আমেথি জয়ে কংগ্রেসে স্বস্তি
আমেথি ভারতের উত্তর প্রদেশের ৮০টি লোকসভা নির্বাচনি এলাকার মধ্যে একটি। এটি আগাগোড়াই কংগ্রসের শক্ত ঘাঁটি পরিচিতি পেয়ে এসেছে। এই আসন থেকে নির্বাচন করে লোকসভার সদস্য হয়েছিলেন গান্ধী পরিবারের সঞ্জয় গান্ধী, রাজীব গান্ধী এবং সোনিয়া গান্ধী।
২০০৪ সাল থেকে রাহুল গান্ধী এই আসনে নির্বাচন করে বিজয়ী হন এবং টানা তিনবার জয় লাভ করেন। ২০১৯ সালে আসনটি চলে যায় ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হাতে। এখান থেকে বিজয় লাভ করেন বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থী স্মৃতি ইরানি। এরপর ২০২৪ সালে সেই আমেথি আবার কংগ্রেসের কাছে ফিরে এসেছে কিশোরীলাল শর্মার হাত ধরে।
আমেথির রাজনীতি ও কংগ্রেস
আমেথির প্রথম সংসদ সদস্য (এমপি) ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের (আইএনসি) বিদ্যাধর বাজপেয়ী। তিনি ১৯৬৭ সালে কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচিত হন এবং তিনি তার আসনটি ধরে রেখেছিলেন ১৯৭১ সাল পর্যন্ত।
এরপর ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে জনতা পার্টির রবীন্দ্র প্রতাপ সিংয়ের কাছে তিনি পরাজিত হন বিদ্যাধর বাজপেয়ী।
এরপর আবার ১৯৮০ সালে জাতীয় কংগ্রেসের সঞ্জয় গান্ধীর কাছে পরাজিত হন রবীন্দ্র প্রতাপ সিং। এর একবছর পর ১৯৮১ সালে একটি বিমান দুর্ঘটনায় সঞ্জয় গান্ধী নিহত হন। ১৯৮১ সালে একটি উপনির্বাচনে সঞ্জয় গান্ধীর বড়ভাই রাজীব গান্ধী আমেথি থেকে বিজয়ী হন। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি এই আসনের প্রতিনিধিত্ব ধরে রাখতে সক্ষম হন।
এ বছরের ২১ মে তামিলনাডুর মাদ্রাজ থেকে (অধুনা চেন্নাই) ৩০ মাইল দূরে শ্রীপেরুম্বুদুর লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থীর হয়ে প্রচারাভিযান সভায় গুপ্তঘাতকের হাতে তিনি নিহত হন। এই একই বছরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী সতীশ শর্মা জয়লাভ করেন। ১৯৯৬ সালের লোকসভা নির্বাচনেও তিনি ফের নির্বাচিত হন।
এরপর রাজীব গান্ধীর বিধবা স্ত্রী সোনিয়া গান্ধী ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত এ আসনের প্রতিনিধিত্ব করেন। তারপর ২০০৪ সালে তার ছেলে রাহুল গান্ধী নির্বাচিত হন।
২০১৯ সালে তিনি রাহুল গান্ধী বিজেপি প্রার্থী স্মৃতি ইরানির কাছে ৫৫ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত হন। কংগ্রেসের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আমেথিতে পরাজয়ে অস্বস্তিতে পড়ে কংগ্রেস। রাহুল গান্ধীর জনপ্রিয়তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। ২০২৪ সালের নির্বাচনের কিশোরী লাল শর্মার মাধ্যমে আমেথি আবার ফিরে এলো সেই কংগ্রেসের হাতে।
রাজনীতিতে যেভাবে আগমণ কিশোরী লালের
১৯৯৯-এর লোকসভা ভোটে আমেথি থেকে নির্বাচনি রাজনীতিতে পদার্পণ করেন রাজীব গান্ধীর বিধবা স্ত্রী সোনিয়া গান্ধী। সোনিয়া গান্ধীর ‘ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট’-এর দায়িত্বে ছিলেন কিশোরী লাল শর্মা।
দুই দশকের বেশি সময় ধরে আমেথি ও রায়বেরেলির সঙ্গে গান্ধী পরিবারের ‘যোগসূত্র’ ছিলেন কিশোরী লাল। ১৯৯৯ সালে আমেথি থেকে সোনিয়া গান্ধীর জয়ে বড় ভূমিকা ছিল এই কিশোরী লাল শর্মার। ২০০৪ সালের ছেলে রাহুল গান্ধীর জন্য আসনটি ছেড়ে দেন সোনিয়া গান্ধী।
সেই বছর উত্তর প্রদেশের রায়বেরেলি আসন থেকে লড়েন তিনি। এরপর দুই আসনে দেখভাল করতেন কিশোরী লাল। ২০১৯ সালের নির্বাচনে আমেথি থেকে রাহুল গান্ধীকে হারান বিজেপির প্রার্থী স্মৃতি ইরানি।
২০২৪ সালের নির্বাচনে ভাই রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেস পরিবারের একান্ত বিশ্বস্ত মানুষ কিশোরী লাল শর্মার জন্য এবার ব্যাপকভাবে প্রচার চালিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে কিশোরী লাল শর্মা পেয়েছেন ৫ লাখ ৩৯ হাজার ২শ ২৮ ভোট। অন্যদিকে, প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি’র স্মৃতি ইরানি পেয়েছেন ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩২ ভোট। এ হিসাবে কিশোরী লাল ১ লাখ ৬৬ হাজার ২২ ভোট বেশি পেয়েছেন স্মৃতি ইরানি থেকে।
পরাজয় স্বীকার স্মৃতি ইরানির
ফলাফল প্রকাশের পর স্মৃতি ইরানি নিজের পরাজয় মেনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তাকে যারা সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রতি তিনি অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এদিকে, আমেথি ফের কংগ্রেসের হাতে ফিরে আসায় দলে যেমন আনন্দ উল্লাস ছড়িয়েছে, তেমনি কংগ্রেস পরিবারেও স্বস্তি নেমে এসেছে।