আল আকসায় সিনাগগ বানাতে চান ইসরায়েলি মন্ত্রী, প্রতিবাদের ঝড়
দখলদার ইসরায়েলের উগ্র ডানপন্থী মন্ত্রী ইতামার বেন গভিরের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে নতুন করে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবাদে মুখর হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম দেশগুলো।
সোমবার (২৬ আগস্ট) ইসরায়েলি এ মন্ত্রী বলেন, ‘তিনি সুযোগ পেলে জেরুজালেমের পবিত্র আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে একটি ইহুদি উপাসনালয় তৈরি করবেন।’
তার এ বক্তব্য নিয়ে সৌদি আরব, কাতার, জর্ডানসহ অনেকে ক্ষোভ জানাচ্ছে। ইসরায়েল সরকারের নীতিমালা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির বরাবরই ওই এলাকায় প্রার্থনাকারী ইহুদিদের ওপর সরকারের দীর্ঘস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকে এড়িয়ে থাকেন।
আর্মি রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সম্ভব হলে পবিত্র আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে তিনি একটি সিনাগগ (ইহুদি উপাসনালয়) তৈরি করবেন। আল-আকসা ইহুদিদের কাছে ‘টেম্পল মাউন্ট’ হিসেবে পরিচিত। ইসরায়েল অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদ সারা বিশ্বের মুসলিমদের কাছে তৃতীয় পবিত্রতম স্থান হিসেবে বিবেচিত। এটি ফিলিস্তিনের জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক। এটি ইহুদিদের কাছেও পবিত্রতম স্থান হিসেবে বিবেচিত।
আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণটি জর্ডান তত্ত্বাবধান করে থাকে। তবে সেখানে কাদের প্রবেশাধিকার থাকবে, তা ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ইহুদি এবং অন্য অমুসলিমদের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আল-আকসা প্রাঙ্গণে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে তাদের সেখানে প্রার্থনা বা ধর্মীয় প্রতীক প্রদর্শনের অনুমতি নেই।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেন গভিরের মতো কট্টরপন্থী ধর্মীয় জাতীয়তাবাদীরা আল-আকসা প্রাঙ্গণে জারি থাকা নিষেধাজ্ঞাগুলো ক্রমাগত লঙ্ঘন করছে।
আর্মি রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আল-আকসা প্রসঙ্গে বেন গভির বলেন, ‘আমার চাওয়া অনুযায়ী যদি আমি কিছু করতে পারতাম, তবে আমি ওই জায়গায় একটি ইসরায়েলি পতাকা লাগাতাম।’
সাংবাদিকেরা কয়েকবার তাকে জিজ্ঞেস করেছেন, সুযোগ পেলে তিনি ওই জায়গায় সিনাগগ তৈরি করবেন কি না। শেষ পর্যন্ত ‘হ্যাঁ’ সূচক উত্তর দেন বেন গভির। ২০২২ সালে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অন্তত ছয়বার ওই বিরোধপূর্ণ জায়গাটি পরিদর্শন করেছেন বেন গভির। এ নিয়ে তিনি তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন। বেন গভির মনে করেন, ওই জায়গায় ইহুদিদের প্রার্থনা করার অনুমতি দেওয়া উচিত।
বেন গভির সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আরবরা যেখানে চায় সেখানেই প্রার্থনা করতে পারে। সুতরাং ইহুদিদেরও যেখানে খুশি সেখানে প্রার্থনা করার সুযোগ থাকা উচিত।’
তার দাবি, বর্তমান নীতিমালা ইহুদিদের এ স্থানটিতে প্রার্থনা করার অনুমতি দেয়।’
বেন গভিরের বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জর্ডান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সুফিয়ান কুদাহ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আল-আকসা এবং পবিত্র স্থানগুলো মুসলিমদের জন্য প্রার্থনা করার উপযুক্ত জায়গা। পবিত্র স্থানগুলোতে না হামলা চালাতে জর্ডান সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।’
পবিত্র স্থানগুলোতে হামলার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক আদালতে জমা দেওয়ার জন্য জর্ডান প্রয়োজনীয় আইনি কাগজপত্র প্রস্তুত করছে বলেও উল্লেখ করেছেন সুফিয়ান। সৌদি আরব এবং কাতারও ইসরায়েলি মন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘পবিত্র আল-আকসা মসজিদের ঐতিহাসিক ও আইনগত মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিচ্ছে সৌদি আরব।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিবৃতিটি দেওয়া হয়েছে। বেন গভিরের বক্তব্যকে ‘উগ্র ও উসকানিমূলক বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।’
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে সিনাগগ তৈরির ইঙ্গিতের নিন্দা জানিয়েছে। তারা একে ‘পুরো বিশ্বের মুসলিমদের অনুভূতিতে আঘাত’ বলে উল্লেখ করেছে। এ ধরনের বক্তব্যের কারণে গাজায় যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা ক্ষুণ্ন হতে পারে।
কয়েকজন ইসরায়েলি কর্মকর্তাও বেন গভিরের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয় হয়েছে, ‘বর্তমান নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন নেই।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, ‘টেম্পল মাউন্টের মর্যাদাকে চ্যালেঞ্জ করাটা একটি বিপজ্জনক, অপ্রয়োজনীয় এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড।’
গ্যালান্ট আরও বলেন, বেন গভিরের কর্মকাণ্ড ইসরাইল রাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলবে। ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ এক এক্স পোস্টে বলেছেন, বেন গভিরের বক্তব্য এটাই প্রমাণ করে যে নেতানিয়াহু তার সরকারের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনাহ সতর্ক করেছেন, আল-আকসা এবং পবিত্র স্থানগুলো হলো- লাল রেখা, যেখানে কোনোভাবেই হাত দেওয়া যাবে না। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস বলেছে, ইসরায়েলি মন্ত্রীর বক্তব্যটি বিপজ্জনক। পবিত্র স্থানগুলোর সুরক্ষার দায়িত্ব নিতে আরব ও ইসলামি দেশগুলোকে আহ্বান জানানো হয়েছে।