আমলের জন্য নিয়তের পরিশুদ্ধতা জরুরি
মানুষের সামজিক জীবন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সমাজের অবস্থা পরিস্থিতি যদি কল্যাণময়ী শান্ত প্রকৃতির হয়, তাহলে মানুষের ব্যক্তি, পরিবার ও সামগ্রিক জীবনেও সেই কল্যাণ এবং শান্তি অনুভূত হয়। আর যদি সমাজের অবস্থা, প্রেক্ষাপট প্রতিকূলে থাকে অর্থ্যাৎ অন্যায়-অপরাধ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, সন্ত্রাস নৈরাজ্য, হিংসা-বিদ্বেষ, অশ্লীলতা-বেহায়াপনা, পাপাচার-অনাচার ও জুলুম-অত্যাচার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়; তখন নিজে ভালো থাকতে ইচ্ছা করলেও তা সম্ভব হয়ে উঠে না।
সামজিক পরিস্থিতির কারণে জীবনটা যেন অস্থির দূর্বিষহ হয়ে উঠে। চারিদিকে তখন শুধু আঁধার অনুভূত হয়। দুনিয়াতে থাকা না থাকা সমান মনে হয়। এমনকি এ অবস্থা সহ্য করতে না পেরে কেউ কেউ আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়।
বিশ্বব্যাপী সমাজের অবস্থা আজ অনেকটা এমনই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যা বাস্তবিকই অনভিপ্রেত। এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য, সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বহু মানুষ, বহু মত ও পথ অবলম্বন করছে। কিন্তু কেনো যেনো কোনোভাবেই সফলতার মুখ দেখা যাচ্ছে না। শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে আসছে না।
এমতাবস্থায় একমাত্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনূসরণের মাধ্যমেই সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। অন্যকোনো মত-পথে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। কারণ তদানীন্তন সময়ে আরববাসীরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনুসরণে ঈমানের বলে বলীয়ান হয়ে ঐক্যবদ্ধতার ভিত্তিতে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি-সহমর্মিতা, প্রত্যেকের হক (প্রাপ্য) আদায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাহেলিয়াতের সর্বপ্রকার অজ্ঞতাপূর্ণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত, যুদ্ধ-বিগ্রহ, কলহ-বিবাদ, রক্তপাত অরাজকতা দূর করে সেখানে শান্তিপূর্ণ, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতিসম্পন্ন একটি সুন্দর কল্যাণমূলক সমৃদ্ধশালী আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসুলের মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ -সুরা আল আজহাব : ২১
সুতরাং মানবজাতিকে শান্তির পথে আসতে হলে ইসলামের অনুসারী হতে হবে। এ জন্য দরকার স্বচ্ছ নিয়ত। কারণ, মানবজীবনে নিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের যেকোনো কাজের ফলাফল নির্ভর করে তার নিয়তের ওপর। ওই কাজ আল্লাহর কাছে পৌঁছানোর আগেই বান্দার মনের গহীনে থাকা ইচ্ছা তথা ‘নিয়ত’ আল্লাহর কাছে দ্রুত পৌঁছায়। এজন্য নিয়তের পরিশুদ্ধতা খুবই জরুরি।
হজরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, সহিহ বোখারির প্রথম হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই সমস্ত কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ বোখারির প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘উমদাতুল কারি’তে আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) আলোচ্য হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, মানুষের নিয়ত এতটাই শক্তিশালী যে, তা ইবাদত নয়, এমন বিষয়কে ইবাদত বানিয়ে দেয়। যেমন ঘুম। মানুষ নিজ প্রয়োজনে ঘুমায়। কিন্তু যদি এ নিয়তে ঘুমায় ‘আমি ঘুমাব শরীর চাঙা হবে এবং চাঙা শরীরে মহান আল্লাহর ইবাদত করব’, তাহলে যতক্ষণ ঘুমাবে ততক্ষণ তার আমলনামায় সওয়াব লেখা হবে।
অন্য আরেক হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘ইখলাসের সঙ্গে আমল করলে অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে।’ সুতরাং কেউ যদি মানুষকে দেখানোর জন্য, সম্মান-সুখ্যাতি অর্জনের জন্য ইবাদত কিংবা দান-সদকা করে তবে তা সে হিসেবেই গণ্য করা হবে এবং পরকালে সে এর কোনো বিনিময় পাবে না।
বিচার দিনে মহান আল্লাহ মানুষের বাহ্যিক কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে হিসাব নেবেন না। বরং বান্দার হিসাব হবে লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা তার নিয়তের ওপর। সহিহ মুসলিম শরিফের আরেক হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা তোমাদের বাহ্যিক আকার আকৃতি এবং ধন-সম্পত্তির দিকে দৃষ্টিপাত করেন না, বরং তিনি দৃষ্টিপাত করেন শুধু তোমাদের অন্তরের আমল তথা নিয়তের দিকে।’
সুতরাং আল্লাহতায়ালার একজন একনিষ্ঠ বান্দা হিসেবে আমাদের উচিত সহিহ নিয়তের ওপর আমল করা। সৎ স্বচ্ছ এবং বিশুদ্ধ নিয়ত বুকে ধারণ করা। যাতে ইহকাল এবং পরকাল দুই জায়গায়ই আল্লাহর দয়া এবং রহমতের ছায়ায় কাটাতে পারি।