আলেমরা করোনার টিকা নিচ্ছেন, মানুষকেও উৎসাহিত করছেন

  • মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মাওলানা শাহ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন ও মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী, ছবি: বার্তাগ্রাফিক্স

মাওলানা শাহ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন ও মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী, ছবি: বার্তাগ্রাফিক্স

দেশের বিভিন্ন এলাকার আলেম-উলামা ও ইসলামি চিন্তাবিদরা করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণ করছেন এবং টিকা গ্রহণে মানুষকে উৎসাহ দিচ্ছেন।

সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়েছেন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। আর হবিগঞ্জে টিকা গ্রহণ করেছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মাওলানা শাহ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

ভ্যাকসিন গ্রহণের পর মাওলানা শাহ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘দুপুরে ইসলামিক ফাউন্ডেশন হবিগঞ্জের সহকর্মী ও ইমামদের একটি দল নিয়ে হবিগঞ্জ সদর সরকারি হাসপাতাল থেকে করোনাভ‍্যাকসিন নিয়েছি। টিকা নেয়ার আগে কিছুটা ভয় কাজ করছিল। কারণ আমি অসুস্থ মানুষ। ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করলাম, তিনি ভ‍্যাকসিন নিতে বললেন। তাই কোনো দ্বিধা-সঙ্কোচ না করে টিকা নিলাম। ইতোমধ্যে চার ঘন্টা পার হয়েছে, কোনো সমস্যা অনুভব করছি না। সুতরাং দেশবাসীকে অনুরোধ করছি, কোনো গুজবে কান না দিয়ে নিঃসঙ্কোচে টিকা নিন। সতর্কতা অবলম্বন এবং নিরাপত্তা বলয়ে প্রবেশ করা ইসলামের শিক্ষা, আমাদের নবীজির আদর্শ।’

বিশিষ্ট ইসলামি স্কলার ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সস্ত্রীক করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়েছেন। বিকেল পাঁচটার দিকে বার্তা২৪.কম-এর সঙ্গে আলাপকালে জানান, ‘সাড়ে বারোটায় স্বল্পসময়ে ও সুশৃঙ্খলভাবে সস্ত্রীক ভ্যাকসিন নিয়েছি। বিকেল ৫টা পর্যন্ত কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করিনি। কোনো সমস্যাবোধ করছি না। অন্য দিনের মতোই স্বাভাবিক চলাফেরা করছি।’

বিজ্ঞাপন

এ সময় তিনি গুজব উপেক্ষা করে দেশবাসীকে করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার আহ্বান জানান।

এদিকে শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্ট ইসলামি স্কলার মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী। মালয়েশিয়া থেকে তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এ সম্পর্কে পোস্ট দেন।

ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘অসুস্থতা আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা। অসুস্থ হলে যথাযথ চিকিৎসা নেওয়া হজরত রাসূলুল্লাহর সুন্নত। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে অসুস্থ হলে যেমন চিকিৎসা গ্রহণ করতেন, তেমনি কাউকে অসুস্থ হতে দেখলে চিকিৎসা নিতে বলতেন। সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহতায়ালা এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার নিরাময়ের উপকরণ তিনি সৃষ্টি করেননি।’ –সহিহ বোখারি: ৫৬৭৮

‘আল্লাহতায়ালার অশেষ কৃপায়, চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন। এটা আল্লাহতায়ালার বিশেষ মেহেরবানী। তাই, আমাদের প্রত্যেকের উচিত, ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে, এই প্রতিষেধক গ্রহণ করা।’

টিকা নিচ্ছেন মাওলানা শাহ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, ছবি: বার্তাগ্রাফিক্স

‘বৈশ্বিক এ মহামারিতে আমরা অনেক বন্ধু, আত্মীয় এবং কাছের মানুষ হারিয়েছি। বিচ্ছেদের সেই ক্ষত এখনও শুকায়নি। নতুন করে আমরা আর কোনো প্রিয়জন হারাতে চাই না।’

মাওলানা আজহারি আরও লিখেন, ‘বাংলাদেশে দেওয়া ভ্যাকসিনটির ব্যাপারে যতদূর জানতে পেরেছি, ভ্যাকসিনটি কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত এবং এখন পর্যন্ত তেমন কোনো মেজর সাইড ইফেক্ট নেই। ইতোমধ্যে দেশব্যাপী বিনামূল্যে করোনার টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তাই, সবাই রেজিস্ট্রেশন করুন, ভ্যাকসিন নিন এবং নিরাপদে থাকুন।’

‘মুখে মাস্ক, স্যানিটাইজার ব্যবহার এবং ভ্যাকসিন নেওয়ার পাশাপাশি এখানে উল্লেখিত দোয়াটিও প্রতিদিন বেশি বেশি পাঠ করুন। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, রোগের সৃষ্টিকর্তা হলেন আল্লাহ, আবার আরোগ্যদাতাও একমাত্র আল্লাহ। তাই সব ধরনের সাবধানতা, সতর্কতা এবং চিকিৎসা গ্রহণের পর- সুস্থতা কামনায় আমরা একমাত্র মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা করব।’

দোয়ার বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাস, ওয়াল জুনুন, ওয়াল জুযাম, ওয়া মিন সায়্যিইল আসক্বাম।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ধবল, কুষ্ঠ এবং উন্মাদনাসহ সব ধরনের কঠিন দূরারোগ্য ব্যাধি থেকে পানাহ চাই। -সুনানে আবু দাউদ: ১৫৫৪

উল্লেখ্য, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশে। সবাইকে এই টিকার দু’টি ডোজ নিতে হবে। গত ২৭ জানুয়ারি থেকে দেশে প্রথম করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর প্রথম যে দশ জন টিকা নিয়েছেন, তাদের একজন হলেন সেবামূলক দাতব্য প্রতিষ্ঠান আল মারকাজুল ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুফতি হামজা ইসলাম। বাংলাদেশের প্রথম আলেম হিসেবে তিনি করোনার টিকা গ্রহণ করেন।