হজের সফরে কোথায় কষ্ট হয়, কেন হয়?
৯ মে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রথম ডেডিকেটেড ফ্লাইট ৪১৫ জন হজযাত্রী নিয়ে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এর মাধ্যমে চলতি বছরের হজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। শেষ হবে ১০ জুন।
মঙ্গলবার (২৮ মে) পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৯৮৮ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। এখনও হজের জন্য সৌদি গমনের অপেক্ষায় প্রায় ৪০ হাজার যাত্রী।
চলতি হজ মৌসুমে শুরু থেকে হজযাত্রা অনেকটা সুন্দরভাবেই চলছে। অন্যান্য বারের মতো হজ গমনের অনিশ্চয়তা নিয়ে বিপন্ন চেহারার হজযাত্রীদের হজক্যাম্পে অপেক্ষার ছবি এখনও আমাদের দেখতে হয়নি। তবে বিড়ম্বনাহীন হজযাত্রার ক্ষেত্রে কিছু কিছু হজ এজেন্সির গাফিলতির কথা জানা গেছে। যা হজযাত্রীদের ভোগান্তির কারণ।
হজযাত্রীদের নানা ভোগান্তির খবরে মনে হয়, হজ একটি ভীষণ কঠিন আমলের নাম। হজ মানেই কষ্ট। হজ মানেই দুর্ভোগ। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
বাংলাদেশের হজযাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয় মূলতঃ ব্যবস্থাপনাজনিত ত্রুটির কারণে। হজব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতরা আন্তরিক হলে এ ভোগান্তি নিরসন কোনো বিষয়ই না। হজব্যবস্থাপনা দুর্নীতিমুক্ত করে এর সঙ্গে সৎ ও খোদভীরু লোকদের সম্পৃক্ত করলেই এ সমাধান সম্ভব।
এতো গেলো হজব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট দুর্ভোগের কথা। কিন্তু বাস্তবিকই হজের সফরে প্রচুর কষ্ট করতে হয়। এর জন্য দরকার সহনশীল মনোভাব ও ধৈর্য। তার পরও যেসব কারণে ও স্থানে হজের সফরে কষ্ট স্বীকার করতে হয়-
১. সারা দুনিয়া থেকে হজকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট কয়েক দিন জেদ্দা অথবা মদিনা এয়ারপোর্টে হজযাত্রীরা অবতরণ করেন। তাই এয়ারপোর্টের সব কার্যক্রমে অস্বাভাবিক ভীড় হয়। তবে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশ মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভের সুবিধা পাওয়ায় এই বিড়ম্বনা এখন নেই। এখন হাজিদের লাগেজ নিজ নিজ হোটেলে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে, হাজিরা বিমান থেকে নেমে বাসে করে মক্কা-মদিনার হোটেলে পৌঁছে যাচ্ছেন।
২. কাবা শরিফের চত্ত্বর (মাতাফ, তওয়াফের স্থান), মসজিদে হারাম, সাফা-মারওয়া, মদিনা শরিফ, মসজিদে নববি ও রওজা শরিফ নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গায় হওয়ার দরুণ- হজের ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও মোস্তাহাব আমলগুলো একসঙ্গে করতে গিয়ে প্রচণ্ড চাপ পড়ে এসব স্থানে।
৩. মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফায় একই দিনে একই স্থানে ২০-২২ লাখ মানুষ জমা হওয়ার প্রেক্ষিতে এসব স্থানে আসা-যাওয়া করতে রাস্তায় ও গাড়ীতে চরম যানজটের সৃষ্টি হয়। কখনও যান্ত্রিক গোলযোগ হয়, দুর্ঘটনা ঘটে। তাই স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রাস্তায় ৫-৬ গুণ সময় বেশি লাগে।
৪. সৌদি আরবের আবহাওয়া বিশেষ করে মক্কা শরিফ, মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফার তাপমাত্রা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। এসব এলাকায় রোদের তাপ ও গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এবারও হজের সময় আবহাওয়া গরম থাকবে বলে জানা গেছে।
৫. হজের সফরে মক্কা শরিফ ও মদিনা শরিফে সব কাজকর্মের জন্য সৌদি মোয়াল্লিমের দারস্থ হতে হয়। অনেক মোয়াল্লিমের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার কারণেও অবর্ণনীয় কষ্ট করতে হয়।
৬. ফাইভ স্টার হোটেলসহ বিলাসবহুল হোটেল মক্কা-মদিনায় আছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অন্যস্থানের হোটেলের মতো এ সব হোটেলে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না। অধিকাংশ হজযাত্রী সাধারণ হোটেল বা বাড়ীতে থাকেন। কিছু কিছু হোটেল বা বাড়ী এত নিম্নমানের যে- এসি, বাথরুম বা অন্যান্য বিষয় হজযাত্রীদের ভীষণ কষ্ট পোহাতে হয়।
৭. মক্কা শরিফ ও মদিনা শরিফের সব হোটেলে রান্নার অনুমতি নেই। অনেক দূর থেকে কষ্ট করে খাবার পৌঁছানো হয়। নামাজের জামাতের আগে পরে ভীড় না কমা পর্যন্ত খাবার সরবরাহ করা যায় না। ফলে খাবারের কষ্ট এ জন্য হয়ে থাকে। খাবারের জন্য কখনও আবার পুলিশের যন্ত্রণা পোহাতে হয়। এমনকি আইন ভঙের দরুণ পুলিশ অনেক সময় খাবারও ফেলে দেয়। তাই যথাসময় খাবার না পৌঁছানোর কারণে কষ্ট হয়।
তবে এটাও ঠিক যে, কিছু নিম্ন রুচিবোধসম্পন্ন, অতিলোভী এজেন্সি বা দায়িত্বশীলের পরিকল্পিত কৃত্রিম সঙ্কটেও খাবারের কষ্ট হয়।