তারুণ্যের চোখে আগামীর ক্যাম্পাস

  • নূর ই আলম, ইবি করেস্পন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

শত শত শিক্ষার্থীদের রক্তের বিনিময়ে পুনর্জন্ম নিলো বাংলাদেশ । শিক্ষার্থীদের এই আত্মত্যাগের বিনিময়েই দেশ আজকে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। তাই প্রতিটা শিক্ষার্থীর প্রত্যাশা থাকবে তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাস যেনো স্বপ্নের মতো সুন্দর এবং সুগঠিত হয়ে সামনে আগায়।

স্বাধীন দেশে নতুন করে শিক্ষার্থীরা কেমন ক্যাম্পাস চান – এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে। ক্যাম্পাস নিয়ে আশা-প্রত্যাশা, চিন্তা-ভাবনার কথা জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহজালাল ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বিজ্ঞাপন

‘বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সেকেন্ড হোম, নিরাপদ হবে বাড়ির মতো’

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বলতে আমরা নিজেদের সেকেন্ড হোম বুঝে থাকি। নিজেদের বাড়ির ক্ষেত্রে যেমন আমরা নিরাপত্তা,সুন্দর ও সুস্থ পরিবেশ কে গুরুত্ব দেই তেমনি ক্যাম্পাসের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম কিছু নয়। যেখানে শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের আমাদের পূর্ণ নিরাপত্তা থাকবে, থাকবেনা কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর আধিপত্য, ডাকসু ব্যতীত ছাত্ররাজনীতির অস্তিত্বও আর দেখতে ইচ্ছুক নই। নিরাপত্তার খাতিরে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধকরণকে জোরদার করতে হবে, খুব বেশি প্রয়োজন হলে সপ্তাহে নির্দিষ্ট ১ দিন প্রবেশের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই সুশৃঙ্খল পরিবেশ নিশ্চিত করে। শিক্ষার্থী হিসেবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সম-অধিকার, সুযোগ-সুবিধার নিশ্চয়তা, সত্যিকার অর্থেই ধর্মীয় স্বাধীনতার চর্চা নিশ্চিত করা দরকার। এছাড়াও হলগুলো তে পর্যাপ্ত সিট এর অভাবে অনেক বৈধ সিট থেকে বঞ্চিত। অনেক মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থী অবৈধভাবে হল এ অবস্থান করে। দুজনের জন্য একটা করে বেড, রিডিং টেবিল বরাদ্দ। যা সুষ্ঠু পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটায়। হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের সিট সংখ্যা বাড়িয়ে, ক্যান্টিনে স্বাস্থ্যকর খাবার এর নিশ্চয়তা প্রদান করে শিক্ষা বান্ধব পরিবেশ তৈরি করাই শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

জাফরিনা আশরাফ ইলমা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

‘ক্যাম্পাস হবে সম্পূর্ণ রাজনীতি মুক্ত’

শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় সকল শিক্ষার্থীই ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে। কোনো দলের লেজুরভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করে তুলে যার ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। পরিবর্তনের এই সময়ে আমাদের ছোট্ট ক্যাম্পাসটাও যেনো হয় ছাত্ররাজনীতি,সহিংসতা ও চাঁদাবাজ মুক্ত এবং ছাত্ররা যেনো পায় শিক্ষার্থীবান্ধব এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন। ক্যাম্পাসে প্রচলিত এলাকাভিত্তিক রাজনীতিও বিলুপ্তি চায় প্রতিটা ছাত্রছাত্রী। ক্যান্টিন, ডাইনিং থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগ সবজায়গায় যেনো আসে স্বচ্ছতা। একাডেমিকে গাদাগাদা শিটের মুখস্ত সিস্টেমের বাইরে পড়াশোনায় সৃজনশীলতা আনা হোক। ল্যাব খাতা লেখার যে অপ্রয়োজনীয় প্রেশার কমানো হোক। লাগাতার সিটি কুইজ কমিয়ে শিক্ষার্থীদের আরো অন্যান্য এক্টিভিটিস এর সুযোগ করে দেওয়া হোক।

রিফাত ইব্রাহীম
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্ক হবে বন্ধুত্বসুলভ’

৭১ এর স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, অথচ এতোগুলো বছরেও পড়াশোনার মান, সংস্কৃতি চর্চা, গবেষণা প্রায় সবকিছুর দিক থেকেই পিছিয়ে রয়েছে এই ক্যাম্পাস। দ্বিতীয় স্বাধীনতার পর আমরা চাইনা সেই একইভাবে আমাদের ক্যাম্পাস অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে পিছিয়ে থাকুক। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীন ক্যাম্পাস হিসেবে আমার চাওয়া প্রত্যেকটা শিক্ষার্থী কোনোরূপ ভীতি ছাড়াই গর্বের সহিত তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলবে ও অধিকার আদায় করে নিবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো প্রকার লেজুড়ভিত্তিক রাজনীতি চলবে না, সেইটা ছাত্র রাজনীতি বা শিক্ষক রাজনীতি যেটাই হোক না কেনো। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনোরূপ দুর্নীতি, লবিং কিছুই গ্রহণযোগ্য হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার মান বৃদ্ধি, ল্যাব বৃদ্ধি করা হোক। কোনো শিক্ষক তাদের ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটানোর জন্য কোনো শিক্ষার্থীকে নম্বর কমানোর হুমকি দিতে পারবে না। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্ক হবে সম্পূর্ণ বন্ধুত্বসুলভ। কোনো প্রশাসন যদি শিক্ষার্থীদের দাবি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারে অবিলম্বে সেই প্রশাসন বাতিল করার অধিকার শিক্ষার্থীদের দিতে হবে এবং শিক্ষার্থীবান্ধব নতুন প্রশাসন গঠন করতে হবে।

আইরিন সুলতানা আশা
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

‘মাদক ও রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস চাই’

বাংলাদেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম একটি বড় সমস্যা হলো সেশনজট। ৪ বছর এর অনার্স করতে লেগে যায় ৫-৬ বছর, কোনো কোনো ডিপার্টমেন্টে এর দৈর্ঘ্য আরো বেশি। অতিরিক্ত সেশনজট বর্তমানের শিক্ষার্থীদের কাছে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আমি চাই বাংলাদেশের প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয় যেনো সেশনজট মুক্ত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্রত্যেক শিক্ষার্থী অঢেল স্বাধীনতা পায়। সেই লাগামহীন স্বাধীনতা তরুণ সমাজকে মাদকসহ আরো বিভিন্ন ধরনের অপরাধের প্রতি ধাবিত করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত মাদক এবং অন্যান্য অপরাধের জন্য উপযুক্ত আইন প্রণয়ন ও তার সঠিক প্রয়োগ করা। বর্তমানে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ছাত্র-রাজনীতি। ছাত্র-রাজনীতির কারনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অরাজকতার সৃষ্টি হয়। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকার ক্ষুন্ন হয়। তাছাড়া হলের সিট বাণিজ্য, ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি, ছাত্রী হয়রানির মত ঘটনা তো নিত্তনৈমিত্তিক বিষয়।

আফ্রাদ শাওন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

‘সম্পূর্ণ সেশনজট মুক্ত ক্যাম্পাস গড়তে হবে’

শিক্ষার্থীদের ত্যাগের বিনিময়ে আজকে সোনার বাংলা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করছে। তাই এতদিন ধরে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব হয়রানির শিকার হচ্ছিলো তার অনতিবিলম্বে সমাধান করা উচিত। প্রশাসনের নানা অব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন বিভাগের সেশনজট চোখে পড়ার মতো। সেশনজট নিরসনের জন্য প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে। হলে কোনো রাজনৈতিক ছায়া যেন নতুন করে তৈরি না হয়। মেধা এবং আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় সিট বরাদ্দ করতে হবে। পাশাপাশি হলের খাবারের মান ছিলো যাচ্ছেতাই। তাই এদিকেও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সব মিলিয়ে ভাতৃত্ব এবং সম্প্রীতি তৈরি হবে এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যেখানে শিক্ষার্থীরা সর্বদা নিরাপদ বোধ করবে।

ইফতেখার বাঁধন
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

‘শিক্ষকদের থেকে সহানুভূতিশীল মনোভাবের প্রত্যাশা’

একটি আদর্শ ক্যাম্পাসে থাকতে হয় সুব্যবস্থিত শ্রেণিকক্ষ, আধুনিক পাঠাগার, এবং গবেষণা সুবিধা যা ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অপ্রতুল। হল এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক, যাতে শিক্ষার্থীরা নিশ্চিন্তে পড়াশোনা করতে পারে। খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থাকা উচিত। শিক্ষকদের সহানুভূতিশীল মনোভাব শিক্ষার্থীদের মানসিক উন্নয়নে সহায়ক হবে। ক্যাম্পাসে সমতা ও অন্তর্ভুক্তির পরিবেশ বজায় রাখা জরুরি, যাতে সবাই একসাথে এগিয়ে যেতে পারে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যান্টিন চালু করা এবং ক্যান্টিনে ও হল সমূহের ডাইনিংয়ে উন্নত পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা এবং পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা উচিত। বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসকে রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণা করা এখন সকল শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি হয়ে উঠেছে। পরিবেশবান্ধব উদ্যোগগুলো ক্যাম্পাসকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সর্বোপরি, একটি ভালো ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের উন্নত ভবিষ্যতের জন্য প্রেরণা দেবে।

ওয়াসেদ আলী
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।