ফোন বাড়িতে রেখে ১৩৪ দিনে পুরো দেশ ঘুরে এলেন চীনের এক পিএইচডি শিক্ষার্থী। এ সময় তিনি চীনের ২৪টি প্রদেশ ঘুরে বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন। আধুনিক যুগে স্মার্টফোন ছাড়া ঘুরে যেমন বিস্তর বিপত্তিতে পড়েছেন, তেমনি বিচিত্র অভিজ্ঞতাও লাভ করেছেন এই শিক্ষার্থী।
চীনের সানক্সি প্রদেশের তাইয়ুয়ান শহরের ওই শিক্ষার্থীর নাম ইয়াং হাও।
বিজ্ঞাপন
হাও ২০২৩ সালের নভেম্বর বাড়িতে ফোন এবং কম্পিউটার রেখে নিজ দেশ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। এরপর একের পর এক প্রদেশ করে করে মোট ২৪টি প্রদেশ পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে, আড্ডা দিয়ে এ বছরের এপ্রিলে বাড়ি ফিরে আসেন। মোট ১শ ৩৪ দিনে পুরো দেশ ঘুরে ফেলেন তিনি। এসময় তিনি নিজের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে রাখতে ডায়েরি লিখেছেন। ইন্টারনেট-ফ্রি ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলেছেন। বিভিন্ন ধরনের এলাকায় গিয়ে দিন কাটিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমি দেখতে চেয়েছি যে, ইন্টারনেটবিহীন জীবন কেমন লাগে। এই সময় মনে হয়েছে, আমি যেন আদিম যুগের মানুষ। আমার অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে তবে এটা আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের সেরা অভিজ্ঞতা এটা!
বিজ্ঞাপন
তবে তিনি যে ধরনের বিপত্তির মধ্যে পড়েছেন, তাহলো কোনো দোকানে কার্ডরিডার মেশিন না থাকায় দাম পরিশোধে সমস্যায় পড়েছেন। ট্রেন বা বিমানের টিকিট এবং হোটেল বুকিং সমস্যায় ভুগেছেন।
প্রচণ্ড তাপদাহের পর অবশেষে ইতি টানতে যাচ্ছে ভাদ্রমাস। তবে শেষদিকে এসে টানা বৃষ্টিতে অসহ্য গরমের ক্লান্তি যেন নিমিষেই হারিয়ে গেছে। টানা বৃষ্টি, বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন ক্যাম্পাস, অল্প একটু ফোন চার্জের জন্য ছুটাছুটি, ক্যাম্পাস জুড়ে খাবার সংকট। এই সবকিছুকে পিছনে ফেলে প্রকৃতি যেনো তার অপরূপ সৌন্দর্য ফিরে পেয়েছে বৃষ্টি স্নানের মাধ্যমে। দিনভর কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ফুটবল নিয়ে ছুটাছুটি, প্রেমিক যুগলের বৃষ্টি বিলাস, চায়ের দোকানের আড্ডা সাথে স্নিগ্ধ আবহাওয়া যেনো নতুন করে ক্যাম্পাসের প্রাণের সঞ্চার করে। বলছিলাম দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রকৃতি ঘেরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বৃষ্টিস্নাত দিনের কথা।
বৃষ্টি যেন এক অপরূপ মোহের জন্ম দেয় শিক্ষার্থী মনে। ক্যাম্পাসের পিচঢালা রাস্তায় বৃষ্টির ফোটাগুলো যেন বর্ষার উপস্থিতি জানান দেয়। বৃষ্টির পরশে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতি প্রাণ ফিরে পায়, ফিরে পায় নিজের সজীব অস্তিত্ব। ব্যস্ত ক্যাম্পাসে হঠাৎ বৃষ্টি এনে দেয় এক গভীর নীরবতা। ডায়না চত্বর, বটতলা, পাই চত্বর, টিএসসি, প্যারাডাইস রোডসহ পুরো ক্যাম্পাস ফিরে পায় তার সজীবতা। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করা, এক ছাতার নিচে দুই তিনজনের হেঁটে যাওয়া কিংবা প্রেমিক যুগলের বৃষ্টি বিলাস সবমিলিয়ে রোমাঞ্চকর এক অনুভূতি।
সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে দেশব্যাপী নেমেছে বৃষ্টির ধারা। গত সোমবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচণ্ড গরম পড়তে শুরু করে। দেশের অন্তত ২০টি জেলায় বয়ে যায় তাপপ্রবাহ যা বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত অব্যাহত ছিলো। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে যশোর ও খুলনা অঞ্চলে অবস্থানের পর থেকেই উক্ত অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয়। যার প্রভাবে বৃষ্টি নেমেছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও।
ঝড়বৃষ্টির কারণে বিদ্যুৎ না থাকলেও হলের বেশ কয়জন শিক্ষার্থীকে দেখা যায় রুমে বসে অনলাইনে ক্লাস করতে। আবার কয়েকজন শিক্ষার্থীকে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়ামোড়ে চায়ের টঙে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা দিতে। রাত থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে যেয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে মোবাইল চার্জ দিতে। আবার একদল শিক্ষার্থীকে দেখা যায় ঝুমঝুম বৃষ্টির মধ্যে ফুটবল মাঠে ফুটবল খেলতে। তবে ক্যাম্পাসে চলমান এতকিছুর মধ্যেও অসংখ্য শিক্ষার্থীকে পাওয়া যায় রুমে শুয়ে আরামের ঘুম ঘুমাতে। তাদের কাছে বৃষ্টির দিনের ঘুমটাই যেন সবকিছু।
ক্যাম্পাসে ঘুরে দেখা যায় বেশ কিছু চিত্রের। বঙ্গবন্ধু হলের পুকুরে পাওয়া যায় একদল শিক্ষার্থীকে সাঁতার কাটতে। জিগ্যেস করলে বলেন, ছোটবেলায় বাড়ির পাশের পুকুরে লাফালাফি করতাম। এবারের বর্ষায় পুকুরে বেশ পানি হয়েছে। তাই ছোটবেলার মতো সাঁতার কাটার লোভ সামলাতে পারলাম না। পশ্চিম পাড়ার রাস্তাটা প্রেমিক যুগলদের জন্য। এই ক্যাম্পাসের অন্যান্য জায়গার চেয়ে এই রাস্তাকেই তারা আপন করে নেয়। আর যদি হয় বৃষ্টিস্নাত দিন তাহলে তো কিছু বলারই অপেক্ষা রাখেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অফিস, চিকিৎসাকেন্দ্র, মফিজ লেক এবং প্রতিটি রাস্তার দুপাশে থাকা ফুল ও পাতাবাহার গাছের পাতা গুলো বৃষ্টিতে ধুয়ে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ্ হলের শিক্ষার্থী জাহিদ বলেন, কৈশোরে বৃষ্টিতে ভেজার কথা খুব মনে পড়ে। কবে বৃষ্টি হবে, আকাশ পানে চেয়ে দিন গুনতাম শুধু বৃষ্টিতে ভেজার জন্য। মায়ের বকুনি, বিজলি চমকানির ভয়, কিছুই ফেরাতে পারেনি বৃষ্টিতে ভেজা থেকে। তবে ক্যাম্পাসে এসে আর সেভাবে বৃষ্টিবিলাস করা হয়না। ক্লাস-পরীক্ষার চাপে অনেকটা যান্ত্রিক জীবন কাটাই। তাই বৃষ্টির দিন পেলে খুবই ভালো লাগে। অনেকদিন পর বৃষ্টিতে ভেজা, কাকভেজা হয়ে ক্যাম্পাসের সমগ্র এলাকা ঘুরে বেড়ানোর অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন বলেন, কর্মব্যস্ত ক্যাম্পাসের ক্লাস, পরীক্ষা, টিউটোরিয়াল, অ্যাসাইমেন্ট, প্রেজেন্টেশনের মতো ধরাবাধা একাডেমিক কাজ থেকে হাফ ছেড়ে বাঁচতে শিক্ষার্থীরা বোধ হয় একটু বৃষ্টির দিনের অপেক্ষায় থাকে। আমাদের ক্যাম্পাসে গাছপালা পরিমাণ বেশ ভালো। হল থেকে বেরিয়ে বৃষ্টির মধ্যে ক্যাম্পাসে ঘুরতে, বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা দিতে খুবই ভালো লাগে। বৃষ্টির মধ্যে টঙের চা পানের অনুভূতিটাও অসাধারণ। বৃষ্টিস্নাত ক্যাম্পাস নিজে যেমন সজীব হয়েছে, তেমনি আমার মনকেও সজিব এবং প্রাণবন্ত করেছে।
বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থী আসিফ জানান, ক্যাম্পাসে আসার পর বৃষ্টি কেন্দ্রীক সময়গুলো খুব মিস করছিলাম। গতকাল রাত থেকেই যখন বৃষ্টি শুরু হয় তখন আমার ভেতরে একটা আনন্দের অনুভূতি কাজ করে। রাতেই ঠিক করে রেখেছিলাম যে আজকের দিন টা যেকোন ভাবেই হোক উপভোগ করবো। সকালে বৃষ্টি শুরুর পর হলের সবাই ফুটবল খেলতে নেমে যাই। ক্যাম্পাসে এসে বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলতে পারার আনন্দটা শৈশবের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমার কাছে এটা কিঞ্চিত সৌভাগ্যেরও। এরপরে খিচুড়ি-মাংস রান্না করে সবাই একসাথে খাওয়াদাওয়া করবো। এরচেয়ে সুন্দর ব্যাপার আর কি হতে পারে!
২০২৪ সালে বিশ্বের আদিবাসীদের আন্তর্জাতিক দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল “Protecting the rights of indigenous peoples in voluntary isolation and initial contact”-বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় ‘স্বেচ্ছায় বিচ্ছিন্নতা এবং প্রাথমিক যোগাযোগে আদিবাসীদের অধিকার রক্ষা করা।’
বিশ্বজুড়েই অনেক আদিবাসী-জনগোষ্ঠী মূলধারার সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করা বেছে নিয়েছেন এবং তাদের স্বকীয় সাংস্কৃতিক পরিচয় নিয়ে এগিয়ে যেতে চেয়েছেন। পৃথিবীর সুরক্ষার জন্য তাদের এই বিচ্ছিন্নতায় বেঁচে থাকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত বৈচিত্র্য সুরক্ষার জন্যও তা বিশেষভাবে গুরুত্ববহ। প্রাথমিক যোগাযোগে থাকা আদিবাসীরা বনের সেরা রক্ষক। যেখানে ভূমি এবং অঞ্চলগুলির উপর আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষিত থাকে, সেখানে বনগুলোও আদিবাসী সমাজের পাশাপাশি সমৃদ্ধ হয়।
এ বছরের আদিবাসী দিবসে গুরুত্ব পায়, আদিবাসীদের সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় চিন্তা করতে হবে তারা কখন কীভাবে তাদের অধিকার সমুন্নত রেখে বাইরের উন্নয়নকর্মের সাথে যুক্ত হতে চান। মনে রাখা উচিত, কোন ধরণের জোরপূর্বক যোগাযোগ তাদের সাথে করা যাবে না। তাদের সম্মতি ছাড়া অথবা বিনামূল্যে বা জোরপূর্বক পাহাড়ের জমি দখল ও সম্পদ বা খনিজ উত্তোলন, লগিং এবং তাদেরকে অন্যান্য যে কোন ধরনের শোষণ করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে এবং প্রয়োজনে তা রক্ষা করার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিচ্ছিন্ন সম্প্রদায়গুলোকে ধ্বংস করতে পারে এমন প্যাথোজেনগুলোর বিস্তার রোধে কঠোর রোগ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রয়োগ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। যে কোন প্রস্তাবিত উন্নয়ন প্রকল্প বা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাদের পূর্ণ সম্মতি এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে এবং যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সুবিধা-বণ্টনসমূহ আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্থাপন করতে হবে। স্বেচ্ছায় দূরে থাকা বা অতি দূর্গম এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীর সাথে মিথষ্ক্রিয়ার জন্য সেইসব বিশ্বস্ত মধ্যস্থতাকারীদের বেছে নিতে হবে যারা আগে থেকেই তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন এবং এই সম্প্রদায়ের ভাষা ও রীতিনীতি বোঝেন। এভাবে তাদের পছন্দকে সম্মান করে ধীরে ধীরে এবং নিয়ন্ত্রিত যোগাযোগ করা যেতে পারে।
সম্প্রদায়গুলোকে তাদের জমি এবং সম্পদের ব্যবস্থাপনা এবং সুরক্ষায় সক্রিয় অংশীদার হতে ক্ষমতায়িত করতে হবে। সংবিধানে তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জ্ঞান বিনিময়ের উদ্দেশ্যে সম্প্রদায়গুলোকে তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান, শাসন কাঠামো এবং ঐতিহ্যগত জ্ঞান ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সেদেশের সরকার সহায়তা প্রদান করতে পারে।
বিচ্ছিন্ন থাকা সম্প্রদায়গুলো এবং অন্যান্য আদিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যে তথ্য বিনিময় এবং সেগুলোর সর্বোত্তম অনুশীলনের সুবিধা প্রদান নিশ্চিত করাও সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। এছাড়াও সম্প্রদায়গুলোর অধিকার লঙ্ঘন নির্দিষ্ট করার জন্য স্পষ্ট আইনি এবং নীতি কাঠামো স্থাপন করতে হবে। জবাবদিহিতা, প্রতিকার এবং ন্যায়বিচারের জন্য সম্প্রদায়গুলোর জন্য প্রবেশযোগ্য এবং সাংস্কৃতিকভাবে-উপযুক্ত উপায় প্রদান করতে হবে। এই অনুশীলনগুলো মেনে চলার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী, সহযোগিতামূলক এবং অধিকার-ভিত্তিক পদ্ধতির প্রয়োজন, যা স্বেচ্ছায় বিচ্ছিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের কণ্ঠস্বর এবং স্ব-নিয়ন্ত্রণকে শক্তিশালী করবে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের পাশাপাশি বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে অতি দূর্গম এলাকায় অথবা সমতলের বিচ্ছিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলো যারা সেই বিশেষ অঞ্চলের দীর্ঘযুগের বাসিন্দা তাদের সাথে যোগাযোগের প্রক্রিয়াসমূহ কী এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়াতেইবা তাদেরকে কীভাবে সংযোজন করা সম্ভব? এই পরিপ্রেক্ষিতেই পার্বত্য চট্টগ্রামের এক গ্রামের গল্প বলা যাক।
বাংলাদেশের সমতলে বাস করা অনেক মানুষের কাছে এ হয়ত নিছক কল্পনাই বলা হবে। কিন্তু বাস্তবে দেশের পার্বত্য অঞ্চলে এমন কিছু জনপদ রয়েছে, যাদের জীবন মোটেই ফ্রেমে বাধাঁনো ছবির মতো অপার্থিব নয়। রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের অতিদূর্গম অঞ্চলের গ্রাম ‘পুকুর পাড়া’-কে নিয়ে এমন মন্তব্য মোটেই অমূলক হবে না। উল্লেখ করা প্রয়োজন, ঢাকা থেকে রাঙামাটির দূরত্ব ৩০৬ কিলোমিটার। জেলা সদর থেকে বিলাইছড়ি উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। কিন্তু বিলাইছড়ি থেকে রাইক্ষ্যং নদ হয়ে হাঁটা পথে পুকুর পাড়া গ্রামে যেতে অন্ততঃ ৭ দিনের দূরত্ব।
বিলাইছড়ি উপজেলার চারটি ইউনিয়নের একটি হলো বড়থলি ইউনিয়ন, যার জনসংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। এই ইউনিয়নের উল্লেখযোগ্য গ্রামগুলো হলো-শিলছড়ি, রাইমনছড়া, ছালিয়াছড়া, বিলপাড়া, বুরিক্কিয়াছড়া, সাইজাম পাড়া, টাইগার পাড়া , কাইংগছড়া, সাদারীছড়া, সালছড়া, বড়থলি মারমা পাড়া, বড়থলি ত্রিপুরা পাড়া, পুকুর পাড়া, প্রংজাং পাড়া, সুড়হা পাড়া, চারজিং পাড়া, শেপ্রু পাড়া ধুপানিছড়া, হাতিছড়া, এসম ম্রা পাড়া, কেসপাড়া, জারুলছড়ি পাড়া প্রভৃতি। পুকুরপাড়া এলাকাটির ভূ-প্রকৃতি, ভৌগোলিক অবস্থান, আর্থ-সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অবস্থার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এবং বিচিত্রতায় পূর্ণ।
প্রশাসনিকভাবে পুকুরপাড়া বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের অন্তর্গত হলেও, অবস্থানগত কারণে পুকুরপাড়ার জনগোষ্ঠী বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার উপর নির্ভরশীল। ২০১৫ সালের আগে এই ইউনিয়নটি বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত ছিলো। কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্রশাসনিক সুবিধার্থে নতুন ইউনিয়ন বড়থলির সৃষ্টি হয়। বড়থলি ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে ত্রিপুরা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, বম ও খিয়াং জনগোষ্ঠীর প্রায় পাঁচহাজার জন মানুষের বসবাস। এই ইউনিয়নের ‘ধুপানিছড়া পাড়া’ নামক স্থানেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ ত্রিদেশীয় সীমানা খুঁটির (বাংলাদেশ ভারত এবং মায়ানমারের) অবস্থান।
গুরুত্বপূর্ণ আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যের সম্ভাবনাময় অঞ্চল হওয়া স্বত্ত্বেও এই অঞ্চলটিই দেশের সবচেয়ে দূর্গম এবং অবহেলিত। তাছাড়া পর্যটনের জন্য এটা অপার সম্ভাবনার স্থান। ৩,৩১৪ ফুট উচ্চতার দেশের দ্বিতীয় উচ্চতম পাহাড় ডুমলংও এখানে অবস্থিত। ডুমলং রেং তলাং পর্বতশ্রেণির একটি পাহাড় এবং রাইক্ষ্যং হ্রদের পার্শ্ববর্তী প্রংজাং পাড়ার কাছে এর অবস্থান। একে বেসরকারিভাবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ বলে দাবি করা হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং গভীর প্রাকৃতিক হ্রদ রাইক্ষ্যং (সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ১১৭০ ফুঁট উঁচুতে) এই ইউনিয়নের পুকুর পাড়া এবং প্রংজাং পাড়ার ভেতর অবস্থিত।
রাইক্ষ্যং হ্রদের পাড়ে পুকুরপাড়ায় বহু বছর ধরে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বসবাস। এই হ্রদের পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ বলে সূর্যের আলো, মেঘ, পাহাড়ের রং, আকাশের রঙেই এর রূপ পরিবর্তিত হয়। এই লেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কাউকে বিমোহিত করে। লেকের চারপাশে রেং তলাং রেঞ্জের পাহাড়গুলো। এছাড়াও রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রশস্ত জলপ্রপাত রাইংক্ষ্যং এবং চ্যাদলাং। (চলবে...)
শববাহী গাড়িটির ভেতরে স্ট্রেচারে শোয়ানো সাদা কাপাড়ে মোড়ানো এক তরুণীর দেহ। সেই নিরব-নিথর-নিস্তব্দ দেহ জড়িয়ে আছেন এক তরুণ। কখনো দেহটিকে বুকে আগলে রাখছেন, কখনো আবার কপালে এঁকে দিচ্ছেন স্নেহের চুম্বন। তরুণের মুখে ক্লান্তি, বিষণ্ণতার ছাপ। একটু পর পর ওই তরুণীর শরীর ভিজে যাচ্ছিল তরুণের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া জলে। আবহে বাজছে সেই মন খারাপের সুর, ‘এত রঙিন, এত কাপড়, কিছুই ভালো লাগে না মোর! সাদা কাপড় আমায় পরাই দে, সজনী তোরা..সাজিয়ে গুঁজিয়ে, দে মোরে…!’
অন্তর্জালে ছড়িয়ে পড়া ১৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিওর দৃশ্য এটি। চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে পড়া ওই তরুণীর নাম পিউলি নন্দী। হাসপাতাল থেকে তার মরদেহবাহী গাড়িতে তোলা হয়েছে, একটু পরেই শেষবারের মতো ফিরে যাবেন বাড়িতে। গাড়িটির দু’পাশে সব বয়সের মানুষ দাঁড়িয়ে। অঝোরে কাঁদছেন অনেকেই। তখন ওই তরুণীর স্বামী অনিমেষ চৌধুরী গাড়িতে ওঠে জড়িয়ে ধরেন প্রিয়তমা স্ত্রীকে।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) ছিল অনিমেষ-পিউলি দম্পত্তির বিয়ের দশমাস-পূর্তি। দিনটি ঘিরে ছোটখাটো উৎসবের আয়োজনও ছিল দুজনার। কিন্তু সেই আনন্দোৎসব কিনা ভেসে গেল শোকের-সাগরে। স্বামীকে নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে থাকতেন পিউলি। কয়েকদিন আগে বেড়াতে যান বাবার বাড়ি খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে। সেখানে মঙ্গলবার দুপুরে গোসল শেষে বাড়ির উঠানে টানানো তারে কাপড় শুকাতে গেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তিনি। পরে স্বজনেরা ছুটে এসে দ্রুত পিউলিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান। কিন্তু শত প্রচেষ্টায়ও বাঁচানো যায়নি ২৫ বছরের তরুণীকে। মৃত্যুর সময় পিউলি ছিলেন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। মায়ের আকস্মিক মৃত্যু কেড়ে নিল পৃথিবীর মুখ না দেখা সন্তানের প্রাণও।
পিউলি আর অনিমেষ যেন ছিলেন একই বৃন্তে দুটি কুসুম! কয়েকবছর জমিয়ে প্রেম। তারপর সাতপাকে বাঁধা। দিনটি ছিল গত বছরের ১০ নভেম্বর। দুজনের ভরপুর ভালোবাসা একটু একটু করে আরও ডালপালা মেলছিল। অপেক্ষায় ছিলেন নতুন অতিথি আসার। অনাগত সন্তানকে ঘিরে দুজনের কত-শত পরিকল্পনা। সেই স্বপ্ন অনিমেষের জীবনে যে দুঃস্বপ্ন হয়ে ফিরে আসবে কে জানত! পরিস্থিতি তার জীবন থেকে শুধু পিউলিকে কেড়ে নেয়নি, কেড়ে নিয়েছে মায়ের সঙ্গে দূর আকাশের তারা হয়ে যাওয়া সন্তানকেও।
পিউলির ফেসবুক ঘাঁটলেই দেখা মিলে অজস্র হাসিমুখের ছবি। সেই চির হাস্যোজ্জ্বল মেয়েটি এভাবে কাঁদিয়ে বিদায় নেবে মানতে পারছেন না কেউই। অনেকে আবার অনিমেষের মনের অবস্থা কেমন চলছে-তাও বোঝার চেষ্টা করছেন তার এই দুর্দিনে।
জনি দত্ত নামের এক তরুণ পিউলি-অনিমেষের শেষ ভালোবাসার ১৯ সেকেন্ডের ভিডিওটি শেয়ার করেছেন নিজের ফেসবুকে। সেই ভিডিওটি মুহূর্তে নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। দুদিনে ৯ লাখ ৪৬ হাজার মানুষ দেখে ফেলেছেন ভিডিওটি।
সেই ভিডিও শেয়ার করে রাজিব কুমার সাহা নামের অনিমেষের পরিচিত এক তরুণ লিখেছেন, ‘কতো সুন্দর করে লাইফটা একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছিলো। বিদ্যুৎস্পৃষ্টে পুরো জীবনটাই কেড়ে নিলো। এমন একটি দুর্ঘটনা ঘটে যাবে কল্পনাও করতে পারছি না। বিয়ে হয়েছে বেশিদিন হয়নি। ভগবান এটা কি করলেন, এই ছেলেটা কাকে নিয়ে বাঁচবে? ৭-৮ বছরের প্রেম অতঃপর বিয়ে। আসলে কি সান্ত্বনা দেব বুঝতে পারছি না। ভিডিওটি দেখে নিজের মনকে বোঝাতে পারছি না। এইটুকুই বলবো অনিমেষ নিজেকে শক্ত করো, জানি এটা শক্ত হবার মতো নয়।’
মিঠু দাশ নামের অনিমেষ-পিউলির পরিচিত তরুণের লেখায়ও উঠে আসে দুজনের ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি। মিঠু লেখেন, ‘বিবাহিত জীবনের আজ ১০ মাস পূর্ণ হলো তোমাদের, আর আজই চলে যেতে হলো? ভগবানের কি লীলাখেলা এতো তাড়াতাড়ি কেন তোমাকে নিয়ে গেল জানি না! যেখানে থেকো ভালো থেকো আমার বোন পিউ।’
অল্প কদিনে শ্বশুরবাড়িরও প্রিয়মুখ হয়ে ওঠেছিলেন পিউলি। কিশোর নন্দী নামের আরেক জনের স্মৃতিচারণে ওঠে এলো সেটি, 'অল্পদিনের সংসারে তুই শ্বশুর বাড়ির এত এত প্রিয় হয়ে গিয়েছিলি আজ জানিয়ে দিতে হলো এভাবে! আর অল্প কটা দিন গেলেই তো মাতৃত্বের অমর অনুভূতি পাওয়া হতো, ছোট্ট সুন্দর জীবনটাকে এত ছোট করে চলে গেলি না ফেরার দেশে বোন আমার।'
আর কদিন পরেই দুর্গাপূজার মৌসুম। সেই পূজা ঘিরে সনাতন ধর্মের মানুষদের ঘরে ঘরে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে আলোর উৎসব। সেই রঙিন আয়োজনের আগেই বিবর্ণ হয়ে ওঠল অনিমেষের জীবন, তিনি যে হারিয়ে ফেললেন নিজের জীবনের কাছের মানুষকে। স্বাভাবিক ভাবেই ভেঙে পড়েছেন অনিমেষ। তাই তার সঙ্গে হলো না কথা।
নিজের আসন্ন মৃত্যু কি জেনেই গিয়েছিলেন পিউলি! না হয় মৃত্যুর দুদিন আগেই কেন বা নিজের ফেসবুকে তিনি শেয়ার করবেন-‘একদিন শ্মশানে হবে পোড়া ছাই ও মন আমার, গৌরব করার কিছুই নাই’ গানটি।
পিউলির জীবনে খুব দ্রুতই গানের কথাগুলো যে সত্যি হয়ে গেল। খুব নির্মভাবে সত্যি হয়ে গেল!
পিউলির এভাবে হাসতে হাসতে চলে যেতে দেখে তাই তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের 'কবি' উপন্যাসের সেই বিখ্যাত উক্তির মতো বলতে ইচ্ছে হয়, 'জীবন এত ছোট কেনে...'
১৬ ফুট দৈর্ঘ্যের অজগর জঙ্গলের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া একটি জীবন্ত বাছুরকে গিলে ফেলার চেষ্টা করছিল। তবে বাছুরটিকে সম্পূর্ণ গিলে ফেলার আগেই এই দৃশ্য রাখলরা দেখতে পায়। তাৎক্ষণিক তারা অজগরের চোয়াল থেকে বাছুরটিকে লাঠির সাহায্য উদ্ধার করে। কিন্তু তাও শেষ রক্ষা হয়নি বাছুরটির। উদ্ধারের আগেই বাছুরটি মারা যায়। পরে অবশ্য এলাকাবাসী সাপটিকে না মেরে জঙ্গলে ছেড়ে দেয়।
এমন ঘটনা ঘটেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশের আগ্রার চিত্রহাট এলাকার পারনা গ্রামের যমুনা জঙ্গলে। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দেশটির গণমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
গ্রামবাসীদের বরাত দিয়ে এনডিটিভি বলছে, ঘটনাটি তারা বন বিভাগকে জানালেও তাদের দল পশুটিকে উদ্ধার করতে সময়মতো পৌঁছায়নি।
তারা অভিযোগ করে বলেন, বন বিভাগের কর্মকর্তারা সঠিক সময়ে পৌঁছালে হয়তো বাছুরটিকে বাঁচানো সম্ভব হতো।
এ ঘটনাটির একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।