সন্ত্রাস হত্যার চেয়েও ভয়াবহ
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। ইসলামের আর্বিভাব হয়েছে শান্তি প্রতিষ্ঠা, মানবকল্যাণ ও মানবতার জন্য। ইসলাম মানুষকে প্রকৃত মানুষ বানানোর শিক্ষা দেয়। স্মরণ রাখতে হবে, ইসলাম এমন এক সার্বজনীন ও শান্তিময় জীবনব্যবস্থা, যেখানে শুধু মানব সম্প্রদায় নয় বরং পশুপাখি ও প্রকৃতির অধিকারও সংরক্ষিত রয়েছে। অতুলনীয় চরিত্র মাধুর্য, অনুপম শিক্ষা ও আদর্শ, আমল ও আখলাকের শিক্ষাই ইসলাম প্রদান করে।
ইসলামে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের কোনো স্থান নেই। যদি কেউ ইসলামের লেবাস লাগিয়ে ইসলামকে বদনাম করার জন্য সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, তারা কখনও শান্তির ধর্ম ইসলামের অনুসারী হতে পারে না। বরং সে মুনাফিক এবং ইসলামের দুশমন বলেই বিবেচিত হবে৷ কারণ ইসলামে ফেতনা-সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও বিশৃঙ্খলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ফেতনা বা সন্ত্রাস হত্যার চেয়েও ভয়াবহ।’ -সুরা আল বাকারা : ১৯১
মানুষ হত্যা নিষেধ করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কেউ কাউকে নরহত্যার অপরাধ অথবা পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টির কারণ ব্যতীত হত্যা করলে সে যেন গোটা মানবতাকে হত্যা করল। আর কেউ কারও প্রাণ বাঁচালে সে যেন গোটা মানবজাতিকে বাঁচাল।’ -সুরা আল মায়িদা : ৩২
অপর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল থাকবে।’ -সুরা আন নিসা : ৯৩
কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা একে অন্যের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং একে অন্যকে হত্যা করো না।’ –সুরা আন নিসা : ২৯
অপর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘(রহমানের বান্দা তারাই) যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য উপাস্যের ইবাদত করে না, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে না।’ -সুরা ফোরকান : ৬৮
শুধু মুসলিমই নয়, ইসলাম অন্যায়ভাবে কোনো অমুসলিমকেও হত্যায় উৎসাহিত করে না। অমুসলিমের জান-মাল-ইজ্জত সংরক্ষণের ব্যাপারে হাদিস শরিফে কঠোর সতর্কবাণী এসেছে। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কানো জিম্মিকে (চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমকে) হত্যা করল, সে জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না। অথচ চল্লিশ বছরের দূরত্বে থেকেও জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়।’ –সহিহ বোখারি : ৩১৬৬
আর মুসলমানদের পারস্পরিক রক্তপাতের বিরুদ্ধে হাদিস শরিফে কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো মুসলমানকে গালি দেওয়া গোনাহর কাজ আর তাকে হত্যা করা কুফরি।’ –সহিহ বোখারি : ৬০৪৪
অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের (মুসলমানদের) ওপর অস্ত্র উঠাবে, সে আমাদের (ধর্মের) দলভুক্ত না।’ –সহিহ বোখারি : ৬৮৪৪
অন্য হাদিসে আরও বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে গোটা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়া কোনো মুসলমানের হত্যার চেয়েও অধিক সহনীয়।’ -নাসায়ি শরিফ : ৩৯৯২
সুতরাং সবাইকে ফেতনা-সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, বলপ্রয়োগে নয় বরং ইসলামের সুমহান আদর্শ দিয়ে মানুষদের ইসলামের দিকে ডাকতে হবে। যদি বলপ্রয়োগের কোনো বিধান থাকতো তাহলে হজরত রাসুলে কারিম (সা.) মক্কা বিজয়ের পর মুশরিকদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য বাধ্য করতেন এবং মক্কায় বসবাসের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি! এতে প্রমাণিত হয়, ধর্মের জন্য বলপ্রয়োগ ইসলামের শিক্ষা নয়। ইসলামের আচরণের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।