কে এই জেনারেল কাসিম সোলাইমানি? 



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
জেনারেল কাসেম সুলাইমানি, ছবি: সংগৃহীত

জেনারেল কাসেম সুলাইমানি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাত ও সমর-কৌশলগত পরিস্থিতিতে ব্যাপক আলোড়িত ইরানি জেনারেল কাসিম সোলাইমানিকে হত্যার ঘটনা নতুন বছরের শীর্ষ শিরোনাম হয়েছে। দেশে-বিদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন এই ইরানি সেনাপতি। সবাই জানতে চাচ্ছে, কে এই কাসিম সোলাইমানি এবং কেন তাকে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্দেশে হত্যা করা হয়েছে?

 
  

মধ্যপ্রাচ্য ও বর্তমান বিশ্বের সামরিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের অন্যতম ছিলেন কাসিম সুলাইমানি। তাকে বিবেচনা করা হয় সমকালীন দুনিয়ার অন্যতম সেরা, কুশলী ও সফল সামরিক কমান্ডার হিসাবে। যুদ্ধকৌশল ও বিজয় নিশ্চিত করার সূক্ষ্ম পরিকল্পনা ও যোদ্ধাদল গঠনের মাধ্যমে তিনি বাজিমাৎ করতে সক্ষম ছিলেন। শুধু ইরান নয়, ইরানের ভূ-রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে আশেপাশে সফলভাবে বিস্তৃত করতে তার রয়েছে বিরাট কৃতিত্বপূর্ণ ও দুঃসাহসিক ভূমিকা। 

মধ্যপ্রাচ্য সম্ভবত সবচেয়ে জটিল পরিস্থিতি পাড়ি দিচ্ছে বর্তমানে। চারটি জাতি গোষ্ঠী এখানে রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে সরব রয়েছে আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে। সৌদি নেতৃত্বে আরবগণ, তুরস্কের নেতৃত্বে তুর্কিগণ, ইরানের নেতৃত্বে পারসিকগণ এবং রাষ্ট্রহীন কুর্দিরা লড়ছে একে অপরের বিরুদ্ধে।

জাতিগত বিভাজনের বাইরে মতাদর্শিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে তীব্র মেরুকরণ বিরাজমান। তদুপরি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স ও ব্রিটেন তৎপর ও সম্পৃক্ত আছে তেল, সম্পদ লুণ্ঠন ও অস্ত্র বিক্রির ধান্দায়।

এমন জটিল ও সংকটময় পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানি ছায়াযুদ্ধে সাফল্যের প্রধান রূপকার ছিলেন জেনারেল সুলাইমানি। ইরানের আঞ্চলিক ও ভূ-রাজনৈতিক, সামরিক কর্তৃত্ব এসেছে মূলত তারই হাত ধরে।

সুলাইমানিকে গণ্য করা হয় সিরিয়ার শিয়া প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ত্রাতা হিসাবে। সামগ্রিক বিরোধিতা ও আক্রমণের মুখেও আসাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার মূল কলকাঠি ও সামরিক কৌশল ঠিক করতেন সুলাইমানি। 

লেবাননে শিয়া মিলিশিয়াদের পুনর্গঠন ও প্রতিআক্রমণে শক্তিও জুগিয়েছেন এই ইরানি জেনারেল। হামাস-হিজবুল্লাহকে একটি দুর্ধর্ষ মিলিশিয়া বাহিনীতে রূপান্তরের পেছনে তার নির্দেশিত প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সাহায্য কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।

ইরাকে সাদ্দামের পতনের পর শিয়া গোষ্ঠীকে সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার পেছনেও অবদান রয়েছে জেনারেল কাসিম সোলাইমানির। শুধু তাই নয়, বিশাল মধ্যপ্রাচ্যের সবগুলো দেশের শিয়া রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তিকে তিনি প্রশিক্ষিত, সশস্ত্রভাবে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন এবং নানা দেশের শিয়া স্বার্থে এক হয়ে লড়াইয়ের জন্যও প্রস্তুত করেছিলেন। যে কারণে সংখ্যালঘু হয়েও আসাদ সরকার আশেপাশের শিয়াদের অংশগ্রহণে সামরিক শক্তি বাড়াতে ও ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। 

জর্জরিত মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের কর্তৃত্ব ও শিয়া মতাদর্শ বিকাশকারী এই জেনারেলের হত্যাকাণ্ড নিঃসন্দেহে একটি মহাঘটনা এবং এ মূহুর্তে এটি অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাফল্য বলে বিবেচিত হবে। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন মিত্ররাও এর ফলে সন্তুষ্ট হবে। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ইরানবিরোধী সফলতা স্থায়ী হবে কিনা এবং ইরান ও শিয়া আধিপত্য খর্ব হবে কিনা, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। 

কারণ, কাসিম সোলাইমানি বছরের ওর বছর প্রশিক্ষণ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে যে সামরিক ভিত্তি ও যোদ্ধা বাহিনী তৈরি করেছেন, তা সহজেই নিঃশেষ হয়ে যাবেনা। বিশেষত আদর্শিক মনোবল ও উন্নত অস্ত্র দিয়ে তৈরি শক্তিকে নিমেষেই পদানত করা সম্ভব হবেনা। উপরন্তু ইরান এই জেনারেলের মৃত্যু ঝুকি ও বিপদের মুখে বার বার বলেছে, 'আমাদের অনেক কাসিম সোলাইমানি আছে।'

আরও অনেক সুদক্ষ জেনারেল থাকলেও কাসিম সোলাইমানি যে বিশিষ্টতা, নিজ পক্ষের প্রশংসা আর প্রতিপক্ষের নিন্দা পেয়েছেব, এমনটি সবার ভাগ্যে জুটে না। মাত্র কুড়ি বছর বয়সে কাসিম সোলাইমানি সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে ইরাক-ইরান যুদ্ধে অংশ নেন। সামরিক দক্ষতা ও দৃঢ়তার কারণে পদোন্নতির এক পর্যায়ে ১৯৯৮ সালে তিনি ইরানের অত্যন্ত ক্ষমতাবান ও রাজনৈতিকভাবে বিশ্বস্ত বিপ্লবী গার্ডের কুদ্স ব্রিগেডের কমান্ডার হন। দেশের বাইরেও তিনি সাফল্য দেখিয়েছেন। আফগান-ইরান সীমান্তে দায়িত্ব পালনের সময় মাদকপাচার নিয়ন্ত্রণে তিনি বিরাট ভূমিকা পালন করেন। 

ইরাক, আফগান সীমান্ত ছাড়াও সুলাইমানির তৎপরতা ইরানের বাইরে লেবানন ও সিরিয়ায় পরিব্যাপ্ত। ২০০৮ সালে ইরাকি সেনাবাহিনী ও মুক্তাদা আল-সদরের অনুগত মাহদি বাহিনীর মাঝে যুদ্ধের উপক্রম হয়, তখন সুলাইমানি মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করে নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণ করেন।

২০১১ সালে সুলাইমানি মেজর জেনারেল হতে জেনারেল পদে উন্নীত হন। এ সময় আলি খামেনী তাকে 'জীবিত শহীদ' উপাধি দেন।

মধ্যপ্রাচ্যে ইরানি প্রভাব বিস্তারের মূল কারিগর রূপে সুলাইমানিকে তখন থেকেই বিশ্ব চিনতে থাকে। আপাত দৃষ্টিতে রক্ষণশীল ইরানের ভেতরের খবর বাইরে খুব একটা না আসলেও নানামুখী সামরিক দায়িত্বের কারণে তার নাম চাপা থাকেনি।

ইরানের বাইরের প্রতিটি দেশে বিশেষ ভূমিকার জন্য সুলাইমানিকে নানা উপাধিও সাধারণ মানুষের পক্ষ ৎেকে দেওয়া হয়। ইরাকের শিয়াদের মুক্তিদাতা বা আসাদের ত্রাতা ছাড়াও তাকে লেবাননের হিজবুল্লাহ-এর সামরিক উইং-এর কার্যকরী প্রধান বলে গণ্য করা যায়। ২০১২ সালে তিনি নিজে সিরিয়ান হিজবুল্লাহ-এর নেতৃত্ব দিয়ে রণাঙ্গনে বাশার-বিরোধী সুন্নি বাহিনীগুলোকে নির্মূল করেন। আল-কাসির এর যুদ্ধে সুলাইমানিকে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। 

ইরাককে আইএসমুক্ত করার লড়াইয়েও সুলাইমানি কার্যকর সামরিক ভূমিকা পালন করেন। বিশেষত মুসেল ও ফাল্লুজা পুনরুদ্ধারে তার অবদাব ছিল গুরুত্বপূর্ণ তখন এক ইরাকি মন্ত্রী এমনও স্বীকার করেছিলেন যে, 'সুলাইমানি না হলে হায়দার এবাদির সরকার প্রবাসী সরকারে পরিণত হত আর ইরাক হত অস্তিত্বহীন।' 

এভাবে সুলাইমানি এক সামরিক মিথে পরিণত হন। আরবরা যেভাবে সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদের প্রশংসা করে, তুর্কিরা পাশাদের এবং কুর্দিরা সালাউদ্দিনের গুণগানে মুগ্ধ হয়, তেমনি সুলাইমানি পরিণত হন ইরানি বীরে। পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জলন্ত পরিস্থিতিতে তার ভূমিকা বা নাম নানা প্রসঙ্গে আলোচিত হতে থাকে।

ফলে সুলাইমানি যে প্রতিপক্ষের টার্গেট হবে, এ কথা বলাই বাহুল্য। ইরানিরাও তাকে যুদ্ধ ময়দানে প্রাণ হাতে লড়াইকারী 'জীবন্ত শহীদ' মনে করতো। তার মৃত্যু নিঃসন্দেহে ইরান বিরোধী শিবিরকে স্বস্তি দিয়েছে এবং ইরানকে ক্ষুব্ধ করেছে। বিক্ষুব্ধ ইরানের সর্বোচ্চ ক্ষমতাকেন্দ্র থেকে তার মৃত্যুর পর পরই প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

 

জেনারেল কাসিম সোলাইমানির হত্যার ঘটনাটি জানতে একটু পেছনে তাকানো যেতে পারে। অতি সম্প্রতি মার্কিন নাগরিক হত্যার অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক ও সিরিয়ার কয়েকটি হিজবুল্লাহ ঘাঁটিতে বিমান হামলা করে। এতে প্রায় ত্রিশজন নিহত হয়। জবাবে উত্তেজিত হিজবুল্লাহ সমর্থকরা বাগদাদের মার্কিন দূতাবাসে হামলা করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই উত্তেজনার সুযোগে মার্কিনীরা আক্রমণের সুযোগ পায় এবং তাদের আপাতত বড় সাফল্য বাগিয়ে নেয়। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) অতিপ্রত্যুষে বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে মার্কিন বিমান হামলা চালিয়ে জেনারেল সুলাইমানিকে হত্যা করে। ধারণা করা হচ্ছে, সুলাইমানির অবস্থান নিশ্চিত করে এই হামলা চালানো ও তাকে নিহত করা হয়। 

বিদ্যুৎ বেগে তার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে গেলে শুধু ইরান নয়, সারা বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া ঘটে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, তার মৃত্যুতে যুগপৎ শোক ও আনন্দ প্রকাশ পায়। মার্কিন, ইসরায়েল বা পশ্চিমা বিশ্বের আনন্দ ও স্বস্তির পাশাপাশি আরব বিশ্বের সুন্নি সম্প্রদায়েও খুশি পরিলক্ষিত হয়। কারণ, সুলাইমানির যুদ্ধ কৌশল ও আক্রমণে অকাতরে সুন্নির মৃত্যু হয়েছে। আরব বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নিরা কোণঠাসা ও আক্রান্ত হয়েছে এবং ইরানের নেতৃত্বে শিয়া আধিপত্য লেবানন, সিরিয়া, ইয়ামেন হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তর ভূখণ্ডে বিস্তৃত হয়েছে। 

অন্যদিকে ইরানে জাতীয় শোকের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হয়েছে। ইরান তাদের এই জাতীয় বীরের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার সঙ্কল্প জানিয়েছে। ফলে তার মৃত্যু শান্তির বদলে বদলার রাজনীতিকেই প্রলম্বিত করবে। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে ইরানের নেতৃত্ব যে 'শিয়া ক্রিসেন্ট' উদিত হয়েছে, তাতে শিয়া প্রাধান্য ও আধিপত্য স্মরণকালের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। জেনারেল কাসিম সোলাইমানির নেতৃত্বে শিয়া অগ্রযাত্রা ব্যাপকভাবে শক্তি সঞ্চয় করে বিস্তৃত হয়েছে। প্রধান সেনাপতির ভূমিকা পালন করে সুলাইমানি রণাঙ্গনকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন নিজের বিজয়ের পক্ষে। 

ইসলামের ইতিহাস নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে প্রাথমিক যুগ থেকেই রক্তাক্ত লড়াইয়ের মতাদর্শিক ধারা লক্ষ্য করা যায়। ভ্রাতৃঘাতী এই লড়াইয়ে একে অপরের হাতে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ও নিপীড়নের ইতিবৃত্তও লিপিবদ্ধ হয়েছে। লেখা হয়েছে অনেক বীর ও সেনাপতির নাম। কে সঠিক আর কে ভ্রান্ত, সে বিচারের আগে বরং আত্মঘাতী বেদনা, রক্ত, প্রাণনাশের ছবিই সবার আগে সামনে চলে আসে।

ইসলামের ঐতিহাসিক লড়াইয়ে যে তালিকায় একবিংশ শতকের প্রেক্ষাপটে অবশ্যই যুক্ত হবে জেনারেল কাসিম সোলাইমানির নামও।

   

পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সক্ষমতা ইরানের আছে: চীন



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পর ইরানকে সরাসরি সমর্থন না জানালেও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে ইরানের। এই অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা যাতে না হয়, তারা সেটি দেখার সক্ষমতা ইরানের আছে।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স এর প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার (১৪ এপ্রিল) ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। এ সময় ওয়াং ই বলেন, ইরান নিজেদের প্রতিরক্ষা ও সার্বভৌমত্বের চিন্তা করে হামলা করেছে বলে জানিয়েছে। সিরিয়ায় ইরানি দূতাবাসে হামলার তীব্র নিন্দা জানান তিনি।  

এ নিয়ে মঙ্গলবার প্রকাশিত চীনের বার্তা সংস্থা শিনহুয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবেশি ও আঞ্চলিক দেশগুলোতে হামলা না করার দিকে যেভাবে ইরান জোর দিয়েছে তাতে সমর্থন দিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। 

এ সময় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান ওয়াং ইকে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা নিয়ে ইরানও চিন্তিত। এ নিয়ে তারা পরিকল্পনা করছে। এই উত্তেজনা যাতে আর না বাড়ে সেজন্য তারা সব করতে রাজি। 

ইরানের হামলার পর সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফাহিয়ান আল সৌদের সঙ্গেও কথা বলেন ওয়াং ই। মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে রিয়াদের সঙ্গে কাজ করতে বেইজিং প্রস্তুত বলে জানান তিনি। এমনকি গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়েও কাজ করবে চীন।

গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে একজন কমান্ডারসহ ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পসের সাত কর্মকর্তাকে হত্যা করে ইসরায়েল। এ হামলার জবাবে রোববার ভোরে ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান।

ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরানের হামলায় খুব সামান্যই ক্ষতি হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেপণাস্ত্রই আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছে। এতে আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জর্ডান সহায়তা করেছে।

ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে ইসরায়েল কী করে, তা দেখতে উদগ্রীব পুরো বিশ্ব। তবে, এখনই ইসরায়েলকে কিছু না করার পরামর্শ দিয়েছে পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো। উত্তেজনা না বাড়ানোর জন্য সোমবার ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্রগুলো আহ্বান জানিয়েছে। 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও ইসরায়েলকে সংযত থাকতে বলেছেন। 

;

ইরানি হামলা প্রতিরোধে ইসরায়েলের ব্যয় ১৩৫ কোটি ডলার 



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সম্প্রতি ইসরায়েলে সংগঠিত ইরানি হামলার ঘটনায় শত শত ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা প্রতিরোধ করতে দেশটিকে ব্যয় করতে হয়েছে প্রায় ১৩৫ কোটি ডলার। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে তুর্কি সংবাদ মাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

দৈনিক ইয়েদিওথ আহরনোথ ব্রিগেডিয়ার মো. ইসরায়েলি চিফ অব স্টাফের সাবেক আর্থিক উপদেষ্টা জেনারেল রাম আমিনাচ এই প্রসঙ্গে বলেন, শনিবার রাতে ১৩৫ কোটি ডলার প্রতিরক্ষা ব্যয় গুনতে হয়েছে। 

তিনি বলেন, ‘অ্যারো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে একটি ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে আটকাতে প্রায় ৩৫ লাখ ডলার গুনতে হয়। যেখানে একটি ‘ম্যাজিক ওয়ান্ড’ ক্ষেপণাস্ত্রের দামও ১০ লাখ ডলার। এছাড়া ইরানি ড্রোনগুলো আটকাতে বিভিন্ন ধরনের ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান অংশ নিয়েছে। সেসব খরচ বাদ দিয়েই শুধু ইরানি হামলা মোকাবিলায় এই অর্থ খরচ হয়েছে।’

তেল আবিবের একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের একজন সিনিয়র গবেষক ইহোশুয়া ক্যালিস্কি বলেন, শনিবার ইসরায়েলের ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন ব্যারেজ আটকানোর খরচ আনুমানিক ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ইসরায়েলি শেকেল বা ৫৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। ডেভিড'স স্লিং এয়ার ব্যবহারসহ ইরানের অর্ধেক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন আটকানোর সাথে সম্পর্কিত ব্যয়কে বিবেচনা করে তিনি এই  অনুমান করেন। এতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, এবং জ্বালানি ও অস্ত্রসহ ১০০টি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানকে ছয় ঘণ্টা বাতাসে রাখার খরচও বিবেচনা করা হয়েছে।

দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

কালিস্কি বলেন, এই হামলার ব্যয় ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের খরচের সাথে তুলনীয়। তবে শনিবারের ইরানি হামলা প্রতিরোধের এই খরচ ইসরায়েলের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে না।

এর আগে রোববার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র দানিয়েল হাগারির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছিল, ইরান থেকে ইসরায়েলে প্রায় ৩৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা করা হয়েছিল, যার বেশিরভাগই আকাশেই নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।

তিনি নিশ্চিত করেন, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিয়ারশেবারের নেভাতিম বিমানঘাঁটিতে সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে ৯৯ শতাংশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে।

দানিয়েল হাগারি আরও বলেন, ‘৩০টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ২৫টি ধ্বংস করা হয়েছে এবং ১২০ টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে মাত্র কয়েকটি ইসরায়েলের আকাশে প্রবেশ করতে পেরেছে। সেসব নেভাতিম বিমান ঘাঁটিতে পড়েছে।’ 

হাগারি উল্লেখ করেছেন, ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর সক্ষমতা ধ্বংস করতে ইরানের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে এবং নেভাতিম ঘাঁটি কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, শনিবার রাতে ইরানের পাশাপাশি লেবানন, ইরাক ও ইয়েমেনের ভূখণ্ড থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করা হয়েছে।

 

;

ভারতে ফ্লাইওভার থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে গেল বাস, নিহত ৫



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবিঃ সংগৃহীত

ছবিঃ সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফ্লাইওভার থেকে একটি যাত্রীবাহী বাস নিচে পড়ে গেছে। এতে পাঁচ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে প্রায় ৪০ জন। নিহতদের মধ্যে চারজন পুরুষ এবং একজন নারী রয়েছেন।

সোমবার (১৫ এপ্রিল) ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে পুরী থেকে কলকাতা আসার পথে জাজপুর জেলার বারবাতীর কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। জাতীয় সড়ক-১৬ ওপরে একটি ফ্লাইওভারে ওঠার সময় বাসটির চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে বাসটি নিচে পড়ে যায়।

বাসটিতে ৫০ জনেরও মতো যাত্রী ছিলেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ। খবর পেয়েই পুলিশ এবং দমকল বাহিনীর একটি দল বারবাটি সেতুর কাছে পৌঁছে উদ্ধারের কাজ শুরু করে। আহতদের ১০টি অ্যাম্বুলেন্সে স্থানীয় ধর্মশালা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গুরুতর আহতদের পাঠানো হয়েছে কটকের এসসিবি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

;

ইরানের হামলার জবাবে ইসরায়েলের ৩ বিকল্প



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইরানের এই প্রত্যক্ষ হামলার জবাবে ইসরায়েলের যুদ্ধ-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা ৩ ধরনের বিকল্প উপায় গ্রহণ করতে পারবে বলে মনে করেন বিবিসির ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার। বৃটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে তিনি এই উপায়গুলো জানিয়েছেন।

প্রথমত, ইসরায়েল একটি ‘স্ট্র্যাটেজিক পেশেন্স’ বা কৌশলগত ধৈর্য প্রদর্শনের রাস্তায় হাঁটতে পারে। অর্থাৎ সরাসরি ইরানের বিরুদ্ধে কোনো পাল্টা হামলা না চালিয়ে তারা ওই অঞ্চলে ইরানের যেসব শরিকরা আছে তাদের ওপর অভিযান চালিয়ে যাবে। এর মধ্যে আছে লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী, সিরিয়াতে অবস্থিত ইরানের সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ কেন্দ্রসমূহ।

দ্বিতীয়ত, ইরান যে ধরনের হামলা চালিয়েছে ইসরাইলও দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাল্টা ঠিক সেই ধরনের হামলা চালাতে পারে। এসব হামলার নির্দিষ্ট লক্ষ্য হবে ইরানের সেই ক্ষেপণাস্ত্রের ঘাঁটিগুলো। তবে ইসরাইল যদি এই অপশনটা বেছে নেয়, তাহলে ইরান সেটাকেও ‘এসক্যালেশন’ বা যুদ্ধের উত্তেজনা বাড়ানোর চেষ্টা হিসেবেই দেখবে। কারণ বহু বছরের বৈরিতা সত্ত্বেও ইসরায়েল ইতিপূর্বে কখনওই সরাসরি ইরানের ভূখণ্ডে কোনো হামলা চালায়নি। বরং তারা ওই অঞ্চলে ইরানের সঙ্গী বা প্রক্সি মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে আক্রমণেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছে।

তৃতীয়ত, ইসরায়েল যুদ্ধের উত্তেজনা বাড়ানোর চেষ্টায় ইরানের চেয়েও অনেক শক্তিশালী পাল্টা হামলা চালাতে পারে। সেক্ষেত্রে তারা শুধু নির্দিষ্ট ক্ষেপণাস্ত্র বেসগুলোই নয়, ইরানের অত্যন্ত শক্তিশালী রিভোলিউশনারি গার্ডসের ঘাঁটি, প্রশিক্ষণ শিবির ও কমান্ড-অ্যান্ড-কন্ট্রোল সেন্টারগুলোকেও আক্রমণের নিশানা করবে।

ইসরায়েল যদি এই শেষ দুটো অপশনের কোনওটা বেছে নেয়, তাহলে ইরানকেও অবশ্যই আবারও পাল্টা আঘাত হানার পথে যেতে হবে। আর একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, এই সংঘাতে কি আমেরিকাও জড়িয়ে পড়তে পারে?

উপসাগরীয় আরব অঞ্চলের ছ’টি দেশেই কিন্তু মার্কিন সামরিক উপস্থিতি আছে। এছাড়া তাদের সামরিক ঘাঁটি আছে সিরিয়া, ইরাক ও জর্ডানেও। বহু বছরের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান যে ব্যালিস্টিক ও অন্য নানা ধরনের মিসাইলের বিপুল ভাণ্ডার তৈরি করেছে, মার্কিন এই সামরিক ঘাঁটিগুলো সেই সব ক্ষেপণাস্ত্রের নিশানায় পরিণত হতে পারে।

ইরান দীর্ঘদিন ধরেই আর একটা হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে যে তারা যদি আক্রান্ত হয় তাহলে তারা হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেবে।

কৌশলগতভাবে অতি গুরুত্বপূর্ণ এই সমুদ্রপথটি যদি ইরান মাইন, ড্রোন ও ফাস্ট অ্যাটাক ক্র্যাফট দিয়ে বন্ধ করে দেয়, তাহলে বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম ব্যস্ত রুটটি অচল হয়ে পড়বে এবং বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহের এক-চতুর্থাংশ স্তব্ধ হয়ে যাবে।


;