ইরানি জেনারেল হত্যায় মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবেই

  • খুররম জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সোলাইমানির জানাজা/ছবি: সংগৃহীতছবি: সংগৃহীত

সোলাইমানির জানাজা/ছবি: সংগৃহীতছবি: সংগৃহীত

ইরাকের বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে মার্কিন হামলায় ইরানের জেনারেল কাসিম সোলেইমানি নিহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে ইরানে।

ইরানের জেনারেলের প্রতি এ হামলায় আরব বিশ্বের জনগণেরও সমর্থন পাবে না যুক্তরাষ্ট্র এবং আরবের অন্য দেশগুলোতে প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। এমনটাই বার্তা২৪.কমকে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমার মনে হয় ইরান এ ঘটনার পর সরাসরি যুদ্ধে যাবে না। তবে সমস্যা দাঁড়িয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো একজন প্রেসিডেন্ট থাকায় যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ বা যুদ্ধরত অবস্থার কাঠামোর মধ্যে পড়ে গেছে।

তিনি বলেন, ইরান আপাতত চেষ্টা করবে আন্তর্জাতিক সমর্থন বাড়ানোর। ইতোমধ্যে তারা সমর্থন আদায় করেছে। রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে মিলে ইরান কাজ করছে। এ ধরনের হত্যার ঘটনায় বিশ্ব জনমত যে ট্রাম্পের পক্ষে গেছে তা বলা মুশকিল।

বিজ্ঞাপন

এ ধরনের প্রেসিডেন্ট যদি যুক্তরাষ্ট্রে থাকে তাহলে বিশ্ব কাঠামো নিয়ে যে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে তা কতদূর করা যাবে? এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, এ ধরনের প্রেসিডেন্ট থাকার ফলে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের জুজু থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না। তবে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকেই এটি নির্ধারণ করতে হবে।

ইরানি জেনারেলের ওপর আঘাতে আরব দেশের রাজপরিবারের সদস্যরা খুশি হতে পারে কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের সাধারণ জনগণের সমর্থনে থাকবে বলে মনে করি না। আরব দেশে যেখানে রাজতন্ত্র রয়েছে তা যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে টিকে আছে। পুরো ঘটনাটিতে যুক্তরাষ্ট্র আদৌ লাভবান হয়েছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

তিনি বলেন, তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প কংগ্রেসে ইমপিচ হয়েছে। অচিরেই এটি সিনেটে উত্থাপিত হবে। তাছাড়া আগামী নির্বাচনে এ ইস্যু তুলে ট্রাম্প জিততে চাইবেন। সব কিছুই অন্যদিকে ঘুরিয়ে ট্রাম্প নিজে লাভবান হতে চাইবেন। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে আরব বিশ্বের জনগণের মধ্যে একটি সংকট তৈরি হবে।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত তৌহিদ হোসেন বলেন, মার্কিন হামলায় ইরানের জেনারেল কাসিম সোলেইমানি নিহত হওয়ার ঘটনায় কিছু প্রতিক্রিয়া তো হবেই। এ ছাড়াও মধ্যেপ্রাচ্য যুদ্ধ যে কোনো সময় যে কোনোও অছিলায় লেগে যেতে পারে। তবে যুদ্ধে গিয়ে ইরানের খুব সুবিধা হবে না। এ কারণে আমার মনে হয় না ইরান যুদ্ধ করবে। ট্রাম্পও বলেছেন, তিনি যুদ্ধ বাধাতে নয় বরং না লাগাতেই এ কাজটি করেছেন।

আমরা আশা করব, যুদ্ধ যেন না লাগে। এ ঘটনায় কিছুটা প্রতিঘাত আসতে পারে। এ প্রতিঘাতে যুক্তরাষ্ট্র যদি বেশি প্রতিক্রিয়া দেখায় তাহলে যুদ্ধের দিকে যেতে পারে। তবে আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্র এটা করবে না।

সাবেক এ পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ইরানের শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন হামলার নেপথ্যে থাকা 'অপরাধীদের বিরুদ্ধে চরম প্রতিশোধ' নেয়া হবে। তবে এ ধরনের বক্তব্য ও বাস্তবতা ভিন্ন হয়ে থাকে। এ সময় এ বক্তব্য না দিয়ে তার উপায়ও নেই। তারপরও তার এ বক্তব্যকে ধরে বলা যায়, ইরান যদি ছোটখাট কিছু না করে তাহলে আঞ্চলিক যে ক্ষমতা তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কাজেই কিছু প্রতিক্রিয়া হবেই এবং হচ্ছে।

তৌহিদ হোসেন বলেন, মার্কিন হামলায় নিহত ইরানের জেনারেল কাসেম সোলেইমানির বেশকিছু অনুসারী সংগঠন মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ইরান ছাড়াও ইরাক, সিরিয়া, লেবানন ও ইয়েমেনে তারা সক্রিয় রয়েছে। তারাই যুক্তরাষ্ট্র বা তাদের মিত্রদের ওপর আঘাত হানতে পারে।

তিনি বলেন, তবে এ হামলায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু লাভবান হতে পারে। ঘুষ, দুর্নীতির অভিযোগে হওয়া মামলায় তিনি নিজ দেশে কোণঠাসা। মার্চে দেশটিতে নতুন নির্বাচন। 

ঘুষ, জালিয়াতি ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে নভেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের অ্যাটর্নি জেনারেল দেশটির প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেন। অভিযোগগুলোকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত’ অ্যাখ্যা দেওয়া নেতানিয়াহুকে এখন বিচারের হাত থেকে বাঁচতে পার্লামেন্টে অর্ধেকের বেশি সংসদ সদস্যদের সমর্থন লাগবে। এ ঘটনায় তিনি তার প্রতি সমর্থনে সহানুভূতি অর্জন করতে পারেন।