আমাদের মানসিক সুস্থতা ও কর্মক্ষমতা নির্ভর করে মস্তিষ্কের কার্যকারিতার ওপর। আর মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদিন সঠিক পরিমাণে পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ শারীরিক সুস্বাস্থ্যের জন্য যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন মানসিক সুস্থতার জন্যেও। আপনার ডেইলি মেনুতে নিচের দশটি খাবার যোগ করে মানসিক চাপকে জয় করুন, উপভোগ করুন জীবন
১. ডার্ক চকলেট
শরীরে শক্তি যোগাতে ডার্ক চকলেট খান। এতে প্রচুর পরিমাণে কোকো থাকে যা আপনাকে কর্মক্ষেত্রে করবে চাঙ্গা। কোকো দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন উপত্যকার উদ্ভিদ যার বীজ থেকে চকলেট তৈরি হয়।
কোকোতে থাকে ফ্লাবিনয়েড যা স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। গবেষণায় প্রমাণিত, ডার্ক চকলেট মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়ায়। প্রতিদিন ৬ গ্রাম ডার্ক চকলেট গ্রহণ হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
২. আমিষসমৃদ্ধ খাবার
মানবদেহের ২০% গঠিত হয় আমিষ বা প্রোটিন দিয়ে। আমিষসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণে অ্যালজাইমার রোগের প্রবণতা হ্রাস পায়। অ্যালজাইমার একটি মারাত্মক মানসিক রোগ যা হলে বিষণ্ণতা, অবসাদ, স্মৃতিভ্রষ্টতা, আত্মঅনুপ্রেরণার অভাব ও আত্মহত্যার প্রবণতাসহ বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি হয়।
মাছ-মাংসের পাশাপাশি ডিম, সয়াবিন, শিম ও বাদাম থেকে আমরা প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় প্রোটিন পেতে পারি।
৩. ক্যান্ডির বদলে বেরি খান
আপনি যদি একজন সুইট লাভার বা মিষ্টিপ্রেমী হন তবে নিয়মিত চকলেট ক্যান্ডির বদলে বেরি খান। আপনার নিকটস্থ গ্রসারিতে এখন ব্লু বেরি, ব্লাক বেরি, স্ট্র বেরি বা মাল বেরি পাওয়া যায় যা মস্তিষ্কের খাদ্য হিসাবে কাজ করে স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন জটিল রোগ থেকে আপনাকে দূরে রাখবে।
বিভিন্ন বেরির মধ্যে ব্লু বেরি স্বাস্থ্যের খুব উপকারী। ব্লু বেরিতে আছে ফাইবার, ভিটামিন সি ও ভিটামিন কে। গবেষণায় প্রমাণিত, প্রতিদিন ব্লু বেরি খেলে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায় ও শর্টটার্ম মেমোরি লস বা স্মৃতিভ্রষ্টতা প্রতিহত হয়।
৪. পান করুন গ্রিন টি
প্রতিদিন সকালে নাস্তার টেবিলে অথবা অফিসের ডেস্কে গ্রিন টি দিয়ে শুরু হোক আপনার দিন। গ্রিন টি’র ওষুধি গুণ অনেক। গ্রিন টি একটি জৈব এন্টি অক্সিডেন্ট যার প্রধান উপাদান এপিগ্যালাক্টক্যাটেসিন (ইজিসিজি) যা কোষের ক্ষয় রোধ করে ও অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
গ্রিন টি-তে আছে ক্যাফেইন যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে মনকে চাঙ্গা করে। এতে আরো আছে অ্যামিনো এসিড যা ক্যাফেইনের সাথে সমন্বয় ঘটিয়ে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৫. ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার
সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি এসিড থাকে যা মস্তিষ্কের ও রেটিনার কোষপ্রাচীর গঠনে সহায়তা করে। ফ্যাটি এসিডের একটি প্রধান উপাদান ‘ওমেগা থ্রি এস’ যা সামুদ্রিক মাছ যেমন স্যালমন, মেকেরেল, টুনা ও সার্ডিন প্রভৃতিতে পাওয়া যায়।
মাছ ছাড়া শিমের বিচি ও কলাই প্রভৃতি ফ্যাটি এসিডের উদ্ভিদজাত উৎস।
৬. বিটের জুস বাড়াবে শারীরিক স্ট্যামিনা
বিট একধরনের উদ্ভিদ যা প্রধানত উত্তর আমেরিকায় জন্মায়। স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিদের ডেইলি মেনুতে এটি স্থান পাবে কারণ বিটের জুস উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায় ও মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন ত্বরান্বিত করে।
নিয়মিত বিট জুস পান শারীরিক স্ট্যামিনা বৃদ্ধি করে। এজন্য এটি অ্যাথলেটদের জন্য একটি অপরিহার্য ডায়েট।
৭. আখরোট
আখরোট একটি সুস্বাদু ফল, এটি উত্তর আমেরিকা মহাদেশের কানাডার অন্টারিও প্রদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা, ফ্লোরিডা থেকে মধ্য টেক্সাস পর্যন্ত বিস্তৃতভাবে চাষ হয়।
আখরোটে প্রোটিন, ফাইবার, ম্যালাটনিনসহ ভিটামিন বি আছে। গবেষণায় পাওয়া যায় আখরোট মানবদেহে পার্কিসন, অ্যালজাইমারসহ বিভিন্ন স্নায়ুরোগ প্রতিরোধ করে।
৮. অলিভ অয়েল-তরল স্বর্ণ
মানবদেহের হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে অলিভ অয়েলের সুখ্যাতির জন্য একে তরল স্বর্ণ বলা হয়। প্রতিদিনের খাবার তৈরিতে অলিভ অয়েলের ব্যবহার সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি ডিটক্সিন হিসাবে কাজ করে মস্তিষ্কের কোষ থেকে অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর পদার্থ দূর করে।
গবেষণায় প্রমাণিত, অলিভ অয়েল গ্রহণে মানুষের চিন্তা, অভিজ্ঞতা ও ইন্দ্রিয় দ্বারা নতুন কিছু শেখার ও বোঝার সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
৯. অ্যাভোকেডো
এটি একটি পুষ্টিকর ফল যা উৎপত্তিগতভাবে মেক্সিকোতে জন্মে। অ্যাভোকেডোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও ভিটামিন কে থাকে।
এটি আপনাকে কলার চেয়েও বেশি পটাশিয়াম যুগিয়ে অ্যালজাইমার, পার্কিসনসহ বিভিন্ন জটিল স্নায়ুরোগ থেকে দূরে রাখবে। একটি গবেষণায় অ্যাভোকেডোতে ক্যান্সাররোধী উপাদানও পাওয়া গেছে।
১০. কারকিউমিন
কারকিউমিন একটি খাদ্য উপাদান। খাবারে মসলা হিসাবে আমরা যে হলুদ ব্যবহার করি তাতে প্রচুর কারকিউমিন থাকে। এটি মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্যের জন্য হলুদের পাশাপাশি কারকিউমিন সাপ্লিমেন্টও ব্যবহার করা যেতে পারে।