আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলোতে প্রভাব বাড়ছে তুরস্কের



মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরবকে সরিয়ে ইসলামি বিশ্বের নেতৃত্বের জন্য লড়াই করছে তুরস্ক। এ লক্ষে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান গত অক্টোবরে (২০২১) একযোগে আফ্রিকার তিনটি দেশ সফর করেন। দেশগুলো হলো- কোভারস এঙ্গোলা, নাইজেরিয়া ও টোগো। তার এই সফরকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে অভিহিত করেছেন।

আফ্রিকার বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে এরদোগানের সম্পর্ক বেশ পুরোনো। তিনি প্রায়ই ওইসব দেশের নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপ করেন। করোনা ভাইরাস মহামারির সময় আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ব্যাপক সহায়তা করেছে তুরস্ক। এভাবে আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুরস্কের কূটনৈতিক তৎপরতা ক্রমেই বাড়ছে।

এরদোগান চার দিনের সফর শুরু হয় এঙ্গোলা দিয়ে। সফরে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকান এ দেশটিতে আরও ব্যাপক বিনিয়োগের ঘোষণা দেন। দেশটির সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে তুরস্ক ইতিমধ্যে সমর্থন দিয়েছে।

এরপর এরদোগান নাইজেরিয়া যান, ২০১৬ সালের মার্চে সর্বশেষ তিনি মুসলিম অধ্যুষিত এ দেশ সফর করেছিলেন। পরে এরদোগানের আমন্ত্রণে ২০১৭ সালের অক্টোবরে দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বুহারিও তুরস্ক সফর করেন। এরদোগান তখন নাইজেরিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য তুরস্ক প্রস্তুত বলে জানান।

(বাম থেকে ডানে) চার প্রেসিডেন্ট, টোগোর ফাউরি গাসিংবে, বুর্কিনা ফাসোর ক্রিস্টিয়ান কাবোর, তুরস্কের এরদোগান এবং লাইবেরিয়ার জর্জ উইয়া কথা বলছেন

(বাম থেকে ডানে) চার প্রেসিডেন্ট, টোগোর ফাউরি গাসিংবে, বুর্কিনা ফাসোর ক্রিস্টিয়ান কাবোর, তুরস্কের এরদোগান এবং লাইবেরিয়ার জর্জ উইয়া কথা বলছেন

এবার এরদোগানের আফ্রিকা সফর শেষ হয় টোগোতে। গত আগস্টে দেশটির প্রেসিডেন্ট ফাউরি এসোজিমনা গাসিংবের সঙ্গে এরদোগান টেলিফোনে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন। তখন এরদোগান দেশটির সামরিক শক্তি উন্নয়নে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সফরের আলোচ্যসূচিতে অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ইস্যুগুলো গুরুত্ব পায়। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বড় প্রতিনিধিদল নিয়ে এরদোগান সফর করেন। আফ্রিকার দেশগুলোতে এ ধরনের সফর তুরস্কের পররাষ্ট্রনীতির একটি নিয়মিত অংশে পরিণত হয়েছে। আগে অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় আফ্রিকা তুরস্কের পররাষ্ট্র নীতির দৃষ্টিতে ‘অনাবিষ্কৃত’ ছিল। ১৯৯০ দশকের শেষের দিকের আগ পর্যন্ত তুরস্ক আফ্রিকা মহাদেশের ব্যাপারে তেমন আগ্রহী ছিল না। ১৯৯৮ সালে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আফ্রিকার ব্যাপারে একটি নীতি প্রণয়ন করে। ওই নীতিতে কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে ওই মহাদেশে তুরস্কের পদচিহ্ন সম্প্রসারণের লক্ষ্যে একটি ‘অ্যাকশন প্লান’ গ্রহণ করা হয়। ওই মহাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটা ছিল একটি মাইলফলক।

এ ছাড়া ২০০৮ সালে আফ্রিকান ইউনিয়ন তুরস্ককে তাদের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ঘোষণা করলে আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে পৃথকভাবে আরও সম্পর্কোন্নয়নের একটি দৃঢ় ভিত্তি পেয়ে যায় আঙ্কারা।

নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট
নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট

অন্যদিকে আফ্রিকা ‘রাইজিং ইকোনমিক স্টারে’ পরিণত হয়েছে। তাই কয়েকটি আন্তর্জাতিক শক্তির মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে আঙ্কারা বহু সময় ও শক্তি ব্যয় করছে। এ ক্ষেত্রে আঙ্কারার দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গির সর্বশেষ প্রমাণ প্রেসিডেন্ট এরদোগানের অতি সাম্প্রতিক সফর।

সামরিক দিক দিয়ে বিবেচনা করলে এই মুহূর্তে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ তুরস্ক। তারা সামরিক জোট ন্যাটোরও সদস্য। কামাল আতাতুর্কের আধুনিক ও ধর্মনিরপেক্ষ জাতিরাষ্ট্রের নীতির কারণে তুরস্ক সম্পর্কে ইসলামি বিশ্বে একধরনের দ্বিধা ছিলো, তবে এরদোগানের আমলে তুরস্কের এ ভাবমূর্তির বদল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের দায়িত্বকাল মিলিয়ে এরদোগান অনেক দিন ধরেই তুরস্কের ক্ষমতায়। তিনি ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচিত। তুরস্কে ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটাতে কাজ করছেন তিনি। এরদোগানের জোর প্রচেষ্টায় ইতিমধ্যে মুসলিম বিশ্বে একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে আঙ্কারা।

প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে অনেকে তুরস্কের নতুন সুলতান সুলেমান বলে অভিহিত করেন। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, এরদোগান শুধু নিজ দেশের সুলতান হতে চান না; তার লক্ষ্য আরও বড় কিছু- তিনি মুসলিম বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে চান। এই লক্ষ্য থেকেই ইসলামি সহযোগিতা সংস্থাসহ (ওআইসি) বিভিন্ন ফোরাম ও উপলক্ষে এরদোগান নিজের যোগ্যতা তুলে ধরছেন। যেমন ২০১৬ সালের এপ্রিলে তুরস্কে অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে এরদোগান দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, ‘আমি সুন্নি বা শিয়া নই, আমার ধর্ম ইসলাম।’

টোগোর রাষ্ট্রপতি ফাউরির সঙ্গে বৈঠকে এরদোগান
টোগোর রাষ্ট্রপতি ফাউরির সঙ্গে বৈঠকে এরদোগান

রোহিঙ্গা সংকটের প্রেক্ষাপটে মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের মধ্যে এরদোগানকেই সবচেয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকায় দেখা যায়। ফলে অনেকের অভিমত, এরদোগান তুরস্কের হারানো শৌর্যবীর্য ফিরিয়ে আনতে চান। একইসঙ্গে তুরস্ককে নেতৃত্বের আসনে বসিয়ে তিনি হতে চান মুসলিম বিশ্বের প্রধান নেতা।

রোহিঙ্গা সংকটের মধ্যেই জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি মুসলিম বিশ্বকে একটা বড় ধরনের পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দেয়। এই সংকটের শুরু থেকেই যথারীতি সোচ্চার এরদোগান, যেখানে সৌদি আরব চুপ। ফলে এরদোগান তিনি হয়ে ওঠেন ফিলিস্তিন তথা বিশ্বের মুসলমানদের কণ্ঠস্বর। সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশ কাতার অবরোধ করলে কাতারের পাশে দাঁড়ায় আঙ্কারা। তার এই ভূমিকা ও তৎপরতা মুসলিম বিশ্বের নজর কেড়েছে, ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে।

এরই মাঝে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের চার দিনের আফ্রিকা সফর বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট এরদোগান আফ্রিকার ৫৪টি দেশের মধ্যে ৩০টিতে সরকারি সফর করেছেন। এই সফরগুলো আফ্রিকান দেশগুলোর সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কের উন্নতির লক্ষণ। তুরস্ক কূটনৈতিক মিশনের মাধ্যমে আফ্রিকান দেশগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্ক উন্নয়ন করেছে, পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে চুক্তি করেছে। এর আওতায় সেখানে কাজ করবে তুর্কি সহযোগিতা ও সমন্বয় সংস্থা (টিআইকেএ), পতাকাবাহী তুর্কি এয়ারলাইন্স, ইউনুস এমরে ইনস্টিটিউট এবং তুর্কি মারিফ ফাউন্ডেশন।

তুরস্ক ১৯২৫ সালে মিসরের রাজধানী কায়রোতে প্রথম দূতাবাস চালু করে। এটি ছিল আফ্রিকা মহাদেশে তাদের প্রথম দূতাবাস। সাব-সাহারান আফ্রিকায় প্রথম দূতাবাস ইথিওপিয়ায় ছিল এবং সেটি ১৯২৬ সালে খোলা হয়েছিল। তুরস্ক প্রতি বছর মহাদেশটির সঙ্গে তার কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করেই চলছে। ২০০৯ সাল থেকে তারা আফ্রিকাজুড়ে মোট ৩১টি দূতাবাস খুলেছে। এর আগে, তুরস্কের মাত্র ১২টি আফ্রিকান দেশে দূতাবাস ছিল- যা পরবর্তী বছরগুলোতে ৪৩ এ উন্নীত হয়। মহাদেশে দূতাবাসের সংখ্যা ৫০-এ উন্নীত করার লক্ষ্যে তুরস্ক পশ্চিম আফ্রিকার গিনি-বাসাউয়ের রাজধানী বাসাউতে ৪৪তম দূতাবাস খোলার পরিকল্পনা করছে।

অ্যাঙ্গোলার রাষ্ট্রপতি জোয়াও ম্যানুয়েল গনসালভেস লরেনকো

অ্যাঙ্গোলার রাষ্ট্রপতি জোয়াও ম্যানুয়েল গনসালভেস লরেনকো 

তুর্কি এয়ারলাইন্স আফ্রিকার ৬০টিরও বেশি গন্তব্যে চলে। আফ্রিকান দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছাড়াও মহাদেশের অনেক দেশে তুরস্কের সরাসরি ফ্লাইট রয়েছে। তারা ১৯৫৬ সালে আফ্রিকাতে প্রথম ফ্লাইট করেছিল এবং এখন ৪০টি দেশে উড়ে যাচ্ছে। মহাদেশের মোট গন্তব্য এখন ৬১টি, সর্বশেষ সংযোজন অ্যাঙ্গোলার রাজধানী লুয়ান্ডার।

শিক্ষাক্ষেত্রে তুর্কি মারিফ ফাউন্ডেশন আফ্রিকাজুড়ে সক্রিয়। যেখানে কয়েক ডজন স্কুল রয়েছে। ফাউন্ডেশনটি ১৭ হাজার ৫৬৫ আফ্রিকান শিক্ষার্থীদের ২৬টি দেশের ১৭৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তুরস্ক উচ্চশিক্ষায় আফ্রিকান শিক্ষার্থীদের চাহিদা মেটাচ্ছে। এ ছাড়া প্রেসিডেন্সি ফর টার্কস অ্যাব্রাড অ্যান্ড রিলেটেড কমিউনিটিস (ওয়াইটিবি) ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশের মোট ৫ হাজার ২৫৯ জন শিক্ষার্থীকে সহায়তা দিয়েছে। বর্তমানে ৪ হাজার ৪০৩ জন আফ্রিকান শিক্ষার্থী তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরে অধ্যয়নরত, যার মধ্যে ৫১টি আফ্রিকান দেশ থেকে ৮ হাজার ৭৮৬ জন।

টিকা (টিআইকেএ) এবং ইউনুস এমরে ইনস্টিটিউট উভয়েই উন্নয়ন এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে তাদের প্রকল্পের মাধ্যমে আফ্রিকানদের সেবার জন্য কাজ করে। টিকা তুরস্কের রাষ্ট্র পরিচালিত সাহায্য সংস্থা, আফ্রিকাতে তাদের ২২টি প্রতিনিধি অফিস রয়েছে, যার মাধ্যমে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করে; ইউনুস এমরে ইনস্টিটিউট ১০টি দেশে তার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে কাজ করে। ইনস্টিটিউটের উত্তর আফ্রিকার আলজেরিয়া, মরক্কো এবং তিউনিশিয়ায় অফিস রয়েছে; পূর্ব আফ্রিকার সোমালিয়া, সুদান এবং রুয়ান্ডা এবং পশ্চিম আফ্রিকার সেনেগাল, মৌরিতানিয়া এবং গাম্বিয়া। নাইজেরিয়ার রাজধানী আবুজায় এর সদর দফতর, এটি তুর্কি ভাষার প্রচারের জন্য কাজ করে। এটি সংস্কৃতি এবং শিল্পেও সক্রিয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আফ্রিকানদের সঙ্গে সহযোগিতা করে।

এরদোগান ও তার স্ত্রী
এরদোগানের স্ত্রী এমিনি এরদোগানও কূটনৈতিক সফরে সাফল্য দেখিয়েছেন

তুরস্ক এবং আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার আরেকটি প্রধান ক্ষেত্র হলো- নিরাপত্তা। আঙ্কারা ১৯টি দেশে সামরিক চুক্তি করেছে। বহুদিন ধরেই তুর্কি সেনারা জাতিসংঘের মাল্টি ডাইমেনশনাল ইন্টিগ্রেটেড স্ট্যাবিলাইজেশন মিশনের (এমআইএনইউএসএমএ) সঙ্গে পশ্চিম আফ্রিকান দেশ এবং মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতের জন্য কাজ করছে। ২০১৭ সালে তুরস্ক সোমালিয়ার সঙ্গে একটি যৌথ টাস্কফোর্স কমান্ড প্রতিষ্ঠা করে, যা আঙ্কারার বৃহত্তম বিদেশী সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

এভাবেই নানাভাবে আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে মনোযোগী হয়েছে তুরস্ক। অথচ এক সময় আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলোতে সৌদি আরবের ছিল প্রভূত প্রভাব। কিন্তু নানা কারণে সৌদি আরব সে জায়গা ধরে রাখতে পারেনি। সেই শূন্যস্থান পূরণে এগিয়ে এসেছে তুরস্ক। এখন সময়ই বলবে তুরস্কের কূটনৈতিক তৎপরতা কতটা সফল?

ফের বাড়ল হজ নিবন্ধনের সময়



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। বর্ধিত সময় অনুযায়ী আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত নিবন্ধন করা যাবে।

সোমবার (২৭ মার্চ) নিবন্ধনের সময় বাড়িয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারিভাবে নিবন্ধন করেছেন ১ লাখ ১৭ হাজার ৩৩৯ জন। কোটা পূরণে এখনো নিবন্ধন বাকি রয়েছে ৯ হাজার ৮৫৯। এর মধ্যে সরকারিতে ফাঁকা ৫ হাজার ১০৮, বেসরকারিতে ৪ হাজার ৭৫১।

হজ অনুবিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে কতজন হজ করতে যাবেন তা সৌদি সরকারকে জানানোর শেষ তারিখ আগামী ৯ মে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এবার হজের খরচ বেশি হওয়ায় শুরু থেকেই নিবন্ধনে ভাটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু তারা তো কাউকে ডেকে এনে নিবন্ধন করাতে পারেন না।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ২৭ জুন (৯ জিলহ্জ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। সৌদি আরবের সঙ্গে হজচুক্তি অনুযায়ী, এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার জন এবং অবশিষ্ট এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করার সুযোগ পাবেন।

;

১৮ এপ্রিল পবিত্র লাইলাতুল কদর



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শুক্রবার থেকে পবিত্র রমজান মাস শুরু হচ্ছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) রাতে তারাবির নামাজ আদায় করেন। শেষ রাতে প্রথম সেহরি খাওয়া হবে।

এই হিসেবে আগামী ১৮ এপ্রিল (২৬ রমজান) মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পবিত্র শবে কদর পালিত হবে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মুকাররম সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান।

পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, মুসলমানদের জন্য রমজান মাস রহমত, বরকত ও মাগফেরাতের বার্তা বয়ে আনে। সংযমের এ মাসে মুসলিমরা আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় ইবাদত-বন্দেগি করে থাকেন।

;

রোজার পুরস্কার মিলবে যেসব আমলে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র মাহে রমজানে কোনোভাবেই আল্লাহতায়ালার অসন্তুষ্টিমূলক কোনো কাজে লিপ্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সর্বোপরি মাহে রমজান ও রোজা মহান মালিককে সন্তুষ্ট করার সুবর্ণ অবসর। এ জন্য আমাদের মাহে রমজান ও রোজা হওয়া চাই হারাম, কবিরা গোনাহ ও নাফরমানি মুক্ত। মিথ্যা, প্রতারণা, অন্যায়, অত্যাচার, পাপাচার, সুদ, ঘুষ ও দুর্নীতি মুক্ত হওয়া। তবেই আমরা রমজান ও রোজার পূর্ণাঙ্গ পুরস্কার গ্রহণ করতে পারব।

আল্লাহ পাককে সন্তুষ্ট করার, মুত্তাকি হওয়ার লক্ষ্য অর্জন করতে পারব। এ লক্ষে রমজান মাসে কিছু বিষয়ের প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখা দরকার। এর অন্যতম হলো-

সময়ের অপচয়রোধ

জীবন সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টার সমষ্টি। এই ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র সময়ই আমার জীবন। জীবনের একটি মুহূর্ত বেখেয়াল, অবহেলায় কাটিয়ে দেওয়া মানে এই সময়টা নষ্ট করে ফেলা। সে আর কখনও ফেরত আসবে না। এক একটি মুহূর্ত জীবনে একবারই আসে। প্রত্যেকটি দিন আগমন করে আমাকে আহবান করে তাকে ভালোভাবে ব্যবহার করার জন্য। সে এও বলে দেয়, হিসাবের দিনেই কেবল সে আবার আমার সামনে হাজির হবে। যে ব্যক্তি সময়ের সদ্ব্যবহার করে, দুনিয়ার জীবনে সে সফলতা পায়। আমার রমজান ৩০ দিনের হলে ২৫,৯২,০০০ সেকেন্ডের সমষ্টি। রমজানের চাঁদ উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কমতে শুরু করে। আমার কাছে রমজানের প্রতিটি সেকেন্ড মূল্যবান। আমি, আপনি যদি হিসাব করে এই সেকেন্ডগুলো কাজে লাগাতে পারি, তবে আমি আপনি অবশ্যই সফল হতে পারব। একজন পরীক্ষার্থী যেমন প্রত্যেকটি সেকেন্ডের হিসাব রেখে উত্তর লিখতে থাকে। তেমনি আমার আপনারও এই মূল্যবান সময়ের যথাযথ কদর করে রোজা পালন করলে, এই বছরের রমজান আমার আপনার জীবনে এক ব্যতিক্রম রমজান মনে হবে এবং এক ব্যতিক্রম ফল বয়ে আনবে। তাই গল্পগুজব, আড্ডা, টিভি দেখা, ফেসবুক অনলাইনে সময় ব্যয়, অবসরে শুধু ঘুমানো, এখানে সেখানে ঘুরাফেরা করা ইত্যাদি কাজগুলো বর্জন করি। তবে আমার রমজান হবে প্রাণবন্ত।

কথা হোক কম

যখন আপনি আমি কথা কম বলব, তখন অনেক অনর্থক এমন কি ফাহেশা কথা থেকে বেঁচে যাব। জীবনের অনেক সময়ও বেঁচে যাবে। বেশি কথা বললে, গীবত, পরনিন্দা, মিথ্যা এ ধরণের অনেক কথা মুখ ফঁসকে বেরিয়ে যেতে পারে। যে সময় আমি অযথা গল্প কথায় লিপ্ত হব, এই সময়টাকে আমি কোরআন তেলাওয়াত, তাফসির অধ্যয়ন, হাদিস পাঠ, বিভিন্ন মাসনুন দোয়া, ইস্তেগফার, দরুদ শরিফ পাঠ, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শেখানো বিভিন্ন জিকিরে মশগুল হতে পারি। অনায়াসে অনেক বরকতের ভাগিদার হতে পারি।

কাজে গতিময়তা

কাজ ছাড়া জীবন অচল, আমরা কেউ চাকুরি করি, কেউ ব্যবসা, কেউ কৃষিকাজ ইত্যাদি। এই রমজানে আমার কাজের সময়কে কমিয়ে আনি। কাজের গতি বাড়িয়ে দেই। কাজের গতি বাড়িয়ে কাজের সময়কে কমিয়ে আনি। এই বেঁচে যাওয়া সময়টিকে আমি ইবাদত-বন্দেগি, কোরআন তেলাওয়াত, দরুদ, ইস্তেগফার পাঠে ব্যয় করি। তাহলে দেখা যাবে কাজের এই গতিময়তা পুরো বছর আমাকে বরকত দেবে। আমার অনেক সময় হাতে থাকবে, বিশেষভাবে মাওলাকে ডাকার জন্য আমার সময়ের অভাব হবে না।

সোশ্যাল মিডিয়া বর্জন

রমজান মাস আমার জন্য আমার মহান রবের এক মহান উপহার। এই মাস সওয়াব কামাইয়ের মাস। এই মাস সোশ্যাল নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকার মাস নয়। আপনার বিশেষ কোনো প্রয়োজনে আপনি নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকতে পারেন। কিন্তু ফেসবুক, টুইটার, ইনস্ট্রাগ্রাম, ইউটিউভ ইত্যাদি মাধ্যমগুলো যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। আপনি হয়তো ভালো কিছু দেখতে চান, ভালো কিছু শুনতে চান। এই ভালো দেখার সঙ্গে, ভালো শোনার সঙ্গে কিছু খারাপও আপনার নজরে এসে যাবে। এই সময় আমি আপনি নেটওয়ার্কহীন অন্য ইবাদতে মশগুল হই। যার নেটওয়ার্ক আমার আর আমার রবের সঙ্গে সংযোগ করে দেবে- ইনশাআল্লাহ।

;

শুক্রবার থেকে রোজা শুরু



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ বুধবার দেশের কোথাও চাঁদ দেখা না যাওয়ায় আগামী শুক্রবার থেকে রোজা শুরু হচ্ছে।

বুধবার (২২ মার্চ) সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে বৈঠক করে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি এ কথা জানায়।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ধর্মমন্ত্রী ও কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ মতিউর রহমান।

বৈঠক শেষে জানানো হয়, বাংলাদেশের কোথাও পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে আগামী শুক্রবার থেকে শুরু হবে রমজান মাস গণনা। সে ক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার দেশের মসজিদগুলোতে বাদ এশা তারাবির নামাজের মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পবিত্র রমজানের কার্যক্রম শুরু করবেন। এরপর ওই দিন দিবাগত ভোররাতে সাহ্‌রি খেয়ে প্রথম রোজা রাখতে হবে।

;