কোরআন তেলাওয়াতে শান্তি খুঁজছে গাজার নারীরা
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরম আর অবিরাম দখলদার ইসরায়েলি হামলার ভয়াবহতায় জর্জরিত গাজার নারীরা এখন শান্তি খুঁজে নিচ্ছেন কোরআনে কারিমের পবিত্র বাণীতে। বারবার হামলা, প্রিয়জনদের মৃত্যু, বাস্তুচ্যুতি, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তাদের জীবনকে করে তুলেছে অসহনীয়। এমন পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়া নারীরা কোরআন মাজিদ তেলাওয়াত ও মুখস্থ (হেফজ) করাকে বেছে নিয়েছেন আত্মার শান্তি ও শক্তির অবলম্বন হিসেবে।
গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রী শায়মা আবুলাত্তা (২০) কিংবা ইসলামিক আইনে ডিগ্রিধারী ইমান আসেমের (৩৪) এখন আর পড়াশোনা কিংবা কর্মজীবনের স্বপ্ন নেই। বারবার হামলায় বাস্তুচ্যুত হওয়ার হিসেব তারা রাখতে পারেন না। ৫০-৬০ জন করে প্রিয়জনকে হারিয়ে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তাও খুঁজে পান না তারা।
এমন মর্মন্তুদ অবস্থায় শায়মা, আসেমের মতো অনেক নারী শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেন শিশুদের কোরআন মাজিদ শিক্ষা দেওয়ার। মধ্য গাজার দেইর আল বালাহ এলাকায় একটি তাঁবু মসজিদ স্থাপন করে তারা শুরু করেন কোরআন মাজিদ শিক্ষাদান।
শায়মা বলেন, একানে নেই বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানি, খাবার, গরম থেকে সুরক্ষার কোনো কিছুই। বিমান হামলা, বোমা বিস্ফোরণ এবং প্রিয়জন হারানো রুটিনে পরিণত হয়েছে আমাদের।’
ইসরায়েলি বোমা হামলার ধ্বংসাবশেষ আর নোংরা পানিতে প্লাবিত রাস্তা পেরিয়ে মধ্য গাজার বাস্তুচ্যুত নারীরা এই তাঁবুর মসজিদে নিয়মিত মিলিত হন, তাদের একমাত্র সঙ্গী কোরআন।
গত ৪ জুন এই তাঁবু মসজিদে ছয়জন নারী পবিত্র কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হয়েছেন। ঘটনাটি সবার মধ্যে এক নতুন আশার জাগিয়ে তোলে। এরপর থেকেই আরও বেশি নারী কোরআন তেলাওয়াত ও মুখস্থ করার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
‘তারা যখন কোরআন মাজিদের শেষ অংশটি তেলাওয়াত করলো, আমরা সবাই আনন্দে কেঁদে দেই। প্রথমে অবিশ্বাস মনে হচ্ছিল, এই কঠিন সময়ে কোরআন মুখস্থ নিশ্চয়ই স্মরণীয় বিষয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিবেশ, বাঁচার নিশ্চয়তা নেই। আমাদের হাতে কিছুই নেই। এমন অবস্থায় আমাদের শক্তি জোগাচ্ছে কেবল আল কোরআন,’ বলেন শায়মা।
প্রথমে ছোট পরিসরে কোরআন মাজিদ শিক্ষা শুরু হলেও পরে শিক্ষার্থী বেড়ে যাওয়ায় তাঁবু দিয়ে মসজিদ তৈরি করা হয়। মসজিদের নাম রাখা হয় ‘প্রেয়ার হল অব দ্য সার্কেল অব দ্য গুড ওয়ার্ড।’ মসজিদের ফটকে কোরআনের একটি আয়াত লেখা হয়- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণে অন্তর প্রশান্তি লাভ করে।’
বর্তমানে এই মসজিদে ৩ বছর বয়সী শিশু থেকে শুরু করে ৭০-৮০ বছর বয়সী নারীরাও কোরআন শিখতে আসছেন। প্রায় একশ নারী নিয়মিত এখানে কোরআন তেলাওয়াত ও মুখস্থ করেন।
‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে মারা যেতে পারি। এ অবস্থায় আমরা শেষ যে কাজটি করতে চাই, সেটি হলো কোরআন মুখস্থ করে মহান আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করা,’ বলেন শায়মা।
যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন, তারা বিশ্বাস করেন, তাদের এই কোরআন তেলাওয়াত ও মুখস্থকরণের সওয়াব চলে যাবে তাদের প্রিয়জনদের কাছে। ফলে তারা দিন দিন আরও বেশি করে কোরআনের সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে নিচ্ছেন।
শায়মা যোগ করেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা কোরআন মাজিদের যত কাছাকাছি হবো এবং যত বেশি মুখস্থ করব, ততই আমরা যুদ্ধ এবং দুঃখকষ্টের অবসান ঘটাতে পারব- ইনশাআল্লাহ।’