ফ্রান্সে বাড়ছে ব্যাঙের পায়ের চাহিদা, প্রজাতি বিপন্নের হুমকিতে বিশ্ব 

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ফ্রান্সে ক্রমবর্ধমান ব্যাঙের পায়ের চাহিদা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে ব্যাঙ আমদানির অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে ক্রমেই বাড়ছে ব্যাঙ রফতানির পরিমাণ। বিজ্ঞানীরা ফ্রান্সের এমন ব্যাঙ খাওয়ার পরিমাণ বাড়াকে পরিবেশের ভারসাম্য ব্যাহত হওয়া এবং প্রজাতি বিপন্নের কারণ হিসেবে দেখছেন। দেশটির প্রশাসনকে বারবার এ প্রসঙ্গে সাবধান করছেন বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন।

শনিবার (৯ মার্চ) সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে বলা হয়, একদল বিজ্ঞানী এবং পশুচিকিত্সক সতর্ক করে বলেছেন, ব্যাঙের পায়ের জন্য ফ্রান্সের এই ক্রমবর্ধমান ক্ষুধা প্রকৃতির জন্য ধ্বংসাত্মক এবং এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের উভচর প্রাণীদের বিপন্ন করার জন্য দায়ী হবে।

গবেষণা, পশুচিকিৎসা এবং প্রজাতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর অন্তত ৫০০ জনেরও বেশি বিশেষজ্ঞ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে ‘অত্যধিক ব্যাঙ খাওয়ার অবসান ঘটানোর আহ্বান জানিয়েছেন। প্রজাতিকে সর্বাধিক সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ফ্রান্সকে বারবার অনুরোধ জানান তারা। 

বিজ্ঞাপন

রবিন ডেস বোইস এবং প্রো ওয়াইল্ডলাইফের একটি সমীক্ষা অনুসারে, ইইউ প্রতি বছর ৮০-২০০ মিলিয়ন  ব্যাঙ আমদানি করে, যার বেশিরভাগই ফ্রান্সে খাওয়া হয়। ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক এবং আলবেনিয়ার পাশাপাশি ভিয়েতনামের খামার থেকে আসে এসব ব্যাঙ।

প্রো ওয়াইল্ডলাইফের বিজ্ঞানের প্রধান স্যান্ড্রা আলথার বলেছেন, এ খাদ্যাভ্যাস ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)-এর বন্যপ্রাণী কৌশলের সাথে মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং অযৌক্তিক। ইউরোপে এখানে প্রাকৃতিক ব্যাঙের সংখ্যা ইইউ আইনের অধীনে সুরক্ষিত। কিন্তু ইইউ এখনও অন্যান্য দেশে লক্ষ লক্ষ প্রাণী আমদানি করে। এতে সারা বিশ্বে ব্যাঙের সংখ্যা কমে এবং প্রজাতিকে হুমকির মুখে ফেলে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় ফ্রান্সে বেশি ব্যাঙের পা খাওয়া হয়। রসুন এবং পার্সলে ভাজা পা তাদের ভীষণ পছন্দ । বিজ্ঞানীরা যুক্তি দেন যে ফ্রান্সের উচিত বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদকে বিপন্ন হওয়া থেকে বাঁচাতে বিশ্বব্যাপী সুরক্ষার জন্য চাপ দেওয়া। দেশটির উচিত উদ্ভিদ ও প্রাণীর অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ করতে কাজ করা বলে মন্তব্য করেন তারা। ৪৬টি পরিবেশ এনজিওর একটি গ্রুপ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফ্রান্সের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরূপ অনুরোধ করেছিল।

গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু ব্যাঙের প্রজাতি ইতিমধ্যেই এর হুমকিতে ভুগছে। ম্যাক্রোনকে লেখা চিঠি অনুসারে ফাংড রিভার ফ্রগ (লিমনোনেক্টেস ম্যাক্রোডন) দৃশ্যত ফ্রান্সে বাণিজ্যিক আমদানি থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে। কাঁকড়া খাওয়া ব্যাঙ (ফেজেরভার্যা ক্যানক্রিভোরা) এবং ধানের ক্ষেতের ব্যাঙ (ফেজেরভার্যা লিমনোচারিস) নামের আরও দুটি সাধারণ প্রজাতি বহু বছর ধরেই তীব্র বাণিজ্যিক উপাদান হওয়ার কারণে বিরল হয়ে গেছে।

ব্যাঙ মূলত বাস্তুতন্ত্র এবং খামার ব্যবস্ঃথাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্যাঙ ট্যাডপোল পুকুরে পানির গুণমান উন্নত করতে পারে এবং কৃষকদের কীটনাশক ব্যবহার কমাতে সাহায্য করতে পারে। ব্যাঙ মশা খেয়ে সংক্রামক রোগকে দূর করতেও সাহায্য করতে পারে।

ভেটেরিনিয়ারস পোর লা বায়োডাইভার্সিটের সভাপতি অ্যালাইন মুসু বলেছেন, পশু চিকিৎসকরা এই উদ্যোগে প্রচুর পরিমাণে সম্পৃক্ত হচ্ছেন যা আশার বিষয়। পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা সম্পর্কে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ফ্রান্সকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।