মানবজাতির শত্রু হয়ে এসেছে যে সব ভাইরাস

  • সাকিব চৌধুরী, চীন করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া সৈন্যরা, ছবি: সংগৃহীত

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া সৈন্যরা, ছবি: সংগৃহীত

মানব জাতির জন্য কালের শুরু থেকেই ভাইরাস অভিশাপ স্বরূপ। পৃথিবীর নানান প্রান্তে বিভিন্ন সময়ে নতুন রূপে নতুন নামে ভাইরাস মানুষের মাঝে অসুস্থতা ও রোগ সৃষ্টি করেছে। কেড়ে নিয়েছে লক্ষাধিক প্রাণ।

কালে কালে এই ভাইরাসগুলোর বিরুদ্ধে পৃথিবীর মানুষ, স্বাস্থ্য কর্মী ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা লড়াই করে গেছেন। কখনও বা দ্রুত কখনও বা একটু বিলম্বে তারা এই ভাইরাসগুলোর টিকা ও প্রতিষেধক তৈরি করছেন আবার কিছু ভাইরাসের প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কার হয়নি।

বিজ্ঞাপন

ঠিক তেমনি একটি ভাইরাস বর্তমানে সারা বিশ্বে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। করোনাভাইরাস নামে চলমান এই ভাইরাসটি ইতোমধ্যেই দুই মাসে ৩ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটিয়েছে এবং আক্রান্ত হয়েছে ৯০ হাজারেও বেশি মানুষ।

ইতিহাসে এর আগে যেসব ভাইরাস মহামারি রূপ নিয়েছিল সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি নিচে তুলে ধরা হলো।

বিজ্ঞাপন

গুটিবসন্ত

একসময় গুটিবসন্ত বা স্মল পক্স ভ্যারিওলা ভাইরাসটি অত্যন্ত মারাত্মক এক ব্যাধি ছিল। গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়ে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ মারা গেছে বিগত শতাব্দীগুলোতে।

ধারণা করা হয়, ভারতবর্ষে গুটিবসন্তের জীবাণুর প্রথম আগমন ঘটে খ্রিস্টের জন্মেরও একশত বছর আগে, মিশরীয় বণিকদের হাত ধরে। ধীরে ধীরে এই রোগের প্রকোপ বাড়তে থাকে। ১৮৬৮ থেকে ১৯০৭ পর্যন্ত এই প্রায় ৪০ বছরে ভারতবর্ষের ৪৭ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটে এই গুটিবসন্তে।

পোলিও

পোলিওমাইলিটিজ এক ধরনের ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। এটি পোলিও নামেই সর্বাধিক পরিচিত। এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তি এ ধরনের ভাইরাসের মাধ্যমে আক্রান্ত হন।

১৯১৬ সালে পোলিও রোগ প্রথম মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। সে বছর নিউইয়র্কে ৯ হাজার মানুষ পোলিওতে আক্রান্ত হয় যার মধ্যে ৬ হাজার মানুষই মৃত্যুবরণ করে। অবশেষে ১৯৫০ সালে জোনাস সাল্ক পোলিও টিকা আবিষ্কার করেন।

নিপাহ ভাইরাস

১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়াতে প্রথম দেখা যায়। সুঙ্গাই নিপাহ নামক মালয়েশিয়ার একটি গ্রামের নামে এই ভাইরাসের নামকরণ করা হয়। কারণ এই গ্রাম থেকেই এই ভাইরাসটি ছড়িয়েছিল। সেই সময় এই রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেই জন্য লক্ষ লক্ষ শূকরকে মেরে ফেলা হয়।

পশুপাখি থেকে প্রায় তিনশ মানুষের এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে যার মধ্যে অন্তত একশ জনের মৃত্যু হয়।

ইবোলা ভাইরাস

ধারণা করা হয় এটিও প্রথম বাদুড় থেকেই এসেছে এবং ১৯৭৬ সালে কঙ্গোর ইবোলা নদীর কাছে এটির প্রথম প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। বন্য প্রাণী ও মানুষ থেকেও এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। ২০১৪ ও ২০১৬ সালে মধ্য আফ্রিকায় এই রোগ মহামারি আকার ধারণ করলে অন্তত ১১ হাজার মানুষ মারা যায়।

মারবুর্গ ভাইরাস

এটি প্রায় ইবোলার কাছাকাছি একটি ভাইরাস। আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে অন্য কেউ এতে সংক্রমিত হতে পারে। ইবোলার মতোই এর উৎস হিসেবে বাদুড়কেই ভাবা হয়।

এতে আক্রান্ত হলে আট থেকে নয় দিনের মধ্যেই মৃত্যু হতে পারে। জার্মান শহর মারবুর্গের নামে এর নামকরণের কারণ হলো ১৯৬৭ সালে এখানে প্রথম ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। পরে তা ফ্রাঙ্কফুর্ট ও সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডেও ছড়িয়ে পড়ে।

সার্স

সার্স অর্থাৎ সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি এই ভাইরাসটিরও উৎপত্তি চীনে। বিজ্ঞানীরা বলছেন খাটাশ জাতীয় বিড়াল থেকে ভাইরাসটি এসেছিল। তবে এটিও বাদুরের সঙ্গে সম্পর্কিত।

২০০২ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে দুবার এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। আট হাজারের বেশি আক্রান্তের মধ্যে ৭৭৪ জনের মৃত্যু হয়। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হলে ভয়াবহ শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। তবে ২০০৪ সালের পর থেকে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

মার্স

এটি সার্সের একই গোত্রীয় একটি ভাইরাস। ২০১২ সালে প্রথম সৌদি আরবে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয় এবং সেখানে আক্রান্তদের ৩৫শতাংশ মারা যান।

লাসা জ্বর

১৯৬৯ সালে নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় লাসা শহরে প্রথম এ ভাইরাসটি আবিষ্কার হয়। ভাইরাসটি মূলত ছড়ায় ‘মস্তোমিস’ নামে এক ধরনের আফ্রিকান নেংটি ইঁদুরের চর্বি ও লালার মাধ্যমে। সংক্রামিত ইঁদুরের মল বা মূত্রের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমেই মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

 

তথ্য সূত্র: উইকিপিডিয়া ও বিবিসি