গতবারের ন্যায় আগামী হজেও বেসরকারি এজেন্সি মালিকদের মোনাজ্জেম ভিসা না পাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে সৌদি আরবে হজযাত্রীদের সেবা প্রদানে বিঘ্ন ঘটবে বলে মনে করেন এজেন্সি মালিকরা। এজন্য তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে সৌদি সরকারের সঙ্গে দ্রুততম সময়ের মধ্যে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধানের দাবি জানিয়েছেন তারা।
পবিত্র হজপালনে যাওয়া বাংলাদেশি হজযাত্রীদের বাড়িভাড়া, খাওয়াসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি দেখে থাকে বেসরকারি এজেন্সিগুলো। এ ছাড়া হজের সময় মিনার তাঁবু, আরাফাতের ময়দান, মুজদালিফায় আনা-নেওয়ার কাজ করে থাকেন এজেন্সি মালিকরা। হজযাত্রীরা যে এজেন্সির মাধ্যমে হজে যান তারাই এটি করে থাকেন। হজ শুরুর অনেক আগেই হোটেল কিংবা বাড়ি ভাড়া করতে হয়। খাওয়া সরবরাহের জন্য ক্যাটারিং সার্ভিস ঠিক করতে হয়। এজন্য হজের আগে এবং হজের সময় এজেন্সি মালিকরা সৌদি আরবে যান।
সৌদি আরব এজেন্সির মালিকদের দীর্ঘদিন ধরেই মোনাজ্জেম ভিসা দিয়ে আসছে। এ ছাড়া বারকোড এবং মিশন ভিসাও দিয়ে থাকে সৌদি। এতে সৌদি আরবে এজেন্সি মালিকদের নগদ টাকা পরিবহন, এয়ারপোর্টে হাজীদের সেবাসহ চলাচলে সহজ হয়।
জানা যায়, ২০২৩ সাল পর্যন্ত সৌদি সরকার এজেন্সি মালিকদের মোনাজ্জেম ভিসা দিয়েছে। কিন্তু গত বছর থেকে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে সমস্যায় পড়েন এজেন্সি মালিকরা। অবশ্য এজেন্সি মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে শেষ সময়ে মিশন ভিসা দেওয়া হয়। কিন্তু এ বছরের হজে মোনাজ্জেম ভিসা দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে সৌদি সরকার।
গত বছরের ৬ অক্টোবর ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন সৌদি হজ ও উমরা মন্ত্রীর সঙ্গে জেদ্দায় এক বৈঠকে এজেন্সি মালিকদের মোনাজ্জেম ভিসা দেওয়ার অনুরোধ জানান।
এ ছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকেও ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে চিঠি দিয়ে মোনাজ্জেমদের মাল্টিপল ভিসা ইস্যু করার অনুরোধ জানায়। কিন্তু সৌদি গত ৫ ডিসেম্বর এক চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছে, গত হজে বাংলাদেশ থেকে ছয় শ জনের বেশি মোনাজ্জেম যাওয়ার কারণে চুক্তি সম্পাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ জন্য এ বছর হজে সার্ভিস কোম্পানি নির্ধারণ ও আবাসন নির্বাচনের জন্য হজ এজেন্সির পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করে গঠিত কমিটি চুক্তি সম্পাদন করবে, যে কমিটির সদস্য সংখ্যা কোনোক্রমেই পাঁচের অধিক হবে না।
এ জন্য গত ৩১ ডিসেম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয় এক চিঠির মাধ্যমে হজ এজেন্সি মালিকদের জানিয়েছে, চলতি বছরের হজে মোনাজ্জেমদের জন্য বিশেষ ভিসা সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এক্ষেত্রে উমরা ভিসা বা অন্যকোনো ভিসায় এজেন্সির স্বত্বাধিকারী বা তার প্রতিনিধিদের হজের সেবা চুক্তি স্বাক্ষর ও বাড়ি-হোটেল ভাড়ার জন্য সৌদি আরবে গমনাগমন করতে হবে।
সে লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে হজযাত্রী সমন্বয়ের মাধ্যমে নিড এজেন্সি নির্ধারণ ও মোনাজ্জেম মনোনয়ন করে হজযাত্রীদের জন্য মিনা ও আরাফাতের তাঁবু গ্রহণ, সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন এবং হজযাত্রীদের জন্য বাড়ি-হোটেল ভাড়াকরণসহ হজের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, সৌদি সরকারের বিভিন্ন সেবাদানকারী কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন কার্যক্রম গত বছরের ২৩ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে। যা শেষ হবে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি। এ সময়ের মধ্যে কোনো এজেন্সি হজযাত্রীদের জন্য সৌদি সেবাদানকারী কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন ও বাড়ি-হোটেল ভাড়া করতে ব্যর্থ হলে তার দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে বহন করতে হবে।
এদিকে হজের সময় মোনাজ্জেম ভিসা না পাওয়ার আশঙ্কায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বেসরকারি এজেন্সি মালিকরা। তারা বলেন, হাজীদের সঠিকভাবে সেবা দেওয়ার জন্য মাল্টিপল ভিসার প্রয়োজন। না হলে সেবার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। সরকার যদি সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এখনও চেষ্টা করে তাহলে মাল্টিপল ভিসা পাওয়া সম্ভব।
তারা আরো বলেন, যেখানে সৌদি সরকার পর্যটনকে উৎসাহিত করছে সেখানে মোনাজ্জেমদের জন্য এক বছরের মাল্টিপল ভিসা দেওয়াই যুক্তিযুক্ত। তা ছাড়া উমরা ভিসার কথা বলা হলেও অনেক সময় হজের আগে উমরা ভিসা বন্ধ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয়।
হজ এজেন্সির মালিকদে দাবি, এজেন্সির মালিক বা প্রতিনিধিদের মোনাজ্জেম ভিসা, বারকোড ভিসা এবং মিশন ভিসা দিতে হবে। না হলে বাড়ি ভাড়া করবে কে? ক্যাটারিং কে ঠিক করবে? এজেন্সি মালিকদের যদি উমরা বা হজ ভিসায় যেতে হয় তাহলে এক হাজী আরেক হাজীকে সেবা করবে কিভাবে?
বারকোড ভিসা থাকলে হাজীদের এয়ারপোর্ট থেকে আনা নেওয়া সহজ হয়। আর বিশেষ ভিসা না দিলে হাজীদের সেবায় বিঘ্ন ঘটে। গত বছর মোনাজ্জেম ভিসা না দেওয়ার কারণে বাড়ি ভাড়া ও ক্যাটিারিং সার্ভিস ঠিক করতে সমস্যায় পড়তে হয়। তা ছাড়া উমরা ভিসাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এজন্য অনেক এজেন্সিকে অন্যের মাধ্যমে বাড়ি ভাড়া করতে হয়। এতে বেশ সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য এজেন্সির মালিকরা সব সময় মোনাজ্জেম ভিসার দাবি জানান। এটা হলে সেবা প্রদান সহজ হয়।