উপনিবেশিক শাসনামলে বাংলা ভাষায় ইতিহাসচর্চা



ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

 

ইতিহাসচর্চার ঐতিহ্য হাজার বছরের পুরনো হলেও বাংলা ভাষায় ইতিহাসচর্চার সূত্রপাত খুব বেশী দিনের নয়। উপনিবেশিক শাসনামলেই বাংলা ইতিহাসচর্চার ধারা শুরু হয়েছিল। অষ্টাদশ শতকে কোলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠার পর ¬¬¬¬¬গবেষকদের হাতে যখন ভারত বিদ্যার জ্ঞান বিস্ফুরিত হচ্ছিল, তখন থেকেই ইতিহাস চর্চার ধারা শুরু হয়। কোম্পানির স্বার্থে লিখিত এসকল বুদ্ধিজীবীর লেখনীর সূত্র ধরে বাঙালি মনীষিরাও এগিয়ে আসেন। প্রথম যিনি  ইতিহাস রচনায় বা বাংলা ভাষায় ইতিহাস নিবন্ধ রচনা করেছিলেন তিনি ইতিহাসের ছাত্র নন। কোম্পানীর কর্মচারীদের ফার্সী ভাষা শেখানোর দায়িত্বে নিয়োজিত রামরাম বসু বাংলা ভাষায় ইতিহাস লেখা শুরু করেন । ১৮০১ সালে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে তাঁর লেখা প্রতাপাদিত্য চরিত বইটি প্রকাশিত হয়। এরপর স্থানীয় ব্যাক্তদের চরিত্র বা জীবনী নিয়ে লেখা আরো দু একটি বই দেখা যায়। সাহিত্যিকদের হাত ধরে বাংলা ভাষায় ইতিহাসচর্চার ধারা শুরু হয়েছিল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের হাতে। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুরের প্রেস থেকে জন মার্শম্যানের বাংলায় লেখা ভারতবর্ষের ইতিহাস বইটি প্রকাশিত হয়েছিল। বইটির শিরোনামে লেখা হয়েছিল ‘ ভারতবর্ষের ইতিহাস অর্থ্যাৎ কোম্পানি বাহাদুরের সংস্থাপনাবধি মার্কুইশ হেস্টিংসের রাজশাসনের শেষ বৎসর পর্যন্ত  ভারতবর্ষে ইঙ্গলন্ডীয়েরদের কৃততারদ্বিবরণ। শ্রীযুত জানমার্স মান সাহেব কর্তৃক বাঙ্গালা ভাষায় সংগৃহীত ’।

১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে জন ক্লার্ক ম্যার্শম্যানের আউটলাইন অব দ্য হিস্ট্রি অব বেঙগল অবলম্ব ঈশ্বরচন্দ্র্র বিদ্যাসাগর ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে রচনা করেন বাংলার ইতিহাস দ্বিতীয় ভাগ। জীবন চরিত বা বায়োগ্রাফি ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি চেম্বার্সের বায়োগ্রাফিজ অবলম্বনে জীবন চরিত লেখেন। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়েছিল শ্রী কেদারনাথ বন্দোপাধ্যায়ের ‘ভারতবর্ষের সঙ্ক্ষিপ্ত ইতিহাস’। চারি আনা মূল্যের এই ইতিহাস বইটি গিরিশ চন্দ্র শর্মা কর্তৃক কোলকাতা থেকে বিদ্যারত্ন যন্ত্রে মুদ্রিত হয়েছিল। স্কুলের ছাত্রদের উপযোগী এই ইতিহাস বই কেন তিনি রচনা করেছিলেন, তার একটা সুন্দর ব্যাখ্যা গ্রন্থকার দিয়েছেন। তাঁর মতে, ‘ কোন বিস্তীর্ণ বিষয় অবগত হইতে হইলে অগ্রে তাহার সার ভাগ জ্ঞাত হইয়া স্থুল তাৎপর্য্ পরিগ্রহ করা কত্তর্ব্য। তাহা হইলে যথন বিস্তারিত বিবরণ জানিতে আরম্ভ করা যায় তৎকালে সেই প্রাথমিক স্থুল পরিজ্ঞানের সাহায্যে অনায়াসে সমস্ত বিস্তারিত বিষয়ে ব্যুৎপত্তি জন্মিতে পারে।… আমিও সেই উৎকৃষ্ট  উদ্দেশের অনুবর্ত্তী হইয়া, এই প্রকান্ড ভারতভূমির বিস্তারিত বিবরণের সার সংগ্রহ করিয়া ‘ভারতবর্ষের সঙ্ক্ষিপ্ত ইতিহাস’ নামক এই ক্ষুদ্র গ্রন্থখানি প্রচারিত করিলাম।’

তবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সূত্র ধরে এসময়ে বেশ কয়েকজন বাঙালি মনীষী বাংলার ইতিহাস চর্চায় এগিয়ে আসেন।যাদের মধ্যে রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, রজনীকান্ত গুপ্ত, কালী প্রসন্ন বন্দোপাধ্যায় উল্লেখযোগ্য। উনিশ শতকে প্রকাশিত এই বইগুলো থেকে ইতিহাসের মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করা যায়। পান্ডিত্য, বিচক্ষণ বিশ্লেষণশক্তি ও নিপুন প্রকাশভঙ্গি ছিল তাঁদের ইতিহাস রচনার বিষয়।১৩১৭ বঙ্গাব্দে কোলকাতার ৭৬ নং বলরাম স্ট্রীটের মেটকাফ প্রেস থেকে রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ কর্তৃক গৌড়ের ইতিহাস বইটি প্রকাশিত হয়। লেখক রজনীকান্ত চক্রবর্ত্তী  বইটি কৃষ্ণলাল চৌধুরীকে উৎসর্গ করেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রজনীকান্ত চক্রবর্ত্তী লেখেন, “ আমি যখন এই গ্রন্থ রচনা করিয়া কিরূপে ইহার মুদ্রণব্যয় সংগ্রহ করিব, ভাবিতেছিলাম, তখন মালদহের জমিদার শ্রীযুক্ত কৃষ্ণলাল চৌধুরী ও স্বর্গীয় হরিশ্চন্দ্র চৌধুরী মহাশয় ইহার মুদ্রণের সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহনে স্বীকৃত হইয়াছিলেন। তাঁহারা অর্থ সাহায্য না করিলে ইহা কোনকালে মুদ্রিত হইত না। শ্রীযুক্ত কৃষ্ণলাল বাবু ও হরিশবাবুর সৌজন্য বিদ্যোৎসাহিতার বিষয় এদেশে বিশেষরূপে প্রসিদ্ধ।” গ্রন্থ খানি প্রকাশের বিষয়ে শ্রীরজনীকান্ত চক্রবর্ত্তী  তদানীন্তন রংপুরের সাহিত্য পরিষদের সম্পাদক জমিদার সুরেশ চন্দ্র রায় চৌধুরী এর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছিলেন। গৌড়ের ইতিহাস বইটি বাংলা ১৩১৭ সনের ১লা বৈশাখ প্রকাশিত হয়েছিল।

পেশাদারিত্ব নিয়ে ইতিহাসচর্চা শুরু করেন রাখালদাস বন্দোপাধ্যায় । ১৯১৫ ও ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি দুই খন্ডে রচনা করেন বাঙ্গালার ইতিহাস। বলা যেতে পারে বাংলা ভাষায় বাংলার ইতিহাস নিয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লেখা প্রথম দিকের কাজগুলোর একটি। এজন্য তাঁকে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্বের অগ্রপথিক হিসেবে গণ্য করা হয়।

বাংলা ভাষায় ও বাংলায় ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে উপনিবেশিক শাসনামলে এ সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বরেন্দ্র রিসার্চ সোসাইটি (১৯১০-১৯৬৩) বা বরেন্দ্র গবেষণা সমিতি, যা আমাদের কাছে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর নামে পরিচিত । ১৯১৪ সালে সমিতি হিসেবে নিবন্ধিত এ সোসাইটি বাংলার প্রাচীন স্থানগুলিতে অনুসন্ধান, বাংলার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস সম্পর্কে গবেষণা, প্রত্ন-নিদর্শনাবলি ও প্রাচীন পান্ডুলিপি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এবং প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন গবেষণাকর্ম ও বিরল পান্ডুলিপি প্রকাশনার কাজ হাতে নেয়। বাংলার ইতিহাস রচনায় নতুনরূপে লেখনী ধারন করে এগিয়ে আসেন শরৎ কুমার রায়, অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়, রমাপ্রসাদ চন্দ। বাংলার শিল্পকলা ও প্রত্নতত্ত্ব সম্পর্কে অধ্যয়ন ও গবেষণায় তাঁদের অভিন্ন আগ্রহ ছিল। মানুষ ও প্রকৃতির ধ্বংসলীলা এড়িয়ে যেসব সৌধ এখনও টিকে আছে সেগুলির তথ্য উদ্ঘাটন করে অতীত ঐতিহ্য তুলে ধরাই ছিল তাঁদের আজীবন প্রয়াস। বাঙালি বুদ্ধিজীবিদের মধ্যে ইতিহাস চেতনার সঞ্চার নতুনরূপে দেখা দেয়। ইতোমধ্যে এই সমিতির অন্যতম কর্ণধার রমাপ্রসাদ চন্দ ১৯১২ সালে গৌড় মালা প্রকাশ করে বাংলার ইতিহাস চর্চাকে উচ্চস্তরে পৌছে দেয়ার কাজটি করেন। গৌড় রাজমালা (১৯১২) বরেন্দ্র রিসার্চ সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে রমাপ্রসাদ চন্দের পান্ডিত্যের খ্যাতি আরো ছড়িয়ে পড়ে।‘গৌড় রাজমালা’ ও ‘গৌড় লেখমালা’ গ্রন্থ দুটি প্রকাশের পর প্রবাসী পত্রিকায় প্রাচ্য পন্ডিত বিজয় চন্দ্র মজুমদার মন্তব্য করেছিলেন, ‘ইতিহাস সংগ্রহ সংকল্পে যে সকল উদ্যোগ চলিতেছে, তাহা অত্যন্ত প্রশংসার যোগ্য’। বাংলা ভাষায় ঐতিহাসিক গবেষণার  আরেক নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হয় অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় এর হাত ধরে। ১৯১২ সালে প্রকাশিত গৌড়লেখমালায় তিনি কয়েকটি পাল তাম্রশাসন ও লিপিমালার যে বাংলা অনুবাদ করেছিলেন, তা বাংলা ভাষায় ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে মাইল ফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এই প্রকাশনাগুলো এতই গুরুত্বপূর্ণ যে অদ্যাবধি  প্রাচীন বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে প্রত্নতাত্ত্বিক উৎস থেকে তথ্যাবলি সংগ্রহের একমাত্র প্রামাণিক সূত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। উপনিবেশিক আমলের এ সকল মনীষীরা বা যারা ইতিহাস চর্চায় নিজেদের নিয়োজিত রেখেছিলেন তারা শুধু শিক্ষিত ভদ্রলোকই ছিলেন না, পশ্চিমিভাব ধারার সাথে তারা পরিচিত ছিলেন। পশ্চিমি ইতিহাস তত্ত্ব দ্বারা তারা প্রভাবিত ছিলেন। নৈতিকতা, প্রগতিবাদ ও ইতিহাসে বীরপুরুষদের জীবনী বাঙালি ইতিহাসবিদদের উদ্বুদ্ধ করেছিল। প্রত্নতত্ত্ব্ব ধারার বাইরে এসে অক্ষয় কুমার মৈত্র জীবনীমূলক ইতিহাস রচনা শুরু করেন। তাঁর লেখা সিরাজউদ্দৌলা, মীর কাসিম, রানী ভবানী এসব ছিল উল্লেখযোগ্য। পরবর্তী সময়ে আরো বেশ কিছু জীবনীমূলক ইতিহাস অন্যান্যরাও রচনা করেন। ব্রিটিশ অফিসারদের মত বাঙালীরাও ব্যক্তিগত প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে ইতিহাস রচনা করেছেন। সামাজিক ইতিহাস রচনার এই ধারায় ঘটনাবলী ও জনসাধারণের সাথে প্রত্যক্ষভাবে তাঁরা জড়িত ছিলেন। ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সাহিত্যের সংমিশ্র্ন ঘটান হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। এ কারণে ইতিহাস রচনায় বাস্তবতার স্পর্শ উপলদ্ধি করা যায়। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ভারতবর্ষের ইতিহাস বইটি ১৯২৮ সালের ১লা জুন কোলকাতার কমলা বুক ডিপো থেকে প্রকাশিত হয়। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তাঁর লেখায় সাহিত্যকে ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে প্রথম ব্যবহার করেছেন বলে দাবী করেন। তাঁর রচনার সময়কাল সম্পর্কে বলেন:     “ভারতবর্ষের ইতিহাসের আরম্ভটা বুদ্ধদেবের সময় হইতে তুলিয়া পরীক্ষিতের অভিষেক বা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ পর্যন্ত লওয়া হইয়াছে এবং সেইখান হইতেই ভারতবর্ষের একটা ধারাবাহিক ইতিহাস দিবার চেষ্টা হইয়াছে। এই ধারাবাহিক ইতিহাসের প্রমাণ, কেবলমাত্র পুরাণ। পরিশিষ্টে ভারতবর্ষীয় ব্রাক্ষ্যণ্যধর্ম্মের একটা ধারাবাহিক ইতিহাস অতি সংক্ষেপে দিবার চেষ্টা হইয়াছে।সে ইতিহাস বেদ হইতে আরম্ভ করিয়া রামকৃষ্ণ পরমহংস রামমোহন ও সাহিত্য হইতে সংগ্রহ করিয়াছি।” সামাজিক ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ এগুলোর অন্যতম। উইকিপিড়িয়ার মতে, গ্রন্থটি  উনিশ শতকের বাঙ্গালীর সমাজ-সংস্কৃতি-রাষ্ট্রনীতির এক উৎকৃষ্ট নির্ভরযোগ্য দলিল রূপে পরিচিত। স্বভাবতই রামতনু লাহিড়ীর জীবনীসূত্রে  উনিশ শতকের যেসব মনীষী নবজাগরণের সাথে প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন তাঁরাও এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছেন। জীবনীগ্রন্থ হিসাবে রচিত হলেও বইটির মূল্য যে এর ঐতিহাসিকতায় এ সম্পর্কে তিনি সচেতন ছিলেন।

আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রেও উপনিবেশিক শাসনামলে বাঙালি ইতিহাসবিদরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।  উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, শতীশ চন্দ্র মিত্রের যশোহর-খুলনার ইতিহাস , (১৩২৯  বাংলা)  ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে লেখা কেদারনাথ মজুমদারের ময়মনসিংহের ইতিহাস , যামিনীমোহন রায়ের ঢাকার  ইতিহাস (১৩১৯  বাংলা) ।  ব্রিটিশদের গেজেটিয়ারের আদলে বাঙালিরাই এরকম ভাবে লিখতে থাকেন স্থানীয় ইতিহাস।  যা আজও যে কোন অঞ্চলের ইতিহাসের আলোচনায় অধিকাংশ ঐতিহাসিকগণ আকরগ্রন্থ হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন । ইতিহাস দর্শন ইতিহাসের মতোই পরিবর্তনশীল। নতুন চিন্তার আলোকে ইতিহাস যুগে যুগে নতুন রূপ পরিগ্রহ করে। গোটা উনিশ শতকে পজিটিভিজম ইতিহাসচর্চাকে প্রভাবিত করেছিল। কেম্ব্রিজ বা অক্সফোর্ড হিস্ট্রি চর্চার ঢেউ বাঙালি ইতিহাসবিদদের  আকর্ষণ করেছিল। ব্রিটিশ শাসনামলের শেষের দিকে  বাঙালি ঐতিহাসিকরা ইতিহাস দর্শনের এদিকটায় ঝুঁকে পড়ে। নীহার রঞ্জন রায়, যদুনাথ সরকার, রমেশ চন্দ্র মজুমদার প্রমুখ তাঁদের অন্যতম।  উপনেবেশিক শাসনামলে বাংলাভাষায় ইতিহাস চর্চার যে ধারা শুরু হয়েছিল, তার ফলে আজ বাংলা ভাষায় লেখা ইতিহাস চর্চা অনেক পথ পাড়ি দিয়েছে। পশ্চিম বাংলা এবং বাংলাদেশে বাংলা ভাষায় ইতিহাস চর্চার জন্য পেশাদারিত্ব সংগঠন সৃষ্টি হয়েছে। যাদের উদ্দেশ্য  বাংলা ভাষায় ইতিহাস বিষয়ক সম্মেলনের আয়োজন করা, বাংলা ভাষায় ইতিহাসের বই ও সাময়িকী প্র্কাশ করা ইত্যাদি । যাতে করে ইতিহাসকে সাম্প্রদায়িকতার বেড়াজাল থেকে মুক্ত করা যায়।

 (প্রফেসর ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।)

৫৫ বছর পর ডুবে যাওয়া জাহাজের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

৫৫ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৬৯ সালের ২৫ আগস্ট একটি দুর্যোগ বার্তা দিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ডুবে যায় অস্ট্রেলিয়ার 'এমভি নুনগাহ' জাহাজ। পরে তাৎক্ষণিক উদ্ধার তৎপরতায়ও জাহাজে থাকা মানুষদের জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তখন থেকেই জাহাজটির নিখোঁজ হওয়া দেশটির নাগরিকদের কাছে রহস্য হয়ে ছিল। 

এবার সেই রহস্যের উদঘাটনের দ্বারপ্রান্তে দেশটির বিজ্ঞান সংস্থা কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিএসআইআরও)। বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, ডুবে যাওয়া জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেছে।

ওই ঘটনায় জাহাজে থাকা ২৬ জনের মধ্যে ক্রুসহ ২১ জনের মারা যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে উঠে এসেছিল।  

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়ার তথ্য জানায়।

বিবিসি জানায়, ৭১ মিটার (২৩৩ ফুট) দৈর্ঘ্যের ওই মালবাহী জাহাজটি নিউ সাউথ ওয়েলসের উপকূল থেকে ইস্পাত নিয়ে যাচ্ছিল। পরে ঝড়ের কবলে পরে জাহাজটি ডুবে যায়। এমন ঘটনা তখন অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। 

জাহাজটি ডুবে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাঁচজনকে জীবিত ও ২০ জনের মরদেহ তুলে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একঝনের লাশ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

ডেরওয়েন্ট নদীতে ১৯৫৬ সালে তোলা 'এমভি নুনগাহ'
 

গণমাধ্যমটি জানায়, অস্ট্রেলিয়া তাদের উচ্চ রেজোলিউশন সমুদ্রতল ম্যাপিং এবং ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে ধ্বংসাবশেষের অবস্থান নিশ্চিত করেছে।

তবে সিডনি থেকে প্রায় ৪৬০ কি.মি (২৮৬ মাইল) উত্তরে সাউথ ওয়েস্ট রকসের উপকূলের গভীর জলে স্থানীয়রা এক বছর আগে একটি ধ্বংসাবশেষ দেখেছিল। পরে তারা এ সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে অবগত করার পর বিজ্ঞানীরা সন্ধান চালিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে। 

স্থানীয়দের তথ্যের পর বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ করেছিল এটি ডুবে যাওয়া জাহাজটি হতে পারে। তবে প্রয়োজনীয় কোন প্রযুক্তি বা ডাইভিং জ্ঞান না থাকার কারণে সেটিই যে ডুবে যাওয়া জাহাজ নুনগাহ তা নিশ্চিত করতে পারেনি তারা।

গত মাসে সিএসআইআরও উচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজতে শুরু করে।

পরে তারা ওই স্থানের ১৭০ মিটার নিচে এর ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে।

সিএসআইআরও'র কর্মকর্তা ম্যাট কিম্বার বলেন, এই ট্র্যাজেডি এখনও অনেকের স্মৃতিতে রয়েছে। তবে ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারের বিষয়টি জানার ফলে সবার জন্যই কিছুটা স্বস্তির কারণ হবে। 

নিহত ক্রুদের পরিবারের সদস্যরা অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনকে জানিয়েছেন, আবিষ্কারটি একটি স্বস্তির বিষয়।

;

বিশ্বের সবচেয়ে ‘কুৎসিত কুকুর’ এটি!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর কুকুরের তথ্য যেমন রয়েছে তেমনি এবার সবচেয়ে কুৎসিত আকৃতির কুকুরেরও তথ্য মিলেছে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে।

স্কাই নিউজ বলছে, চলতি বছরের ২১ জুন (শুক্রবার) যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে বিশ্বের সবচেয়ে কুৎসিত কুকু্রের প্রতিযোগিতা বসেছে। ওই প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা ওয়াইল্ড থাং নামে আট বছর বয়সী একটি কুকুর এ তকমা পেয়েছে।

তবে এবারই ওয়াইল্ড থাং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেনি। এর আগেও ৫ বার এমন প্রতিযোগিতায় প্রাণীটি অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু প্রতিবারই নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে।

ওয়াইল্ড থাং এবং তার মালিক অ্যান লুইস। ছবি: সুমিকো মুটস / এনবিসি নিউজ

ওয়াইল্ড থাং এর মালিক অ্যান লুইস বলেন, ওয়াইল্ড থাং কুকুরছানা হিসাবে একটি ভয়ানক রোগ ক্যানাইন ডিস্টেম্পারে সংক্রমিত হয়েছিল। কোন ক্ষতি ছাড়াই অনেক চিকিৎসার পর বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তার দাঁত বেশি বৃদ্ধি না পাওয়ায় জিহ্বা বাইরে থাকে এবং তার সামনের ডান পা ২৪/৭ প্যাডেল আকারে থাকে।

পুরস্কার হিসেবে তাদেরকে ৫ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৫১১ টাকা) দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিশ্বের সবচেয়ে কুৎসিত কুকুর প্রতিযোগিতা প্রায় ৫০ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিযোগিতাটি আকর্ষণীয় করার জন্য কুকুরগুলোকে বিশেষ এবং অনন্য করে সাজিয়ে তোলা হয়।

;

ট্যাক্সি চালকের অনর্গল ইংরেজি বলার দক্ষতা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

এই সংবাদটি পড়তে হলে আপনাকে ভুলে যেতে হবে শুধু শিক্ষিতরাই সাবলীলভাবে ইংরেজি বলতে পারেন! কারণ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায় এক ট্যাক্সি চালক তার যাত্রীর সাথে অনর্গল ইংরজিতে কথা বলছেন।

ঘটনাটি প্রতিবেশী দেশ ভারতের মহারাষ্ট্রে ঘটেছে। দেশটির গণমাধ্যম এনডিতিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

এনডিটিভি বলছে, ওই ট্যাক্সি চালক তার যাত্রীদের সাথে ইংরেজি কথা বলার পাশাপাশি কিভাবে আরও দক্ষ হওয়া যায় সে বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন।

মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে ধারণ করা ভিডিওটি ভূষণ নামে একজন ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী শেয়ার করেছেন। ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, "এমন ঘটনা দেখে আমি কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। পরে তার সাথে কথা বলার সময় কিছুটা তোতলা হয়েছিলাম। তার ইংরেজিতে সাবলীলতা দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম।"

পরে তার সাথে এ নিয়ে কিছুক্ষণ আলাপ হলো।

ট্যাক্সি চালক বলেন, ইংরেজি শেখা থাকলে আপনি লন্ডন এবং প্যারিসের মতো উন্নত দেশে যেতে পারবেন। এটা বিশ্বব্যাপী ভাষা। এ কারণে ইংরেজি শেখা গুরুত্বপূর্ণ।

ভিডিওটিতে একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, "তার কথা বলার ধরণ ডক্টর এপিজে আবদুল কালামের মতো শোনাচ্ছেন"।

অপর একজন লিখেছেন, "১৬ বছরের শিক্ষার পর তার ইংরেজি আমার চেয়ে অনেক ভালো।"

;

‘প্রিয় স্বাধীনতা’ কবিতার মেঘনা নদীর দেখা মেলে চুনা নদীতে



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরের জীবন

ছবি: মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরের জীবন

  • Font increase
  • Font Decrease

মেঘনা নদী দেব পাড়ি
কল-অলা এক নায়ে।

আবার আমি যাব আমার
পাড়াতলী গাঁয়ে।

গাছ-ঘেরা ঐ পুকুরপাড়ে
বসব বিকাল বেলা।

দু-চোখ ভরে দেখব কত
আলো-ছায়ার খেলা।

বাঁশবাগানে আধখানা চাঁদ
থাকবে ঝুলে একা।


ঝোপে ঝাড়ে বাতির মতো
জোনাক যাবে দেখা।

ধানের গন্ধ আনবে ডেকে
আমার ছেলেবেলা।

বসবে আবার দুচোখে জুড়ে
প্রজাপতির মেলা।

হঠাৎ আমি চমকে উঠি
হলদে পাখির ডাকে।

ইচ্ছে করে ছুটে বেড়াই
মেঘনা নদীর বাঁকে।

শত যুগের ঘন আঁধার
গাঁয়ে আজো আছে।

সেই আঁধারে মানুষগুলো
লড়াই করে বাঁচে।

মনে আমার ঝলসে ওঠে
একাত্তরের কথা,

পাখির ডানায় লিখেছিলাম-
প্রিয় স্বাধীনতা।

কবি শামসুর রাহমানের প্রিয় স্বাধীনতা কবিতার লাইনের সঙ্গে মিল রেখে বলতে হয়-

শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরে থাকা মানুষগুলোর কথা।
চুনা নদী পাড়ি দেবো, ডিঙ্গি নৌকা দিয়া।

আবার আমি যাবো আমার উপকূলের গাঁয়ে।
কাজের জন্য ছুটে বেড়াই, চুনা নদীর বাঁকে।

বনে বাঘ, জলে কুমির আর ডাঙ্গায় লোনা পানির ক্ষত।
সেই চরের মানুষগুলো, এখনো লড়াই করে বাঁচে।

বর্ষাকালের দুপুর বেলা। আকাশে কালো মেঘ খেলা করছে! নদীতে পানি ঢেউ খেলছে! ভেসে আসছে, গেট থেকে জল আসার শব্দ। নদীর এপার ওপার হচ্ছেন ডিঙা নৌকা দিয়ে পাড়ে থাকা মানুষগুলো। ছুটে চলেছেন নারী-পুরুষ একে একে চুনা নদীর তীরে কাজের সন্ধানে। সন্ধ্যা হলেই দেখা মেলে বাড়ি ফেরার তাড়া। রাতের আঁধারে পশুপাখি, জীবজন্তু, পোকামাকড়ের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচেন এই চুনা নদীর পাড়ের মানুষগুলো।

সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরে বসবাস নিত্যসংগ্রামী মানুষদের, ছবি- মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪.কম


এখানকার মানুষজন লড়াই সংগ্রাম করে এখনো টিকে আছেন। টিকে থেকে তাদের রোজ কাজের সন্ধানে অবিরাম ছুটে চলতে হয়। বর্তমানে ভাঙাগড়ার জীবনে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যত নিয়ে বসবাস করছেন তারা। শ্যামনগর উপজেলার কলবাড়ি এলাকায় অবস্থিত চুনা নদীর চরটি। ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়-সম্বল হারানো ২০-২৫টি জেলে পরিবারের ঠাঁই হয়েছে এখানে। বছরের পর বছর এই চরকে আগলে বসবাস করলেও সব সময় লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় তাদের।

তাদের একজন ৩৫ বছর বয়েসি রমেশ চন্দ্র মণ্ডল। দুর্যোগে সহায়-সম্পদ হারিয়ে আশ্রয় নেন চরের এক কোণে। সেখানে মাটির ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস তার। শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেও ভর করে থাকতে হয়, স্ত্রীর ওপর। তার কষ্টের বিনিময়ে জোটে তাদের একমুঠো ভাত। স্ত্রী একাই লড়াই সংগ্রাম করে বেঁচে আছেন তাদের নিয়ে এই চরে।

বনে পশুপাখির, জলে কুমির আর স্থলে বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে এভাবে তাদের জীবন প্রবহমান। তাদের জীবন চলার পথে নেই কোনো বিরাম। সংগ্রাম করে টিকে থাকেন সবাই। একে একে সব কিছু হারিয়েও এখানো টিকে থাকতে হয় তাদের।

রমেশের মতো একই অবস্থা ষাটোর্ধ্ব ফকির বিশ্বাসের। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়লেও পেটের দায়ে কাজ করতে হয় তাকে। একবেলা কাজ করলে অপর বেলা কাটে অসুস্থতায়!

ফকির বিশ্বাস বার্তা২৪কমকে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়-সম্বল হারিয়ে এই চরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। আশ্রয়ের দুই যুগ লড়াই সংগ্রাম করে টিকে থাকলেও ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারিনি। বরং প্রতিবছর ছোটবড় দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছি। লড়াই-সংগ্রাম করতে হয়েছে বারংবার!

জীবন কাটে যুদ্ধ করে, ঝড়-ঝঞ্ঝা মাথায় পেতে...চুনা নদীর তীরের মানুষের জীবন, ছবি- মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪.কম

চুনা নদীর চরে মাছের পোনা গুনতে দেখা যায় নমিতা রাণী রায়কে। নমিতা রাণী রায় বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্বামী-সন্তান নিয়ে সবসময় চিন্তার ভেতরে থাকতে হয় আমাকে। নদীতে কুমির আর বনে বাঘের আতঙ্ক! তারপর ডাঙায় লোনা পানির ক্ষত। লবণাক্ততায় ভরা জীবনকাল। তারপর চরটি নদীর ধারে হওয়াতে একটু জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় বসতবাড়ি। এই লড়াই-সংগ্রাম করেই বেঁচে আছি সেই প্রথম থেকে। মাছের পোনা বিক্রি করে চলে আমাদের সংসার। আমরা সবাই এখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংগ্রাম করে টিকে আছি।

নমিতা রাণী রায় বলেন, যখন বসতবাড়ি নদীর পানিতে তলিয়ে যায়, তখন স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ওই সময় অনেক কষ্টে চর এলাকার সবার দিন কাটে। শিশু সন্তানদের সবসময় নজরে রাখতে হয়। অন্যথায় নদীতে পড়ে গিয়ে ঘটতে পারে ছোট-বড় দুর্ঘটনা!

নিত্যদিনের লড়াই-সংগ্রাম

লড়াই সংগ্রামের শেষ নেই উপকূলে থাকা মানুষজনের। সর্বশেষ, ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’-এর আঘাতে নদীর জোয়ারের জলে তলিয়ে যায় তাদের বসতঘর। ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ বলে কথা না! যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জোয়ারের পানিতে তাদের বসতঘর তলিয়ে যায়। তখন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না তাদের। এমনও অনেক সময় গেছে যে, দিনের পর দিন উনুনে আগুন দিতে পারেননি তারা। ওই সময় শুকনো খাবার খেয়ে থাকতে হয়েছে তাদের। এমনও দিন গেছে, যেদিন তাদের শুধুমাত্র পানি পান করে বেঁচে থাকার জন্য লড়তে হয়েছে।

ঘরছোঁয়া জলের বানের দিকে তাকিয়ে থাকেন চুনা নদীর তীরের মানুষজন আর ভাবেন আর কত সংগ্রাম, ছবি- মৃত্যুঞ্জয় রায়,বার্তা২৪.কম

সত্যি, তাদের ভাষ্যের সঙ্গে বড়ই মিল কবি শামসুর রাহমানের ‘প্রিয় স্বাধীনতা’ কবিতার! ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকাটা একটা বড় প্রশ্নেরই বটে! জঙ্গল, বন্যা, নদীভাঙনের সঙ্গে অবিরাম সংগ্রাম করে টিকে থাকা একটা অকল্পনীয় ব্যাপার। অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট আর অভাবে চরের মানুষদের দৈনন্দিন জীবন। তাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাঁধ ভাঙন, জলোচ্ছ্বাসসহ ঘূর্ণিঝড়। প্রতিবছর এসব দুর্যোগে শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে প্রতিনিয়ত সর্বস্বান্ত হচ্ছেন তারা। আবারও লড়াই-সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার তাগিদে ঘুরেও দাঁড়ান তারা।

;