রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক জান্তা বাহিনীতে নিয়োগ দিচ্ছে মিয়ানমার
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীতে রোহিঙ্গা পুরুষদের জোরপূর্বক নিয়োগ দিচ্ছে জান্তা সরকার। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া রোহিঙ্গা পুরুষদেরকে নাগরিকত্বের একটি পরিচয়পত্র, জনপ্রতি এক বস্তা চাল এবং মাসিক ১ লাখ ১৫ হাজার কিয়াট বেতন দেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছে তারা।
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) মিয়ানমারের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন গ্রাম ও শরণার্থী শিবির থেকে অন্তত ৪০০ রোহিঙ্গা পুরুষকে ধরে নিয়ে তাদেরকে দুই সপ্তাহের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। জান্তা বাহিনী তাদেরকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করবে বলে আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী ও রাখাইনের অধিকারকর্মীরা।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী সব নারী-পুরুষের সামরিক বাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করে জান্তা। এরপরই ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী পুরুষদের তালিকা তৈরির জন্য বুথিডং, মংডু এবং সিত্তের গ্রাম প্রশাসক ও রোহিঙ্গা নেতাদের চাপ দিচ্ছে জান্তা বাহিনী।
এদিকে মিয়ানমারের গণমাধ্যম নারিনজার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের অস্ত্র হাতে নেওয়ার অনুরোধ জানায় জান্তা সরকার। তবে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিতে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের আহ্বানকে প্রতারণা বলে মনে করছেন রোহিঙ্গারা। তারা বলছেন, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব না দেওয়া, সব সুযোগ-সুবিধা কেড়ে নেওয়া জান্তা সরকারের আহ্বানে সাড়া দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. জোবাইর। নিজেদের জনগোষ্ঠীর অধিকার এবং প্রত্যাবাসন নিয়ে বেশ সোচ্চার তিনি। মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন অনেকটা অনিশ্চিত বলে মনে করছেন রোহিঙ্গাদের এই নেতা।
মো. জোবাইর বলেন, ‘এখন তারা আরেকটা নতুন খেলা এনেছে। আমাদের আকিয়াবের মুসলমান রোহিঙ্গা কমিউনিটিকে জান্তার সঙ্গে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। তা না হলে রোহিঙ্গাদের সরাসরি গিয়ে মারতে বেশি সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ সাধারণ নাগরিকদের মারলে পৃথিবী জান্তাকে খারাপ বলবে। রোহিঙ্গারা হাতে হাতিয়ার তুলে নিলে তাদের সুবিধা হবে আবারও মারতে এবং কয়েকজন যারা আছে তারাও বাংলাদেশে পালিয়ে আসবে। এটা হচ্ছে তাদের নতুন খেলা।’
মিয়ানমারের চলমান গৃহযুদ্ধে দেশটির বেশিরভাগ অঞ্চল দখলে নেয় আরাকান আর্মি। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্যসহ ৩৩০ জন। বিপর্যস্ত মিয়ানমারকে শক্তিশালী করতে জান্তা সরকার দেশের সকল যুবক-যুবতীর সেনাবাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করেছে। এর পরপরই জান্তা সরকারের পক্ষ হয়ে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের লড়াই করার আহ্বান জানানো হয়।
উল্লেখ্য, গেল ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে শুরু হয় যুদ্ধ। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে তমব্রু রাইট ও লেফট ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। দু-তিন দিন তীব্র লড়াইয়ের পর তমব্রু ও ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি দখলে নেয় আরাকান আর্মি।
এছাড়া মিয়ানমারের দুই বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলিতে ৫ ফেব্রুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেল পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই দুজন মারা যান। এ সময় গোলাগুলিতে আহত হন আরও নয় জন।