আল্লাহর হাসি ও সবার শেষে জান্নাতে প্রবেশকারীর ঘটনা
আমরা সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহতায়ালাকে কখনো দেখিনি। তবুও বিশ্বাস করি এবং ভালোবাসি। নিশ্চয়ই আমাদের জীবন কেবলমাত্র তার জন্যই নিবেদিত। প্রতিটি বিশ্বাসী বান্দার হৃদয়ে লুকিয়ে থাকে মহান রবের সাক্ষাতের এক অকৃত্রিম আশা। যা একজন বান্দার জন্য অবশ্যই সর্বশ্রেষ্ঠ পাওয়া। সেই হিসেবে একদিন সাহাবিগণ নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কি কেয়ামতের দিন আমাদের রবকে দেখতে পাবো না? এর উত্তরে নবী কারিম যা বলেন, তা হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর সূত্রে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে এভাবে-
সাহাবিদের প্রশ্নের উত্তরে নবী কারিম (সা.) বললেন, মেঘমুক্ত পুর্ণিমার রাতের চাঁদকে দেখার ব্যাপারে তোমরা কি সন্দেহ পোষণ করো? তারা বললেন, না, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখার ব্যাপারে কি তোমাদের কোনো সন্দেহ আছে? সবাই বললেন, না। তখন তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে তোমরাও আল্লাহকে তেমনিভাবে দেখতে পাবে।
কেয়ামতের দিন সব মানুষকে সমবেত করা হবে। অতঃপর আল্লাহতায়ালা বলবেন, যে যার উপাসনা করতে সে যেন তার অনুসরণ করে। তাই তাদের কেউ সূর্যের অনুসরণ করবে, কেউ চন্দ্রের অনুসরণ করবে, কেউ তাগুতের অনুসরণ করবে। আর বাকী থাকবে শুধুমাত্র উম্মাহ, তবে তাদের সঙ্গে মুনাফিকরাও থাকবে। তখন তারা বলবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের রবের আগমন না হবে, ততক্ষণ আমরা এখানেই থাকব। আর তার যখন আগমন হবে তখন আমরা অবশ্যই তাকে চিনতে পারব। তখন তাদের মাঝে মহান পরাক্রমশালী আল্লাহতায়ালা আগমন করবেন এবং বলবেন, ‘আমি তোমাদের রব।’ তারা বলবে, হ্যাঁ, আপনিই আমাদের রব। আল্লাহতায়ালা তাদের ডাকবেন। আর জাহান্নামের ওপর একটি সেতু স্থাপন করা হবে। রাসুলগণের মধ্যে আমিই সবার আগে আমার উম্মত নিয়ে এ পথ অতিক্রম করব। সেদিন রাসুলগণ ব্যতীত আর কেউ কথা বলবে না। আর রাসুলদের কথা হবে- আল্লাহুম্মা সাল্লিম, সাল্লিম (হে আল্লাহ! রক্ষা করুন, রক্ষা করুন)।
আর জাহান্নামে বাঁকা লোহার বহু শলাকা থাকবে, সেগুলো হবে সাদান কাঁটার মতো। তোমরা কি সাদান কাঁটা দেখেছ? তারা বলবে, হ্যাঁ, দেখেছি। তিনি বলবেন, সেগুলো দেখতে সাদান (সাদান চতুস্পার্শ্বে কাঁটা বিশিষ্ট এক প্রকার গাছ, মরু অঞ্চলে জন্মে, কাঁটাগুলো বাঁকা থাকে। এগুলো উটের খাদ্য।) কাঁটার মতোই। তবে সেগুলো কত বড় হবে তা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। সে কাঁটা লোকের আমল অনুযায়ী তাদের তড়িৎ গতিতে ধরবে। তাদের কিছু লোক ধ্বংস হবে আমলের কারণে। আর কারোর পায়ে জখম হবে, কিছু লোক কাঁটায় আক্রান্ত হবে, অতঃপর নাজাত পেয়ে যাবে। জাহান্নামিদের থেকে যাদের প্রতি আল্লাহ রহমত করতে ইচ্ছা করবেন, তাদের ব্যাপারে ফেরেশতাদের নির্দেশ দেবেন যে, যারা আল্লাহর ইবাদত করতো, তাদের যেন জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হয়। ফেরেশতা তাদের বের করে আনবেন এবং সেজদার চিহ্ন দেখে তারা তাদের চিনতে পারবে। কেননা, আল্লাহতায়ালা জাহান্নামের জন্য সেজদার চিহ্নগুলো মিটিয়ে দেওয়া হারাম করে দিয়েছেন। ফলে তাদের জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে। সেজদার চিহ্ন ছাড়া আগুন বণি আদমের সবকিছু গ্রাস করে ফেলবে। অবশেষে, তাদেরকে অঙ্গারে পরিণত অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের করা হবে।
তাদের ওপর ‘আবে হায়াত’ ঢেলে দেওয়া হবে, ফলে তারা স্রোতে বাহিত ফেনার ওপর গজিয়ে উঠা উদ্ভিদের মতো সঞ্জীবিত হয়ে উঠবে। অতঃপর আল্লাহ বান্দাদের বিচার কাজ সমাপ্ত করবেন কিন্তু একজন লোক জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে থেকে যাবে। তার মুখমন্ডল তখনও জাহান্নামের দিকে ফেরানো থাকবে। জাহান্নামবাসীদের মধ্যে জান্নাতে প্রবেশকারী সেই শেষ ব্যক্তি।
সে তখন নিবেদন করবে, হে আমার রব! জাহান্নাম থেকে আমার চেহারা ফিরিয়ে দিন। এর দূষিত হাওয়া আমাকে বিষিয়ে তুলছে, এর লেলিহান শিখা আমাকে যন্ত্রণা দিচ্ছে। তখন আল্লাহ বলবেন, তোমার নিবেদন গ্রহণ করা হলে, তুমি এছাড়া আর কিছু চাইবে না তো? সে বলবে, না, আপনার ইজ্জতের শপথ! সে তার ইচ্ছামতো আল্লাহকে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দেবে। কাজেই আল্লাহ তার চেহারাকে জাহান্নামের দিক থেকে ফিরিয়ে দিবেন। অতঃপর সে যখন জান্নাতের দিকে মুখ ফেরাবে, তখন সে জান্নাতের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে পাবে। যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা সে চুপ করে থাকবে।
অতঃপর সে বলবে, হে আমার রব! আপনি জান্নাতের দরজার নিকট পৌঁছে দিন। তখন আল্লাহ তাকে বলবেন, তুমি পূর্বে যা চেয়েছিলে, তা ছাড়া আর কিছু চাইবে না বলে তুমি কি অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দাওনি? তখন সে বলবে, হে আমার রব! তোমার সৃষ্টির সবচাইতে হতভাগ্য আমি হতে চাই না। আল্লাহ তাৎক্ষণিক বলবেন, তোমার এটি পূরণ করা হলে তুমি এ ছাড়া কিছু চাইবে না তো? সে বলবে না, আপনার ইজ্জতের কসম! এছাড়া আমি আর কিছুই চাইব না। এ ব্যাপারে সে তার ইচ্ছানুযায়ী অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দেবে। সে যখন জান্নাতের দরজায় পৌঁছবে তখন জান্নাতের অনাবিল সৌন্দর্য ও তার ভেতরের সুখ-শান্তি ও আনন্দঘন পরিবেশ দেখতে পাবে। যতক্ষণ আল্লাহ ইচ্ছা করবেন, সে চুপ করে থাকবে।
অতঃপর সে বলবে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দাও! তখন পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ বলবেন, হে আদম সন্তান! কি আশ্চর্য! তুমি কত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী! তুমি কি আমার সঙ্গে অঙ্গীকার করোনি এবং প্রতিশ্রুতি দাওনি যে, তোমাকে যা দেওয়া হয়েছে, তাছাড়া আর কিছু চাইবে না? তখন সে বলবে, হে আমার রব! আপনার সৃষ্টির মধ্যে আমাকে সবচাইতে হতভাগ্য করবেন না। এতে আল্লাহ হেসে দেবেন। অতঃপর তাকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেবেন এবং বলবেন, চাও। সে তখন চাইবে, এমন কি তার চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ফুরিয়ে যাবে। তখন পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ বলবেন, এটা চাও, ওটা চাও। এভাবে তার রব তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে থাকবেন। অবশেষে যখন তার আকাঙ্ক্ষা শেষ হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ বলবেন, এ সবই তোমার, এর সঙ্গে আরো সমপরিমাণ (তোমাকে দেওয়া হলো)।
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-কে বললেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছিলেন যে, আল্লাহ বলবেন, এ সবই তোমার, তার সঙ্গে আরও দশগুণ (তোমাকে দেওয়া হলো)। -সহিহ বোখারি : ৬৫৭৩