তিস্তা চুক্তি ১১ বছর আটকে থাকা লজ্জার: মোমেন
ভারতের সঙ্গে বহুল আলোচিত এবং প্রতিক্ষীত তিস্তা নদীর পানিবন্টন চুক্তি ১১ বছর ধরে আটকে থাকা দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
রোববার (২৯ মে) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা ভারতের সঙ্গে ৫৪টি নদী ভাগ করে নিয়েছি। আমরা সমস্ত নদীর যৌথ ব্যবস্থাপনায় ভাগাভাগি এবং এক সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।
এনডিটিভিকে তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের উভয় পক্ষের মানুষের কল্যাণের জন্য যৌথ ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। তবে, তিস্তা নদীর পানিবন্টন চুক্তি ১১ বছর ধরে আটকে থাকা লজ্জাজনক। কারণ আমরা প্রস্তুত ছিলাম, তারাও প্রস্তুত ছিল তবুও চুক্তিটি হয়নি।
ভবিষ্যতে নদী অববাহিকা এলাকায় পানির জন্য বড় হাহাকার হবে এবং আমাদের এ জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বলেন তিনি।
২০১১ সালে ভারত ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ তিস্তার পানি ভাগাভাগি করতে সম্মত হয়েছিল এবং ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে শুষ্ক মৌসুমে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ পানি ধরে রাখতে সম্মত হয় দেশটি। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে চুক্তিটি স্বাক্ষর করা হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের এই মুখ্যমন্ত্রী শুরু থেকেই চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করে আসছেন।
এছাড়াও, সিকিমের তিস্তা বরাবর বাঁধ নির্মাণের ফলে বাংলাদেশে ঋতুর প্রবাহের ক্ষীণ প্রবাহের সৃষ্টি হয়েছে।
মোমেন বলেন, ভারতের আসাম ও বাংলাদেশ একই সময়ে বন্যার মুখোমুখি হয়েছে। তাই আমাদের পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রযুক্তির আরও ব্যবহার করতে হবে,। যৌথভাবে বন্যার আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, নদীর যৌথ ব্যবস্থাপনা উভয় দেশের জন্যই লাভজনক।
ড. মোমেন বলেন, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় চীনে মাত্র ৩ শতাংশ, ভারতে মাত্র ৬ শতাংশ মানুষের জীবনযাপন নদীর কারণে প্রভাবিত হয়। তবে নিচু এলাকা হওয়ায় আমাদের ২৩ শতাংশ মানুষ ও তাদের জীবনযাত্রা প্রভাবিত হয়ে থাকে। এককভাবে একটি দেশের আন্তঃসীমান্ত নদীর বিষয়ে অবকাঠামো উন্নয়ন করা উচিত নয়।
একটি দেশের একা আন্তঃসীমান্ত নদীর উপর অবকাঠামো বিকাশ করা উচিত নয়। আমাদের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার বাসিন্দাদের একসঙ্গে দেখা উচিত, তা চীনের উন্নয়ন হোক বা ভারত বা বাংলাদেশ। আমাদের সকলকে সমগ্র অববাহিকা এবং এর জনগণের উপর প্রভাব সম্পর্কে ভাবতে হবে বলেন মোমেন।
তিস্তা নদীর উপর ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিয়ে আলোচনা করছে বলে সংবাদমাধ্যমে গুঞ্জন রয়েছে। প্রকল্পটির লক্ষ্য নদী অববাহিকা দক্ষতার সাথে পরিচালনা করা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা এবং গ্রীষ্মকালে পানি সংকট মোকাবিলা করা।
এবিষয়ে মোমেন বলেন, আমাদের কাছে এখনও তিস্তার বিষয়ে চীনের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আসেনি। তবে, চীন যেটি প্রস্তাব করছিল তা প্রাথমিকভাবে একটি ফরাসি প্রকল্প ছিল, ১৯৮৯ সালে ফরাসি প্রকৌশলীরা ডিজাইন করেছিলেন।
এটি ব্যয়বহুল ছিল, সেই সময় আমরা তহবিল পরিচালনা করতে পারিনি। এখন চীনারা এর অংশ নিতে চাচ্ছে। কিন্তু এটি আমি সংবাদমাধ্যম থেকে জেনেছি, তারা (চীন) এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনও প্রস্তাব পাঠায়নি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এখন দেখতে হবে চীনের প্রস্তাবটি, কীভাবে কি করা যায়। কারণ এখন পর্যন্ত ভারত তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানের জন্য খুব বেশি কিছু করছে না। আর চীনের প্রস্তাবটি একটি লাভজনক প্রস্তাব।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের সুবিধার জন্য তিস্তাকে আরও ভালভাবে পরিচালনা করার জন্য একটি প্রযুক্তিগত গবেষণা চালানোর জন্য চায়না পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশনের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে।
তবে, তিস্তা একটি অমীমাংসিত ইস্যু, তাই আমাদের জনগণ স্বাভাবিকভাবেই সরকারকে নতুন কোনো প্রস্তাব দেখার জন্য চাপ দেবে, এই কারণেই হতে পারে যে তিস্তার উপর চীনা প্রকল্পটি সংবাদমাধ্যেমে এত আলোচিত এনডিটিভিকে বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তবে, আমরা খুব আশাবাদী ভারত তিস্তা চুক্তি এগিয়ে নিয়ে যেতে রাজি হবে, এমনকি পশ্চিমবঙ্গও সম্মত হবে।