মক্তব শিক্ষাকে এখনও গুরুত্ব দিয়ে ধরে রেখেছে তিউনিসিয়া

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মক্তব শিক্ষাকে এখনও গুরুত্ব দিয়ে ধরে রেখেছে তিউনিসিয়া, ছবি: সংগৃহীত

মক্তব শিক্ষাকে এখনও গুরুত্ব দিয়ে ধরে রেখেছে তিউনিসিয়া, ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সূচকে উচ্চশিক্ষা খাতে বিশ্বে তিউনিসিয়ার অবস্থান ১৭তম এবং প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ২১তম। ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬১০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশটিতে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ মানুষের বসবাস। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ৯১তম এবং জনসংখ্যার দিক দিয়ে ৭৯তম বৃহত্তম দেশ। দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯৮ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী।

তিউনিসিয়ায় ইসলাম পৌঁছে সাহাবি হজরত মুয়াবিয়া (রা.)-এর শাসনামলে সাহাবি উকবা ইবনে নাফে (রা.)-এর নেতৃত্বে এলাকাটি বিজিত হওয়ার মাধ্যমে।

বিজ্ঞাপন

তিউনিসিয়া আফ্রিকার উত্তর উপকূলে ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। দেশটির পূর্ব উপকূলে অবস্থিত তিউনিস দেশের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। ১৯৫৬ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। আধুনিক তিউনিসিয়ার স্থপতি হাবিব বুর্গিবা দেশটির স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দেন এবং ৩০ বছর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর তিউনিসিয়া উত্তর আফ্রিকার সবচেয়ে স্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ইসলাম দেশটির রাষ্ট্রধর্ম।

পুরোনো তিউনিস শহরে অবস্থিত ইজিটিউনা মসজিদটি ৭৩২ খ্রিস্টাব্দে উমাইদ রাজবংশের আবদুল মালিকের রাজত্বকালে রাজ্যশাসক উমাইদিল্লাহ বিন আল হাবহাব দ্বারা নির্মিত হয়। মসজিদটি মধ্যযুগে শিক্ষা এবং ধর্ম প্রচারের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

বিজ্ঞাপন

কোরআন শিক্ষা বিশেষ করে হিফজুল কোরআনের প্রতি তিউনিসিয়ানদের আলাদা আকর্ষণ ও গুরুত্ব রয়েছে। নিজ নিজ সন্তানদের তারা নানাভাবে উৎসাহিত করেন কোরআনের হাফেজ হওয়ার জন্য। রমজান মাসে রাষ্ট্রীয়ভাবে তিউনিসিয়ার মসজিদগুলোতে হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় পরিসরে হয় আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতা। যেখানে ১৫টি মুসলিম রাষ্ট্র অংশ নিয়ে থাকে। তিউনিসিয়ার হাফেজ ও কারিরা বিভিন্ন দেশের কোরআন প্রতিযোগিতায় অংশ নেন নিয়মিত।

তিউনিসিয়ার শিক্ষার ব্যবস্থায় ‘মক্তব’ শিক্ষাকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়। মসজিদ ছাড়াও বিভিন্ন অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিরা মক্তব শিক্ষার পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকেন। তিউনিসিয়ার শিশুদের কোরআন পড়ার হাতেখড়ি মক্তবেই হয়। মক্তবে হাতেকলমে কোরআন শেখানো ও মুখস্ত করানো হয়। নির্দিষ্ট একটা বয়স পর্যন্ত মক্তবে শিক্ষা শেষে মাদরাসা কিংবা স্কুলে ভর্তি হয়। অনেক সময় দেখা যায়, মক্তবে পড়ার সময়ই কোরআনে কারিমের বড় একটা অংশ মুখস্ত হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের। মক্তবের শিক্ষকদের বেশ সম্মানের চোখে দেখা হয়। এমনও হয়, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সকালে মক্তবের শিক্ষক হিসেবে কোরআন শিক্ষা দিয়ে থাকেন।

মক্তব শিক্ষাকে আরও আধুনিক করতে নানা ধরনের গবেষণা চলছে। ইতোমধ্যে অনেক মক্তবে ই-লার্নিং পদ্ধতিতে কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

অনেক মক্তবে ই-লার্নিং পদ্ধতিতে কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে, ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি তিউনিসিয়ার ধর্মমন্ত্রী সেদেশের কনিষ্ঠ হাফেজ মারিয়াম ওসমানিকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেছেন। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনার তেমন কোনো গুরুত্ব না থাকলেও তিউনিসিয়ার জন্য এটা বিশাল এক ঘটনা। কারণ, হাফেজদের তারা ভিন্নচোখে দেখে সর্বদা।

এ বিষয়ে ধর্মমন্ত্রী আহমাদ আজুম বলেন, মারিয়াম ওসমানিকে সম্মান প্রদর্শন করা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। মূলত কোরআন হেফজ করার জন্য উৎসাহ প্রদান এবং তিউনিসিয়ায় জাতীয় নারী দিবস উপলক্ষে তাকে এই সম্মাননা প্রদর্শন করা হয়েছে।

তিউনিসিয়ার তুযার প্রদেশের দাক্বাশ শহরের বাসিন্দা মারিয়াম ওসমানির বয়স মাত্র নয় বছর। আগে থেকেই সে মক্তবে প্রায় অর্ধেক কোরআন মুখস্থ করেছিল। সম্প্রতি করোনার জন্য বন্ধ সময়ে বাকি ১৫ পারা কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে। মারিয়ামকে দেখে আরও অনেকেই কোরআন শিক্ষা ও মুখস্থ করতে আগ্রহী হবেন, তাই তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানো হয়েছে।

শুধু কোরআন শিক্ষা নয়, ইবাদত-বন্দেগি, ধর্মচর্চা- বিশেষ করে তিউনিসিয়ানদের রমজান উদযাপন চোখে পড়ার মতো। তারা রমজান আসার আগেই ঘরবাড়িগুলোকে বিয়েবাড়ির মতো সাজিয়ে-গুছিয়ে পরিপাটি করে নেয়। বলা চলে, পুরো দেশকে নতুনভাবে সাজানো হয়- রমজানকে স্বাগত জানানোর জন্য। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বারতা নিয়ে যখন মহিমান্বিত রমজান হাজির হয়; তখন তারা ব্যস্ত হয়ে পড়ে রমজান বরণে। রমজান বরণের এমন চিত্র অন্যকোনো দেশে সাধারণত দেখা যায় না।

তিউনিসিয়ান যুবকদের মধ্যে রমজানের প্রতি আগ্রহ থাকে অন্যদের তুলনায় একুট বেশি। হাজার হাজার যুবক সারা বছর অপেক্ষা করেন কখন রমজান মাস আসবে। কারণ রমজান তাদের বিয়ের মাস। রমজান মাসে বিয়ে করা তাদের ঐতিহ্যের অংশ।

রমজান মাসের বরকত লাভের জন্য তারা এ মাসে বিয়ে-শাদি করেন। এমনকি রমজানে বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা, বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া, বিয়ে সম্পন্ন করা, অলিমা (বৌভাত) ইত্যাদিও রমজানের রাতেই সম্পন্ন করা হয় বেশ গুরুত্ব দিয়ে। তিউনিসিয়ার সমাজ মসজিদকেন্দ্রিক। মসজিদেই বিয়ে পড়ানোসহ অন্য সামাজিকতা সম্পন্ন হয়।

তিউনিসিয়ার প্রায় মসজিদেই নারীদের জন্য আলাদা নামাজের জায়গা রয়েছে।