ভিসির ঘুমে ব্যাঘাত, যোগীর রাজ্যে ঘুরানো হলো মসজিদের মাইক
মসজিদের মাইকে আজানের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সঙ্গীতা শ্রীবাস্তবের। তারপর অনেক চেষ্টা করেও ঘুম হয় না। সারাদিন মাথাব্যথা করে, এর প্রভাব তার কাজে গিয়ে পড়ছে। ভয়ঙ্কর ক্ষতি হচ্ছে তার কাজের। এমনই অভিযোগ নিয়ে মসজিদের মাইক বন্ধ করার দাবি করে গত ৩ মার্চ প্রয়াগরাজের জেলাশাসক ভানুচন্দ্র গোস্বামীকে চিঠিও লিখেছিলেন তিনি।
২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে ভারতের উত্তর প্রদেশের ঐতিহ্যবাহী শহর এলাহাবাদের নাম বদলে ‘প্রয়াগরাজ’ করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নির্দেশে।
সপ্তাহদুয়েক আগেকার লেখা সেই চিঠির কথা প্রকাশ্যে আসতেই বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘আমি কোনো জাত বা ধর্মের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু এতে তো বাকিদের শান্তিভঙ্গ হচ্ছে। অন্যের অসুবিধা না করে ওরা তো মাইক ছাড়াও আজান দিতে পারেন! আমাদের সংবিধান কিন্তু সব ধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কথা বলে। এর প্রতিফলন কথায় এবং কাজে থাকাটাই কাম্য।’
শুধু আজান নয়, রমজান মাসে সাহরির সময় মাইক ব্যবহার নিয়েও তিনি আপত্তি জানিয়েছিলেন। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ঈদের আগে ভোর চারটার সময় যে সাহরি হয়, তার আওয়াজেও অন্য মানুষদের অসুবিধা হয়।
ভিসির চিঠি ভাইরাল হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া ওই মসজিদ কর্তৃপক্ষ সাউন্ড কমিয়ে দিয়েছেন মাইকের। মসজিদের পক্ষ থেকে খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, তারা দু’টি লাউডস্পিকার অন্যদিকে বসিয়েছেন। মাইকের ভলিউম পঞ্চাশ শতাংশ কম করে দিয়েছেন। ফলে এখন আর কোনো সমস্যা নেই। তার মতে, প্রশাসনিক কর্তাদের না বলে, উপাচার্য যদি আগে তাদের জানাতেন, তা হলে অনেক আগেই তারা এই ব্যবস্থা নিতে পারতেন। কিন্তু সরাসরি জেলার সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখে, সামাজিক মাধ্যমে সেই চিঠি প্রকাশিত হয়ে যে বিতর্কটা সৃষ্টি হয়েছে, তা খুব একটা সুখের নয়।
চিঠিতে ভিসি লিখেছিলেন, তার আপত্তি আজানে নয়, মাইকের শব্দদূষণে। ঘুমের সঙ্গে কোনো রকম আপসে নারাজ তিনি এবং আরও অনেকেই। যেমন মাইকে আজানকে সরাসরি গুন্ডাগিরির তকমা দিয়ে বছর চারেক আগে সরব হয়েছিলেন সঙ্গীতশিল্পী সোনু নিগম। এ নিয়ে সমাজের নানা অংশে হইচই শুরু হওয়ায় শেষমেশ অবশ্য ক্ষমাও চান সোনু। তবু পাঁচ ওয়াক্তের মধ্যে বিশেষত ভোরের ওই তিন মিনিটের আজান নিয়ে আপত্তি উত্তরোত্তর যেন বেড়েই চলেছে ভারতে। গত বছর লকডাউনের সময়েও যোগীরাজ্যের তিন জেলা থেকে এমন আপত্তি উঠে এসেছিল। কড়া হয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন। পরে এর পাল্টা একাধিক জনস্বার্থ মামলার রায় দিতে গিয়ে মে মাসের মাঝামাঝি এলাহাবাদ হাইকোর্ট জানায়, আজান বন্ধের নির্দেশ দেওয়া সম্ভব নয়, তবে প্রশাসনের আগাম অনুমতি ছাড়া মাইক ব্যবহার করা যাবে না।