অগ্রাধিকার ও সুবিধার মাধ্যমে অতি অগ্রসর চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গা নৃগোষ্ঠীর সমপর্যায়ে আসার প্রয়োজনে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার ও তাদের অনুকূলে সমন্বয়সাধনের দাবি করেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে বিগত ১০ বছরের (২০১১-২০২১) সময়কালে উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের পরিসংখ্যানে চাকমাসহ কয়েকটি সম্প্রদায়ের একচ্ছত্র প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়, যা থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে ‘অভ্যন্তরীণ বঞ্চনা ও আধিপত্য’র বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়।

বিগত ১০ বছরের পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের অর্ধশতাধিক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত মোট ৩১০৮টি আসনের অর্ধেকের চেয়ে বেশি (শতকরা ৫৬ ভাগ) এককভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা শিক্ষার্থীরা অধিকার করে। অথচ চাকমারা বাংলাদেশের মোট ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জনসংখ্যার শতকরা ২৮ ভাগ। অনুরূপভাবে, মারমা সম্প্রদায় মোট ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শতকরা ১৫ ভাগ এবং তারা মোট সংরক্ষিত কোটা আসনের শতকরা ১৪ ভাগ, ত্রিপুরা সম্প্রদায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জনসংখ্যার শতকরা ৮ ভাগ এবং কোটা আসনের শতকরা ৭ ভাগ আসনে ভর্তির সুযোগ গ্রহণ করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে কোটা সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য লক্ষ করা যায়। সাঁওতাল সম্প্রদায় মোট উপজাতি জনসংখ্যার শতকরা ৯ ভাগ হলেও শতকরা ৩ ভাগ এবং মনিপুরী সম্প্রদায় শতকরা ৭ ভাগ হয়েও কোটার শতকরা ২ ভাগ সুবিধা লাভ করতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে আরও অর্ধশত নৃগোষ্ঠী মিলিতভাবে কোটার মাত্র শতকরা ১৮ ভাগ সুবিধা নিতে পেরেছে, যদিও তাদের মিলিত জনসংখ্যা মোট উপজাতি জনসংখ্যার শতকরা ৩৩ ভাগ।

মূলত রাজনৈতিক প্রভাব, যোগাযোগ, নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি পক্ষপাত ও আঞ্চলিকতার মাধ্যমে চাকমা সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা কোটার সিংহভাগ সুযোগ গ্রহণ করছে। তাদের মধ্যে শিক্ষার হার বেশি হওয়ায় উচ্চশিক্ষায় বা চাকরিতে চাকমা আবেদনকারীর সংখ্যাও অধিক হয়। দেশের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগে থেকেই বহু চাকমা শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত, যারা চাকমা সম্প্রদায়ের ভর্তিচ্ছুদের দিকনির্দেশনা ছাড়াও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে। বিভিন্ন তথ্যও তারা দ্রুত নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে পাঠিয়ে দিতে পারে। কিন্তু অন্যান্য উপজাতি সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা এমন সুযোগ না পেয়ে কোটার সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ছে। অনেক সময় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা উপজাতিসংক্রান্ত সনদ ও কাগজপত্র পেতে বিপত্তির সম্মুখীন হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন অফিসের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রাধান্য থাকায় তারা নিজ নিজ সম্প্রদায়কে সহযোগিতা ও অন্যান্য সম্প্রদায়কে অসহযোগিতা করে। কখনো কখনো অন্য নৃগোষ্ঠীর সম্ভাবনাময় ভর্তিচ্ছুদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে ও ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়। ফলে অন্য নৃগোষ্ঠী সদস্য পাওয়া যায় না। তখন তদবিরের মাধ্যমে শূন্য কোটা আসনে চাকমা শিক্ষার্থীরা নিজেদের ভর্তি নিশ্চিত করে।

একটি-দুটি নৃগোষ্ঠীর অতিরিক্ত সুবিধাপ্রাপ্তির কারণে অন্য নৃগোষ্ঠীগুলো পিছিয়ে পড়ছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে বলে গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীগুলো শিক্ষা ও পেশার ন্যায্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় সরকারের উন্নয়ন নীতি ও পরিকল্পনার সুফল সবার জন্য সমভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে না বলেও তারা মনে করেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের গড় শিক্ষার হার শতকরা ৭২.৯ ভাগ হলেও প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদে বঞ্চিত থাকার অভিযোগ উত্থাপনকারী চাকমাদের শিক্ষার হার শতকরা ৭৩ ভাগ। এই অগ্রগতি বঞ্চনা ও পশ্চাৎপদতার পরিচায়ক নয়। শিক্ষার কারণে পেশা ও কর্মক্ষেত্রে একচ্ছত্রভাবে চাকমা নৃগোষ্ঠীর প্রাধান্য বিরাজমান।

অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্য নৃগোষ্ঠীগুলোর শিক্ষার হার মাত্র শতকরা ৪৫ ভাগ, যা গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সুযোগের তারতম্য, ভারসাম্যহীনতা ও অভ্যন্তরীণ বৈষম্যের প্রমাণবহ। যার আরেকটি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী পার্বত্য বাঙালি সম্প্রদায়। কোটা সুবিধা ও অন্যান্য সাংবিধানিক সম-অধিকার না পাওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের কিছু বেশি হওয়ার পরেও তাদের মধ্যে শিক্ষার হার মাত্র শতকরা ২৩ ভাগ।

এতে শুধু সম্প্রদায় ও জাতিগত বৈষম্যই হচ্ছে না, দেশের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নাগরিককে যোগ্য মানবসম্পদে পরিণত করে দেশ ও জাতি গঠনের কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ফলে জাতির বিরাট ক্ষতি হচ্ছে। এ কারণে কোটাব্যবস্থার সামগ্রিক সুফল একতরফাভাবে নেতৃস্থানীয় গোষ্ঠীর কব্জা থেকে জনসংখ্যার অনুপাতে এবং সম্প্রদায়গত পশ্চাৎপদতার নিরিখে সুবিধাবঞ্চিত উপজাতি ও পার্বত্য বাঙালি সম্প্রদায়কে দেওয়ার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠছে। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামের টেকসই ও সমন্বিত উন্নয়ন হবে এবং সম্প্রদায়গত বৈষম্য ও অসন্তোষ দূর হবে।

উল্লেখ্য, শিক্ষাগত পশ্চাৎপদতার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৩-১৪টি নৃগোষ্ঠীর অধিকাংশই উচ্চশিক্ষা ও পেশা গ্রহণের সুযোগের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে নিজেদের দাবি ও বক্তব্য তুলে ধরার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতির একতরফা সুযোগ নিচ্ছে চাকমা ও আরও দুই-একটি নৃগোষ্ঠী, যারা তাদের গোষ্ঠীগত স্বার্থ এবং নেত্বত্ব-কর্তৃত্বকে ‘সমগ্র নৃগোষ্ঠীর দাবি’র নামে চাপিয়ে দিচ্ছে। যদিও এসব রাজনৈতিক তৎপরতায় অপরাপর নৃগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ও বক্তব্যের কোনো সুযোগ ও স্বীকৃতি নেই। পার্বত্য উপজাতি দলগুলোর সাংগঠনিক কাঠামো ও নেতৃত্বের শতকরা ৯০-৯৫ ভাগই চাকমা নিয়ন্ত্রণাধীন।

ফলে ‘জুম্মু জাতীয়তাবাদ’কে প্রকারান্তরে ‘চাকমা জাতীয়তাবাদ’ বলা হয়। যেমনভাবে অতীতে পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘জাতিগত সংঘাত’কে ‘চাকমাদের সশস্ত্র সংঘাত’ নামে আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও নানা গবেষণায় নামকরণ করা হয়। বর্তমানেও উপজাতি তথা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নামে পরিচালিত নানা আন্দোলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল ও জনগণের ওপর ‘চাকমা প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক প্রচেষ্টা’ স্পষ্ট, যাকে পাহাড়ের সাধারণ মানুষ ‘চাকমা গোষ্ঠীগত আধিপত্যবাদ’ নামে চিহ্নিত করে, যার আশু অবসান হওয়া প্রয়োজন এবং পাহাড়ে সব শ্রেণি, পেশা, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য সম-অধিকার ও সমসুযোগ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

গবেষকগণ মনে করেন, এ ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামে জনসংখ্যা অনুপাতে এবং চাহিদা ও পশ্চাৎপদতার নিরিখে প্রকৃত অবহেলিত ও বঞ্চিতদের শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে এগিয়ে আনার প্রয়োজনে কোটা সুবিধার আইনগত পরিবর্তন করাও আবশ্যক।

একটি বা দুটি গোষ্ঠী কোটা সুবিধার সিংহভাগ পাবে আর অন্যরা বঞ্চিত হবে তা বাংলাদেশের সব নাগরিকের অধিকার রক্ষা, বৈষম্য নিরসন ও সুযোগের সমতা নিশ্চিতের মর্মার্থকে ব্যাহত করার মাধ্যমে বরং নতুন অসন্তোষ ও বৈষম্যের সৃষ্টি করে। ফলে উচ্চশিক্ষা ও চাকরিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটার ভালোমন্দ দিকগুলো খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা দরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে চরমভাবে অবহেলিত, পশ্চাৎপদ ও বঞ্চিত পার্বত্য-বাঙালিদেরও কোটার আওতায় আনা একান্ত প্রয়োজন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গবেষণাকারী ড. মাহের ইসলাম বার্তা২৪.কম'কে বলেন, "সামগ্রিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের সব নাগরিকের জন্যই মৌলিক অধিকার, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক সুযোগসহ সাংবিধানিক সব অধিকার সমভাবে ও বৈষম্যহীনভাবে প্রয়োগ করার আইনগত কাঠামো নিশ্চিত করা পাহাড়ের স্থায়ী শান্তি, সামাজিক সম্প্রীতি ও টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে অতীব জরুরি।"

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গ্রন্থকার ও গবেষক প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ বলেন, "বাংলাদেশের সব নাগরিকের অধিকার রক্ষা, বৈষম্য নিরসন ও সুযোগের সমতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে নারীসমাজ, অনগ্রসর নাগরিক গোষ্ঠী, দুর্গম এলাকার জনগণের জন্য শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে নির্ধারিত যোগ্যতার মাপকাঠি কিছুটা শিথিল করে এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন সংরক্ষিত রেখে বিশেষ বিধান তথা কোটাব্যবস্থা চালু রয়েছে। ১৯৭২ সালে জাতির সূর্যসন্তান, বীরমুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে সর্বপ্রথম কোটাব্যবস্থা চালু করা হলেও ক্রমান্বয়ে দেশের অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে উন্নত ও অগ্রসর করার প্রয়োজনে কোটার পরিধি বৃদ্ধি করা হয়, যার আওতায় রয়েছে উপজাতি তথা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সদস্যরা। কোটাব্যবস্থার সুবিধা অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ মানুষের প্রাপ্য, তা যথাযথভাবে নিশ্চিত করা জরুরি।"

   

এরিয়া-৫১, মানুষের তৈরি অজানা রহস্য!



মোঃ শরীফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
এরিয়া-৫১

এরিয়া-৫১

  • Font increase
  • Font Decrease

বিজ্ঞানপ্রেমী অথচ এরিয়া-৫১ এর নাম শোনেননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যারা বিজ্ঞান ভালোবাসেন কিংবা কল্পবিজ্ঞান যাদের আকর্ষণের বিষয় তাদের কাছে রহস্যে ঘেরা এই স্থানটি সম্পর্কে জানার আগ্রহের শেষ নেই। 

আমেরিকার নেভাডা স্টেটের দক্ষিণে, লাস ভেগাস থেকে ১৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে পাহাড়ঘেরা মরুভূমির মধ্যে আছে নেভাদা টেস্ট অ্যান্ড ট্রেনিং রেঞ্জ। আধুনিক মারণাস্ত্রের সবচেয়ে বড় পরীক্ষাগার। প্রচলিত তথ্যমতে এই স্থানটিতে আমেরিকা ৫’শরও বেশি পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।

আমেরিকার ভূখণ্ডে থাকা সবচেয়ে সুরক্ষিত কিছু জায়গা যেমন- পেন্টাগন, হোয়াইট হাউস, নাসার সদর দপ্তর ও বিভিন্ন লঞ্চ প্যাডেও অনুমতি নিয়ে সাধারণ মানুষ প্রবেশ করতে পারলেও এরিয়া-৫১ এর আশপাশে মিডিয়া বা জনসাধারণের প্রবেশাধিকার একেবারেই নিষিদ্ধ। 

অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে নিষেধ থাকা সত্ত্বেও জায়গাটিতে নেই কোনো সীমানা প্রাচীর! তবে চারদিকে খোলা বলেই এই জায়গায় মন চাইলেই প্রবেশ করতে পারবেন, সে আশার গুড়ে বালি। কঠোর সিকিউরিটি ব্যবস্থা, গিরগিটির মতো ছড়িয়ে থাকা হাজারো স্বশস্ত্র সৈনিক, অত্যাধুনিক ড্রোন এবং সিসি ক্যামেরা দ্বারা সার্বক্ষণিক নজরদারি, মোশন, সাউন্ড, লেজার ও স্মেল ডিটেক্টরসহ রয়েছে অদৃশ্যমান সিকিউরিটি ব্যবস্থাও। তাই তো নোটিশ টাঙ্গিয়ে বড় করে লিখে দেওয়া হয়েছে, Use of deadly force Authorized, যা জানান দেয়, নিষেধ সত্ত্বেও প্রবেশের চেষ্টা করলে মৃত্যু নিশ্চিত।

কিন্তু কেন এই নিরাপত্তা, কী আছে এর ভেতরে? এমন কী গবেষণা চলছে সেখানে? এরকম হাজারো প্রশ্ন আজো দানা বেঁধেছে মানুষের মনে। তবে সে প্রশ্নের উত্তর জানা কিংবা জানার চেষ্টা করা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার সামিল!

স্থানটিকে ঘিরে মার্কিন সেনাদের অস্বাভাবিক মাত্রার সুরক্ষা ব্যবস্থা বিশ্ব জুড়ে সন্দেহ এবং কৌতূহল বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেকে ভেবে থাকেন, এখানে মার্কিন সরকার বিশ্বব্যাপি নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে বিশেষভাবে প্রচলিত আছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে থাকা প্রাণের সন্ধানে কাজ করছে এ স্থানটি। এলিয়েনদের যাতায়াতের গুজবসহ রয়েছে হাজারো কল্পনা-জল্পনা। এছাড়া শোনা যায় বিভিন্ন ধরণের এয়ারক্রাফট ও ওয়েপন সিস্টেম নিয়েই পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হয় এ জায়গাটিতে। 

অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট ও ওয়েপন নিয়েই গবেষণা হয় এরিয়া-৫১ এ

১৯৮৯ সালের বব লাজার নামের একজন বিজ্ঞানী এরিয়া-৫১ এ কাজ করছিলেন বলে দাবি করেন। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া তার সাক্ষাৎকারে স্থানটিতে এলিয়েনদের সাথে যোগাযোগ, ইউএফও যাতায়াতসহ অনেক রহস্যজনক তথ্য উঠে আসে। তবে সেসবের কোনো সত্যতা আজ পর্যন্ত মেলেনি।

চাঁদে অবতরণ নিয়ে মানুষের মনে যে সন্দেহ তাকে দৃঢ় করতে কাজ করে এই স্থানটি। অনেকে মনে করেন এরিয়া-৫১ এ শুটিং করে নিল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিনের চাঁদে অবতরণের দৃশ্য ধারণ করা হয়েছিল! সেসব ঘটনা, মিথ্যা হোক কিংবা সত্য, এরিয়া-৫১ আজো রয়ে গেছে মানুষের জানার বাইরে। 

মানুষ আশায় আছে, কোনো একদিন হুট করে মুখ খুলবে আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। জানাবে দীর্ঘ দিন ধরে চলা রহস্য গড়া এই স্থানে চলমান কীর্তিকালাপের কথা। দূর হবে মানুষের মনের শত প্রশ্ন আর জল্পনা-কল্পনা। ততদিন আড়ালেই থাকুক এরিয়া-৫১। নিজের কল্পনাশক্তি কাজে লাগিয়ে লেখকরা রচনা করুক হাজারো বই, নির্মাতারা তৈরি করুক শত সিনামা।

;

কুকুরগুলোকে তীরে পৌঁছে দিল কুমির!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মানুষের মধ্যে যেমন একজনের প্রতি আরেকজনের সহানুভতি রয়েছে, ঠিক তেমনি প্রাণীদের মধ্যেও একজনের প্রতি অন্যজনের সহানুভূতি দেখানোর উদাহরণ রয়েছে। এবার একটি কুকুরে প্রতি কুমিরের সহানুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। নদীতে আটকা পড়া কুকুরটিকে আক্রমণ করার পরিবর্তে বাঁচিয়ে দিয়েছে। ভারতের মহারাষ্ট্রে সাবিত্রী নদীতে এমন ঘটনা ঘটে। স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য জানা যায়। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, অল্প বয়সী একটি কুকুরকে একদল হিংস্র কুকুর তাড়া করে। কুকুরটি বাঁচার জন্য ভারতের মহারাষ্ট্রের সাবিত্রী নদীতে আশ্রয় নেয়। সেই নদীতে ছিলো তিনটি বিশাল আকৃতির কুমির। কিন্তু, আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে ওই কুমিরগুলো কুকুরটিকে না খেয়ে বরং নিরাপদে তীরে পৌঁছে দেয়। 

তবে বিজ্ঞানীরা বলছে, কুমিরদের ‘সুবিধাবাদী শিকারী’ হওয়ার জন্য খ্যাতি রয়েছে। কিন্তু, কুমিরের এমন কাজ কুকুর এবং কুমির একই প্রজাতির হওয়ায় কুকুরের প্রতি কুমিরের এমন আবেগিক সহানুভূতি প্রকাশ পেয়েছে।   

থ্রেটেনড ট্যাক্সা জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আশ্রয় নেয়া কুকুরটি ভেসে থাকা তিনটি কুমিরকে দেখতে পায়নি। তবে, কুমিরগুলো শিকার বলে কুকুরটির কাছাকাছি যেতে শুরু করে। 

কুমিরদের ক্ষুধা না থাকার কারণে এমন সহানুভূতি প্রকাশ পেতে পারে বলেও জার্নালে জানানো হয়। সরীসৃপদের এই ধরনের মানসিক অবস্থার উপর খুব কম গবেষণা করা হয়েছে বলেও জানানো হয়।

ভারতীয় বন্যপ্রাণী ইনস্টিটিউট বলছে, সুবিধাবাদী শিকারী হিসেবে কুমিরের খ্যাতি রয়েছে। কুমিরগুলো প্রায় ১৬ ফুটের মত লম্বা এবং ওজন ৪৫০ কেজি। যা অনায়েসেই কুকুরটিকে গ্রাস করতে পারতো। কিন্তু, সেটা না করে কুকুরের প্রতি কুমিরের আবেগিক সহানুভূতি প্রকাশ পেয়েছে।

;

রাস্তায় জমা পানিতে হারানো শৈশব খুঁজে পেয়েছে তারা



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
জমে থাকা পানি শৈশবের উল্লাস এনে দিয়েছে তাদের মনে

জমে থাকা পানি শৈশবের উল্লাস এনে দিয়েছে তাদের মনে

  • Font increase
  • Font Decrease

টানা বৃষ্টিতে রাস্তায় জমেছে পানি। দুর্ভোগের শেষ নেই সাধারণ মানুষের। রিকশা বা ভ্যানে চড়ে কোমর সমান পানি ডিঙ্গিয়ে যাতায়াত করছে মানুষ। পানির উপর ভাসছে ড্রেন আর রাস্তার ময়লা। ময়লা-আবর্জনার সাথে রাস্তার সেই নোংরা পানিতে আপন মনে ভাসতে দেখা যায় দুই শিশুকে। এ যেন শৈশবের উল্লাস এনে দিয়েছে তাদের মনে। ভেসে আসা ড্রাম আর ককশিটকে পুঁজি করে আপন মনে খুনসুটিতে মেতেছে তারা।

জমা পানিতে উল্লাসে মেতেছে তারা

বলছি রাজধানীর নিউ মার্কেটের সামনে রাস্তায় জমে থাকা নোংরা পানিতে সাঁতার কাটা শিশু রাবেয়া ও মিমের কথা। ইট পাথরের শহরে বসবাসকারী শিশুরা জানে না দুপুরবেলা পুকুরে লাফালাফি করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানিতে সাঁতারের আনন্দ। তাই তো বছরের রেকর্ড গড়া এই বৃষ্টি যেন আনন্দের জোয়ার বইয়ে দিয়েছে তাদের মনে। সুযোগ পেয়ে রাস্তায় জমে থাকা নোংরা পানিতেই সাঁতারের সখ মেটাচ্ছিলো তারা।

খুনসুটির ব্যস্ততার মাঝে কথা হয় রাবেয়া ও মিমের সাথে। রাবেয়া জানায়, নিউ মার্কেট এলাকায় মায়ের সাথে থাকে সে। মিম তার প্রতিবেশি। এক সাথেই খেলে তারা। গ্রামে থাকতে সাঁতার শিখেছিল রাবেয়া। মায়ের সাথে শহরের এসে আর সাঁতার কাটতে পারেনি। তাই মিমকে রাস্তায় জমে থাকা পানিতে সাঁতার শিখিয়ে একেই সাথে সাঁতার কাটছে তারা।

টানা বৃষ্টিতে রাস্তায় জমেছে পানি, দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ

নোংরা পানিতে সাঁতার কাটা দেখে অনেকেই শিশু রাবেয়া ও মিমের দিকে চোখ বাঁকা করে তাকালেও বাস্তবতা ভিন্ন। ইট পাথরের শহরের সুইমিং পুল কিংবা টাকা দিয়ে সাঁতার কাটার সুযোগ নেই তাদের। তাই ইচ্ছা যখন সাধ্যের কাছে জিম্মি তখন রাবেয়া মিমদের সাঁতার এই শহরের বড় সৌন্দর্যই বটে।

;

চুলের কারণে দু'বার স্কুল থেকে বরখাস্ত



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য মানুষ চুলের কতই না স্টাইল করে থাকেন। কিন্তু, সেই স্টাইল করা চুলই যুক্তরাষ্ট্রের এক তরুণের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল। চুলের স্টাইলের জন্য তাকে স্কুল থেকে বরখাস্ত হতে হয়েছে, তাও একবার নয়, দুইবার। বরখাস্ত হওয়া ছাত্রটির নাম ড্যারিল জর্জ (১৭)। সে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের মন্ট বেলভিউয়ের বারবারস হিল হাই স্কুলে পড়াশোনা করে। সিএনএন, এনবিসির বরাত দিয়ে এমন খবর প্রকাশ করেছে এনডিটিভি।

এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের মন্ট বেলভিউয়ের বারবারস হিল হাই স্কুলের ছাত্র ড্যারিল জর্জকে চুলের স্টাইলের (ড্রেডলকস স্টাইল) জন্য দুইবার স্কুল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এতে বিষয়টি নিয়ে নানা মহলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এই স্টাইলে প্রথমবার স্কুলে যাওয়ার পর তাকে দুই সপ্তাহের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছিল। দু’সপ্তাহের শাস্তি শেষ করে সে আবার চুলের একই স্টাইল করে স্কুলে আসে। পরে তাকে দ্বিতীয়বারের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনায় জর্জের মা দারেশা জর্জ অনেক কেঁদেছিলেন বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়।   

জর্জের মা দারেশা জর্জ সিএনএনকে জানান, আমার ছেলেকে শিক্ষার সাথে অপ্রাসঙ্গিক কিছুর জন্য শাস্তি পেতে হয়েছে। সে এই পরিস্থিতির কারণে হতাশা বোধ করছে।

দারেশা জর্জ আরও জানান, আমাদের পূর্বপুরুষ সবার ড্রেডলক স্টাইল ছিল এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই নিয়ম সবাই মেনে আসছে। আমাদের কাছে চুলের এই স্টাইলটির সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। ড্রেডলক স্টাইল আমাদের শক্তি এটাই আমাদের শিকড়।

সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, স্কুল কর্তৃপক্ষ ড্যারিলকে বলেছিল ছোট ছোট বেনি বাঁধা চুল তার চোখের নিচে, কানের নিচে এসে পড়ে, যা তাদের প্রতিষ্ঠানের পোশাকবিধির লঙ্ঘন।  

দারেশা এনবিসি নিউজকে বলেন, চুলের কারণে ড্যারিলকে স্কুলে শাস্তি দেয়া হয়েছে। সেই শাস্তির কথা শুনে আমি নিজেই কান্না করি। দারেশা বলেন, একটি ছোট্ট ঘরে বেঞ্চে আট ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। এটি খুবই অস্বস্তিকর। প্রতিদিন সে বাড়িতে এসে বলে, দীর্ঘ সময় টুলে বসে থাকার কারণে তার পিঠে খুব ব্যথা হয়।

দারেশা জর্জ এই ঘটনার জন্য আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে বলেও গণমাধ্যমে জানানো হয়।

;