নদী পাড়ের খেয়াঘাট এখন শুধুই স্মৃতি

  • বর্ণালী জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রংপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

একটা সময় উত্তরাঞ্চলে নৌকায় যাতায়তের বাহন হিসেবে মাঝিদের হাক-ডাকে মুখর ছিল নদীর দুই তীর। ভোর থেকে নদীর দুই তীরেই নৌকা নিয়ে হাজির থাকতেন মাঝিরা৷ যাত্রী তুলে ভাটিয়ালি, মারফতি, মুরশীদি গান গেয়ে পাল তোলা নৌকার মাঝিরা নদীর প্রাণকে সজীব করে তুলতো। কালের পরিক্রমায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের সাথে সাথে এসব খেয়াঘাট অতীতের স্মৃতি গেছে আজ। যাতায়াতের বাহন পরিবর্তন হওয়ায় পেশা বদলে ফেলেছেন অসংখ্য মাঝি।

বর্তমানে পেশা বদলে নতুন জীবিকায় দেখা যায় মাঝিদের। ঠিক তেমনি পথ-ঘাট চারিদিকের পরিবর্তনও চোখে পড়ার মত। নতুন সড়ক নির্মান হয়ে আধুনিক বাহনে প্রাণ চাঞ্চল্য হয়ে উঠেছে রংপুরের গঙ্গাচড়া-লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা। গঙ্গচড়া উপজেলার মহিপুরে তিস্তা নদীর বুকে সেতু নির্মান করে অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর হয়েছে মানুষজন। অথচ ৬ বছর আগেও এখানে ছিল একটি বিশাল খেয়াঘাট । গাইবান্ধার ঘাঘট, কুড়িগ্রমের ধরলা, নীলফামারীর চারালকাটা এসব নদীতে একটা সময় খেয়া পারাপার হত। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন নদীর বুকে সেতু নির্মান হওয়ায় আর নেই খেয়াঘাট।

বিজ্ঞাপন

রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষের এক সময় জীবিকা নির্ভর করত নদীর উপরেই। আবহমান কাল থেকেই জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল অসংখ্য নদ-নদী। পারাপারের জন্য ছিল অসংখ্য খেয়াঘাট।এখন আর এসব দৃশ্য চোখে পড়ে না।

উত্তরের ১৬ জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় শতাধীক নদী শুকিয়ে ক্ষীণ ধারায় প্রবাহিত প্রায়। এসব নদী দেখে এখন আর কেউ মনে করে না তাদের খরস্রোতা যৌবনের কথা। কোথাও নদী শুকিয়ে যাওয়ায়, আবার কোথাও সেতু নির্মাণ হওয়ায় উত্তরাঞ্চল থেকে হারিয়ে গেছে নদী পথে পারাপারে প্রায় দেড় হাজারেও বেশি খেয়াঘাট।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, এক সময় তিস্তা নদীর শাখা নদী হিসেবে ঘাঘট ও মানাস দাপটের সাথে এ অঞ্চলের প্রকৃতিকে শাসন করতো। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ পারাপার হতো এসব খেয়াঘাট দিয়ে। এই খেয়াঘাটগুলোর অনেক স্থানে নগরায়নের সুবাতাসের ফলে ব্রীজ, রাস্তাঘাট নির্মাণ হয়েছে। আবার অনেক স্থান পরিণত হয়েছে হাজার হাজার একরের আবাদী জমিতে।

বর্তমানে খেয়াঘাট বলতে এই প্রজন্মের কাছে ইতিহাস। ইতিহাস লেখক জোবায়ের আলী জুয়েল জানান, পীরগাছা উপজেলা দিয়ে এক সময় প্রবাহিত হত আড়াই কুমারী নদী। খরস্রোতা এই নদীতে ইংরেজি বিরোধী আন্দোলনের ইতিহাস খ্যাত দেবী চৌধুরী রাণী ও ভাবনী পাঠক বজরা যোগে নাপাই চন্ডি এলাকায় ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। এখন এই নদীটি আর নেই। চারিদিকে শুধু ফসলের মাঠ। এই নদীকে ঘিরে ছিল শতাধিক খেয়াঘাট। এভাবেই খেয়া ঘাট হারিয়ে গেছে আমাদের মাঝ থেকে।

এসব নদী, উপনদী, শাখা প্রশাখা নদী, ছড়া নদী, নালা নদী এবং নদীখাতের খেয়া পারাপার এখন এ অঞ্চলের মানুষের কাছে শুধুই স্মৃতি।