জামাত ত্যাগে অভ্যস্ত ব্যক্তি গোনাহগার
এক জন মুমিনের জন্য ঈমানের পর আবশ্যকীয় একটি বিধান হলো- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পদ্ধতিগত বিধান হচ্ছে- জামাতে আদায় করা। বিধানটি পালনের তাগিদের সঙ্গে সঙ্গে বহুবিধ ফায়দার কথাও হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে। এর কয়েকটি হলো-
জামাতে নামাজ আদায়ের তাগিদ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহতায়ালা। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো।’ –সূরা আল বাকারা: ৪৩
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা জীবন জামাতে নামাজ আদায় করে দেখিয়েছেন, নামাজ জামাতে আদায় করতে হয়। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সারা জীবন জামাতের সঙ্গেই নামাজ আদায় করেছেন। এমনকি ইন্তেকালপূর্ব অসুস্থতার সময়ও জামাত ছাড়েননি। সাহাবায়ে কেরামের পুরো জীবনও সেভাবে অতিবাহিত হয়েছে।
পুরুষের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই জামাতে আদায় করা সুন্নতে মোয়াক্কাদা, যা ওয়াজিবের সঙ্গে তুলনীয় (অর্থাৎ এটি ওয়াজিবের কাছাকাছি)। -সহিহ মুসলিম: ১০৯৩
শরিয়ত অনুমোদিত কোনো অপারগতা ছাড়া জামাতে শরিক না হওয়া বৈধ নয়। যে ব্যক্তি জামাত ত্যাগে অভ্যস্ত হয়ে যায়, সে গোনাহগার হবে। -সুনানে আবু দাউদ: ৪৬৪
জামাতে নামাজ আদায় করলে এক রাকাতে ২৭ রাকাতের সওয়াব লাভ হয়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জামাতে নামাজের ফজিলত একাকী নামাজের চেয়ে ২৭ গুণ বেশি।’ –সহিহ মুসলিম: ১৪৭৭
জামাতে নামাজ আদায় করলে প্রতি কদমে নেকি লাভ হয় এবং গোনাহ মাফ হয়। সেই সঙ্গে একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি হয়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে পবিত্রতা লাভ করে মসজিদে এসে নামাজ আদায় করে তার প্রতি কদমে একটি নেকি দেওয়া হয়। একটি করে গোনাহ মাফ করা হয়, একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। -সহিহ মুসলিম: ১০৯৩
জামাতে নামাজ আদায় করলে প্রথম কাতারের সওয়াব লাভ করার সুযোগ হয়। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, মানুষ যদি আজান এবং প্রথম কাতারে নামাজের সওয়াব জানতো তাহলে প্রয়োজনে লটারি করে হলেও তারা তা লাভ করতো। -সহিহ বোখারি: ৬১৫
জামাতে নামাজ আদায় করলে সারা রাত ইবাদতের সওয়াব লাভ করা যায়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি এশার নামাজ জামাতে আদায় করে সে যেন অর্ধরাত্রি ইবাদত করল। আবার যদি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে তবে সে যেন পূর্ণ রাত ইবাদত করল। -সহিহ মুসলিম: ১৪৯১
জামাতে নামাজ আদায় করলে সারা দিন আল্লাহর হেফাজতে থাকা যায়। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে, সে আল্লাহর হেফাজতে থাকে। আল্লাহর হেফাজতে থাকা ব্যক্তিকে যে কষ্ট দেবে, আল্লাহ তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। -মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ২/২৯
বিনা ওজরে জামাত পরিত্যাগকারীর নিন্দায় নবীজী কঠোর কথা বলেছেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার প্রাণ যার হাতে, তার শপথ করে বলছি, আমার ইচ্ছা হয় আমি কাঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ দেই আর নামাজের আজান দেওয়ার জন্য হুকুম দেই। তারপর আমি এক ব্যক্তিকে হুকুম করি, যেন সে লোকদের নামাজের ইমামতি করে। আর আমি ওই সব লোকদের দিকে যাই, যারা নামাজের জামাতে হাজির হয়নি এবং তাদের বাড়িঘরগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেই।’ –সহিহ বোখারি: ৬১৮
তবে কিছু অপারগতার কারণে জামাতে উপস্থিত না হওয়ার অনুমতি আছে। যথা-
১. যদি মুষলধারে বৃষ্টি হয়। -সহিহ বোখারি: ১১২৬
২. প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, ঘর থেকে বের হলে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকলে জামাতে শরিক না হওয়ার অবকাশ আছে। -সহিহ বোখারি: ৬২৬
৩. রাস্তায় বেশি কাদা হলে। -বদরুল মুনির: ৪/৪১৯
৪. অতি আঁধার হওয়া। -জমউল জাওয়ামে: ১/৩০৫৮
৫. রাতে যদি অতিমাত্রায় মেঘ হয়। -মুসনাদে আহমাদ: ৫৩০২
৬. অসুস্থ হলে। -সুনানে আবু দাউদ: ৪৬৪
৭. দৃষ্টিহীন ব্যক্তির জন্য। -সহিহ বোখারি: ৬২৭
৮. এমন বৃদ্ধ, যিনি মসজিদে আসতে সক্ষম নন। -ইবনে মাজাহ: ৭৮৫
৯. কোনো রোগীর সেবাশুশ্রুষায় আত্মনিয়োজিত থাকলে। -প্রাগুক্ত
১০. ঘন ঘন প্রস্রাব-পায়খানার বেগ হলে। -তিরমিজি: ১৩২
১১. বন্দী অবস্থায়। -ইবনে মাজাহ: ৭৮৫
১২. এক পা বা উভয় পা কর্তিত হলে। -সুনানে আবু দাউদ: ৪৬৪
১৩. এমন রোগ হওয়া, যার কারণে চলতে অক্ষম। যেমন অর্ধাঙ্গ রোগ ইত্যাদি। -প্রাগুক্ত
১৪. খানা সামনে, সেও ক্ষুধার্ত, মনের আকর্ষণ খানার দিকে। এমন অবস্থায় জামাতে না গেলেও চলবে। -সহিহ বোখারি: ৬৩১
১৫. সফরের প্রস্তুতি গ্রহণের সময়। -সহিহ বোখারি: ৩/৬৭
১৬. জামাতে নামাজ আদায় করতে গেলে কোনো সম্পদ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকলে জামাত ত্যাগ করতে পারবে। -সুনানে আবু দাউদ: ৪৬৪
১৭. জামাতে যাওয়ার কারণে ট্রেন, ফ্লাইট বা গাড়ি চলে যাওয়ার আশঙ্কা হলে জামাতে শরিক না হওয়ার অনুমতি আছে। -সুনানে আবু দাউদ: ৪৬৪
উল্লেখ্য, নারীদের জন্য মসজিদ থেকে ঘরে নামাজ আদায় করা উত্তম। মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে নামাজ পড়বে। এটাই নবীজীর পছন্দ। সুতরাং নারীরা বাড়িতে নামাজ আদায় করবেন।