সিরিয়ায় নতুন করে সরকার গঠনে জন্য নির্বাচন করতে হলে অন্তত চার বছর সময় লাগতে পারে।
স্থানীয় সময় অনুযায়ী রোববার (২৯ ডিসেম্বর) বিদ্রোহী নেতা আহমেদ আল-শারা গণমাধ্যমে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেছেন। আল আরাবিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, নতুন সংবিধান প্রণয়নে তিন বছর সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত আসাদের পতনের পর দেশটির নতুন কর্তৃপক্ষের নেতৃত্ব দিয়েছেন শারা। বর্তমানে বিদ্রোহীদের সমর্থনে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ আল-বশির।
দীর্ঘকাল স্বৈরশাসন চলার পর সম্প্রতি শারার বিদ্রোহী দল হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে। বিদ্রোহী আক্রমণের নেতৃত্ব দেওয়ার পর এই প্রথম শারা পরবর্তী পদক্ষেপ অর্থাৎ , সিরিয়ায় সম্ভাব্য নির্বাচনের সম্পর্কে পরিকল্পনা জানালেন।
শারা আরও বলেন, আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ায় সরকারি পরিষেবায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে এবং উন্নতি শুরু করতেই এক বছর লাগতে পারে। কারণ আইনি ব্যবস্থা পুনর্গঠন করতে হবে এবং বৈধ নির্বাচন পরিচালনার জন্য নতুন করে জনসংখ্যা আদমশুমারি করতে হবে।
গত ৮ ডিসেম্বর আসাদ সরকারকে উৎখাত করে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কো দখল করেছিল বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’র যৌথবাহিনী।
উল্লেখ্য, সিরিয়ায় দীর্ঘ দিন শাসন করেছে আসাদ পরিবার। বাশারের পিতা হাফিজ় আল-আসাদ টানা ৩০ বছর সিরিয়া শাসন করেছিলেন। বাশার এবং তাঁর বাবা হাফিজ়, দু’জনে মিলে ৫০ বছরের বেশি সময় সিরিয়া শাসন করেছেন। ২০০০ সালে হাফিজ়ের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন বাশার। টানা ২৪ বছর শাসন করার পর গত ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ায় তাঁর শাসনের পতন হয়।
সিরিয়ায় কুর্দি, আর্মেনিয়ান, অ্যাসিরিয়ান, খ্রিস্টান, দ্রুজ, আলাউইট শিয়া এবং আরব সুন্নি সহ ভিন্ন ভিন্ন জাতি ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে। তবে জনসংখ্যার দিক থেকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য সিরিয়া মুসলিম দেশ। তাই বহু-জাতির এই দেশ নতুনভাবে কীভাবে শাসন করা হবে তা নিয়ে এখন থেকেই প্রশ্ন উঠেছে। যদিও শারার দল দেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাজ্য ভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষক অনুসারে, আসাদের অনুগতদের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউনে গত সপ্তাহে প্রায় ৩০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস-এর প্রধান রামি আবদেল রহমান বলেছেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে তথ্যদাতা, সরকারপন্থী যোদ্ধা এবং সাবেক সৈন্য রয়েছে। তাদের অধীনে থাকা অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করা হয়েছে।
২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দামেস্কের শাসনের বিরোধিতা করে ইদলিব প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নেয় বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী। পরে সব গোষ্ঠীকে এক করে ইদলিবের নিয়ন্ত্রণ নেয় হায়াত তাহরির আল-শাম।
তথ্যসূত্রঃ বিবিসি