গাজার গণহত্যায় ‘পশ্চিমা গণমাধ্যম ও নারীবাদ’ এর দায়



আসমা ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, বার্তা ২৪
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সম্প্রতি টকটিভির হোস্ট জুলিয়া হার্টলি-ব্রুয়ার ফিলিস্তিনের সংসদ সদস্য ডক্টর মোস্তফা বারঘৌতির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সাক্ষাৎকার চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে হার্টলি-ব্রুয়ারকে চিৎকার করতে দেখা গেলেও এমন অস্বস্তিতেও বেশ শান্ত থাকতে দেখা গেছে বারঘৌতিকে। তারপরেও মুস্তাফা বারঘৌতির বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির ও বর্ণবাদীর অভিযোগ এনেছেন জুলিয়া হার্টলি-ব্রুয়ার। 

সাক্ষাৎকারটিতে দেখা যায়, যখনই বারঘৌতি গাজায় ইসরায়েলের অনবরত হামলার প্রসঙ্গে কথা বলতে যাবেন, তখনই অপ্রাসঙ্গিকভাবে চিৎকার করেন ব্রুয়ার।  রাগান্বিতস্বরে তিনি বারঘৌতিকে বলেন, হয়তো আপনি নারীদের সাথে কথা বলতে অভ্যস্ত নন!

ডাঃ মোস্তফা বারঘৌতির বিরুদ্ধে  ‘নারীদের সাথে কথা বলতে অভ্যস্ত নয়’- এমন অভিযোগ কোনো নতুন ঘটনা নয়। হার্টলি-ব্রুয়ারের এমন বিস্ফোরক মন্তব্য ফিলিস্তিনি পুরুষদের প্রতি পশ্চিমা মূলধারার মনোভাবকে প্রকাশিত করে এবং পশ্চিমা নারীবাদের নেতিবাচক প্রভাবকে পুরোপুরি চিত্রিত করে যার ফলে ফিলিস্তিনি পুরুষদেরকে নেতিবাচকভাবে দেখার প্রবণতা বাড়ে। পশ্চিমা নারীবাদ আরব ও মুসলিম পুরুষদের ‘সন্ত্রাস ও অমানবিক’ হিসেবে পরিচিত করে তোলার অস্ত্র হিসেবে এমন মিথ তৈরির ইতিহাস দীর্ঘদিনের।

পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোতে প্রায়ই ফিলিস্তিনি পুরুষদের ইসরায়েলি সহিংসতার শিকার হিসেবে দেখানোর পরিবর্তে হিংসাত্মক বা অসামাজিক হিসেবে চিত্রিত করা হয়। ফিলিস্তিনি পুরুষদের বিরুদ্ধে আনা এমন অহরহ শ্লীলতাহানি ও বর্ণবাদীর অভিযোগ তাদের ভিক্টিম হিসেবে না দেখার এক মনস্তাত্বিক স্বীকৃতি আদায় করে।

অপর আরেকটি ঘটনা- ২০২৩ সালের ২২শে অক্টোবর ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় তার পরিবারের ২১ সদস্যকে হারিয়েছেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আহমেদ আলনাউক। গুড মর্নিং ব্রিটেনকে তিনি তার সাথে হওয়া মর্মাহত ঘটনা প্রসঙ্গে সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারে আলনাওককে তার গল্প বলার এবং তার দুঃখ প্রকাশ করার জন্য বলা হলেও দ্রুতই এ সাক্ষাৎকার হামাস এবং একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে হামাসের ৭ অক্টোবরের অতর্কিত হামলার ভয়াবহতার বর্ণনার কথোপকথনে পরিণত হয়। আলনাউককে কোনোধরনের ক্ষোভ প্রকাশ করার অনুমতিও দেওয়া হয়নি।

এই ১০৪ দিনের গণহত্যায় ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে ফিলিস্তিনি পুরুষদের অপহরণ, নির্যাতন এবং হত্যা করেছে। অসংখ্য বেসামরিক পুরুষ ফিলিস্তিনিকে কোনও প্রমাণ ছাড়াই হামাস যোদ্ধা হিসাবে চিত্রিত করেছে। ইসরায়েলের প্রচারিত এসব নিহত ফিলিস্তিনি পুরুষের  ছবি এবং ভিডিও থেকে প্রিয়জনরা তাদের বেসামরিক হিসেবে শনাক্ত করেছেন। তারা নিশ্চিতও করেছেন প্রকৃতপক্ষেই অনেকেই ছিল বেসামরিক।

প্রায় ১০ বছর আগে, জাদালিয়ার একাডেমিক এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা মায়া মিকদাশি, ‘ফিলিস্তিনি পুরুষ কি ভিকটিম হতে পারে?’ শিরোনামে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন লিখেছিলেন। এতে মিকদাশি ব্যাখ্যা করেছেন, পশ্চিমা ভিত্তিক গণমাধ্যমে যেসব বেসামরিক মৃত্যুর সংবাদ জোর দিয়ে প্রচারিত হয়েছে অনুপাতিকভাবে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে এমন প্রতিবেদনেরই পুনরাবৃত্তি হয় বারবার। এতে ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনি যেসব পুরুষ নিহত হয় তাদের প্রতি জনসাধারণের শোকের স্পষ্ট অভাব দেখা যায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো যে সবসময় স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেনা বিগত বহু সংঘাত তার প্রমাণ। সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমগুলো নিজ প্রতিষ্ঠান ও দেশের স্বার্থের পক্ষেই বরাবর ব্যবহৃত হয়ে আসছে । ইরাকে মার্কিন ও ব্রিটিশদের হামলায় পশ্চিমা গণমাধ্যম যেভাবে কাভার করেছে, সেটি এখনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে। সাদ্দামের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে- এমন অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমারা ২০০৩ সালে ইরাকে হামলা চালায়। পরে অবশ্য সেই অস্ত্র মজুদের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ছিল না জাতিসংঘের অনুমতিও। একচেটিয়া যুক্তরাষ্ট্র একপ্রকার গায়ের জোরেই ইরাকে হামলা চালায়। পশ্চিমা গণমাধ্যমের নিরুঙ্কুশ সমর্থন এই হামলাকে এক মহান পদক্ষেপের মর্যাদা দেয়। গণমাধ্যমের ইতিবাচক প্রচারের কারণে যুদ্ধের আগে যেখানে পক্ষে পঞ্চাশ শতাংশের একটু বেশি সমর্থন ছিল, সেখানে যুদ্ধের পর সমর্থন দাঁড়ায় ৭২ শতাংশে।

ছবি: ইসরায়েল-হামাস সংঘাত সংশ্লিষ্ঠতায় বিক্ষোভকারীর পোস্টার

 

একই মনোবৃত্তির চিত্রায়ন এই ইসরায়েল-হামাস সংঘাতেও। ইসরায়েলি হামলায় বহু ফিলিস্তিনি বেসামরিক নিহত হওয়ার পরেও যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অনড় সমর্থন রয়েই গেছে। তারা বারবার ইসরায়েলের এ গণহত্যাকে ‘আত্মরক্ষার লড়াই’ বলে স্বীকৃতি দিতে চেয়েছে। এমন প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোও।পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর এমন ফিলিস্তিনবিরোধী প্রচারণা ইসরায়েল বাহিনীর পরিচালিত গণহত্যাকে শুধু ন্যায্যতাই দেয়না, বরং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনও ঘটাচ্ছে। 

৭ই অক্টোবর থেকেই ইসরায়েলপন্থীরা হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি নারীদের ধর্ষণের নানা বর্ণনা দিয়ে এসছিল। কিন্তু সাময়িক যুদ্ধ বিরতি চলাকালীন সময়ে হামাস যেসব জিম্মিদের মুক্তি দেয় তাদের কাউকেই এমন অভিযোগ করতে দেখা যায় না। বরং জিম্মিদের নিরাপত্তায় হামাসের ইতিবাচক পদক্ষেপ লক্ষ্য করা গেছে। শুধুমাত্র গাজাবাসীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত চলমান গণহত্যাকে একটি আইনি ন্যায্যতা দেওয়াই কি তাহলে এমন প্রচারণার উদ্দেশ্য!

যদিও পশ্চিমা গণমাধ্যমের এমন প্রচারণা গণহত্যার ন্যায্যতাই তৈরি করেনি, বরং ফিলিস্তিনি পুরুষদের হিংসাত্মক মিসজিনিস্ট এমনকি ধর্ষক হিসেবেও পাঠক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে। 

সিএনএন প্রতিনিধি প্রমিলা জয়পাল বলেছেন, আমাদের ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের বিষয়ে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সিএনএন প্রতিনিধি ডানা বাশ উত্তরে বলেন, আপনি দেখতে পাচ্ছেন না যে ইসরায়েলি সৈন্যরা ফিলিস্তিনি নারীদের ধর্ষণ করছে?

গাজায় পরিবারের সাথে নিরাপদ স্থানে স্থানাস্তরিত হওয়ার সময় সমস্ত পোশাক খুলে ফেলতে বাধ্য করার ভয়ঙ্কর সাক্ষ্য পাওয়া গেছে। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন যে তাদের লাঞ্ছিত করা হয়েছিল। এমনকি একজন গর্ভবতী নারীসহ ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এই যুদ্ধের সময় শুধুমাত্র ফিলিস্তিনি নারীরাই যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছেন না, বরং ফিলিস্তিনি পুরুষদের বিরুদ্ধেও মিথ্যে শ্লীলতাহানীর অভিযোগ আনা হচ্ছে বলে একাধিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনি রিটার্ন সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী ১০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি পুরুষকে তাদের অন্তর্বাস খুলে, চোখ বেঁধে এবং উত্তর গাজার একটি রাস্তায় হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখে। এরপর থেকেই মূলত ক্রমবর্ধমানভাবে যৌন নির্যাতনের রিপোর্ট  প্রকাশিত হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর এমন কর্মকাণ্ডের ছবি এবং ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এদিকে ৭ই অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনি পুরুষদের নির্যাতন ও অপব্যবহারের সম্মুখীন হওয়ার অনেক বিবরণও রয়েছে বলে জানায় সেন্টারটি।

ফিলিস্তিনি শিশুদের অধিকার সংস্থা ডিফেন্স ফর চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল প্যালেস্টাইন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে একটি ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনি কিশোরীকে ধর্ষণের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সাবেক পরিচালক জোশ পলের কাছ থেকে একটি চমকপ্রদ প্রমাণ পাওয়া যায়। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এ ধরনের মামলার বিষয়ে খোঁজখবর নিলে, মানবাধিকার সংগঠনটিকে আরও ৫টি সামাজিক গ্রুপের সাথে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে বর্ণনা করা হয়।

পাবলিক কমিটির পরিচালিত ইসরায়েলে নির্যাতন-বিরোধী একটি গবেষণায় যৌন নির্যাতনসহ বিভিন্ন সহিংসতার শিকার নির্যাতিত হাজার হাজার ফিলিস্তিনি পুরুষদের সাক্ষ্য সংগ্রহ করা হয়। রিপোর্টটিতে দেখা যায়, পদ্ধতিগত যৌন সহিংসতা পরিচালনা করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ।

ফিলিস্তিনি গণহত্যার ‘জেন্ডার ছাঁচিকরণ’ করার নেপথ্যে রয়েছে- ফিলিস্তিনি পুরুষদের ভিক্টিম হিসেবে পরিচিত হতে না দেওয়ার প্রয়াস। তাদের সাথে হওয়া সহিংসতাকে গোপন রাখা এবং তাদের ওপর হওয়া নির্যাতনকে রুটিন অনুশীলন হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করাই এমন নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গির রাজনৈতিক অর্থনীতি।

একটি সংঘাত মানে শুধুমাত্র নারী এবং শিশুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়, বরং গোটা জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতও তেমনি সকল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে এবং প্রতিটি ফিলিস্তিনি সংস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ। পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ প্রচারণা করে এমন মানবাধিকারবিরোধী কার্যক্রমকে মদদ দেওয়া তাই বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার পরিপন্থী কাজ। সংঘাত দীর্ঘায়িত হওয়ার পেছনে পশ্চিমা গণমাধ্যমের দায় তাই এড়ানোর সুযোগ নেই। 

সূত্র: দ্য নিউ আরব

   

খোঁজ মেলেনি রাইসির, চলছে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের পর কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দোল্লাহিয়ানের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

তাদের সন্ধান পেতে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় চলছে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা।

রবিবার (১৯ মে) আজারবাইজান সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে যান ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। সেখানে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভও ছিলেন।

সেখান থেকে তিনটি হেলিকপ্টারের বহর নিয়ে পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজে ফিরছিলেন ইব্রাহিম রাইসি ও তার সঙ্গে থাকা অন্য কর্মকর্তারা। পথে পূর্ব আজারবাইজানের জোলফা এলাকার কাছে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। অন্য দুটি হেলিকপ্টার নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছেছে।

বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারে ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রহমতি এবং এ প্রদেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা আলি খামেনির মুখপাত্র আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে–হাশেম ছিলেন।

দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরও বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটির অবস্থান শনাক্ত করতে না পারায় তাদের জীবিত উদ্ধার করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইরানের একজন কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা এখনো আশাবাদী। তবে দুর্ঘটনাস্থল থেকে যেসব খবর আসছে তা খুবই উদ্বেগজনক। বৈরী আবহাওয়া ও তীব্র কুয়াশা উদ্ধারকারীদের দুর্ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথ জটিল করেছে।’

দেশটির আবহাওয়া দপ্তর বলছে, ওই এলাকায় সোমবার রাত পর্যন্ত বৈরী আবহাওয়া থাকতে পারে। স্থানীয় আবহাওয়া দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টার যেখানে বিধ্বস্ত হয়েছে সেখানে রাতভর বৃষ্টি ও ভারী কুয়াশা থাকতে পারে। সোমবার পর্যন্ত এমন আবহাওয়া থাকতে পারেও বলে জানান তিনি।

বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটির অবস্থান শনাক্তে সময় প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদ ভাহিদি। তিনি বলেছেন, ‘অনেকগুলো উদ্ধারকারী দল নিখোঁজ হেলিকপ্টারের সন্ধানে অভিযান চালাচ্ছে। তবে হেলিকপ্টারটি কোথায় বিধ্বস্ত হয়েছে তা জানতে সময় প্রয়োজন। কারণ, সেখানে আবহাওয়া পরিস্থিতি খুবই বৈরী। বৃষ্টির পাশাপাশি তীব্র কুয়াশাও রয়েছে। এতে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।’

উদ্ধার অভিযানে যুক্ত কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছে ৪০টি উদ্ধারকারী দল। উদ্ধারকারীদের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স ও ড্রোনও রয়েছে। জরুরি সেবা বিভাগের কর্মী, পুলিশ ও ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও তল্লাশি অভিযানে যোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি।

তাবরিজ থেকে নির্বাচিত ইরানের একজন সংসদ সদস্য আহমাদ আলি রেজা বেইগি জানিয়েছেন, উদ্ধারকারীরা বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটির অবস্থান এখনো শনাক্ত করতে পারেননি। ভারী বৃষ্টি ও কুয়াশা তাদের উদ্ধারকাজকে কঠিন করে তুলেছে।

ইরানের সংবাদমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে, হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ার খবর জানা যায় হেলিকপ্টার থেকে আসা একটি জরুরি ফোনকলে। হেলিকপ্টারে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে থাকা কর্মকর্তারাই ওই ফোনকল করেছিলেন। তবে কথা শেষ হওয়ার আগেই সংযোগটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের খবর পাওয়ার পরই শুরু হয় ব্যাপক তল্লাশি অভিযান। তবে এখনো হেলিকপ্টারের খোঁজ পাওয়া যায়নি। বৃষ্টি ও কুয়াশার কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

ইরানের সংবাদ সংস্থা ফারস্‌ জানিয়েছে, রাতের অন্ধকারে দুর্গম ওই পাহাড়ি এলাকায় মাত্র পাঁচ মিটার দূরেও কিছু দেখা যাচ্ছে না। এতে করে উদ্ধারকর্মীরা ব্যাপক জটিলতার মুখে পড়েছেন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি বৈঠক করেছেন দেশটির মন্ত্রিসভার সদস্যরা। বৈঠক শেষে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কয়েকজন মন্ত্রী তাবরিজে গেছেন। উদ্ধার অভিযান ত্বরান্বিত করতে দুর্ঘটনাস্থলে গেছেন আইআরজিসি প্রধান হোসেইন সালামি। আইআরজিসির বিভিন্ন পর্যায়ের কমান্ডার, মন্ত্রী ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি।

ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে সৌদি আরব, রাশিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও ইরাকসহ আরও অনেক দেশ। উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করতে ৩২ সদস্যের একটি উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে তুরস্ক। এসব উদ্ধারকর্মী পাহাড়ে উদ্ধারকাজ চালানোর জন্য বিশেষভাবে দক্ষ।

;

রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের সন্ধান মিলেছে



আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটির সন্ধান পাওয়া গেছে বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

আল জাজিরা জানিয়েছে, উদ্ধার ও অনুসন্ধান দলগুলো বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটির সন্ধান পেয়েছে। তবে, ওই প্রতিবেদনে হেলিকপ্টারের আরোহী প্রেসিডেন্ট রাইসি ও অন্য কর্মকর্তাদের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

এদিকে, হেলিকপ্টারটির উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া ইরানের রেড ক্রিসেন্টের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখনও উদ্ধার অভিযান চলছে। স্থানীয় কিছু সংবাদমাধ্যম বিধ্বস্ত হেলিকপ্টার খুঁজে পাওয়া গেছে বলে অসমর্থিত তথ্য প্রকাশ করেছে।

জ্বালানিমন্ত্রী আলী আকবর মেহরাবিয়ানের বরাতে দেশটির রাষ্ট্রয়াত্ত টেলিভিশনের এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, হেলিকপ্টার খুঁজে পাওয়ার কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।

রবিবার (১৯ মে) ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বহনকারী হেলিকপ্টারটি ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে পাহাড়ি এলাকায় বিধ্বস্ত হয়।

ওই হেলিকপ্টারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদোল্লাহিয়ান, পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রহমতি এবং এই প্রদেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মুখপাত্র আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেম ছিলেন।

;

ইরানকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত যেসব দেশ



আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার রবিবার (১৯ মে) বিধ্বস্ত হওয়ার পর ইরানের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে সৌদি আরব বলেছে, ইরানের জন্য প্রয়োজনীয় যেকোনো সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে তারা।

আরব নিউজ জানিয়েছে, সৌদির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, উদ্বেগের সঙ্গে এই বিধ্বস্তের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে রিয়াদ।

এদিকে ইরাক সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, রেড ক্রিসেন্ট এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে অনুসন্ধান মিশনে প্রতিবেশী ইরানকে সহায়তা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ইরনা জানিয়েছে, রবিবার প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি একটি দুর্ঘটনায় নিখোঁজ হওয়ার পর ইরানের অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দলগুলো কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে।

ইরনা আরও জানিয়েছে, পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে তাকে বহনকারী হেলিকপ্টারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর রাইসির জন্য শঙ্কা বেড়ে যায়।

অন্যদিকে, কাতারও বলেছে যে, ইরানের অনুসন্ধান প্রচেষ্টার জন্য তারা সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা ইরানের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি খুঁজে বের করার প্রচেষ্টায় সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রমে সব ধরণের সহায়তা প্রদানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, তারা ইরানকে হেলিকপ্টার অনুসন্ধানে সহায়তা করার জন্য তাদের দ্রুত প্রতিক্রিয়া ম্যাপিং পরিষেবা সক্রিয় করেছে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে লিখেছেন, ‘নিখোঁজ হেলিকপ্টারটির সন্ধানে এবং ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় সব সহায়তা দিতে প্রস্তুত রাশিয়া।’

;

রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় উদ্বিগ্ন মোদি



আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

এক টুইট বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট রাইসির আজকের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার খবরে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা এই সঙ্কটের সময়ে ইরানি জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি এবং প্রেসিডেন্ট ও তার সফর সঙ্গীদের সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছি।’

আর আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘মাননীয় প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার সম্পর্কে ইরান থেকে দুঃখজনক সংবাদ শুনেছি। প্রচণ্ড উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছি সুসংবাদের জন্য, যে সব ঠিক আছে। আমাদের প্রার্থনা এবং শুভকামনা মাননীয় প্রেসিডেন্ট রাইসি এবং সমগ্র ইরানী জাতির সঙ্গে রয়েছে।’

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেছেন, ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধস্ত হওয়ার প্রতিবেদনগুলো যুক্তরাষ্ট্র পর্যবেক্ষণ করছে।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।

এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিও নিখোঁজ হেলিকপ্টারটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘আমরা আশা করি, আল্লাহ মহামান্য প্রেসিডেন্ট ও তার সঙ্গীদের জাতির কাছে ফিরিয়ে দেবেন। সকলকে তাদের সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করতে হবে। ইরানি জাতির উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয়।’

এ সময় সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশাসনে বিঘ্ন না ঘটানোর আহ্বান জানান খামেনি।

;