ভারতে বিতর্কিত সিএএ’র বাস্তবায়ন স্থগিতের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
ভারতের বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিটিজেনশিপ অ্যামন্ডমেন্ট অ্যাক্ট অ্যান্ড রুলস- সিএএ) বাস্তবায়ন স্থগিতের নির্দেশ দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে নোটিশ জারি করেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচুড়ের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ মঙ্গলবার নোটিশটি জারি করে।
মঙ্গলবার (২০ মার্চ) টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন সিএএ’র বাস্তবায়ন স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। সেইসঙ্গে নোটিশের জবাব দিতে নয়াদিল্লিতে আসীন কেন্দ্রীয় সরকারকে তিন সপ্তাহ সময়ও বেঁধে দিয়েছেন আদালত। বিচারপতি জে.বি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রসহ ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচুড়ের নেতৃত্বাধীন একটি বেঞ্চ এ নোটিশটি জারি করেন।
ভারতীয় ইউনিয়ন মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে মূলত এ আবেদনটি দায়ের করা হয়। যা এ আইনের অধীনে মুসলমানদের নাগরিকত্বের অধিকারকে সুরক্ষিত করার দাবি জানিয়েছে।
- বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন চালুর প্রতিবাদে ভারতে বিক্ষোভ
- ভারতে লোকসভার ভোট ঘোষণার আগেই বিতর্কিত সিএএ কার্যকর
এদিকে পার্লামেন্টে পাস হওয়ার চার বছর পর, গত ১১ মার্চ দেশজুড়ে সিএএ কার্যকর করে বিজেপি সরকার। কিন্তু বিজেপির এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা শুরু করে বিরোধী দলগুলো। পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালার রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে রাজ্যে এ আইন বাস্তবায়ন করা হবে না বলে জানিয়েছে। এমনকি আইনটি স্থগিতের জন্য বিজেপিকে আল্টিমেটামও দিয়েছে তামিলনাড়ু, কর্ণাটকসহ দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যগুলোও।
সুপ্রিম কোর্টের একটি সূত্র জানিয়েছে, ১১ মার্চ আইনটি কার্যকরের আদেশ দেওয়ার পর থেকেই সেটি স্থগিতের জন্য আপিল আসতে থাকে। এ পর্যন্ত অন্তত ২০টি আপিল জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টে। এসব আপিলে স্বাক্ষর রয়েছে অন্তত ২৩৭ জন আবেদনকারীর।
মঙ্গলবার এসব আপিলের ওপর ওপরই শুনানি ছিল। শুনানিতে আবেদনকারীদের পক্ষের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত যেন কেন্দ্রীয় সরকার সিএএ বাস্তবায়ন স্থগিত রাখে, এমন আদেশ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।
বাদীপক্ষের আইনজীবী দলের অন্যতম সদস্য নিজাম পাশা বলেন, আইনটি পাসের পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ভারতের মুসলিমরা। তাদের মধ্যে নাগরিকত্ব হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এবং সিএএ হলো সেই পরিকল্পনার প্রথম ধাপ।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে পার্লামেন্টে সিএএ পাস করে তৎকালীন বিজেপি সরকার । সিএএ অনুযায়ী, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যেসব হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন ও পার্সি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ও নিপীড়নের কারণে ভারতে গেছেন, তাদের নাগরিকত্ব দেবে ভারত সরকার।
পরবর্তীতে সিএএ'র ১১ বছরের মেয়াদকালকে কমিয়ে ৫ বছরে আনা হয়েছে।
২০১৯ সালে আইনটি পাসের পর থেকে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিজেপিবিরোধী বিভিন্ন ভারতীয় দল ছিল সেই বিক্ষোভের নেতৃত্বে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের ব্যাপক বিরোধী।