ফোন ছাড়া ১৩৪ দিনে পুরো চীন ঘুরে এলেন পিএইচডি শিক্ষার্থী
ফিচার
ফোন বাড়িতে রেখে ১৩৪ দিনে পুরো দেশ ঘুরে এলেন চীনের এক পিএইচডি শিক্ষার্থী। এ সময় তিনি চীনের ২৪টি প্রদেশ ঘুরে বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন। আধুনিক যুগে স্মার্টফোন ছাড়া ঘুরে যেমন বিস্তর বিপত্তিতে পড়েছেন, তেমনি বিচিত্র অভিজ্ঞতাও লাভ করেছেন এই শিক্ষার্থী।
চীনের সানক্সি প্রদেশের তাইয়ুয়ান শহরের ওই শিক্ষার্থীর নাম ইয়াং হাও।
বিজ্ঞাপন
হাও ২০২৩ সালের নভেম্বর বাড়িতে ফোন এবং কম্পিউটার রেখে নিজ দেশ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। এরপর একের পর এক প্রদেশ করে করে মোট ২৪টি প্রদেশ পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে, আড্ডা দিয়ে এ বছরের এপ্রিলে বাড়ি ফিরে আসেন। মোট ১শ ৩৪ দিনে পুরো দেশ ঘুরে ফেলেন তিনি। এসময় তিনি নিজের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে রাখতে ডায়েরি লিখেছেন। ইন্টারনেট-ফ্রি ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলেছেন। বিভিন্ন ধরনের এলাকায় গিয়ে দিন কাটিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমি দেখতে চেয়েছি যে, ইন্টারনেটবিহীন জীবন কেমন লাগে। এই সময় মনে হয়েছে, আমি যেন আদিম যুগের মানুষ। আমার অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে তবে এটা আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের সেরা অভিজ্ঞতা এটা!
বিজ্ঞাপন
তবে তিনি যে ধরনের বিপত্তির মধ্যে পড়েছেন, তাহলো কোনো দোকানে কার্ডরিডার মেশিন না থাকায় দাম পরিশোধে সমস্যায় পড়েছেন। ট্রেন বা বিমানের টিকিট এবং হোটেল বুকিং সমস্যায় ভুগেছেন।
অতিথি পাখির নিরাপদ অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে লক্ষ্মীপুরের জনেস্বর দিঘী। হাজারো পাখির কলকাকলিতে এখন মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো গ্রাম। সদর উপজেলার উত্তর জয়পুরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী এ দিঘীর পাড়ে পাখির জলকেলি আর নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন পাখি প্রেমীরা। এসব পাখি সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের দাবি এলাকাবাসীর।
জেলা প্রশাসক বলছেন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদরের হাজিরপাড়া থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে উত্তর জয়পুর এলাকায় অবস্থিত প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী জনেস্বর দিঘী এটি। ব্যাক্তি মালিকানাধীন প্রায় ২ একরের (এক একর ৯৬ শতক) এ দিঘীটি এখন শীতকালের অতিথি পাখির অভয়ারণ্য।
সরেজমিনে দেখা যায়, চারপাশে বাঁশের ঝাড়ে ঘেরা জনেস্বর দিঘীর জলে অতিথি পাখির (বালিহাঁস) আগমনে দিঘির সৌন্দর্য আরও ফুটে উঠেছে। দিঘীজুড়ে হাজার হাজার পাখির এ যেন এক মিলন মেলা। প্রতিদিন ভোর রাতে ঝাঁক বেঁধে দিঘীতে নামে এসব পাখিরা। আর সন্ধ্যা নামলে নান্দনিক কসরতে ডানা মেলে আকাশে উড়াউড়ি করে তারা। পাখির কিচির মিচির শব্দে ও জলকেলিতে পুরো এলাকা মুখর হয়ে উঠে।
স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দ আহম্মদ বলেন, অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে ঘুম ভাঙে দিঘী পাড়ের বাসিন্দাদের। স্থানীয়রা নিজেদের উদ্যোগেই সবাই মিলে এসব পাখিদের নিরাপত্তায় কাজ করছেন।
ইজারাদার গোপাল কৃষ্ণ বলেন, পাখির বিশ্রামে বাঁশ ও কঞ্চি দিয়ে গড়ে তুলেছেন অভয়াশ্রম। শীত মৌসুমের শুরু থেকেই এ পাখিগুলোর আগমন শুরু হয় এখানে। মৌসুমের শেষের দিকে আবার চলে যায়। প্রতিদিন পাখিদেরকে ভাসমান খাবার দেন বলে জানান তিনি।
স্থানীয় মধ্য জয়পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কৃষ্ণ চন্দ্র দে বলেন, ধারণা করা হচ্ছে নাইজেরিয়া কিংবা সাইবেরিয়া থেকে এসব পরিযায়ী পাখির আগমন। এগুলো বালিহাঁস জাতের। এই দিঘীর আশেপাশে আরও দুই তিনটি দিঘী থাকলেও জনেস্বর দিঘীতেই এ পাখিগুলোর অভয়াশ্রম। বিগত ৭-৮ বছর থেকে প্রতি শীত মৌসুমেই এগুলো নিয়ম করে এখানে এসে বিচরণ করে। ভোর থেকে দিঘীতে পাখিগুলোর আগমন হয়। দিনভর বিচরণ করে সন্ধ্যায় ফিরে যায়।
এদিকে পাখিদের জলকেলি, খুনসুটি আর কিচির মিচির শব্দ উপভোগ করতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে আসছেন পাখি প্রেমীরা। তারা বলছেন, এমন অসংখ্য পাখি একসঙ্গে আর দেখা হয়নি। মন খারাপ হলেই দিঘীর পাড়ে ছুটে আসেন অনেকে। একটু বসে পাখি দেখে মনে শান্তি নিয়ে ফেরেন দর্শনার্থীরা। দিঘীটির পাশে তেমন বসার স্থান না থাকায় অনেকে দাঁড়িয়ে নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করেন।
স্থানীয়দের দাবি পাখি ও ভ্রমণ পিপাসুদের নিরাপত্তায় এবং পর্যটন শিল্প বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারে দিঘীটি।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার জানান, জনেস্বর দিঘীসহ একাধিক স্থানে অতিথি পাখির অভয়াশ্রমের খবর শুনেছেন তিনি। তবে এসব স্থানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় পর্যটন স্পট করতে কিছুটা বাধা হলেও পাখিদের নিরাপত্তাসহ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশ বাংলাদেশ। বাংলা নববর্ষ অনুসারে বৈশাখ দিয়ে সূচনা হয় বাঙালিদের হাজার বছরের সাংস্কৃতিক উৎসব। বছর জুড়ে নানা পার্বণের আয়োজন ইতি টানে চৈত্র সংক্রান্তিতে।
চৈত্র সংক্রান্তির খানিকটা আগেই গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় পিঠা উৎসব। শীতকালকে কেন্দ্র করে কুয়াশামাখা ভোরে উনুনের পাশে বসে পিঠা-পুলিতে মেতে ওঠা গ্রাম বাংলার নিত্তনৈমিত্তিক উৎসব। ইংরেজি নববর্ষ অনুসারে ডিসেম্বরে বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শেষ হওয়ার সুবাদে শীতকালীন পিঠার উৎসব আরো জমে ওঠে।
গ্রাম বাংলার এই চিত্র সাধারণ হলেও ইট পাথরের শহুরে পরিবেশে অনেকটাই অপরিচিত। চার দেয়ালে বন্দী এই পরিবেশে উনুনের পাশে বসে পিঠা খাওয়া প্রায় অকল্পনীয়।
তাই, শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্যস্তময় মানুষের মনে কিঞ্চিৎ প্রশান্তি আনার লক্ষ্যে আয়োজন করা হয় নানা উৎসবের। শীত ঋতুকে কেন্দ্র করে তেমনিভাবে রাজধানীর লালমাটিয়ায় আয়োজিত হয়েছে পৌষ মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
শত শত দর্শনার্থীর ভিড়ে মিলন মেলায় পরিণত হয় এই মেলা প্রাঙ্গন। বয়োবৃদ্ধ থেকে শিশু-কিশোর, নারী ও পুরুষ সকলেই বেশে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে মেলায় অংশগ্রহণ করেছে। পৌষ মেলায় বিক্রেতা বিভিন্ন জানা-অজানা পিঠা, বাদ্যযন্ত্র, পোশাক, তৈজসপত্রসহ প্রায় পঞ্চাশোর্ধ স্টল বসেছে মেলা প্রাঙ্গণে।
এখানে, ধোঁয়া ওঠা গরম পিঠা সেভাবে না পাওয়া গেলেও ব্যবসায়ীরা হরেক রকমের পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেছে। হরেক রকমের পিঠার এই উৎসবে পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী পিঠাও।
জুরাইন থেকে নানা রকমের পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেছেন মেহেদী পিঠা ঘরের স্বত্ত্বাধিকারি মাসুদ৷ মেলা উপলক্ষে ঝাল কলি, নারকেল কলি, চিংড়ি পিঠা, ইলিশ পিঠা, চিকেন কলি, পাটিসাপটা, পান নকশি, মুগ পাকন, খেজুর পিঠা, লবঙ্গ লতিকা, মালপোয়া সহ আরও বেশ কিছু পিঠা নিয়ে আসছেন তিনি।
শহরের এই মেলায় শুধু যে পিঠাই পাওয়া যায় এমনও নয়। হস্তশিল্পীদের কারুকার্যে তৈরিকৃত নানা ধরণের পণ্য বিক্রি হয় এখানে। এরকম এক ব্যবসায়ী হলেন শরীফ৷ তার দোকানে পাট দিয়ে বানানো ব্যাগ, ক্যাপ ও বিভিন্ন রকমের খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন।
শীতের শেষ দিকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেলায় অংশগ্রহণ করতে পেরে আনন্দিত ঢাকায় বসবাসকারীরাও। এমন ই একজন হলেন আলতাফ হোসেন। তিনি তার সন্তানকে নিয়ে এসেছেন এই পৌষ মেলায়। মেলা ঘুরে দেখছিলেন পাশাপাশি সন্তানের আবদারে কিনতে হচ্ছিলো নানান কিছু।
আলতাফ হোসেন জানান, বাচ্চাদের মনোজগত পরিবর্তনে অথবা যদি বলি দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানানোর সুযোগ খুব একটা পাওয়া যায় না। মেলায় এসে বাচ্চাকে অনেক কিছু চেনাতে পারছি, সেও আনন্দ পাচ্ছে। ভালই লাগছে মেলায় এসে।
তালিব রাফি নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, কয়েকদিন আগে মেলার কথা শুনে অপেক্ষায় ছিলাম আজকের দিনের জন্য। আজকে এসে ভাল লাগছে। অন্যদিন আসি ক্লাস করতে, আজ বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, আড্ডা হচ্ছে আবার অনেক কিছু দেখছি, খেতে পারছি, সব মিলিয়ে ভালই লাগছে। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখে বাসায় ফিরবো।
ময়মনসিংহের আকাশে শেষ বিকেলে এখন দেখা মেলে না পাখিদের দল বেঁধে নীড়ে ফেরার দৃশ্য। ডালে ডালে শোনা যায় না ময়না-টিয়ার ডাক। খুনসুটিও নেই চড়ুই, বুলবুলি কিংবা বক, মাছরাঙার। গাছেও নেই তেমন পাখির বাসা।
ময়মনসিংহে দিন দিন আশংকাজনক হারে কমছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির সংখ্যা। বিভিন্ন দূষণ, বনাঞ্চল ধ্বংস, জলাশয় ভরাট ও শিকারের ফলে পাখি পরিবর্তন করছে তার আবাসস্থল। এতে হুমকির মুখে পড়েছে এ অঞ্চলের জীব বৈচিত্র্য। আতশবাজিসহ বিভিন্ন দূষণ, বনাঞ্চল ধ্বংস, শিকারের কারণে দিন দিন কমছে পাখির সংখ্যা। এতে হুমকিতে পড়ছে জীব বৈচিত্র্য।
নগরীর জয়নুল পার্কে ঘুরতে আসা শামীম আশরাফ জানান, আমাদের জীবনে এখন অনেক উৎসব এসেছে। আর উৎসব বলতে আমরা বুঝি আতশবাজি বা পটকা ফাটানো। এগুলোর বিকট শব্দে আমরা মানুষরা যেখানে কেঁপে উঠি সেখানে এই পাখি গুলো আতঙ্কে ছুটাছুটি করে। এতে তারা অন্যত্র চলে যাচ্ছে। পরিবর্তন করছে আবাসস্থল। এছাড়াও কমেছে গাছপালা। পাখিরা গাছে থাকতে পছন্দ করে। সেখানো বাসা তৈরি করে। কিন্তু যেখানে আগের মত গাছই নেই সেখানে পাখি থাকবে কোথা থেকে।
আরেক দর্শনার্থী জয় ঘোষ জানান, পাখির সাথে আমাদের জীব বৈচিত্র্য জড়িত। পাখি বনাঞ্চল গড়ে তুলতে সাহায্যে করে। সেখানে আমরা অবিচারে পাখি শিকার করছি। পানি দূষণ, বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ করে আমরা পাখিদের অস্তিত্ব বিলীন করে দিচ্ছি। কিন্তু এক সময় যখন পাখির অস্তিত্ব থাকবে না তখন এই পৃথিবীরও অস্তিত্ব থাকবে না।
শহরের জুবিলী ঘাটে অবস্থিত বিপিন পার্কে বিকেলে ঘুরতে আসা সোমা ঘোষ মনিকা জানান, কাক হচ্ছে আমাদের প্রাকৃতিক ঝাড়ুদার। মৃত পশু পাখির অংশ খেয়ে পরিবেশ সুন্দর রাখে। আগে সকাল হলে ঝাঁকে ঝাঁকে কাক দেখা যেত বাড়ির আঙ্গিনায়। কিন্তু এখন দেখা যায় না। এছাড়াও গবাদি পশুদের শরীরে ব্যথা নাশক ইনজেকশন ব্যবহারের কারণে এসব পশুর মৃতদেহ খেয়ে তিন থেকে চার মিনিটের মধ্যে মারা যায় শকুন। এতেও প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শকুন। আর এসব পাখি ধ্বংসের জন্য আধুনিক মনুষ্য সমাজ দায়ী।
ময়মনসিংহ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে। সেই সাথে সেগুলো নিয়ন্ত্রণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যদি বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে পশু পাখির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
ময়মনসিংহ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ.ন.ম. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, পাখি নিধন ও শিকারের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান আছে। যারা এসবের সাথে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
দেশে পাখির প্রজাতির সংখ্যা ৬৫০টি। এর মধ্যে ৩০টি বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে বিলুপ্ত। অবশিষ্ট ৬২০টি প্রজাতির মধ্যে ৪৭৭ প্রজাতির পাখি বাংলাদেশে নিয়মিত দেখা যায়, বাকি ১৪৩ প্রজাতি অনিয়মিত দেখা যায়। নিয়মিত ৪৭৭ প্রজাতির মধ্যে ৩০১টি বাংলাদেশের আবাসিক এবং ১৭৬ প্রজাতি পরিযায়ী পাখি। বিলুপ্ত প্রায় পাখি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সম্মিলিত উদ্যোগ নিবে সরকার, এমনটাই প্রত্যাশা ময়মনসিংহবাসীর।
কৃষি প্রযুক্তির আধুনিক যন্ত্রপাতির যুগেও ঘোড়া দিয়ে হাল চাষ করে জনপ্রিয়তার প্রশংসা কুড়িয়েছেন বৃদ্ধ কৃষক মমিন মিয়া(৬৫)। কৃষক মমিন মিয়া লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের জমগ্রামের বাসিন্দা।
একটা সময় গ্রামীন জনপদে সকাল হলে লাঙ্গল জোয়াল আর গরু নিয়ে মাঠে জমিতে যাইত রাখালরা। দিনভর হাল চাষ করে বিকেলে বাড়ি ফিরত রাখাল দল। দুপুরের খাবারও মাঠেই সেড়ে নিতেন অনেক রাখাল। গরু মহিষের চাষের এমন দৃশ্য প্রতিদিন দেখা যেত গ্রামীন জনপদে। এমনও হত চাহিদা বিবেচনা করে গ্রামের সকলে মিলে(যাদের হাল ছিল) একেক দিন একেক জনের জমি চাষ করে দিত।
এভাবে ধারাবাহিক ভাবে সকলের জমি চাষ করা হত। যেদিন যার জমি চাষ হত সেদিন ওই রাখালকে দাওয়াত খাওয়াত ভাল মন্দ রান্না করে। যাকে রংপুর অঞ্চলে গাঁতা চাষ বলত। সেই সময় গুলোতে শ্বশুর বাড়ির গরু মহিষের হাল ও রাখাল এসে জামাইয়ের জমিও চাষ করে দিত। এখন আধুনিক যুগে এসব বিলুপ্ত হয়েছে। কদরও কমেছে পশুর হাল চাষ ও রাখালদের।
গরু-মহিষ দিয়ে হাল চাষ প্রচলন প্রায় উঠে গেছে বেশ কিছু বছর আগে। গরু মহিষ দিয়ে হাল চাষ এখন খুব একটা চোখে পড়ে না। ঠিক এই সময়ে এসে ঘোড়া দিয়ে হাল চাষের ঘটনা নিতান্তই বিরল। আর সেখানে গরু-মহিষের বদলে ঘোড়া দিয়ে অন্যের জমিচাষ করছেন বৃদ্ধ কৃষক মমিন। যা দিয়ে চলছে তার চার সদস্যের পরিবার।
যৌবন কাল থেকে হাল চাষ ও কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে আসছেন মমিন মিয়া। সেই থেকে হাল চাষ করা আর ছেড়ে থাকতে পারেননি। প্রযুক্তির এ যুগে এসেও ধরে রেখেছেন আদিম যুগের পশু দিয়ে হাল চাষ। হালের বলদ এক জোরা (দুইটি গরু) কিনতে বর্তমান সময়ে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা প্রয়োজন পড়ে। এত টাকা মূলধন নেই মমিন মিয়ার। তাই যারা ঘোড়া কেনার পড়ে আর খাওয়াতে পারেন না তাদের কাছ থেকে নামমাত্র দামে ক্রয় করে মোটা তাজা করে হাল চাষের উপযোগী করেন। গরুর চেয়ে ঘোড়ার গতি বেশি। সেদিক থেকে অল্প সময়ে বেশি জমি চাষ করতে পারে মমিন মিয়ার ঘোড়ার হাল। বর্তমানে তার বাড়িতে ৪টি ঘোড়া রয়েছে। পালাক্রমে বিশ্রাম দিয়ে হাল চাষে নিয়ে যান তার ঘোড়াকে।
বৃদ্ধ মমিন মিয়া বলেন, আমার নিজের কোন জমি নেই। মানুষের জমিতে হাল চাষ করি। বিঘা প্রতি ৫০০ টাকা পাই। প্রতি দিন গড়ে ২/৩ বিঘা জমিতে হাল চাষ করে যা আয় হয় তা ঘোড়ার খাবার কিনে বাকীটা দিয়ে চলে আমার ৪ সদস্যের সংসার। আমি গরিব মানুষ। যুবক বয়স থেকে এই কাজ করে সংসার চালাই। আগে গরুর হাল ছিল। এখন গরুর দাম বেশি তাই ঘোড়া কিনেছি। গরুর চেয়ে ঘোড়ার গতি বেশি। তাই জমিও বেশি চাষ করা যায় ঘোড়ার হালে। তাই দীর্ঘ প্রায় ৭/৮ বছর ধরে ঘোড়া দিয়ে হাল চাষ করে জিবিকা নির্বাহ করছি।
বাউরা এলাকার কৃষক আজিজুল বলেন, খোলা মাঠ থাকলে ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করা সম্ভব। কিন্তু ফসলের মাঝে অল্প জমি চাষাতে ট্রাক্টর নেয়া সম্ভব হয় না এবং অল্প জমি চাষাতে ট্রাক্টরও আসে না। তাই আমার মত খন্ড জমির মালিকদের ভরসা মমিনের ঘোড়ার হাল। ট্রাক্টরের চেয়ে ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ করে নিলে মইও দেয়া যায়। এতে জমিও সমান হয়। বিভিন্ন কারনে মমিন মিয়ার ঘোড়ার হালের কদর বেশি এ এলাকায়।
বাউরা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য মামুন হোসন সরকার বলেন, মমিনের ঘোড়ার হালের এলাকায় বেশ চাহিদা রয়েছে। তার বাড়িতে চার টি ঘোড়া রয়েছে। ঘোড়া প্রীতি মানুষ মমিন মিয়া ঘোড়ার হাল চাষে সুন্দর ভাবে সংসার চালিয়ে আসছেন।
পাটগ্রাম উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি অফিসার কৃষিবিদ হারুন মিয়া বলেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির যুগে প্রায় কৃষকরাই এখন উন্নত মানের যন্ত্র দিয়ে দিয়ে জমি চাষ করেন। এখন গরু-মহিষের হাল চাষ চোখে পড়ে না। সেখানে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করাটা অনেকটাই বিরল। মমিন জীবিকার প্রয়োজনে অন্যের জমিতে ঘোড়া দিয়ে চাষ বা মই দিচ্ছেন। তবে আমরা কৃষি বিভাগ কৃষকদের সবসময় আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে চাষাবাদের জন্য পরামর্শ দেই।