পানির ওপর জায়নামাজে নামাজ পড়ার ঘটনা প্রসঙ্গে

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

হজরত রাবেয়া বসরি (হবে রাবেয়া বসরিয়্যাহ্) দ্বিতীয় হিজরি শতকের একজন প্রসিদ্ধ আবেদা নারী ছিলেন। ইমাম জাহাবি (রহ.)-এর সিয়ারু আলামিন নুবালা, ইবনে খাল্লিকান (রহ.)-এর অফাইয়াতুল আইয়ান, শারানি (রহ.)-এর আততাবাকাতুল কুবরাসহ আরও বিখ্যাত বিখ্যাত বিভিন্ন জীবনীগ্রন্থে তার জীবনী সন্নিবেশিত হয়েছে। তার বিষয়ে সমাজে বিভিন্ন বানোয়াট কিচ্ছা-কাহিনী প্রচলিত আছে।

তার ও প্রসিদ্ধ তাবেয়ী হজরত হাসান বসরি (রহ.)-এর বিষয়ে একটি কাহিনী অনেককে বলতে শোনা যায়। সেটি হলো-

বিজ্ঞাপন

একবার হজরত হাসান বসরি (রহ.) পানির ওপর জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়লেন। হজরত রাবেয়া বসরি একথা জানতে পারলেন এবং তিনি শূন্যের ওপর জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়লেন। হজরত হাসান বসরি (রহ.) যখন একথা জানতে পারলেন তখন বললেন, রাবেয়ার মাকাম (স্থান) আমার অনেক ওপরে।

বস্তুত এ কিচ্ছার কোনো ভিত্তি নেই। এটি একেবারেই কল্পনাপ্রসূত একটি কাহিনী, বাস্তবতার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। নির্ভরযোগ্য কোনো ইতিহাসগ্রন্থ কিংবা রাবেয়া বসরির ওপর রচিত কোনো নির্ভরযোগ্য জীবনীগ্রন্থে এ ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় না।

বিজ্ঞাপন

তারা কত বড় বুজুর্গ ছিলেন, এ কথা বুঝাতে এ জাতীয় কিচ্ছা-কাহিনীর অবতারণা করা হয়।

হ্যাঁ, তারা অনেক বড়মাপের বুজুর্গ ছিলেন, একথা স্বীকৃত। তারা জুহ্দ (সাধনা) ও তাকওয়ায় (আল্লাহভীতি), দুনিয়াবিমুখতা ও খোদাভীতিতে অনেক অগ্রগামী ছিলেন। কিন্তু এ ধরনের কাহিনী দিয়ে তাদের বুজুর্গি প্রমাণ করার কোনো প্রয়োজন নেই। আর এ সবের সঙ্গে বুজুর্গির কোনো সম্পর্ক নেই।

আর আল্লাহর অলিদের থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারামত প্রকাশিত হয় এ কথা স্বীকৃত। সেই সঙ্গে এ কথাও স্বীকৃত যে, কারামতের সঙ্গে বুজুর্গির কোনো সম্পর্ক নেই। বুজুর্গি ও আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়ার মাপকাঠি হলো, তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয় ও সুন্নত অনুযায়ী জীবন-যাপন করা।

আর বানোয়াট এ ঘটনায় আরেকটি দিক দেখা যাচ্ছে। তা হলো, একজন পানির ওপর জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়েছেন তা শুনে অপরজন শূন্যের ওপর জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়ছেন; যেন বুজুর্গি প্রকাশে প্রতিযোগিতা চলছে। এর দ্বারাই বুঝা যায়, এগুলো বানোয়াট গল্প। কারণ, আল্লাহওয়ালারা নিজেদেরকে আড়াল করতে চান। আর তাদের মতো অনুসরণীয় বুজুর্গরা যেন নিজেদের বুজুর্গির প্রদর্শন করছেন। নাউযুবিল্লাহ। এটা তাদের ব্যাপারে মস্তবড় অপবাদও বটে!

আরেকটি বিষয় হলো, হজরত হাসান বসরি (রহ.) ইন্তেকাল করেছেন ১১০ হিজরিতে। আর রাবেয়া বসরির জন্মই হয়েছে ৯৯ অথবা ১০০ হিজরিতে। অর্থাৎ হাসান বসরি (রহ.)-এর ইন্তেকালের সময় রাবেয়া বসরির বয়স ছিলো সর্বোচ্চ ১১/১২ বছর। সিয়ারু আলামিন নুবালায় (৮/২৪১) ইমাম জাহাবি (রহ.) বলেন, রাবেয়া বসরি ১৮০ হিজরিতে ইন্তিকাল করেছেন। কথিত আছে, তিনি আশি বছর হায়াত পেয়েছেন। সুতরাং এ বিষয়টিও এ ঘটনার অসারতা প্রমাণ করে।