নামাজ মানুষকে সুশৃঙ্খল করে
সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার আনুগত্যের সর্বোত্তম নিদর্শন নামাজ। একজন মুসলিমের জন্য ঈমান আনার পর, ঈমানের দাবিতে সত্যবাদী হওয়ার প্রমাণ হলো- নামাজ। নামাজই একজন মুসলিম ও অমুসলিমের মাঝে পার্থক্য তৈরি করে।
হাদিস শরিফে নামাজকে বেহেশতের চাবি বলা হয়েছে। আপনার হাতে ঘর খোলার চাবি থাকলে স্বাভাবিকভাবে আশা করতেই পারেন, ‘আমি সেই ঘরের বাসিন্দা হবো- ইনশাআল্লাহ।’ প্রশ্ন হতে পারে, নামাজের মধ্যে এমন কী আছে- যা মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যায়?
এর জবাব আল্লাহতায়ালা নিজেই দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে (যাবতীয়) অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে।’ –সূরা আনকাবুত: ৪৫
আল্লাহতায়ালা বড় নিশ্চয়তা দিয়ে কথাটি বলেছেন। অন্যায় ও অশ্লীল কাজ মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। আর নামাজ মানুষকে সব ধরনের মন্দ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে। আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, নামাজ পড়েও তো অনেক মানুষ অন্যায় করে। বাহ্যিকভাবে আপনার কথা ঠিক আছে, কিন্তু সত্যিটা হলো ওই শ্রেণির নামাজিরা সত্যিকারের নামাজি নয়। ওরা প্রতারক, নামাজকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে, নিজেকে নামাজি হিসেবে উপস্থাপন করে মানুষের চোখে ভালো সেজেছে।
ইসলামি স্কলাররা বেনামাজিকে আন্তরিকভাবে তওবা ও অনুতপ্ত হওয়ান পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘মহান আল্লাহর ভয় অন্তরে রেখে নামাজ শুরুর কথা। তাতে জীবনে পরিবর্তন পরিবর্তন আসবে। আল্লাহর দরবারে ভুল স্বীকার আর তওবার মাধ্যমে আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। বলা হয়, বান্দার মুখে ভুল হয়ে গেছে উচ্চারণ করতে যতটুকু সময় লাগে, ক্ষমা করতে আল্লাহর ওই পরিমাণ সময় লাগে না।’
অভিশপ্ত শয়তান সদা-সর্বদা মানুষের পেছন লেগে থাকে। সে বিভিন্ন অজুহাত ও বাহানা বান্দার সামনে পেশ করে। কখনও একটু অপেক্ষা কিংবা কাজ গুছানোর মনোভাব জাগ্রত করে নামাজ থেকে দূরে রাখতে চায়। মনে রাখতে হবে, শয়তান আপনার প্রকাশ্য শত্রু, সে চায় আপনাকে জাহান্নামে নিয়ে যেতে। আপনি তাকে সে সুযোগ দেবেন কেন? আপনি তওবা করুন (ফিরে আসুন), আবার ভুল হয়েছে, আবার ফিরে আসুন। আল্লাহতায়ালা তো আপনার শত্রু নন, আপনার প্রতি রহমওয়ালা ও দরদী। তিনি কোনো আপনাকে জাহান্নামে পোড়াতে চান না। তাইতো মুমিনদের সম্পর্কে তিনি বলেছেন, তারা বারবার তওবাকারী। সাহাবাদের জীবনেও এমনটি হয়েছে। অন্যায় করে কোনো সাহাবি যখন হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলেছেন, তখন তার কাছে জানতে চেয়েছেন, তুমি কি আমাদের সঙ্গে নামাজ পড়েছ? জবাবে হ্যাঁ বললে তিনি চুপ করে গেছেন। তিনি জানতেন, আমার সাহাবি যখন আমাদের সঙ্গে নামাজ আদায় করেছে সে পরিশুদ্ধ হবেই।
নামাজে অভ্যস্ত হলে জীবনে শৃঙ্খলা আসবে এবং সকল অন্যায় কাজে ঘৃণা জন্ম নেবে। এটিই স্বাভাবিক। পরিবার, সমাজ সর্বত্রই আপনি সমাদর পাবেন। এসব আল্লাহরই দান। সর্বোপরি আপনি অন্তরে প্রশান্তি অনুভব করবেন। অভাব-অনটন, দুঃখ-কষ্ট কোনো কিছুই আপনাকে পেরেশান করবে না। কারণ সবকিছু পেশ করার একটি আশ্রয় আপনি খুঁজে পাবেন। যা কাউকে বলা যায় না, তা নীরবে নিভৃতে মহান প্রভুর কাছে পেশ করা যায়। আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে তার কাছে চাইতে বলেছেন। হ্যাঁ, নামাজের মধ্যেই চাইবেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বান্দা যখন সেজদায় যায় তখন আল্লাহর খুব নিকটবর্তী হয়ে যায়। মন খুলে চান। যা প্রয়োজন সবই আল্লাহকে বলুন। আল্লাহতায়ালা দেবেন, তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আল্লাহ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী নন।