প্রাণের দোতারাকে টিকিয়ে রাখতে চান রংপুরের শিল্পীরা

  • বর্ণালী জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রংপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

উত্তরবঙ্গের ভাওয়াইয়া ও ভাটিয়ালি গানের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দুই বা চারটি তারের লোকজ বাদ্যযন্ত্র দোতারা। অতীত থেকেই লালনভক্ত বাউলরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে কিংবা আসর জমিয়ে দোতারার সুরে সুর মিলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

কালের পরিক্রমায় বেড়েছে আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার। সে কারণে কমে গেছে দেশজ বাদ্যযন্ত্র দোতারার ব্যবহার। উপার্জনের পথ না থাকায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছেন এই দোতারা শিল্পীরা।

বিজ্ঞাপন

অনেকেই সাধনার দোতরাকে বাদ দিয়ে পেটের তাগিদে শিল্পী থেকে হয়েছেন পান-দোকানদার, কেউ-বা চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন পেশাজীবী। তবে এই দোতারাকে ধরে রাখতে নিরলস প্রচেষ্টায় রয়েছেন রংপুর ভাওয়াইয়া অঙ্গনের শিল্পীরা। তাদের দাবি, আর বঞ্চনা নয়, ভাতা চান তারা।

জানা গেছে, রংপুর ভাওয়াইয়া অঞ্চলের বিলুপ্তপ্রায় দোতারাকে ধরে রাখতে ২০১৭ সাল থেকে ‘রংপুর ভাওয়াইয়া অঙ্গন’ রংপুর বিভাগীয় শাখায় প্রতি শুক্র ও শনিবার করে পুতুল রায়সহ হরিদাস চন্দ্র রায় বিনামূল্যে দোতারার প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন।

বিজ্ঞাপন

পরবর্তীতে উদ্যোগ নিয়ে দোতারার সংগঠন করা হয়, ২২ সালের ১০ ডিসেম্বর। ‘দোতরা শিল্পীগোষ্ঠী’, রংপুর নামকরণ দিয়ে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেখানে দোতরাশিল্পী সোলায়মান, পুতুল রায়সহ অনেকেই বিনামূল্যে দোতারার প্রশিক্ষণ দেন।

২৩ জন শিল্পীর সমন্বয়ে গঠিত ‘দোতরা শিল্পীগোষ্ঠী’র শিল্পীরা মানবেতর জীবনযাপনের সম্মুখীন হয়েও হাল না ছেড়ে নিজেদের বাড়িতে বিনামূল্যে দোতারার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

তারা জানিয়েছেন, ‘দোতারা শিল্পীগোষ্ঠী’ বৃহত্তর রংপুর ভাওয়াইয়া অঞ্চলে আজ পর্যন্ত রংপুরের একটি প্রশিক্ষণের জন্য জায়গা খুঁজে পাননি। এজন্য তারা সবাই মিলে বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসির কাছে গিয়েছিলেন কিন্তু তাদের জন্য জায়গা দেওয়ার আশ্বাস পাননি। সে কারণে, তারা এখন পর্যন্ত নিজেদের বাড়িতে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন। এটি তাদের জন্য খুবই দুঃখজনক বলে অভিযোগ করেছেন।

শিল্পীরা তাদের স্থানসংকুলানের বিষয়টি জেলা সংস্কৃতি কর্মকর্তা নুসহাত তাবাসুম রিমুকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের জানানো হয়েছে, দোতারার জন্য কোনো বাজেট নেই।

‘দোতারা শিল্পীগোষ্ঠী’র সভাপতি সোলায়মান বলেন, রংপুরে এখনো অনেকেই দোতারাকে প্রাধান্য দিতে চার না। তাই, আমরা ‘দোতারা শিল্পীগোষ্ঠী’ এখনো অবহেলিতই রয়ে গেলাম। যদিও মাঝেমধ্যে দুই, একটা মঞ্চ প্রোগ্রামে ডাকা হয়। দোতারার শিল্পীদের সম্মানী দেওয়া হয় ৫শ থেকে বড়জোর ১ হাজার টাকা। সারাবছর মিলে দুই, থেকে চারটা অনুষ্ঠান পাই।

দোতারা শিল্পীরা জানিয়েছেন, সহযোগিতার অভাবে তৈরি হচ্ছে না নতুন দোতারাবাদক। তারা রংপুরে অসংখ্য দোতারাবাদক সৃষ্টি করতে চান, যাতে করে প্রাণের এই যন্ত্রটি হারিয়ে না যায়। এই দোতারাকে যুগ যুগ ধরে তারা বাঁচিয়ে রাখতে চান। সেজন্য তারা সবার কাছে ভাতাসহ অন্যান্য সহযোগিতার আশ্বাস চেয়েছেন।