পাকিস্তান কি ‘বোবা চরিত্রে’ অভিনয় করতে পারবে?



জাভেদ পীরজাদা, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
পাকিস্তান বন্ধু করেছিল ইরানকে

পাকিস্তান বন্ধু করেছিল ইরানকে

  • Font increase
  • Font Decrease

একটা কথা সারা বিশ্বে চালু আছে—আমেরিকা যার বন্ধু তার আর শত্রুর দরকার হয় না। এ কথার মানে কী? মানে হলো আমেরিকা যার বন্ধু তার শক্রুর সংখ্যাও শেষ হয় না। আমেরিকার বন্ধু পাকিস্তান। পাকিস্তানের শক্র ভারত। ভারতের শক্র চীন। চীনের বন্ধু পাকিস্তান। এদিকে আমেরিকা ভারতেরও বন্ধু। পাকিস্তানও বন্ধু করেছিল তাই ইরানকে। কিন্তু এরই মধ্যে সোলাইমানি হত্যার ভেতর দিয়ে ইরান ও আমেরিকা মারমুখী। চারিদিকে এত বন্ধু এত শক্র, এত কূটকৌশল, কী করবে পাকিস্তান?

বন্ধু দিয়েছিল মনে আঘাত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্যের কারণে আমরিকা ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্কে মারাত্মক অবনতি দেখা দিয়েছে। এমন সময়ে এসেই সম্পর্কে উন্নতি ঘটছে পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে। গতবছরের ১ জানুয়ারি ট্রাম্প অত্যন্ত অবমাননাকর এক টুইটার পোস্ট দেওয়ার পর ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের সম্পর্ক একেবার তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল।

ওই পোস্টে ট্রাম্প বলেছেন, গত ১৫ বছর ধরে আমেরিকা বোকার মতো পাকিস্তানকে তিন হাজার তিনশ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান মিথ্যা ও প্রতারণা ছাড়া কিছুই দেয়নি; আমাদের নেতাদের বোকা মনে করেছে। আমরা যেসব সন্ত্রাসীকে আফগানিস্তানে ধরার জন্য খুঁজি, সে বিষয়ে পাকিস্তান সাহায্য করে না বরং তাদের নিরাপদ আশ্রয় দেয়। তাই পাকিস্তানকে আর সাহায্য দেওয়া হবে না। এরমধ্যে আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতি। কী করবে পাকিস্তান? ইমরান সরকার চুপ থাকলেও সে দেশের বিশেষজ্ঞরা বসে নেই। লাভক্ষতির হিসাব কষছেন।

ইরান-আমেরিকার যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পাকিস্তান বেকায়দায়
পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সাবেক এয়ার কমোডর ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জামাল হোসাইন সাউথ এশিয়ান মনিটরকে দেওয়া এক ইন্টারভিউতে বলেছেন, কুদস বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে সোলাইমানি অন্য দেশে সামরিক ও গোপন অপারেশনের জন্য দায়ী। ফলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে, বিশেষ করে বালুচিস্তান ও সিন্ধু প্রদেশে, অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা চালানোর জন্য কূলভূষণ যাদবের মতো ভারতীয় এজেন্ট, সন্ত্রাসী ও অন্তর্ঘাতমূলক উপাদানকগুলোকে অবাধে সুযোগ দেওয়ার জন্যও দায়ী।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ টুইটার পোস্টে লিখেছেন, আমরা উত্তেজনা ত্বরান্বিত করতে বা যুদ্ধ চাই না। বরং আমরা যে কোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করতে চাই। এতে মনে হয় ইরান আর হামলা চালাবে না। তার মতে, ট্রাম্প যদিও বলেছিলেন যে মার্কিন স্বার্থে হামলা করা হলে বোমা বর্ষণের জন্য তিনি ৫২টি স্থান নির্ধারণ করে রেখেছেন, কিন্তু ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার পর তিনি বলেছেন, ‘সবকিছু ঠিক আছে।’ এতে মনে হচ্ছে, কোনো পক্ষই আর উত্তেজনা বাড়াতে চায় না। ট্রাম্প যদি ইরানের অভ্যন্তরে আর কোনো প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নির্দেশ না দেন, ইরানও যদি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আর কোনো সামরিক হামলা না চালায়, তবে বর্তমান সংকট প্রশমিত হবে।

পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশের সাথে ইরানের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে

পাকিস্তানি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সালমান রাফি শেখ বলেন, “ইরানের সাথে ভবিষ্যতে যে কোনো সংঘাতের ক্ষেত্রে পাকিস্তান যদি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হয়, তাহলে পাকিস্তানে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর মধ্যে কট্টর বিভাজন আরো বেড়ে যাবে। আফগানিস্তানের যুদ্ধ যেভাবে পাকিস্তানের সুন্নী গ্রুপগুলোর মধ্যে চরমপন্থা সৃষ্টির জন্য সরাসরি দায়ী, তেমনি ইরানে যুদ্ধ লাগলে সেটাও প্রধান শিয়া গ্রুপগুলোর মধ্যে সামরিক তৎপরতা সৃষ্টির জন্য একটা আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে দেবে। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ৩৬-৬৪ মিলিয়ন শিয়া রয়েছে, এর মধ্যে পাকিস্তানেই রয়েছে ২৫ মিলিয়ন। ইরান যদিও এখন পর্যন্ত পাকিস্তানকে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে দেখছে না, তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই পাকিস্তানের শিয়া গ্রুপগুলোর তেহরান ও বাগদাদের সাথে শক্ত যোগাযোগ রয়েছে। সত্য হলো, ইরাকে সোলাইমানির জানাজার নামাজ যিনি পড়িয়েছেন, সেই আয়াতুল্লাহ বাশির নাজাফিও একজন পাকিস্তানী শিয়া।”

বালুচিস্তান এলাকার সিনেটর হাসিল বেজেঞ্জো বলেছেন, “পাকিস্তানের একটা বড় শিয়া জনগোষ্ঠী রয়েছে এবং ইসলামাবাদ যদি ওয়াশিংটনের পক্ষ নেয়, তাহলে দেশের মধ্যে সাম্প্রদায়িক হানাহানি শুরু হয়ে যাবে।” পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশের সাথে ইরানের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে এবং সে কারণে তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ফলে পাকিস্তান বুঝতে পারছে ইরানকেও চটানো যাবে না, আবার আমেরিকার খুব কাছেও ভেড়ার উপায় নেই।

শক্রর শক্র বন্ধু
ভারতের সাথে চীনের যুদ্ধ হয়েছে। কারগিল যুদ্ধ। বিশ্ব বাজার দখলে ভারত ও চীন দুই দেশই প্রতিদ্বন্দ্বী। ফলে এ দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক সবসময়ই খারাপ। চীনের শক্র ভারত। ভারতের শক্রু পাকিস্তান। শক্রর শক্র বন্ধু—এই নীতিতে পাকিস্তানের পাশে থাকে চীন।

কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা’ বাতিলের মোদী সরকারের সিদ্ধান্তে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল পাকিস্তান এবং চীন। তবে, পশ্চিমা সমাজ এই ইস্যুতে মুখে কুলুপ এঁটে আছে। ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা’ বাতিলের যে সিদ্ধান্ত নতুন দিল্লি নিয়েছে তার কড়া সমালোচনা করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এক ‘বর্ণবাদী মতাদর্শ’ অনুসরণ করে উল্লেখ করে তিনি সংসদে বলেন, “এই মতাদর্শ তুলে ধরতে তারা নিজেদের এবং আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে।”

ইমরান খান ও ডোনাল্ড ট্রাম্প

মোদী সরকার ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের এই সিদ্ধান্তকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে চ্যালেঞ্জ করারও অঙ্গীকার করেছেন খান। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে শান্তি ফেরাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তাও চেয়েছেন তিনি। প্রয়োজনে বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেও তুলতে চেয়েছিলেন ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদের রূপ নেওয়া পাকিস্তানের এই প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, “আমি এটা পরিষ্কার করে বলতে চাই যে এই বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদসহ সব ফোরামে লড়াই করব আমরা।”

এদিকে, চীনও কাশ্মীর ইস্যুতে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। চীন এবং ভারতের মধ্যকার হিমালয় সীমান্তের বেশ কিছু এলাকা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। এরমধ্যে লাদাখ রয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইয়াং এক বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন, চীন-ভারত সীমান্তের পশ্চিমাঞ্চলের যে অংশকে বেইজিং নিজেদের এলাকা মনে করে, সেই অংশ ভারত নিজেদের অধিভুক্ত করায় আপত্তি জানাচ্ছে চীন। তিনি বলেছিলেন, “নিজেদের অভ্যন্তরীণ আইন বাতিলের ভারতের একতরফা সিদ্ধান্ত চীনের আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ করছে৷ এটা গ্রহণযোগ্য নয়।”

হইয়াও হইলা না শেষ
কিন্তু পরে দেখা গেল আমেরিকা গেলেন মোদী। মোদীর পরে গেলেন ইমরান। ডোনাল্ড ট্রাম্প দুজনকেই আলাদাভাবে বিষয়টি মীমাংসা করতে বললেন। তিনি ভালো লিয়াজোকারী। কিন্তু আজও বিষয়টি অমীমাংসিত রয়ে গেল। অংকটা কঠিন। বিশেষ করে রাজনীতির। কারণ আমেরিকার শক্র আবার চীন। এখন পাকিস্তান কোন কূল রাখবে?

ফলে পাকিস্তানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন ‘ইরান’ ইস্যুতে আমরা আগে পরে নেই। আমেরিকাকেও ক্ষেপানোর দরকার নেই। লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক রেহান হাশমী ‘ডন’কে বলেন, “পাকিস্তানের এখন যে অর্থনৈতিক অবস্থা এটি ভীষণ খারাপ। ইমরান ক্ষমতায় বসেই ঘোষণা দিয়েছিলেন বিশ্বের কাছে দরকারে তিনি ভিক্ষা করবেন। কিন্তু ভিক্ষাও দেওয়া হয় পছন্দমতো ভিক্ষুককে। আমেরিকা খুশি তো, চীন নারাজ, চীন খুশি তো ইরান নারাজ, ইরান খুশি তো আমেরিকা নারাজ। তাই পাকিস্তানের উচিত হবে চুপ থাকা।”

কথায় আছে বোবার কোনো শক্র নেই। পাকিস্তান কি সেই পথেই হাঁটবে?

   

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

  • Font increase
  • Font Decrease

‘পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত/ সবুজে হদুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত/ ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে/ ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলে শুয়েছে মাঠের পরে/ কৃষাণ কনের বিয়ে হবে, তার হলদি কোটার শাড়ী/ হলুদে ছোপায় হেমন্ত রোজ কটি রোদ রেখা নাড়ি/ কলমী লতার গহনা তাহার গড়ার প্রতীক্ষায়/ ভিনদেশী বর আসা যাওয়া করে প্রভাত সাঁঝের নায়।’ পল্লীকবি জসীম উদদীনের ‘ধান ক্ষেত’ কবিতার অপূর্ব চিত্রায়ন কৃষকের শ্রম-ঘাম আর প্রকৃতির তরফে। কাব্যে-পঙক্তির বিমূর্ত চিত্র মূর্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ মাঠে। কিষান-কিষানির বুক ভরা আশার সার্থক রূপায়ন হতে চলেছে এ-মৌসুমে।

এখন ভরা বৈশাখ। এ-সময়টা বোরো ধানের। বোরো ধান দেশের খাদ্যচাহিদার অন্তত ৫৫ শতাংশ মিটিয়ে থাকে। দেশের হাওরভুক্ত ৭টি জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরে এই বোরোর চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই ধান অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে দেশের খাদ্যচাহিদায় ঘাটতি পড়ে না। তাই এই ধান চাষ থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া, বিশেষ করে রোদের উপস্থিতি অতি জরুরি। বর্তমানে সে পরিস্থিতি চলছে।

সিলেট অঞ্চলের মানুষ বলে এই অঞ্চলের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, হতাশা-উচ্চাশার সঙ্গে আমি পরিচিত। তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে টানছি। তাদের সঙ্গে থেকে জেনেছি, বোরো মৌসুমে নির্বিঘ্নে ঘরে ফসল তোলা কতটা জরুরি। গবাদি পশুর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি খড় সংরক্ষণও। তীব্র রোদ এখানে সমস্যার নয়, এটা বরং আনন্দের। কারণ এই রোদ গা পোড়ালেও বুক ভরা আশার সার্থক বাস্তবায়নের পথ দেখায়। দেশের যে খাদ্যচাহিদা, যে খাদ্যনিরাপত্তা সেটা এই বোরো ধানের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই চাষ থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে দরকার হয় প্রকৃতির সহায়তা। এবার এখন পর্যন্ত সে সহায়তা আছে, যদিও এ মাসের শুরুর দিকে একবার ঝড়বৃষ্টিসহ শঙ্কার কালমেঘ হাতছানি দিয়েছিল। সেটা আপাতত দূরে সরেছে।

কিষান-কিষানির দরকার এখন তীব্র রোদ। তারা এটা পাচ্ছে। দেশে তীব্র তাপদাহ। এখানেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবু তারা এই রোদের প্রার্থনায় রয়েছে। বৃষ্টি এখন তাদের কাছে দুর্যোগ-সম। কারণ এই বৃষ্টি এবং অতি-বৃষ্টিসৃষ্ট বন্যা তাদের স্বপ্নসাধ গুঁড়িয়ে ভাসিয়ে নিতে পারে সব। ২০১৭ সালের দুঃসহ স্মৃতি এখনও বিস্মৃত হয়নি সুনামগঞ্জের কৃষকেরা। সে বছর সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৩৭ হাওরের ফসল বন্যায় এবার ভেসে গিয়েছিল। গতবার কৃষক নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তুলেছেন। এরআগের বছর অন্তত ২০টি হাওরের ফসলহানি হয়েছিল বন্যায়।

প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ক্ষেতের ফসল, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা। এখানে প্রচণ্ড তাপদাহ তাই প্রভাব ফেলে সামান্যই। রোদে পুড়ে, প্রয়োজনে ছাতা মাথায় দিয়ে কিষান-কিষানিরা স্বপ্ন তোলেন ঘরে। তারা বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা না করে বরং রোদ আরও কিছুদিন অব্যাহত রাখার প্রার্থনায় বসেন। কৃষকেরা পরিমিত বৃষ্টি চায় চৈত্র মাসে, বৈশাখে চায় খাঁ খাঁ রোদ্দুর, কারণ এই রোদে সোনালী ধান ঘরে ওঠে। লোককথার প্রচলিত, ধান তোলার মৌসুমে ঝড়বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য হাওরবাসীরা তন্ত্রসাধক বা ‘হিরাল’ ও ‘হিরালি’-দের আমন্ত্রণ জানাতেন। তারা এসে মন্ত্রপাঠ করে ঝড়বৃষ্টি থামানোর জন্য চেষ্টা করতেন। লোকায়ত বিশ্বাস থেকে আগেকার মানুষজন এমন আচার পালন করতেন। এসবে সত্যি কাজ হতো কিনা সেটা বিতর্ক এবং ব্যক্তি-বিশ্বাসসাপেক্ষ, তবে এই হিরাল-হিরালিদের আমন্ত্রণ বলে বৈশাখে একদম বৃষ্টি চায় না হাওরের কৃষক।

হাওরপারের মানুষেরা যখন রোদ অব্যাহত থাকার প্রার্থনায়, তখন দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহে পুড়তে থাকা মানুষেরা আছেন বৃষ্টিপ্রার্থনায়। দেশের জায়গায়-জায়গায় বৃষ্টি প্রার্থনায় ইস্তিস্কার নামাজ পড়া হচ্ছে, গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ আসছে এর। কোথাও প্রবল বিশ্বাসে কেউ কেউ ‘ব্যাঙের বিয়ে’ দিচ্ছেন, এটাও বৃষ্টি প্রার্থনায়। সামাজিক মাধ্যমে গরমের তীব্রতার আঁচ মিলছে, বৃষ্টি নাকি ধান—কোনটা জরুরি এই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের প্রচণ্ড তাপদাহ নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে দেশের মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে টানা দ্বিতীয় বছর বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ঘোষণাও এসেছে। বৃষ্টি-প্রার্থনায় নামাজের আয়োজনের কথাও এসেছে বিশ্বমিডিয়ায়।

একদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ, অন্যদিকে খাদ্যনিরাপত্তার প্রধান উপকরণ ধান ঘরে তোলার অনিশ্চয়তা—তবু অনেকের কাছে সাময়িক স্বস্তিই যেন মুখ্য। অথচ আর দিন দশেক বেরো আবাদ-এলাকায় বৃষ্টি না নামলে ধানগুলো ঘরে ওঠত কৃষকের। নিশ্চিত হতো খাদ্যনিরাপত্তার।

প্রকৃতির ওপর আমাদের হাত নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই; তবু মনে করি আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশে কৃষকদের গুরুত্ব থাকা উচিত। আমাদের চাওয়ায় হয়তো প্রকৃতির রীতি বদলাবে না, তুমুল রোদ্দুরের দেশে হঠাৎ বৃষ্টি নামবে না, তবে ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত রোদ্দুর কামনায় কৃষক স্বস্তি পাবে; ভাবতে পারবে এই দেশ আছে তাদের সঙ্গে।

কৃষকের জয় হোক। অন্তত বোরো-এলাকায় প্রকৃতি কৃষকের সঙ্গে থাকুক।

;

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;