জার্মানিতে যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার ৬৫ হাজার নারী!

  • জাভেদ পীরজাদা, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বে বিশ কোটির বেশি নারী যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার

বিশ্বে বিশ কোটির বেশি নারী যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার

পিলে চমকে ওঠার মতো তথ্য। একসময় শোনা যেত আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলোতে যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার হচ্ছেন নারীরা। কিন্তু ইউরোপের সভ্যদেশ জার্মানিতে কী এমন ঘটতে গেল যে যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার নারীর সংখ্যা বাড়ছে। নারী অধিকার বিষয়ক সংগঠন ‘দ্য ফ্যাম’ জানিয়েছে, যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার ৬৫,০০০ নারী বর্তমানে জার্মানিতে অবস্থান করছেন৷ ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে কেট ব্র্যাডি এক নারীর সঙ্গে দেখা করেছেন, যিনি এই বর্বর চর্চার ইতি কামনা করেছেন।

কেট ব্র্যাডি বলেন, “আমার বয়স তখন বারো বা তের। বেশ কয়েকজন আমাকে চেপে ধরেছিল। তারপর আমার ওটা কেটে ফেলে। এরপর আমাকে একটি টেবিলের ওপর শুইয়ে রাখে। সেদিনের ছবি এখনো আমার চোখে ভাসে। আমি প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করছিলাম৷ এরপর তারা সেখানে সেলাই করে এবং আমার দুই পা একসঙ্গে একমাসের জন্য বেঁধে রাখে যাতে ক্ষত শুকিয়ে যায়।”

বিজ্ঞাপন

স্টেফি গ্রানিথ নামের আরেক নারী বলেন, “এসব কেন হচ্ছে জার্মানিতে বুঝতে পারছি না। নারীদের সংখ্যা এদেশে বেড়ে যাচ্ছে বলে তাদের অক্ষম করে দেওয়া হচ্ছে? নারীর যৌনানুভূতি থাকবে না এটা কেমন কথা। নারী কি তবে জার্মানির সেক্স মেশিন হতে যাচ্ছে? আমার এক বান্ধবী তো পালিয়ে গেছে ভিয়েনায়। এ দেশ ছেড়ে হয়তো আমিও পালাব অচিরেই। ভাগ্যিস আমার জীবনে এমন ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু ঘটতে কতক্ষণ। আমার বয়ফ্রেন্ডকে বলেছি সে আমাকে সারাজীবন পাশে চাইলে আমাকে নিয়ে অন্য দেশে সেটেলড হতে। এ আমি সহ্য করতে পারব না। আমার এক কাজিনের জীবনে এমন দুর্বিষহ ঘটনা এবছরের জুন মাসেই ঘটেছে। শুনেছি তাকে নেকেড করে তার ভগাঙ্কুর কেটে ফেলেই ক্ষান্ত হয়নি। তার যোনীমুখও সেলাই করে দিয়েছে। যাতে সে কারো সাথে সেক্সও করতে না পারে। এসব বর্বরতার শেষ কোথায়?”

আইভরি কোস্টে যৌনাঙ্গচ্ছেদবিরোধী ক্যাম্পেইন


বিশ্বের যেসব দেশে নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদ বা এফজিএম এখনো চালু আছে, সেসব দেশ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানিতে নারীর জন্ম হার বেড়ে যাওয়ায় এখানে এমন চর্চার শিকার নারীর সংখ্যা বেড়ে গেছে বলে মনে করছে নারী অধিকার বিষয়ক সংগঠন ‘দ্য ফ্যাম’৷ সংঠনটির হিসেব অনুযায়ী, জার্মানিতে বর্তমানে এমন নারীর সংখ্যা ৬৫,০০০-এর মতো। গত বছরের তুলনায় যা ১২ শতাংশ বেশি।

নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদ নানা প্রক্রিয়ায় করা হয়। কোথাও কোথাও যৌনাঙ্গের ভগাঙ্কুরের অংশবিশেষ কেটে ফেলা হয়। আবার মেয়েরা যাতে যৌনমিলনের সময় বেশি আনন্দ না পায় এবং বিয়ের আগ অবধি কুমারী থাকে, সেই উদ্দেশ্যে অনেক জায়গায় যোনীর প্রবেশপথও সেলাই করে দেওয়া হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, গোটা বিশ্বে বিশ কোটি নারী এফজিএম-এর শিকার। আর এর ফলে নারীর মাসিকের সময় প্রদাহ, কাটাস্থলে বারংবার ইনফেকশন, সন্তান জন্মদানে সমস্যা এবং যৌনক্ষমতা কমে যাওয়াসহ নানা সমস্যা হয়।

জার্মানিতে এফজিএম নিষিদ্ধ হলেও অভিবাসী পরিবারে জন্ম নেওয়া ১৫,৫০০ মেয়ে এই চর্চার শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে আছে বলে জানিয়েছে দ্য ফ্যাম। কেননা, তাদের ছুটি কাটানোর নামে বাবা-মায়ের দেশে নিয়ে এফজিএম করানো হতে পারে। তাই, তাদের রক্ষায় কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

বিশ্বের বিশ কোটির বেশি নারী যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার, জানিয়েছে জাতিসংঘ। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় বিশ্ব সংস্থাটি৷ যৌনাঙ্গচ্ছেদের এই হিসাব আগের সকল পরিসংখ্যানের চেয়ে অনেক বেশি। ইউনিসেফ-এর প্রতিবেদনে মোট ৩০টি দেশ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এই বর্বরতার শিকার অর্ধেক নারীর অবস্থান মিশর, ইথিওপিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায়। গতবছরের তুলনায় এই হিসেব প্রায় সাত কোটি বেশি৷ গত বছরের হিসেবে ইন্দোনেশিয়ার কোনো তথ্য ছিল না। তবে এবার জার্মানির নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সবাই বেশ চমকে উঠেছেন।

ইউনিসেফ-এর উপ-নির্বাহী পরিচালক গীতা রাও গুপ্তা বলেন, “যৌনাঙ্গচ্ছেদের পদ্ধতি দেশভেদে ভিন্ন ভিন্ন রকম হয়। কিছু পদ্ধতি ভুক্তভোগীর জীবনের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে এমন শারীরিক সমস্যা তৈরি করে। কিন্তু জার্মানির মতো দেশে এসব কেন হচ্ছে এ তথ্য পেয়ে আমরাই অবাক হয়েছি।”