নোয়াহ হারারির কল্পিত বাস্তবতা ও সমকালীন সমাজ



মিজানুর রহমান
অলঙ্করণ: কাব্য কারিম

অলঙ্করণ: কাব্য কারিম

  • Font increase
  • Font Decrease

হিব্রু ইউনিভার্সিটি অব জেরুজালেম-এর ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর ইয়োভাল নোয়াহ হারারি আমার অন্যতম প্রিয় ব্যাক্তিত্ব। তিনি তিনটি সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের লেখক, যেগুলো হলো, ‘সেপিয়েন্স: এ ব্রিফ হিস্টোরি অব ম্যানকাইন্ড’, ‘হোমো ডিউস’ এবং ‘টুয়েন্টি ওয়ান লেসন ফর দি টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরী’। আমার এই লেখার আলোচনা এগিয়েছে তার প্রথম বই ‘সেপিয়েন্স’-এর সূত্র ধরে। হারারি তার ‘সেপিয়েন্স: এ ব্রিফ হিস্টোরি অব মেনকাইন্ড’ বইয়ে ব্যাখ্যা করেছেন কিভাবে ৭০,০০০ বছর পূর্বে যে হোমো সেপিয়েন্স তথা মানব প্রজাতির প্রভাব পৃথিবীতে একটা জেলিফিশের প্রভাবের চেয়ে বেশি কিছু ছিল না, সেই প্রজাতি কিভাবে সময় পরিক্রমায় এই ধরণীতে তার একক শ্রেষ্ঠত্ব কায়েম করতে সক্ষম হলো?

এর কারণ হিসেবে তিনি যা বলেছেন সংক্ষেপে তাহলো, মানব প্রজাতির বিশাল সংখ্যায় নমনীয় হয়ে একে অন্যর সাথে সহযোগী সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারার ক্ষমতা যা অন্য কোনো প্রজাতির বেলায় দেখা যায় না। উদাহরণস্বরূপ, আপনি পনের থেকে বিশটা শিম্পাঞ্জীর দল দেখতে পাবেন কিন্তু এক হাজার শিম্পাঞ্জীর কোনো দল দেখতে পাবেন না। আপনি চল্লিশ হাজার মানুষকে একসাথে বসে মিরপুর স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ বনাম ভারতের মধ্যকার ক্রিকেট ম্যাচ উপভোগ করতে দেখতে পারেন, কিন্তু চল্লিশ হাজার শিম্পাঞ্জী মিরপুর স্টেডিয়ামে একসাথে ছেড়ে দেওয়া হলে যা দেখতে পাবেন তাহলো চরম বিশৃংঙ্খলা, একেবারে পাগলামীর চূড়ান্ত।

প্রশ্ন হলো মানুষ নিজেদের মধ্যে কিভাবে বিশাল সংখ্যায় এইরকম সহযোগী সম্পর্কের নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পেরেছে? হারারির মতে, মানুষের বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করতে সক্ষমতা অর্জনের পেছনে যে কারণ তাহলো—তারা গল্প তৈরি করতে পারে এবং সে গল্প যখন সবাই বিশ্বাস করতে শুরু করে তখন তারা সবাই একই রকমের আচার, মূল্যবোধ ধারণ করে, ফলত: তাদের সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরি হয়। হারারির কাছে এই গল্পগুলোর উদাহরণ হলো ধর্ম, জাতি, রাষ্ট্র, করপোরেশন, অর্থ ইত্যাদি, এগুলো হলো ফিকশনাল রিয়েলিটি বা কল্পিত বাস্তবতা। অর্থাৎ, মানুষ বসবাস করে দ্বৈত বাস্তবতায়। একটা হলো অবজেক্টিভ রিয়েলিটি, যেমন, পাহাড়, নদী, গাছ, মানুষের নিজের শরীর ইত্যাদি ইত্যাদি। আরেকটা হলো ফিকশনাল রিয়েলিটি যা মানুষ তার কনশাসনেস বা চিন্তা শক্তির মাধ্যমে তৈরি করে। তাহলে আপনি নিরেট বাস্তবতা থেকে কল্পিত বাস্তবতা আলাদা করবেন কিভাবে?

হারারির পদ্ধতি খুবই চমকপ্রদ আবার খুব সরল। তার মতে যা কিছু যন্ত্রণা ভোগ করতে পারে না তাই ফিকশনাল রিয়েলিটি। যেমন, জাতি বা রাষ্ট্র। আমরা প্রায়শই বলি অমুক রাষ্ট্র তমুক রাষ্ট্রের কাছে বা অমুক জাতি তমুক জাতির কাছে পরাজিত হয়েছে কিংবা নতি স্বীকার করেছে। কিন্তু জাতি কি আসলে কোনো যন্ত্রণা ভোগ করছে? রাষ্ট্র কি কোনো যন্ত্রণা ভোগ করছে? উত্তর হলো, না। কারণ এগুলো কোনো নিরেট বাস্তবতা নয়, এগুলো আমাদের কল্পিত বাস্তবতা। কিন্তু যন্ত্রণা বা দুর্দশা ভোগ করে আসলে মানুষ, অমুক কল্পিত জাতির অন্তর্ভুক্ত রক্ত-মাংসের শরীরের মানুষ। সুতরাং নিরেট বাস্তবতা যদি কিছু থেকে থাকে তাহলো মানুষ, তার শরীর। জাতি বা রাষ্ট্র নয়।

হারারি তার বিভিন্ন লেকচারে বা পাবলিক আলোচনায় এটা অকপটে বলেছেন যে, মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পেছনে এমনসব কল্পিত বাস্তবতা বা গল্পগুলোর ভূমিকা হচ্ছে প্রধান নিয়ামক। আপনি বেবুনদের কোনো দলের কাছে গিযে বেবুন সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার বক্তৃতা দিয়ে সুবিধা করতে পারবেন না। কিংবা কোনো বেবুনকে দশ টাকার নোট দিয়ে দুইটা কলা দিতে বললে কোন সাড়া পাবেন না। কারণ দশ টাকার নোট তার কাছে অর্থহীন, তাকে বরং আপনি একটা নারিকেল দিলে সে আপনাকে একটা কলা দিতে পারে। কারণ সে শুধুমাত্রই অবজেক্টিভ রিয়েলিটিতে বাস করে, কিন্তু মানুষ অন্যএকটা সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষকে দশটাকা দিয়ে আরামসে দুইটা কলা কিনে নিয়ে জায়গায় দাঁড়িয়ে খেয়ে চলে আসতে পারে, কারণ অর্থ নামক গল্পে সমগ্র মানব জাতি বিশ্বাস করে। হারারির মতে, টাকা হলো মানুষ উদ্ভাবিত পৃথিবীর সবচেয়ে সফল গল্প। সবাই এক ধর্মে, এক খোদায়, এক জাতিতে কিংবা এক রাষ্ট্রে বিশ্বাস না করলেও টাকার গল্পে সবাই বিশ্বাস করে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, লাদেন আমেরিকান জাতি বা ধর্মে বিশ্বাস না করলেও আমেরিকান ডলার নিতে বা ব্যবহার করতে কোনোদিন আপত্তি করেননি। অর্থাৎ, মানুষের সফল হবার পেছনে তাদের গল্প উদ্ভাবন এবং সেসব গল্পে বিশ্বাস স্থাপন করার ক্ষমতাই প্রধান।

কিন্তু হারারির আলোচনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো কিভাবে এই গল্পগুলোই বা ফিকশনাল রিয়েলিটিগুলোই আবার মানব প্রজাতির ইতিহাসের পরিক্রমায় মানুষের কষ্ট, দুর্দশা, যন্ত্রণা এবং ধ্বংসের মূল কারণ হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। বেশিদূর যাওয়ার দরকার নেই হলোকাস্টের ঘটনাটাই যদি দেখি তবে দেখব যে, হিটলার বা নাৎসি বাহিনীর বিপুল হত্যাযজ্ঞের পেছনে মূল কারণ ছিল জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের গল্প। কিন্তু প্রকৃতিতে বা অবজেক্টিভ রিয়েলিটিতে এমন কোনো পরিমাপক নেই বা মানদণ্ড নেই যেখানে আপনি মাপতে পারবেন কোনো জাতি থেকে কোনো জাতি শ্রেষ্ঠ অথবা কোনো ধর্ম থেকে কোনো ধর্ম শ্রেষ্ঠ। ভিন্ন ভিন্ন গল্পের ভোক্তারা তাদের গল্পকেই শ্রেষ্ঠ মনে করে এবং সেই শ্রেষ্ঠত্বকে প্রমাণে ব্যাতিব্যস্ত থাকে, প্রয়োজনে খুন করে, গণহত্যা সংঘটিত করে, জাতিগত নিধনে লিপ্ত হয় কিংবা ধর্মযুদ্ধে যায়। সবকিছুই এই গল্পগুলোর জন্য আদতে যেগুলোর কোনো জৈবিক সত্তা নেই, এগুলোর অস্তিত্ব কেবল মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত চিন্তাপ্রণালীর মধ্যেই গ্রথিত।

হারারির সেপিয়েন্স পড়ে এবং তার আলোচনাগুলো শুনে আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে, এই যে ফিকশনগুলো সেগুলো আমাদের সমাজকে কিভাবে বেঁধে রেখেছে আবার কিভাবে আমাদের সমাজে অন্যায়, হত্যা, গুম, ধর্ষণ, অবিচারকে টিকিয়ে রাখছে? সত্যিকার অর্থে আমি যা দেখি তাহলো ফিকশন এবং মিথগুলোর জন্য নিরেট বাস্তব রক্ত-মাংসের মানুষরা একে অন্যর ক্ষতি করতে ব্যস্ত। জাতি, জাতীয়তা, ধর্ম, সরকার, রাষ্ট্র, অর্থ নামের কল্পিত গল্পগুলো হয়ে উঠেছে মানুষের নিজের চেয়েও বেশি ক্ষমতাশালী—এগুলোর দোহাই দিয়ে এক ঝটকায় কাউকে রক্তাক্ত করা, খুন করা, গুম করা, জেলে পুরে দেওয়া যায়। যারা এই গল্পগুলো থেকে বাস্তবতা আলাদা করতে পারেন না (সিংহভাগ মানুষ) তারা এই গল্পগুলো অক্ষত রাখতে ইচ্ছুক, আরো শক্তিশালী করতে ইচ্ছুক, সেজন্য যাই করা লাগুক না কেনো। যারা এই গল্পগুলো চ্যালেঞ্জ করেন তাদের সাথে এই সিংহভাগের তৈরি হয় দুর্দান্ত অপছন্দের সম্পর্ক। আর এভাবেই চলতে থাকে অন্যায্যতা।

হারারি এই সমস্যাগুলোর পেছনে কল্পিত বাস্তবতাগুলোর ভূমিকা দুর্দান্তভাবে ব্যাখ্যা করলেও এ থেকে উত্তরণের পথ কী হতে পারে তা নিয়ে তেমন কিছু বলেন না। প্রশ্ন আসে তাহলে মানুষের হাতে সম্ভাব্য বিকল্প কী হতে পারে? তবে কি সময় এসেছে নতুন গল্প তৈরির, এমন কোনো গল্প যে গল্প একক কোনো গল্পের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে মাথা ঘামাবে না? যে গল্প নিজেই খোদ বহুবিধ গল্পের সমাহার, যে গল্পের কোনো শেষ নেই বরং নতুন নতুন সংযুক্তি আছে। হয়তো এভাবেই আমাদের সুযোগ আছে বহুধা এবং বহুবিধ গল্পের শেষ না হওয়া একটা সংকলন হিসেবে টিকে থাকার, নতুবা যখন যে গল্প শক্তিশালী হবে সে গল্প গিলে ফেলতে চাইবে অন্য সকল গল্পগুলোকে। তবে হারারি ঠিক এভাবে না বললেও আমার মতে, বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সবচেয়ে জরুরি হলো, মিথ/ কল্পগাথা/ কিংবদন্তী/ গল্পগুলো থেকে বাস্তবতাকে আলাদা করতে শেখা। সেটা করতে পারলেই সম্ভবত মানুষ মিথ বা ফিকশনের জন্য নিরেট বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে পারবে না কিংবা তাকে ধ্বংস করতে উন্মুখ হয়ে উঠবে না, তা সে হোক প্রকৃতি কিংবা মানুষসহ প্রকৃতিতে থাকা অপরাপর প্রাণ।


মিজানুর রহমান
সহকারী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

৫৫ বছর পর ডুবে যাওয়া জাহাজের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

৫৫ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৬৯ সালের ২৫ আগস্ট একটি দুর্যোগ বার্তা দিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ডুবে যায় অস্ট্রেলিয়ার 'এমভি নুনগাহ' জাহাজ। পরে তাৎক্ষণিক উদ্ধার তৎপরতায়ও জাহাজে থাকা মানুষদের জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তখন থেকেই জাহাজটির নিখোঁজ হওয়া দেশটির নাগরিকদের কাছে রহস্য হয়ে ছিল। 

এবার সেই রহস্যের উদঘাটনের দ্বারপ্রান্তে দেশটির বিজ্ঞান সংস্থা কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিএসআইআরও)। বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, ডুবে যাওয়া জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেছে।

ওই ঘটনায় জাহাজে থাকা ২৬ জনের মধ্যে ক্রুসহ ২১ জনের মারা যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে উঠে এসেছিল।  

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়ার তথ্য জানায়।

বিবিসি জানায়, ৭১ মিটার (২৩৩ ফুট) দৈর্ঘ্যের ওই মালবাহী জাহাজটি নিউ সাউথ ওয়েলসের উপকূল থেকে ইস্পাত নিয়ে যাচ্ছিল। পরে ঝড়ের কবলে পরে জাহাজটি ডুবে যায়। এমন ঘটনা তখন অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। 

জাহাজটি ডুবে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাঁচজনকে জীবিত ও ২০ জনের মরদেহ তুলে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একঝনের লাশ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

ডেরওয়েন্ট নদীতে ১৯৫৬ সালে তোলা 'এমভি নুনগাহ'
 

গণমাধ্যমটি জানায়, অস্ট্রেলিয়া তাদের উচ্চ রেজোলিউশন সমুদ্রতল ম্যাপিং এবং ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে ধ্বংসাবশেষের অবস্থান নিশ্চিত করেছে।

তবে সিডনি থেকে প্রায় ৪৬০ কি.মি (২৮৬ মাইল) উত্তরে সাউথ ওয়েস্ট রকসের উপকূলের গভীর জলে স্থানীয়রা এক বছর আগে একটি ধ্বংসাবশেষ দেখেছিল। পরে তারা এ সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে অবগত করার পর বিজ্ঞানীরা সন্ধান চালিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে। 

স্থানীয়দের তথ্যের পর বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ করেছিল এটি ডুবে যাওয়া জাহাজটি হতে পারে। তবে প্রয়োজনীয় কোন প্রযুক্তি বা ডাইভিং জ্ঞান না থাকার কারণে সেটিই যে ডুবে যাওয়া জাহাজ নুনগাহ তা নিশ্চিত করতে পারেনি তারা।

গত মাসে সিএসআইআরও উচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজতে শুরু করে।

পরে তারা ওই স্থানের ১৭০ মিটার নিচে এর ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে।

সিএসআইআরও'র কর্মকর্তা ম্যাট কিম্বার বলেন, এই ট্র্যাজেডি এখনও অনেকের স্মৃতিতে রয়েছে। তবে ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারের বিষয়টি জানার ফলে সবার জন্যই কিছুটা স্বস্তির কারণ হবে। 

নিহত ক্রুদের পরিবারের সদস্যরা অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনকে জানিয়েছেন, আবিষ্কারটি একটি স্বস্তির বিষয়।

;

বিশ্বের সবচেয়ে ‘কুৎসিত কুকুর’ এটি!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর কুকুরের তথ্য যেমন রয়েছে তেমনি এবার সবচেয়ে কুৎসিত আকৃতির কুকুরেরও তথ্য মিলেছে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে।

স্কাই নিউজ বলছে, চলতি বছরের ২১ জুন (শুক্রবার) যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে বিশ্বের সবচেয়ে কুৎসিত কুকু্রের প্রতিযোগিতা বসেছে। ওই প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা ওয়াইল্ড থাং নামে আট বছর বয়সী একটি কুকুর এ তকমা পেয়েছে।

তবে এবারই ওয়াইল্ড থাং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেনি। এর আগেও ৫ বার এমন প্রতিযোগিতায় প্রাণীটি অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু প্রতিবারই নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে।

ওয়াইল্ড থাং এবং তার মালিক অ্যান লুইস। ছবি: সুমিকো মুটস / এনবিসি নিউজ

ওয়াইল্ড থাং এর মালিক অ্যান লুইস বলেন, ওয়াইল্ড থাং কুকুরছানা হিসাবে একটি ভয়ানক রোগ ক্যানাইন ডিস্টেম্পারে সংক্রমিত হয়েছিল। কোন ক্ষতি ছাড়াই অনেক চিকিৎসার পর বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তার দাঁত বেশি বৃদ্ধি না পাওয়ায় জিহ্বা বাইরে থাকে এবং তার সামনের ডান পা ২৪/৭ প্যাডেল আকারে থাকে।

পুরস্কার হিসেবে তাদেরকে ৫ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৫১১ টাকা) দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিশ্বের সবচেয়ে কুৎসিত কুকুর প্রতিযোগিতা প্রায় ৫০ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিযোগিতাটি আকর্ষণীয় করার জন্য কুকুরগুলোকে বিশেষ এবং অনন্য করে সাজিয়ে তোলা হয়।

;

ট্যাক্সি চালকের অনর্গল ইংরেজি বলার দক্ষতা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

এই সংবাদটি পড়তে হলে আপনাকে ভুলে যেতে হবে শুধু শিক্ষিতরাই সাবলীলভাবে ইংরেজি বলতে পারেন! কারণ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায় এক ট্যাক্সি চালক তার যাত্রীর সাথে অনর্গল ইংরজিতে কথা বলছেন।

ঘটনাটি প্রতিবেশী দেশ ভারতের মহারাষ্ট্রে ঘটেছে। দেশটির গণমাধ্যম এনডিতিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

এনডিটিভি বলছে, ওই ট্যাক্সি চালক তার যাত্রীদের সাথে ইংরেজি কথা বলার পাশাপাশি কিভাবে আরও দক্ষ হওয়া যায় সে বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন।

মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে ধারণ করা ভিডিওটি ভূষণ নামে একজন ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী শেয়ার করেছেন। ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, "এমন ঘটনা দেখে আমি কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। পরে তার সাথে কথা বলার সময় কিছুটা তোতলা হয়েছিলাম। তার ইংরেজিতে সাবলীলতা দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম।"

পরে তার সাথে এ নিয়ে কিছুক্ষণ আলাপ হলো।

ট্যাক্সি চালক বলেন, ইংরেজি শেখা থাকলে আপনি লন্ডন এবং প্যারিসের মতো উন্নত দেশে যেতে পারবেন। এটা বিশ্বব্যাপী ভাষা। এ কারণে ইংরেজি শেখা গুরুত্বপূর্ণ।

ভিডিওটিতে একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, "তার কথা বলার ধরণ ডক্টর এপিজে আবদুল কালামের মতো শোনাচ্ছেন"।

অপর একজন লিখেছেন, "১৬ বছরের শিক্ষার পর তার ইংরেজি আমার চেয়ে অনেক ভালো।"

;

‘প্রিয় স্বাধীনতা’ কবিতার মেঘনা নদীর দেখা মেলে চুনা নদীতে



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরের জীবন

ছবি: মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরের জীবন

  • Font increase
  • Font Decrease

মেঘনা নদী দেব পাড়ি
কল-অলা এক নায়ে।

আবার আমি যাব আমার
পাড়াতলী গাঁয়ে।

গাছ-ঘেরা ঐ পুকুরপাড়ে
বসব বিকাল বেলা।

দু-চোখ ভরে দেখব কত
আলো-ছায়ার খেলা।

বাঁশবাগানে আধখানা চাঁদ
থাকবে ঝুলে একা।


ঝোপে ঝাড়ে বাতির মতো
জোনাক যাবে দেখা।

ধানের গন্ধ আনবে ডেকে
আমার ছেলেবেলা।

বসবে আবার দুচোখে জুড়ে
প্রজাপতির মেলা।

হঠাৎ আমি চমকে উঠি
হলদে পাখির ডাকে।

ইচ্ছে করে ছুটে বেড়াই
মেঘনা নদীর বাঁকে।

শত যুগের ঘন আঁধার
গাঁয়ে আজো আছে।

সেই আঁধারে মানুষগুলো
লড়াই করে বাঁচে।

মনে আমার ঝলসে ওঠে
একাত্তরের কথা,

পাখির ডানায় লিখেছিলাম-
প্রিয় স্বাধীনতা।

কবি শামসুর রাহমানের প্রিয় স্বাধীনতা কবিতার লাইনের সঙ্গে মিল রেখে বলতে হয়-

শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরে থাকা মানুষগুলোর কথা।
চুনা নদী পাড়ি দেবো, ডিঙ্গি নৌকা দিয়া।

আবার আমি যাবো আমার উপকূলের গাঁয়ে।
কাজের জন্য ছুটে বেড়াই, চুনা নদীর বাঁকে।

বনে বাঘ, জলে কুমির আর ডাঙ্গায় লোনা পানির ক্ষত।
সেই চরের মানুষগুলো, এখনো লড়াই করে বাঁচে।

বর্ষাকালের দুপুর বেলা। আকাশে কালো মেঘ খেলা করছে! নদীতে পানি ঢেউ খেলছে! ভেসে আসছে, গেট থেকে জল আসার শব্দ। নদীর এপার ওপার হচ্ছেন ডিঙা নৌকা দিয়ে পাড়ে থাকা মানুষগুলো। ছুটে চলেছেন নারী-পুরুষ একে একে চুনা নদীর তীরে কাজের সন্ধানে। সন্ধ্যা হলেই দেখা মেলে বাড়ি ফেরার তাড়া। রাতের আঁধারে পশুপাখি, জীবজন্তু, পোকামাকড়ের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচেন এই চুনা নদীর পাড়ের মানুষগুলো।

সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরে বসবাস নিত্যসংগ্রামী মানুষদের, ছবি- মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪.কম


এখানকার মানুষজন লড়াই সংগ্রাম করে এখনো টিকে আছেন। টিকে থেকে তাদের রোজ কাজের সন্ধানে অবিরাম ছুটে চলতে হয়। বর্তমানে ভাঙাগড়ার জীবনে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যত নিয়ে বসবাস করছেন তারা। শ্যামনগর উপজেলার কলবাড়ি এলাকায় অবস্থিত চুনা নদীর চরটি। ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়-সম্বল হারানো ২০-২৫টি জেলে পরিবারের ঠাঁই হয়েছে এখানে। বছরের পর বছর এই চরকে আগলে বসবাস করলেও সব সময় লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় তাদের।

তাদের একজন ৩৫ বছর বয়েসি রমেশ চন্দ্র মণ্ডল। দুর্যোগে সহায়-সম্পদ হারিয়ে আশ্রয় নেন চরের এক কোণে। সেখানে মাটির ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস তার। শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেও ভর করে থাকতে হয়, স্ত্রীর ওপর। তার কষ্টের বিনিময়ে জোটে তাদের একমুঠো ভাত। স্ত্রী একাই লড়াই সংগ্রাম করে বেঁচে আছেন তাদের নিয়ে এই চরে।

বনে পশুপাখির, জলে কুমির আর স্থলে বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে এভাবে তাদের জীবন প্রবহমান। তাদের জীবন চলার পথে নেই কোনো বিরাম। সংগ্রাম করে টিকে থাকেন সবাই। একে একে সব কিছু হারিয়েও এখানো টিকে থাকতে হয় তাদের।

রমেশের মতো একই অবস্থা ষাটোর্ধ্ব ফকির বিশ্বাসের। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়লেও পেটের দায়ে কাজ করতে হয় তাকে। একবেলা কাজ করলে অপর বেলা কাটে অসুস্থতায়!

ফকির বিশ্বাস বার্তা২৪কমকে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়-সম্বল হারিয়ে এই চরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। আশ্রয়ের দুই যুগ লড়াই সংগ্রাম করে টিকে থাকলেও ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারিনি। বরং প্রতিবছর ছোটবড় দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছি। লড়াই-সংগ্রাম করতে হয়েছে বারংবার!

জীবন কাটে যুদ্ধ করে, ঝড়-ঝঞ্ঝা মাথায় পেতে...চুনা নদীর তীরের মানুষের জীবন, ছবি- মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪.কম

চুনা নদীর চরে মাছের পোনা গুনতে দেখা যায় নমিতা রাণী রায়কে। নমিতা রাণী রায় বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্বামী-সন্তান নিয়ে সবসময় চিন্তার ভেতরে থাকতে হয় আমাকে। নদীতে কুমির আর বনে বাঘের আতঙ্ক! তারপর ডাঙায় লোনা পানির ক্ষত। লবণাক্ততায় ভরা জীবনকাল। তারপর চরটি নদীর ধারে হওয়াতে একটু জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় বসতবাড়ি। এই লড়াই-সংগ্রাম করেই বেঁচে আছি সেই প্রথম থেকে। মাছের পোনা বিক্রি করে চলে আমাদের সংসার। আমরা সবাই এখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংগ্রাম করে টিকে আছি।

নমিতা রাণী রায় বলেন, যখন বসতবাড়ি নদীর পানিতে তলিয়ে যায়, তখন স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ওই সময় অনেক কষ্টে চর এলাকার সবার দিন কাটে। শিশু সন্তানদের সবসময় নজরে রাখতে হয়। অন্যথায় নদীতে পড়ে গিয়ে ঘটতে পারে ছোট-বড় দুর্ঘটনা!

নিত্যদিনের লড়াই-সংগ্রাম

লড়াই সংগ্রামের শেষ নেই উপকূলে থাকা মানুষজনের। সর্বশেষ, ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’-এর আঘাতে নদীর জোয়ারের জলে তলিয়ে যায় তাদের বসতঘর। ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ বলে কথা না! যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জোয়ারের পানিতে তাদের বসতঘর তলিয়ে যায়। তখন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না তাদের। এমনও অনেক সময় গেছে যে, দিনের পর দিন উনুনে আগুন দিতে পারেননি তারা। ওই সময় শুকনো খাবার খেয়ে থাকতে হয়েছে তাদের। এমনও দিন গেছে, যেদিন তাদের শুধুমাত্র পানি পান করে বেঁচে থাকার জন্য লড়তে হয়েছে।

ঘরছোঁয়া জলের বানের দিকে তাকিয়ে থাকেন চুনা নদীর তীরের মানুষজন আর ভাবেন আর কত সংগ্রাম, ছবি- মৃত্যুঞ্জয় রায়,বার্তা২৪.কম

সত্যি, তাদের ভাষ্যের সঙ্গে বড়ই মিল কবি শামসুর রাহমানের ‘প্রিয় স্বাধীনতা’ কবিতার! ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকাটা একটা বড় প্রশ্নেরই বটে! জঙ্গল, বন্যা, নদীভাঙনের সঙ্গে অবিরাম সংগ্রাম করে টিকে থাকা একটা অকল্পনীয় ব্যাপার। অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট আর অভাবে চরের মানুষদের দৈনন্দিন জীবন। তাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাঁধ ভাঙন, জলোচ্ছ্বাসসহ ঘূর্ণিঝড়। প্রতিবছর এসব দুর্যোগে শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে প্রতিনিয়ত সর্বস্বান্ত হচ্ছেন তারা। আবারও লড়াই-সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার তাগিদে ঘুরেও দাঁড়ান তারা।

;