ফ্রান্সের ল্যুভর মিউজিয়াম কেন এত বিখ্যাত?
যেকোনো জাতি বা গোষ্ঠীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও শিল্পকর্মের নিদর্শন শোভা পায় জাদুঘরে। যেখানে সংরক্ষণ করা থাকে বৈজ্ঞানিক, শৈল্পিক, পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন ও ঐতিহাসিক মূল্যবান জিনিসপত্র।
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের জ্ঞান আহরণের জন্য প্রদর্শন করা হয় হাজার হাজার বছরের পুরনো মানব সভ্যতার নিদর্শন ও ইতিহাস। আধুনিক সভ্যতার পটভূমি ফ্রান্সের গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস, ঐতিহ্য ও স্বর্ণযুগ সম্পর্কে জানতে প্রতি বছর পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে ভিড় করেন মিলিয়ন মিলিয়ন পর্যটক। প্রাচীন নিদর্শন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি ফ্রান্সের ল্যুভর মিউজিয়াম সত্যিই এক আশ্চর্যজনক বিস্ময়।
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের সীন নদীর তীর ঘেঁষে জাদুময় জাদুঘর ল্যুভরের অবস্থান। কাঁচের তৈরি পিরামিড দিয়ে নবরূপে নির্মিত ল্যুভর মিউজিয়াম এক সময় ফ্রান্সের রাজাদের দুর্গ ও পরবর্তীতে রাজ প্রাসাদ হিসেবে ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে তা পৃথিবীর সবচেয়ে আশ্চর্য এবং আকর্ষণীয় এক জাদুঘর।
ল্যুভরের পুরো ভবনটিকে মিউজিয়াম রূপান্তর করতে প্রায় ২০০ বছর লেগে গিয়েছিলো। ষোড়শ লুই ১০ আগষ্ট ১৭৯৩ সালে ৫৩৭ টি শিল্পকর্ম প্রদর্শনের মাধ্যমে ল্যুভর জাদুঘরের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। রাজা অষ্টাদশ লুইস ও রাজা দশম চার্লসের শাসনকালে জাদুঘরটির সংগ্রহ আরো বৃদ্ধি পায়।
পরবর্তীকালে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ব্যতীত বিভিন্ন সময়ে দান ও উপহারের মাধ্যমে সংগ্রহ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে যা ৭২৭৩৫ বর্গ মিটার জায়গা জুড়ে ৩৮০০০ হাজারটি প্রাগৈতিহাসিক ও ঐতিহাসিক শিল্পকর্মের সংগ্রহশালা। বছরে প্রায় ৯.৬ মিলিয়ন পর্যটক শুধু মাত্র এই মিউজিয়ামটি ভিজিট করে থাকেন।
ল্যুভর মিউজিয়ামে সংরক্ষিত লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি‘র অংকিত “মোনালিসা” ধরিত্রী’র আরো এক তাজ্জব শিল্পকর্ম। “মোনালিসা” যেন ল্যুভরের ফ্লাস পয়েন্ট। সত্যিই ছবির চেয়েও সুন্দর এক সৃষ্টি। ল্যুভর যেমনি সৌন্দর্যের ধারক তেমনি ইতিহাসেরও বাহক। প্রাচীন সভ্যতার শুরু থেকে আধুনিক সভ্যতার অনেক কিছুই সংরক্ষিত রয়েছে এখানে।
বর্তমানে জাদুঘরটিকে আটটি সংগ্রহশালা বিভক্ত করা হয়েছে, যথাক্রমেঃ মিশরীয় পুরাতত্ত্ব; নিকট প্রাচ্য পুরাতত্ত্ব; গ্রিক, এট্রাস্কান ও রোমান পুরাতত্ত্ব; ইসলামিক শিল্পকলা; ভাস্কর্য; সজ্জা সংক্রান্ত শিল্প; অঙ্কন শিল্প এবং ছাপা শিল্প। (সুত্র: ল্যুভর ডট এফআর)।
পৃথিবীতে ফরাসি নিদর্শনগুলো যেমন প্রবলভাবে পর্যটকদের আকর্ষণ করে ঠিক তেমন প্যারিসও পর্যটকদের আকর্ষণ করে। প্যারিসের নাম শুনলেই যেন ভ্রমণ পিপাসুদের মনের এক গহীন কোণে মৃদু নাড়া দিয়ে যায়, চোখে জেগে ওঠে নানান রঙ্গের ছবি। যা কি না “সিটি অব রোমান্স” বা “সিটি অব লাইট” নামে খ্যাত।
আসলেই প্যারিস 'অর্ধেক নগরী তুমি অর্ধেক কল্পনা’ আর ল্যুভর, আইফেল টাওয়ার, ক্যাথেড্রাল নটরডাম তুমার বিস্ময়। বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর সকল কবি সাহিত্যিক ও শিল্পীদের যদি প্রশ্ন করা হয়, কোন দেশে প্রথমে ভ্রমণ করতে চান, তাদের কাছ থেকে সোজা উত্তর আসবে একটিই। পৃথিবীর কত কবি সাহিত্যকি প্যারিস নিয়ে কত যে কবিতা উপন্যাস লিখেছেন তার ইয়াত্তা নেই। যার ধরুন ফ্রান্স পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পর্যটক পরিদর্শনকারী স্থান হিসেবে বিবেচিত বলে মনে করেন ট্যুরিজম বিশেষজ্ঞরা।
দুনিয়া কাঁপানো সেনাপতি নেপলিয়ানের দেশ ফ্রান্সকে শতাব্দী থেকে শতাব্দী পৃথিবী জুড়ে প্রতিনিধিত্বকারী নিদর্শন গুলোর মধ্যে ল্যুভর মিউজিয়াম,আইফেল টাওয়ার, ক্যাথেড্রাল নটরডাম ছাড়াও মন্ট সেন্ট-মিসেল,ভার্সাইল ও ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরা বা কোট ডা’জিউর পর্যটকদের দারুণভাবে আকর্ষণ করে।