বাংলাদেশি হাফেজকে বিরল সম্মান জানালেন এরদোয়ান
নিজে পবিত্র কোরআনের হাফেজ। নাতি-নাতনিদের পরম যত্নে কোরআন মাজিদ শেখানোর একাধিক ছবি বিশ্ববাসী দেখেছে। সুযোগ পেলেই তিনি কোরআন তেলাওয়াত করেন। তুরস্কের বিখ্যাত আয়া সোফিয়ায় ৮৬ বছর পর যেদিন নামাজ শুরু হয়, সেদিনও তিনি ভরাট কণ্ঠে সুরা ইয়াসিনের কিছু অংশ তেলাওয়াত করে শুনিয়েছেন। তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তুরস্কে অনুষ্ঠিত নবম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জনকারী বাংলাদেশের হাফেজ মুয়াজ মাহমুদকে অভূতপূর্ব সম্মান দিয়েছেন। সম্মাননা সনদ ও পুরস্কার হস্তান্তর শেষে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হাফেজ মুয়াজ মাহমুদের হাতে আরবীয় রীতিতে চুমু খেয়ে সম্মান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।
এছাড়া নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রতিযোগীদের অভিনন্দন জানিয়ে এরদোয়ান লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক হিফজ ও কোরআন সুন্দর তেলাওয়াত প্রতিযোগিতায় যারা সাফল্য অর্জন করেছেন, সেই সব কারি ও হাফেজদের পাশাপাশি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ৯৪ জন প্রতিযোগীকেই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
তিনি আরও লেখেন, ‘এই মহৎ কার্যক্রম সফল করতে যারা পরিশ্রম ও অবদান রেখেছেন, সেই সম্মানিত বিচারকমণ্ডলীসহ সবাইকে আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
এর আগে বুধবার (৩০ অক্টোবর) স্থানীয় সময় বাদ জোহর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের হাত থেকে মুয়াজ মাহমুদ সম্মাননা ক্রেস্ট ও পুরস্কার গ্রহণ করেন। ২০১৬ সালের পর এই প্রথম তুরস্কের আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ প্রথম স্থান লাভ করেছে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধায়নে এ প্রতিযোগিতার বাছাইপর্বে দেশের শতশত মেধাবী হাফেজদের পেছনে ফেলে প্রথম স্থান অর্জন করেন মুয়াজ মাহমুদ। তুরস্কে আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার জন্য বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিত হন তিনি। এর আগে আরও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছেন।
হাফেজ মুয়াজ ঢাকার মিরপুর-১ এ অবস্থিত মারকাযু ফয়জিল কুরআন আল ইসলামী, ঢাকার কিতাব বিভাগের ছাত্র। তিনি এই মাদ্রাসা থেকে হাফেজ হয়েছেন। এখন কিতাব বিভাগে পড়াশোনা করছেন। শুক্রবার (১ নভেম্বর) ভোর সাড়ে পাঁচটায় মুয়াজ বাংলাদেশে ফিরবেন।
তুরস্কের প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে এই কোরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ২৯ অক্টোবর ছিল তুরস্কের ১০১তম প্রজাতন্ত্র দিবস।
তুরস্ক মসজিদ ও মুসলিম ঐতিহ্যের দেশ। জনসংখ্যা অনুপাতে সেখানে মসজিদ বেশি। দেশটির মসজিদগুলো অনেকটা এক গম্বুজের। তুরস্কের যেকোনো শহরে গেলে একই আকৃতির মসজিদ চোখে পড়বে। এসব মসজিদ নির্মাণ ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। বর্তমান কালেও শত শত বছর আগে থেকে চলে আসা তাদের একই আদলের মসজিদ নির্মাণ চালু রাখতে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
তুরস্কের বড় বড় শহরে এই ধরনের প্রকাণ্ড দৃষ্টিনন্দন মসজিদ মানুষকে আকৃষ্ট করে। ইস্তাম্বুল, আংকারা, কোনিয়া, ইজমির, আদানা, মার্সিন, বুরসা- বড় বড় শহরে এক গম্বুজের দৃষ্টিনন্দন মসজিদ চোখে পড়বে। কয়েক বছর আগে রাজধানী ইস্তাম্বুল থেকে আংকারায় স্থানান্তরিত হলেও ইস্তাম্বুল তার ঐতিহ্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ইস্তাম্বুলের অবস্থান পৃথিবীর একেবারে মধ্যখানে বলা যায়।
বিশ্ব যদি এক দেশ হয়ে যায় তাহলে ইস্তাম্বুল তার রাজধানী হওয়ার দাবি রাখে। ইস্তাম্বুলে অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন মসজিদ আছে। এর মধ্যে সুলতান আহমদ মসজিদ তথা ব্লু মসজিদ এবং সুলায়মানি মসজিদ (ইস্তাম্বুলের কেন্দ্রীয় মসজিদ) অন্যতম। এ দুই মসজিদ দেখতে প্রতিদিন শত হাজার পর্যটক ভিড় করে। সুলতান সুলায়মান এই মসজিদ নির্মাণ করেন।
মসজিদের কিবলার দিকে তিনি ও তার পরিবারবর্গের কবর আছে। অন্যদিকে সুলতান আহমদ মসজিদ তথা ব্লু মসজিদ ইস্তাম্বুলের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে, যা তোপকাপি জাদুঘর থেকে নিকটতম দূরত্বে। প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) মাজার কমপ্লেক্স মসজিদ, ইস্তাম্বুল জয়কারী সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ মাজার মসজিদসহ ইস্তাম্বুলে আরো ১০-১২টি প্রকাণ্ড দৃষ্টিনন্দন মসজিদ আছে।
তুরস্কে মিনারবিহীন মসজিদ চিন্তা করা যায় না। ইস্তাম্বুলের কেন্দ্রীয় তথা সুলায়মানি মসজিদ চার মিনারের। অন্যদিকে সুলতান আহমদ মসজিদ তথা ব্লু মসজিদ ছয় মিনারের। তোপকাপি জাদুঘর মসজিদে রূপান্তরিত আয়া সোফিয়া গির্জা, ব্লু মসজিদ নিয়ে বসফরাস প্রণালির তীরে তিন-চার বর্গ কিলোমিটার এলাকা ইস্তাম্বুলের প্রাণকেন্দ্র। এখানে রাত-দিন হাজার হাজার ভ্রমণকারী ঘুরঘুর করতে থাকে। উন্নত বিশ্বসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অমুসলিম হাজার হাজার পর্যটক ইস্তাম্বুলে ভ্রমণকালে ব্লু মসজিদ ও সুলায়মানি মসজিদ দেখতে আসে। অমুসলিমদের এসব ঐতিহাসিক মসজিদ দেখতে সুযোগ করে দেওয়া হয়। সেই লক্ষ্যে কিবলার বিপরীতে মসজিদে প্রবেশ করে দু-তিন ফুট উচ্চতায় ব্যারিকেড দিয়ে রাখা হয়।
তুরস্কের সঙ্গে আছে বাংলাদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ক। ঢাকা-ইস্তাম্বুল টার্কিশ এয়ারের দৈনিক ফ্লাইট আছে। বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে আছে নানা ব্যবসা-বাণিজ্য। তুরস্কে বাংলাদেশের বহু ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করছে। অসংখ্য বাংলাদেশি ভ্রমণের উদ্দেশ্যে তুরস্কে গমন করছে।