কোরআন তেলাওয়াতে শান্তি খুঁজছে গাজার নারীরা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
তাঁবু মসজিদে কোরআন তেলাওয়াত করছেন নারীরা, ছবি: সংগৃহীত

তাঁবু মসজিদে কোরআন তেলাওয়াত করছেন নারীরা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরম আর অবিরাম দখলদার ইসরায়েলি হামলার ভয়াবহতায় জর্জরিত গাজার নারীরা এখন শান্তি খুঁজে নিচ্ছেন কোরআনে কারিমের পবিত্র বাণীতে। বারবার হামলা, প্রিয়জনদের মৃত্যু, বাস্তুচ্যুতি, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তাদের জীবনকে করে তুলেছে অসহনীয়। এমন পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়া নারীরা কোরআন মাজিদ তেলাওয়াত ও মুখস্থ (হেফজ) করাকে বেছে নিয়েছেন আত্মার শান্তি ও শক্তির অবলম্বন হিসেবে।

গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রী শায়মা আবুলাত্তা (২০) কিংবা ইসলামিক আইনে ডিগ্রিধারী ইমান আসেমের (৩৪) এখন আর পড়াশোনা কিংবা কর্মজীবনের স্বপ্ন নেই। বারবার হামলায় বাস্তুচ্যুত হওয়ার হিসেব তারা রাখতে পারেন না। ৫০-৬০ জন করে প্রিয়জনকে হারিয়ে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তাও খুঁজে পান না তারা।

এমন মর্মন্তুদ অবস্থায় শায়মা, আসেমের মতো অনেক নারী শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেন শিশুদের কোরআন মাজিদ শিক্ষা দেওয়ার। মধ্য গাজার দেইর আল বালাহ এলাকায় একটি তাঁবু মসজিদ স্থাপন করে তারা শুরু করেন কোরআন মাজিদ শিক্ষাদান।

যুদ্ধের ভয়াবহ পরিস্থিতির মাঝেই এই তিন নারী কোরআনের হাফেজ হয়েছেন, ছবি: সংগৃহীত

শায়মা বলেন, একানে নেই বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানি, খাবার, গরম থেকে সুরক্ষার কোনো কিছুই। বিমান হামলা, বোমা বিস্ফোরণ এবং প্রিয়জন হারানো রুটিনে পরিণত হয়েছে আমাদের।’

ইসরায়েলি বোমা হামলার ধ্বংসাবশেষ আর নোংরা পানিতে প্লাবিত রাস্তা পেরিয়ে মধ্য গাজার বাস্তুচ্যুত নারীরা এই তাঁবুর মসজিদে নিয়মিত মিলিত হন, তাদের একমাত্র সঙ্গী কোরআন।

গত ৪ জুন এই তাঁবু মসজিদে ছয়জন নারী পবিত্র কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হয়েছেন। ঘটনাটি সবার মধ্যে এক নতুন আশার জাগিয়ে তোলে। এরপর থেকেই আরও বেশি নারী কোরআন তেলাওয়াত ও মুখস্থ করার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

‘তারা যখন কোরআন মাজিদের শেষ অংশটি তেলাওয়াত করলো, আমরা সবাই আনন্দে কেঁদে দেই। প্রথমে অবিশ্বাস মনে হচ্ছিল, এই কঠিন সময়ে কোরআন মুখস্থ নিশ্চয়ই স্মরণীয় বিষয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিবেশ, বাঁচার নিশ্চয়তা নেই। আমাদের হাতে কিছুই নেই। এমন অবস্থায় আমাদের শক্তি জোগাচ্ছে কেবল আল কোরআন,’ বলেন শায়মা।

প্রথমে ছোট পরিসরে কোরআন মাজিদ শিক্ষা শুরু হলেও পরে শিক্ষার্থী বেড়ে যাওয়ায় তাঁবু দিয়ে মসজিদ তৈরি করা হয়। মসজিদের নাম রাখা হয় ‘প্রেয়ার হল অব দ্য সার্কেল অব দ্য গুড ওয়ার্ড।’ মসজিদের ফটকে কোরআনের একটি আয়াত লেখা হয়- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণে অন্তর প্রশান্তি লাভ করে।’

বর্তমানে এই মসজিদে ৩ বছর বয়সী শিশু থেকে শুরু করে ৭০-৮০ বছর বয়সী নারীরাও কোরআন শিখতে আসছেন। প্রায় একশ নারী নিয়মিত এখানে কোরআন তেলাওয়াত ও মুখস্থ করেন।

মসজিদের সামনে লেখা কোরআনের আয়াত, নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণে অন্তর প্রশান্তি লাভ করে, ছবি: সংগৃহীত

‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে মারা যেতে পারি। এ অবস্থায় আমরা শেষ যে কাজটি করতে চাই, সেটি হলো কোরআন মুখস্থ করে মহান আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করা,’ বলেন শায়মা।

যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন, তারা বিশ্বাস করেন, তাদের এই কোরআন তেলাওয়াত ও মুখস্থকরণের সওয়াব চলে যাবে তাদের প্রিয়জনদের কাছে। ফলে তারা দিন দিন আরও বেশি করে কোরআনের সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে নিচ্ছেন।

শায়মা যোগ করেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা কোরআন মাজিদের যত কাছাকাছি হবো এবং যত বেশি মুখস্থ করব, ততই আমরা যুদ্ধ এবং দুঃখকষ্টের অবসান ঘটাতে পারব- ইনশাআল্লাহ।’

রাশিয়ায় দাগেস্তানে নিকাব নিষিদ্ধ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
নিকাব পরিহিত দুই নারী, ছবি: সংগৃহীত

নিকাব পরিহিত দুই নারী, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলিম নারীদের হিজাব ও নিকাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা প্রায়ই শোনা যায়। এর বিপরীতে ধর্মীয় স্বাধীনতা ইস্যুতে প্রায়ই মুখ খুলতে দেখা যায় রাশিয়াকে। এবার সেই রাশিয়াই নিকাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল।

ঘটনা রাশিয়ার দাগেস্তান রিপাবলিক অঞ্চলের। স্থানীয় সেক্যুলার সরকারের আপত্তি ওঠার পর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, দাগেস্তান রিপাবলিকের ইসলামিক কর্তৃপক্ষ মুসলিম নারীদের নিকাব পরিধানের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। গত মাসে অঞ্চলটিতে একটি সশস্ত্র হামলার পর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

নিকাব হলো- মুসলিম নারীদের একটি পোশাক যা তাদের পুরো মুখ ঢেকে রাখে শুধু চোখ ব্যতীত। ধর্মমতে এমন পোশাক নারীদের পর্দার অনুষঙ্গ। যদিও মুসলিম বিশ্বের সব জায়গায় তা মানা হয় না।

টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেওয়া এক বিবৃতিতে দাগেস্তানের ডেপুটি হেড মুফতি আবদুল্লাহ সালিমভ জানান, দাগেস্তান প্রজাতন্ত্রের জনগণের ওপর নিরাপত্তা হুমকি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে রাশিয়ার জাতীয় নীতিমালা ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে দাগেস্তানের ধর্মীয় নেতারা নিকাব নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সালিমভ জানান, মুফতি কাউন্সিল এক জরুরি বার্তায় জানাচ্ছে যে, চলমান হুমকি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত দাগেস্তানে মুসলিম নারীদের সাময়িকভাবে নিকাব পরিধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে একটি ফতোয়াও জারি করেছে স্থানীয় ইসলামি কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) ফতোয়া বিভাগের প্রধান আখমেদ খাদজি ইসায়েভ জানান, স্থানীয় পরিস্থিতির আলোকে নিকাবের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে স্থায়ীভাবে নিকাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ারও বিরোধিতা করেন ফতোয়া বিভাগের প্রধান।

গত মাসের শেষের দিকে দাগেস্তানের গভর্নর সের্গেই মেলিকভ নিকাব নিষিদ্ধ করার পক্ষে কথা বলেছিলেন। এ সময় তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, এ ধরনের পোশাক ককেশাসের জনগণের মধ্যে এতিহ্যগতভাবে প্রচলিত নয়। দাগেস্তান গভর্নর জানান, এ ধরনের পোশাক পুরুষদে লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করে এবং নারীদের এর আড়ালে অবৈধ জিনিস বহনে সহযোগিতা করে।

গত ২৩ জুনে দাগেস্তানে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর নেকাব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। ওই দিন বেশ কয়েকজন বন্দুকধারী অর্থোডক্স গির্জা এবং একটি উপাসনালয়কে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। হামলায় নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যসহ অন্তত ২০ জন নিহত হন। আহত হন আরও অসংখ্য।

;

যে মসজিদে দুই রাকাত নামাজে উমরার সওয়াব মেলে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মসজিদে কুবা, ছবি: সংগৃহীত

মসজিদে কুবা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দুনিয়ায় ফজিলতপূর্ণ চারটি মসজিদের একটি মসজিদে কুবা। মসজিদটি মদিনার দক্ষিণ-পশ্চিমকোণে অবস্থিত। এর দূরত্ব মসজিদে নববি থেকে পাঁচ কিলোমিটারের মতো।

‘কুবা’ একটি কূপের নাম। এই কূপকে কেন্দ্র করে যে বসতি গড়ে উঠেছে তাকে কুবা মহল্লা বলা হয়। এই যোগসূত্রে মসজিদটির নামকরণ হয়- মসজিদে কুবা।

হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা শরিফে হিজরতের প্রথম দিন কুবায় অবস্থানকালে এর ভিত্তি স্থাপন করেন। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) এ মসজিদের নির্মাণকাজে সাহাবাদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন।

ইতিহাসবিদ মুহাম্মদ বিন ইসহাক (রহ.) বলেন, রাসুল (সা.) কুবায় সোম, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার অবস্থান করেন। এ সময়ের মধ্যে মসজিদে কুবার ভিত্তি স্থাপন করেন এবং এতে নামাজ আদায় করেন। নবুওয়ত প্রাপ্তির পর এটাই প্রথম মসজিদ, যার ভিত্তি তাকওয়ার ওপর স্থাপিত হয়। অতঃপর জুমার দিন মদিনা অভিমুখে যাত্রা করেন...।

ইবনে আবি খাইসামা উল্লেখ করেন, ‘রাসুল (সা.) যখন এর ভিত্তি স্থাপন করেন, তখন কেবলার দিকের প্রথম পাথরটি স্বহস্তে স্থাপন করেন। অতঃপর হজরত আবু বকর (রা.) একটি পাথর স্থাপন করেন। তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে আবু বকর (রা.)-এর পাথরের পাশের পাথরটি স্থাপন করেন হজরত উমর (রা.)। এরপর সবাই যৌথভাবে নির্মাণকাজ শুরু করেন।’

নবুওয়ত পাওয়ার পর এটাই প্রথম মসজিদ, এমনকি ইসলামের এবং উম্মতে মোহাম্মদির প্রথম মসজিদ। মসজিদে হারাম, মসজিদে নববি এবং মসজিদে আকসার পরই মসজিদে কুবার সম্মান ও ফজিলত। এ মসজিদের আলোচনা কোরআনে করা হয়েছে এবং মসজিদ সংলগ্ন অধিবাসীদের একটি বিশেষ গুণের প্রশংসা করা হয়েছে।

কুবা মসজিদের জায়গাটি ছিলো- হজরত কুলসুম ইবনুল হিদম (রা.)-এর খেজুর শুকানোর পতিত জমি। তিনি ছিলেন আমর ইবনে আওফের গোত্রপতি। এখানে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ১৪ দিন (কেউ বলেন ১০ দিন) অবস্থান করেন ও তার আতিথ্য গ্রহণ করেন।

পবিত্র কোরআনের সূরা তওবার ১০৮ নম্বর আয়াতে এই মসজিদের কথা উল্লেখ আছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে মসজিদ প্রথম দিন থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকওয়ার ওপর (মসজিদে কুবা), তাই বেশি হকদার যে, তুমি সেখানে নামাজ কায়েম করতে দাঁড়াবে। সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’

মসজিদে কুবা এ পর্যন্ত কয়েক দফা সংস্কার ও পুনর্নিমাণ করা হয়। নবীর আমলের পর ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.) তার খেলাফতকালে মসজিদে কুবার সংস্কার ও পুনর্নিমাণ করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে আরও বেশ কয়েকবার এই মসজিদের পুনর্নিমাণ ও সংস্কার করা হয়। সবশেষ ১৯৮৬ সালে মসজিদটি পুনর্নিমাণ করা হয়। এই মসজিদ নির্মাণে পুরো মসজিদে এক ধরনের সাদাপাথর ব্যবহার করা হয়, যা অন্যকোনো মসজিদে সাধারণত দেখা যায় না।

চারটি উঁচু মিনার, ছাদে ১টি বড় গম্বুজ এবং ৫টি অপেক্ষাকৃত ছোটো গম্বুজ রয়েছে। এ ছাড়া ছাদের অন্য অংশে রয়েছে গম্বুজের মতো ছোটো ছোটো অনেক অবয়ব। মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আসেন। মসজিদে নারী ও পুরুষদের নামাজের জায়গা ও প্রবেশ পথ আলাদা। অজুর জায়গাও ভিন্ন। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মসজিদের ভেতরের কারুকাজও বেশ মনোমুগ্ধকর। মূল মসজিদ ভবনের মাঝে একটি খালি জায়গা আছে, সেখানেও নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। দামি কারপেট বিছানো মেঝেতে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন, রয়েছে জমজম পানির ব্যবস্থা।

মসজিদের বাইরে এ মসজিদ সম্পর্কে বর্ণিত পবিত্র কোরআনের আয়াত ও হাদিসের বাণীগুলো সুন্দরভাবে লিখে রাখা হয়েছে।

হজ ও উমরা পালনকারীরা মসজিদে কুবায় যেয়ে ইবাদত-বন্দেগি করেন, ছবি: সংগৃহীত

মদিনায় হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ১০ বছর কাটিয়েছেন। এ সময়ে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) পায়ে হেঁটে অথবা উট কিংবা ঘোড়ায় আরোহন করে কুবা মসজিদে যেতেন। এরপর তিনি সেখানে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন।

হাদিসে আছে, প্রতি শনিবারে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কুবায় আগমন করতেন। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

আরেক হাদিসে বর্ণিত আছে, মসজিদে কুবায় নামাজ আদায় করার সওয়াব একটি উমরার সমপরিমাণ। -তিরমিজি

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নিজের ঘরে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করে (সুন্নত মোতাবেক অজু করে) মসজিদে কুবায় আগমন করে নামাজ আদায় করে তাকে এক উমরার সমপরিমাণ সওয়াব দান করা হবে। -ইবনে মাজাহ

হাদিসের এমন বর্ণনার পরিপ্রেক্ষিতে নবীর যুগ থেকেই প্রতি শনিবার মসজিদে কুবায় নামাজ আদায়ের জন্য গমন করা মদিনাবাসীর অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। এখনও তাদের এই আমল অব্যাহত রয়েছে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণে কুবা মসজিদে আসা ও দুই রাকাত নামাজ আদায় করা মোস্তাহাব। হজ পালন শেষে মদিনায় অবস্থানরত হাজিরাও মসজিদে কুবায় যেয়ে নামাজ আদায় করেন।

;

আল্লাহর সঙ্গ অনুভব করার লাভ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আল্লাহর স্মরণে গোনাহ কমে, ছবি: সংগৃহীত

আল্লাহর স্মরণে গোনাহ কমে, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সর্বাবস্থায় ‘আল্লাহতায়ালা আমার সঙ্গে আছেন’- এই কল্পনা ধরে রাখার চেষ্টা করা। আলেমরা বলেন, প্রত্যেক নামাজের পর দুই থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্যের মোরাকাবা করলে এই অনুভূতি জন্মায়। মোরাকাবা এভাবে করা, চোখ বন্ধ করে মনে মনে ভাবা, ‘আমি যেখানেই থাকি না আল্লাহতায়ালা আমার সঙ্গে আছেন।’ অথবা এই আয়াতের বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা করা, ‘তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন, যেখানেই তুমি থাকো না কেন।’ -সূরা মুজাদালা : ০৭

নির্জন স্থান হোক অথবা লোকালয়, শহর হোক অথবা জঙ্গল-মরুভূমিত, আবাদ-জনপদ হোক অথবা জনশূন্য পাহাড়, প্রান্তর বা গুহা, যেখানেই হোক না কেন আল্লাহর দৃষ্টি ও জ্ঞান থেকে কেউ গোপন থাকতে পারে না। এভাবে নিয়মিত কিছুদিন করতে পারলে- ইনশাআল্লাহ ধীরে ধীরে আল্লাহর সান্নিধ্যের সার্বক্ষণিক অনুভূতি অন্তরে বসে যাবে এবং গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হবে।

অভিজ্ঞ আলেমরা আরও বলেন, যখন গোনাহ করতে মন চাইবে, তখন নিজেকে নিজে বলবেন, ‘আল্লাহকে ভয় করো।’ অথবা নিজেকে বলবেন, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি।’

এ বিষয়ে আমরা অনেক হাদিস জানি। প্রসিদ্ধ এক হাদিস আছে যে, ‘আল্লাহর ভয়ে ভীত বান্দা কেয়ামতের দিন আরশের ছায়ায় স্থান পাবে। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এবং এমন ব্যক্তি (আরশের নিচে ছায়া পাবে) যাকে অভিজাত সুন্দরী কোনো রমণী প্রস্তাব দেওয়া সত্ত্বেও সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি।’ -সহিহ বোখারি : ১৪২৩

এক্ষেত্রে সহিহ বোখারিতে ৩ জনের ঘটনা সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। যারা একটি গুহায় আটকা পড়ে। তাদের একজন এই বলে দোয়া করল, ওগো আল্লাহ! আমার এক চাচাত বোন ছিল। আমি তার প্রেমে মত্ত ছিলাম। সে দোয়া করতে যেয়ে আল্লাহর কাছে নিজের অপরাধ স্বীকার করে বলে, আমি তার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। আমি তাকে কুপ্রস্তাব দিলাম। কিন্তু সে অস্বীকার করল। একবার সে অভাবে পড়ল। তাই আমার কাছে টাকা চাইতে আসল। আমি তাকে কুকর্মের বিনিময়ে প্রয়োজনীয় দিনার দিতে রাজি হলাম। সেও প্রস্তাবে রাজি হয় এবং যখন আমি খারাপ কাজ করার জন্য প্রস্তুতি নেই; ঠিক তখনই আমার চাচাতো বোন বলে উঠল, ‘আল্লাহকে ভয় করো।’

ওগো আল্লাহ! তার এই কথার প্রভাবে এবং আপনার ভয়ে আমি সেই কাজ থেকে সরে আসি। আর তার থেকে টাকাটাও আর ফেরত নেইনি। আমার এই কাজ যদি আপনার জন্য হয়ে থাকে তাহলে পাথরটা একটু খুলে দেন। আল্লাহতায়ালা পাথরটা একটু খুলে দিলেন। তাহলে বুঝা গেল, এটা একটা কার্যকর আমল।

দয়াময় আল্লাহর প্রতি ভয় পোষণ করা মুমিনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। এটা ঈমানের বৈশিষ্ট্যসমূহের মাঝে অন্যতম। সুরা আল ফাতিরের ২৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী ক্ষমাময়। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে কেউ তার ক্ষতি করতে পারে না। আর যে আল্লাহ ছাড়া অন্যকে ভয় করে কেউ তার উপকার করতে পারে না।

কারও অন্তরে যখন আল্লাহভীতি সৃষ্টি হয়, তখন তা প্রবৃত্তির মন্দ তাড়না ও চাহিদাগুলোকে জ্বালিয়ে নিঃশেষ করে দেয় এবং এর ফলে তার মন থেকে দুনিয়ার মোহ কমে যায়।

;

যে মসজিদে নামাজের সময় কিবলা পরিবর্তনের ঘটনা ঘটে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মসজিদে কিবলাতাইন, ছবি: সংগৃহীত

মসজিদে কিবলাতাইন, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইসলামে কিবলা বলতে সুনির্দিষ্ট কোনো একটি দিককে বোঝানো হয়, যেদিকে মুখ করে মুসলমানরা নামাজ আদায় করেন। আরবি কিবলা শব্দের দ্বিবচন ‘কিবলাতাইন’ বা দুই কিবলা। পবিত্র নগরী মদিনার পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত দুই কিবলার স্মৃতিবিজড়িত ‘মসজিদে কিবলাতাইন’ ইসলামের ইতিহাসের তৃতীয় প্রাচীন মসজিদ। এ মসজিদেই কিবলা পরিবর্তনে নবী কারিম (সা.)-এর দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষা ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে। এখানে নামাজ পড়ার সময়ই নবীজির কাছে কিবলা পরিবর্তনের নির্দেশ-সংবলিত অহি আসে।

ইতিহাস এবং হাদিসের আলোকে জানা যায়, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজ আদায়ের নির্দেশ পান শবেমেরাজের সময় অর্থাৎ ৬২১ সালে। এরপর থেকে তিনিসহ সব মুসলমান জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদকে কিবলা গণ্য করে নামাজ আদায় করতেন। তবে তিনি ভাবতেন প্রিয় জন্মভূমি এবং হজরত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক ইসলাম প্রতিষ্ঠার কেন্দ্র ভূমি কাবা বা মসজিদে হারামের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করলে আরও ভালো হতো। এজন্য তিনি প্রায়ই আকাশের দিকে চেয়ে দেখতেন এমন কোনো আদেশ ফেরেশতার মাধ্যমে আসে কি না।

পরবর্তীকালে হিজরতের পর নবী কারিম (সা.) অহির আলোকে কিবলা পরিবর্তনের আদেশপ্রাপ্ত হন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বারবার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কিবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব, যা আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদে হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, সেদিকে মুখ করো। যারা আহলে কিতাব, তারা অবশ্যই জানে যে, পালনকর্তার পক্ষ থেকে এটাই ঠিক। তারা যা করে তা আল্লাহর অজানা নয়।’ -সুরা বাকারা : ১৪৪

মসজিদের বাইরে স্থাপিত দৃষ্টিনন্দন ছাউনি, ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র কোরআনের এ আয়াত হজরত জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে যখন অবতীর্ণ হয়, তখন মসজিদে নবী কারিম (সা.) ও সাহাবিরা মদিনার উত্তরে অবস্থিত জেরুজালেমের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করছিলেন। কিবলা পরিবর্তনের আদেশ পাওয়ায় নামাজরত অবস্থায়-ই রাসুলুল্লাহ (সা.) বায়তুল মোকাদ্দিসের দিক থেকে পবিত্র কাবার দিকে ফিরে অবশিষ্ট নামাজ আদায় করেন। এ ঘটনার পর থেকেই মসজিদটি পরিচিতি লাভ করে ‘মসজিদ আল কিবলাতাইন’ বা দুই কিবলার মসজিদ হিসেবে। দীর্ঘদিন ধরে মসজিদটিতে দুটি ‘মেহরাব’ বা ইমামতির জন্য বর্ধিত অংশ ছিল। পরবর্তী সময়ে সংস্কারকাজ এবং মসজিদের আয়তন বৃদ্ধির সময় শুধু একটি মেহরাব রাখা হয়।

নবী কারিম (সা.) মদিনায় আগমনের পর তথা ইসলামি যুগের শুরুতে তৃতীয় মসজিদ হিসেবে ‘মসজিদে কিবলাতাইন’ নির্মিত হয়। বনি সালামা অঞ্চলে হওয়ার সুবাদে এ মসজিদের প্রথম নাম ছিল মসজিদে বনি সালামা। অন্য তথ্যমতে, দ্বিতীয় হিজরি তথা ৬২৩ সালে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবারা সর্বপ্রথম মদিনা মোনাওয়ারার বনি সালামা অঞ্চল (বর্তমান খালিদ বিন ওয়ালিদ সড়ক) সংলগ্ন স্থানে এ মসজিদ নির্মাণ করেন।

হিজরি দ্বিতীয় সালে সাওয়াদ বিন ঘানাম বিন কাব এ মসজিদ নির্মাণ করেন। আর শাবান মাসের ১৫ তারিখে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ইমামতিতে জোহর নামাজ আদায়ের সময় কিবলা পরিবর্তনের ঘটনা ঘটে। তবে ঠিক কার ইমামতিতে বা কোন ওয়াক্তের নামাজের সময় এ ঘটনা ঘটে, তা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। নবী কারিম (সা.) কর্তৃক ইসলাম প্রচারের ঊষালগ্নে প্রতিষ্ঠিত মদিনার এ মসজিদে হজরত মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক নামাজ আদায়ের তথ্য উল্লিখিত আছে বিভিন্ন গ্রন্থে।

এরপর ১০০ হিজরিতে উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) মসজিদটির পুনর্র্নির্মাণ করেন। এর দীর্ঘকাল পর ৮৯৩ হিজরিতে মসজিদে নববির প্রখ্যাত খাদেম শুজায়ি শাহিন আল জামালি ছাদসহ ‘মসজিদে কিবলাতাইন’ পুনর্র্নির্মাণ করেন। এই নির্মাণের ৫৭ বছর পর তুরস্কের উসমানি খলিফা সুলাইমান আল কানুনি ৯৫০ হিজরিতে আরও বৃহৎ পরিসরে এটির সংস্কারকাজ সম্পন্ন করেন।

মসজিদে নামাজ পড়ছেন হাজিরা, ছবি: সংগৃহীত

মসজিদে নববি থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত এ মসজিদে একসঙ্গে প্রায় তিন হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটির আয়তন ৩ হাজার ৯২০ বর্গমিটার। গম্বুজ সংখ্যা দুটি, যার ব্যাস ৮ মিটার ও ৭ মিটার, উচ্চতা ১৭ মিটার। মিনার রয়েছে দুটি। বর্তমানে হাজিদের একটি জনপ্রিয় গন্তব্য এই মসজিদ আল কিবলাতাইন।

সরকারি বার্তা সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, প্রতিদিন শত শত হাজি এই মসজিদে আসেন ও নামাজ আদায় করেন। ঐতিহ্যবাহী আরবীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত মসজিদটিতে সম্প্রতি মদিনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ সম্পাদন করা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক মুসল্লি, হজযাত্রী ও উমরা পালনকারীদের উপস্থিতির প্রেক্ষিতে মসজিদের বাইরের প্রাঙ্গণে দৃষ্টিনন্দন ছাউনি স্থাপন করা হয়েছে।

নতুনভাবে আরও বেশ কিছু পরিষেবা যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, পথচারীদের চলার প্রশস্ত পথ ও নামাজিদের চলাচলের জন্য এস্কেলেটর।

;