নবী মুহাম্মদ সা. ছিলেন বিশ্ব শান্তির পথ প্রদর্শক: ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
ইসলাম
‘প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন বিশ্ব শান্তি, মানবতা ও কল্যাণের পথ প্রদর্শক। তার আগমনে বঞ্চিত, নিপীড়িত ও লাঞ্ছিত মানবতা খুঁজে পেয়েছিল মুক্তির দিশা। তার মাধ্যমে সুমহান ইসলাম লাভ করেছে পরিপূর্ণতা।’
মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ১৪৪৩ হিজরি উদযাপন উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এমপি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে প্রধান অতিথি হিসেবে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) মাহফিলের শুভ উদ্বোধন করে নবী করিম (সা.)-এর আদর্শ প্রচার-প্রসার ও দ্বীনী খেদমতের এক নবদিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে জাতীয় পর্যায়ে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত হয়ে আসছে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও সচিবের দায়িত্বরত মু. আ. আউয়াল হাওলাদার।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে আলোচক অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর মুফতি রুহুল আমীন ও ড. মাওলানা মুহাম্মদ কাফিলুদ্দীন সরকার সালেহী।
মিলাদুন্নবীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালকবৃন্দ ও সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে আয়োজিত পক্ষকালব্যাপী ইসলামি বইমেলারও উদ্বোধন করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধি কমপ্লেক্সে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ১৪৪৩ হিজরি উদযাপন, ১৫ দিনব্যাপী ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় সেমিনার, ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, ইসলামি বইমেলার আয়োজন, কেরাত মাহফিল, হামদ-নাত ও স্বরচিত কবিতা পাঠের মাহফিল ইত্যাদি।
এ ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সকল বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫০টি ইসলামিক মিশন ও ৭টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
মক্কার কাবা শরিফ সংলগ্ন উত্তর পাশে অবস্থিত তথা কাঁধ সমান উঁচু অর্ধ চাঁদের ন্যায় গোলাকার স্থানকে হাতিমে কাবা বা হিজরে ইসমাইল বলা হয়। এটিও পবিত্র কাবার মূল অংশ। এই পবিত্রতম স্থানে নামাজ আদায়ের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে সৌদি সরকার।
হারামাইন শরিফাইনের সংবাদাতা ইনসাইড দ্যা হারাইমাইনের মতে, হাতিমে কাবায় তাওয়াফকারীরা ৯০ সেন্টিমিটার উচ্চতা ও ১.৫ মিটার পুরো দেয়াল বেষ্টিত স্থানসহ (হাতিমে কাবা বা হিজরে ইসমাইল) তাওয়াফ করে থাকেন।
হাতিমে কাবায় নামাজ আদায়ের রয়েছে বিশেষ ফজিলত। তাই নারী-পুরুষ সবাই সেখানে নফল নামাজ আদায়ের জন্য ভিড় করেন। এখানে নামাজ পড়া এবং দোয়া করা, কাবা ঘরের দোয়া করার সমান। আর এ কারণেই তাওয়াফের সময় হাতিমে কাবাকেও তাওয়াফ করতে হয়। এ স্থানের দোয়া আল্লাহ সব সময় কবুল করে নেন।
হজরত ইবরাহিম (আ.) যখন কাবা শরিফ নির্মাণ করেন, তখন হাতিম সহকারে কাবা নির্মাণ করেন। তাই তাওয়াফের সময় হাতিমের এই অংশ সহকারে তাওয়াফ করতে হয়।
যেহেতু এখানে নামাজ আদায় ফজিলতপূর্ণ আমল, তাই এখানে সবসময় ভিড় থাকে। ফলে নানা বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তাই হাতিমে কাবায় নামাজ আদায়ের সময় নির্ধারণ করে দিলো সৌদি কর্তৃপক্ষ। নতুন নিয়মে একজন নামাজ আদায়কারী দশ মিনিট সময় পাবেন নফল আদায়ের জন্য।
পুরুষদের নামাজের সময় হলো- পুরুষরা সকাল ৮টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত। এ সময় কোনো নারী হাতিমে কাবায় ঢুকতে পারবেন না।
আর নারীদের নামাজের সময় রাত ৮টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত। ওই সময় কোনো পুরুষ হাতিমে কাবায় ঢুকতে পারবেন না।
তবে কাবাঘরের রক্ষণাবেক্ষণের কারণে নির্ধারিত সময় হেরফের হতে পারে।
জুমা মসজিদ। নির্মাণকাল ৭৪৩ সাল। অবস্থান আজারবাইজানের সামাক্ষি শহরে। একে রাশিয়ার সবচেয়ে পুরোনো মসজিদ বলা হয়। এর বয়স ১২ শ’ ৮০ বছর। কাষ্পিয়ান ও কৃষ্ণ সাগরের মাঝে ককেশাস অঞ্চলে অবস্থিত আজারবাইজান ১৯২০ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। সে কারণে একে রাশিয়ার মসজিদও বলা হয়।
ইসলামের প্রাচীন স্থাপত্যের অন্যতম প্রতীক আজারবাইজানের এ জুমা মসজিদ। গোটা ককেশাস অঞ্চলে এটি দ্বিতীয় প্রাচীন মসজিদ। এর মিনার, গম্বুজ, দেয়াল, অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা, অলঙ্করণের পরতে পরতে প্রাচীন রাজকীয় আভিজাত্যের ছাপ।
সৌন্দর্য মাধুর্য আর বিশালত্বের ছোয়ায় পূর্ণ এ মসজিদ দর্শনে মানুষের মনে প্রভাব বিস্তার করে উদারতা আর প্রশস্ততা। তৃপ্ত হয় নয়ন। ভরে যায় মন। কাছ থেকে না দেখলে এর আভিজাত্য আর সৌন্দর্য লিখে প্রকাশ করা বেশ কঠিন। জাতিসংঘ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় রয়েছে এর নাম।
এ মসজিদের ভেতর বাইরের সবকিছুই বিশ্বের প্রাচীন এবং আধুনিক অন্য সব মসজিদ থেকে অনেকটা ব্যতিক্রম। মসজিদের অবস্থান চারদিকে বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে ভল্ট প্রাচীর ঘেরা। সামনে বিশাল শাহান ছাড়াও দুই পাশে প্রশস্ত খোলা চত্বর রয়েছে। আর মসজিদের অভ্যন্তরে সিলিং, খিলান, দেয়াল এবং গম্বুজ ও মিনারের গায়ে যে অলঙ্করণ আর সাজসজ্জা তাও সাধারণত বিশ্বের অন্য অনেক মসজিদের থেকে ব্যতিক্রম।
শুধু ব্যতিক্রম নয়, মনোমুগ্ধকর এর সাজসজ্জা আর অলঙ্করণ। উমাইয়া খলিফাদের সময় থেকে আজারবাইজানের সামাক্ষি দাগেস্তানের দারবান্দ গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে বিবেচিত হয় এবং ইসলামি সংস্কৃতি বিকশিত হয়।
যুদ্ধ আর ভূমিকম্পে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় অমূল্য এ মসজিদ। অনেকবার সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করা হয় এটি। ১৯৭০ সালে প্রত্মতাত্ত্বিক খননে ধরা পড়ে সংস্কার এবং পুনর্নির্মাণে মসজিদের মূল নকশার বেশ কিছু পরিবর্তিত হয়েছে। মসজিদ কমপ্লেক্সের বেশ কিছু স্থাপনা খননের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে পরবর্তী আরেক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় বলা হয়েছে মসজিদের প্রাচীন অবকাঠামো এখনো ঠিক আছে।
বর্তমানে মসজিদের যে অবকাঠামো দেখা যাচ্ছে তা পুনর্নির্মাণ শুরু হয় ১৯০৯ সালে। নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই ১৯১৮ সালে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে সামাক্ষি শহর ধ্বংস হয়। এ সময় ধ্বংস করা হয় এ মসজিদেরও অনেকাংশ। স্টেফানের নেতৃত্বে আর্মানিয়ান পার্টির সশস্ত্র গ্রুপ এ ধ্বংসলীলা চালায় সামাক্ষি শহরে। মসজিদের সেই পোড়া চিহ্ন এখনো সংরক্ষিত আছে। শত শত বছরের ব্যবধানে এ মসজিদের আশপাশে নগরায়ন আর নানা স্থাপনা গড়ে উঠলেও একপ্রান্তে রয়েছে পার্বত্য অঞ্চল, যা এখনো সবুজে ঘেরা আর নয়নাভিরাম।
২০২০ সালের নভেম্বর মাসে আর্মেনিয়ার কাছ থেকে মুক্ত হওয়া আজারবাইজানের আগদাম প্রদেশ সফরে যান দেশটির প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ। ওই সফরে প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ এবং তার স্ত্রী মেহরিবান একটি পুরোনো মসজিদ পরিদর্শন করেন। তারা ওই মসজিদের ফটকে চুমু খেয়ে তাতে প্রবেশ করেন এবং স্বামী-স্ত্রী মিলে পবিত্র কোরআনের একটি কপি চুমু খেয়ে মসজিদে রেখে আসেন।
ওই মসজিদসহ আশপাশের এলাকা আর্মেনিয়ার কাছ থেকে মাত্র মুক্ত হয়েছে। এতদিন মসজিদটি বন্ধ ছিল, প্রেসিডেন্ট ইলহামের সফরের মধ্য দিয়ে মসজিদে পুনরায় নামাজ শুরু হয়। দেশটিতে অনেক পুরোনো মসজিদ রয়েছে, এগুলোকে মুসলমানরা বেশ সম্মানের চোখে দেখেন। প্রেসিডেন্টের মসজিদে সফর তারই বহিঃপ্রকাশ।
দক্ষিণ ককেশীয় অঞ্চলের মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র ‘দ্য রিপাবলিক অব আজারবাইজান’ এশিয়া ও ইউরোপের মোহনায় অবস্থিত। ‘ইউরোশিয়া’ অঞ্চলের এশীয় দেশ আজারবাইজান। ৮৬ হাজার ৬০০ বর্গকিলোমিটারের দেশটির একদিকে রয়েছে কাসপিয়ান সাগর আর অন্য তিন দিকে রয়েছে রাশিয়া, জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, তুরস্ক ও ইরান। ১ কোটি ২০ লাখে জনসংখ্যার ৯৬.৯ শতাংশই মুসলিম।
পাহাড়-পর্বত, নদী, সাগর ও সবুজ ভূমিতে সমৃদ্ধ দেশ আজারবাইজান। রয়েছে তেল, গ্যাস ও লোহার মতো মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। তবে তেল ও তেল শিল্পের ওপরই টিকে আছে দেশটির অর্থনীতি।
হিজরি প্রথম শতকেই আজারবাইজানে ইসলামের আগমন হয়। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর সময়ে আজারবাইজানে ইসলামের জয়যাত্রা শুরু হয়। ইতিহাসের নানা বাঁকে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে ইসলামের বিস্তৃতি ঘটে এই অঞ্চলে। এই সময় মিসর ও সিরিয়ার মুসলিম আরবরা এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন শুরু করে। এ সময় মুসলিমরা আজারবাইজানের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হিজরি পঞ্চম শতকে আজারবাইজান সেলজুকদের শাসনাধীন হয়। সেলজুক শাসনামলে এই অঞ্চলে সুফিবাদের বিস্তৃতি ঘটে। সেলজুকদের পর আজারবাইজান উসমানীয় সম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
আঠারো শতকের শেষভাগে প্রতিবেশী মুসলিম রাষ্ট্রের শাসকদের দুর্বলতা প্রকাশ পেতে থাকলে রাশিয়া তাদের ওপর চড়াও হয়। সীমান্তবর্তী মুসলিম দেশগুলোর ওপর তার হামলা ও আগ্রাসন বৃদ্ধি পায়। মুসলিম শাসকরা ওই অঞ্চল থেকে হাত গুটিয়ে নিলেও স্থানীয় মুসলিম নেতাদের কেউ কেউ প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। যা দীর্ঘ অর্ধশতাব্দীকাল পর্যন্ত টিকে ছিল।
১৮৫৯ সালে ইমাম শামিলের পরাজয় বরণের মধ্য দিয়ে অত্র অঞ্চলে রুশ আগ্রাসন রোধের শেষ সম্ভাবনাটুকু শেষ হয়ে যায়। আজারবাইজানের পূর্ণ ভূমি রাশিয়া পুরোপুরি দখল না করলেও এই অঞ্চলের মুসলিম শাসকদের মধ্যে বিরোধ উসকে দিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। অবশেষে ১৯০৮ সালে ব্রিটিশ বাহিনীর সমর্থনে রাশিয়া আজারবাইজানে প্রবেশ করে। ২১ অক্টোবর ১৯২০ জনগণের মতামত উপেক্ষা করে আজারবাইজানকে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্তির পর রুশ সরকার আজারবাইজানে সব ধরনের ধর্মচর্চার ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করে। আরব সংস্কৃতির পরিবর্তে রুশ সংস্কৃতির প্রচার-প্রসারে লিপ্ত হয়। আগে আরবি বর্ণে আজারবাইজানি লেখা হলেও তার পরিবর্তে রুশ বর্ণে লেখার ফরমান জারি করা হয়। অসংখ্য মসজিদ-মাদরাসা বন্ধ করে দেওয়া হয়। রুশ শাসনামলে আজারবাইজানে মসজিদের সংখ্যা দুই হাজার থেকে মাত্র ১৬-তে নেমে আসে। তবে স্বাধীনতার পর তা আবার বাড়তে থাকে।
বর্তমানে আজারবাইজানে এক হাজার ৮০০ মসজিদ রয়েছে। রুশ শাসনামলে বিপুলসংখ্যক রুশ নাগরিক আজারবাইজানে বসতি স্থাপন করে। যাদের সংখ্যা একসময় ১০ শতাংশে উন্নীত হয়। ১৮ অক্টোবর ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে আজারবাইজান।
স্বাধীনতা লাভের পরও আজারবাইজানের রাষ্ট্র ও সমাজে রুশ শাসনের কালো দাগ রয়ে গেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক মুসলিম হলেও আজারবাইজান একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। দেশের বেশির ভাগ নাগরিক এখনো ধর্মবিমুখ। মুসলিম জনগণের খুব সামান্য অংশই ধর্মপরায়ণ। তবে আশার কথা হলো, তরুণ প্রজন্ম ইসলামপরায়ণ। তারা ক্রমেই ইসলামের প্রতি ঝুঁকছে।
বাকু রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিআরআই)-এর এক প্রতিবেদনে ২০১০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আজারবাইজানের মুসলমানের ধর্মীয় প্রবণতা তুলে ধরা হয়েছে। যাতে দেখানো হয়েছে, এই তিন বছরে ধর্মবিমুখতার হার ৫৯ থেকে ৪১ শতাংশে নেমে এসেছে। অন্যদিকে ধার্মিকদের সংখ্যা ১৬ থেকে ৩৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
একই সঙ্গে সে দেশে মসজিদ ও ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে। সরকারও ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি নমনীয় হচ্ছে। ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা লাভের সময় আজারবাইজানে মাত্র একটি মাদরাসা (ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) ছিল। ২০০০ সালে যার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩০-এ। যার মধ্যে সরকার অনুমোদিত ৩০টি মাদরাসা রয়েছে। বাকুতে অবস্থিত মাদরাসাটিকে ১৯৯২ সালে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা হয়।
সম্প্রতি সরকার সাতটি ইসলামিক কলেজের অনুমোদন দিয়েছে এবং ঘোষণা করেছে অতিদ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে। সব মিলিয়ে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছে আজারবাইজানের মুসলিমরা। এরই ধারাবাহিকতায় গত এক দশক ধরে আজারবাইজানে নবজাতক শিশুদের নামের তালিকায় ইসলামি নাম শীর্ষে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আজারবাইজানের জনগণের ইসলাম ধর্মের প্রতি অধিক আকৃষ্ট হওয়ার ফলে সেদেশের নবজাতক শিশুদের ধর্মীয় নাম রাখার প্রচলন বৃদ্ধি পেয়েছে।
গ্রাম-গঞ্জের হাট-বাজারসহ মানুষ সমাগমের স্থানে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম পদ্ধতিতে নামাজের জন্য তাগাদা দেন এবং আহবান জানান হ্যান্ডমাইকে। হেঁটে হেঁটে মুসলমান ভাই-বোনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিগত ১০ বছর ধরে নামাজের এই আহবান জানাচ্ছেন ৬৪ বছর বয়সী মোসলেম উদ্দিন প্রধান নামের এক বৃদ্ধ।
বৃদ্ধ মোসলেম উদ্দিন প্রধানের বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের ভগবানপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মরহুম মহিম উদ্দিন প্রধানের ছেলে।
সম্প্রতি উপজেলার ধাপেরহাটে দেখা যায়, হ্যান্ডমাইকে মানুষকে নামাজের দাওয়াত দিচ্ছেন তিনি। কখনো হেঁটে কখনো একস্থানে দাঁড়িয়ে চারদিক ঘুরে ঘুরে মুসলমান ভাই-বোনদের নামাজের আহবান জানান তিনি।
মোসলেম উদ্দিনের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি এ কাজ করে আসছেন। আগে তিনি ঢাকায় কাজ করতেন। কর্মজীবন শেষে বাড়ি ফিরে নিজ খরচে একটি হ্যান্ডমাইক কিনে সাধারণ মুসলমানদের নামাজের জন্য আহবান শুরু করেন।
তারা জানান, মোসলেম উদ্দিন প্রতিদিন বিভিন্ন শহর ও হাট-বাজারে হেঁটে হেঁটে নামাজের আহ্বান জানাতে থাকেন। সাদুল্লাপুর উপজেলা শহরসহ ধাপেরহাট, মীরপুরহাট, ঘোগার বাজার এবং আশেপাশের এলাকাগুলোর মানুষ তাকে মাইকিং করে নামাজের আহবানের বিষয়টি দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন বলেও জানান তারা।
মোসলেম উদ্দিন প্রধান বলেন, ‘কোরআনে কারিমে একবার দুইবার নয়, ৮২ বার নামাজের জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, নিজে নামাজ পড় এবং অন্যকেও নামাজ পড়তে তাগিদ দাও। আল্লাহর এই বিধান মেনেই হ্যান্ডমাইকে হেঁটে হেঁটে মুসলমানদের নামাজের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আহবানে সাড়া দিয়ে প্রচারের সময় অনেক মানুষ আমার সঙ্গেই নামাজ আদায় করেছে, এটাই আমার স্বার্থকতা।’
এ সময় সামর্থ্য হলে হজে যাওয়ার ইচ্ছা আছে বলেও জানান বৃদ্ধ মোসলেম উদ্দিন।
ভাতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহফুজার রহমান (মাফু) মোবাইল ফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ধর্মভীরু এই ব্যক্তির নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টা স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে এবং বিষয়টি আমাদেরকে নামাজে উৎসাহিত করে। মানুষের কল্যাণে হেঁটে হেঁটে হ্যান্ডমাইকে নামাজের আহবানের বিষয়টি সত্যিই ইতিবাচক এবং প্রশংসার।’
উল্লেখ্য, বৃদ্ধ মোসলেম উদ্দিন একসময় পাটের ব্যবসা করতেন। কিন্তু ব্যবসায় লোকসান হলে পরে জীবিকার প্রয়োজনে ঢাকায় যান। সেখানেই মসজিদের মুসল্লিদের মাধ্যমে নামাজের অনুপ্রেরণা পান। এরপর থেকে তিনি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন এবং ধীরে ধীরে আল্লাহভীরু হন। পরে গ্রামে ফিরে পথে পথে মানুষকে নামাজের আহবান জানাতে শুরু করেন।