মৃত্যু পর্যন্ত হজের শিক্ষার ওপর অটল থাকার উপায়
হজ ইসলামের পাঁচ রুকনের অন্যতম একটি। যারা আর্থিক ও শারীরিক দিক থেকে সামর্থ্যবান তাদের ওপর সারা জীবনে একবার হজ করা ফরজ।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা হজ ও ওমরা পরপর আদায় করো, কেননা এ দু’টি কাজ দারিদ্র্য ও গোনাহ নিশ্চিহ্ন করে দেয়। যেমন রেত লোহার মরিচা এবং সোনা ও রুপার ময়লা দূর করে দেয়। আর কবুল হওয়া হজের সওয়াব বা বিনিময় জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।’ –সুনানে আবু দাউদ
হজ এমন একটি ইবাদত, যার উসিলায় মানবজীবনের গোনাহসমূহ মাফ হয় আর মকবুল হজের প্রতিদান একমাত্র জান্নাত। সে লক্ষ্যে হজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমল।
হজপালনকারীকে (নারী-পুরুষ) হজের পর হজের শিক্ষা পালন করে চলতে হয়। কারণ, একজন হজপালনকারীর প্রতি সমাজের লোকের প্রত্যাশা থাকে একটু ভিন্ন। তিনি অন্য দশজনের চেয়ে আমলে-আখলাকে, চলনে-বলনে ভিন্ন হবেন, তিনি সৎ কাজের আদেশ দেবেন, অসৎ কাজ থেকে মানুষকে বিরত থাকার আহবান জানাবেন।
ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, হজপালনকারী নিম্নের কাজগুলো পালন করে চললে, আমৃত্যু হজের পবিত্রতা রক্ষা করে হজের শিক্ষার ওপর অটল থাকতে পারবেন। আমলগুলো হলো-
পুরুষদের জন্য
১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করুন। টাখনুর ওপরে কাপড় পরিধান করুন। সুন্নতি পোশাকে অভ্যস্থ হোন। মাথায় টুপি রাখুন ও দাঁড়ি এক মুষ্ঠি পরিমাণ রাখুন।
২. জীবিত মা-বাবার থাকা-খাওয়া, পোশাক ও চিকিৎসাসহ সব বিষয়ে তাদের খুশি রাখুন। আপনার দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা নির্ভর করছে মা-বাবার খেদমতের মাঝে। মা-বাবা বেঁচে না থাকলে মৃত মা-বাবার মাগফিরাতের জন্য প্রতিদিন, প্রতি মোনাজাতে দোয়া করুন। খবরদার! তাদের কথা ভুলে যাবেন না।
৩. স্ত্রীর সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করুন ও তার অধিকারের প্রতি যত্নবান হোন। শ্বশুর-শাশুড়ি ও অন্য আত্নীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন।
নারীদের জন্য
৪. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময় মতো আদায় করুন, রমজানের রোজা রাখুন, ইসলামি শরিয়তের বিধানমতো পর্দা করুন, সতীত্ব সংরক্ষণ করুন ও স্বামীর (শরিয়তের গণ্ডির মধ্যে) আনুগত্য করুন।
৫. শ্বশুর-শাশুড়ির প্রতি আন্তরিকতা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে যত্ন নিন। নিজের মা-বাবার মতো আপন মনে করুনন। তাদের সঙ্গে শত্রুতা, ঘৃণা, ঝগড়া ও কটূকথা পরিহার করুন। কারণ আপনার প্রিয় স্বামী তার পেট থেকেই জন্ম নিয়েছেন।
নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য
৬. সর্বাবস্থায় আল্লাহতায়ালাকে ভয় করুন। সত্য ও সঠিক কথা বলুন। কখনও মিথ্যা বলবেন না।
৭. প্রতিদিন কমপক্ষে কোরআনে কারিমের ১০ আয়াত তেলাওয়াত করুন। ঘরে, অফিসে, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে কিংবা নিজের গাড়িতে কোরআন শরিফ রাখুন। সুযোগ হলেই তেলাওয়াত করুন। এটা সম্ভব না হলে জিকির করুন।
৮. টেলিভিশন, ইউটিউব, ফেসবুক ইত্যাদির সিনেমা, নাটক, নাচ-গান ও বাদ্য থেকে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে নিরাপদে রাখুন।
৯. খাওয়া-দাওয়া ছাড়া সপ্তাহে একদিন ঘরোয়া মাহফিল করুন। প্রতিদিন ৫-১০ মিনিটের জন্য হলেও বুজুর্গানে দ্বীনের লিখিত কিতাবাদি থেকে তালিম করুন।
১০. দুনিয়া ও আখেরাতের যেকোনো বিষয়ে কোনো খাঁটি আলেম ও আল্লাহওয়ালাদের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন। তাদের সংশ্রবে থাকুন।
১১. দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতের সঙ্গে লেগে থাকুন।
১২. দ্বীনি মাদরাসা ও মক্তব প্রতিষ্ঠা করে তার পরিচালনা কিংবা দেখভাল করুন। অথবা সাধ্যমতো সহযোগিতা করুন, পদ-পদবির মোহ পরিত্যাগ করুন।
১৩. ছেলে-মেয়েদেরকে দ্বীনি শিক্ষা দিন। দুনিয়াতে যতটুকু পান কিন্তু কবরে, হাশরে ইজ্জতের অভাব হবে না।
এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু দারদা (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন (চার শ্রেণির মানুষ নাজাতের উপযুক্ত) ক. তুমি আলেম হও, খ. অথবা আলেমের ছাত্র হও, গ. অথবা আলেমের কথা শ্রবণকারী ও অনুসরণ কারী হও ও ঘ. অথবা আলেমকে ভালোবাসো। পঞ্চম শ্রেণি হয়ো না। অর্থাৎ আলেম বিদ্বেষী হয়ো না। তাহলে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে। -বায়হাকি: ১৫৭৯
বর্ণিত হাদিসের ব্যাখ্যায় আলেমরা বলেন, জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত চার শ্রেণির লোকের সম্পর্ক ইলমে দ্বীন ও খাঁটি আলেমের সঙ্গে। ইলমে দ্বীন শিক্ষা ও আলেম তৈরির একমাত্র প্রতিষ্ঠান হলো- মাদরাসা। সদকায়ে জারিয়ার শ্রেষ্ঠ খাতও মাদরাসা।
লেখক: খতিব, মসজিদ আল মাগফিরাহ, উত্তরা, ঢাকা।