সিরিয়ায় মুসলমানদের বিজয় পতাকা উড়ে খলিফা ওমরের আমলে
সিরিয়া মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত একটি আরব দেশ। এটি পশ্চিম এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র। দেশটির ভৌগোলিক অবস্থান এবং প্রতিবেশী দেশগুলো হলো- উত্তরে তুরস্ক, পূর্বে ইরাক, দক্ষিণে জর্দান, পশ্চিমে লেবানন ও ভূমধ্যসাগর এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে ইসরায়েল (জোলান মালভূমি)।
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক (Damascus) বিশ্বের প্রাচীনতম অব্যাহতভাবে বসবাসকৃত শহরগুলোর মধ্যে একটি। দেশটির মোট আয়তন এক লাখ ৮৫ হাজার ১৮০ বর্গকিলোমিটার (৭১,৪৯৮ বর্গমাইল)। এটি বিশ্বব্যাপী আয়তনের দিক থেকে মাঝারি আয়তনের একটি দেশ।
সিরিয়ার সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিকস অনুসারে ২০১১ সাল থেকে যুদ্ধ শুরুর আগে সিরিয়ার জনসংখ্যা ছিল ২ কোটি ২০ লাখ। ১৩ বছর যুদ্ধে উদ্বাস্তু হয়েছে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ।
আর জাতিসংঘের হিসাবে যুদ্ধকবলিত সিরিয়ায় সামরিক-বেসামরিক মিলিয়ে নারী, শিশুসহ ৩ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। তবে সংস্থাটি বলছে, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের হিসাবে, সিরিয়া যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
সিরিয়ায় খ্রিস্টান, ইহুদি ছাড়াও সুন্নি, কুর্দি, শিয়া, শিয়া ইসমাইলিসহ বেশ কয়েকটি সম্প্রদায় বসবাস করেন।
সিরিয়ায় মুসলমানদের বিজয় পতাকা উড়েছিল ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর সময়কালে।
হাদিসে মুলকে শামের অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আর সিরিয়া শামের একটি অংশ। সিরিয়া শামের প্রাচীন অংশ হওয়ায় ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয়ভাবে এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। ইসলামে একে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
শাম শব্দটি আরবি ভাষায় একটি বিস্তৃত অঞ্চলকে বোঝায়, যা প্রাচীনকালে লেভান্ট (Levant) নামে পরিচিত ছিল। এটি বর্তমানের বেশ কয়েকটি দেশ নিয়ে গঠিত। সিরিয়া, লেবানন, জর্দান, ফিলিস্তিন (যার মধ্যে রয়েছে বর্তমান ইসরায়েল ও পশ্চিম তীর)।
- সিরিয়া হবে মুসলিম উম্মাহর আলোর বাতিঘর: আল জোলানি
- সিরিয়া অঞ্চল নিয়ে হাদিসে যেসব ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে
- ১৩ শ বছরেও জৌলুস হারায়নি দামেস্কের উমাইয়া মসজিদ
- কোরআনে বর্ণিত ‘পবিত্র ও বরকতময় ভূমি’ সিরিয়া
মুলকে শাম পবিত্র ও বরকতময় ভূমি, যা ইসলামের ইতিহাস ও ভবিষ্যতের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এই অঞ্চলের প্রতি ভালোবাসা এবং এর শান্তিময় হওয়ায় হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসগুলোতে পাওয়া যায়। তিনি এসব অঞ্চলের জন্য দোয়া করেছেন। পবিত্র মক্কা-মদিনার পর যা অন্যকোনো দেশের ব্যাপারে বলা হয়নি। অনেক নবী-রাসুল, সাহাবায়ে কিরাম ও বুজুর্গদের ভূখণ্ড হিসেবে প্রসিদ্ধ এই দেশ।
শেষ যুগে শামকে ইসলামের পুনর্জাগরণ ও সংঘর্ষের কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই ওই ফেতনার সময় নবী কারিম (সা.) শামে অবস্থান করার কথা বলেছেন।
হজরত সালিম ইবনে আবদুল্লাহ তার পিতা আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের আগে হাজরামাওত (কিংবা হাজরামাওতের সমুদ্রের দিক থেকে) থেকে অবশ্যই একটি আগুন বের হবে এবং লোকদের একত্র করবে। সাহাবিরা বলেন, তখন আমাদের কি করার নির্দেশ দেন, হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বলেন, তখন তোমরা শাম অঞ্চলকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখো। -জামে তিরমিজি : ২২১৭
হাদিসে আরও বলা হয়েছে, শামে যদি দুর্যোগ হয়- তাহলে এটি পুরো বিশ্ববাসীর জন্য অশনিসংকেত এবং শামে সর্বদা আল্লাহতায়ালার একটি দল সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। হজরত মোয়াবিয়া ইবনে কুররা তার পিতা কুররা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শামবাসীরা যখন খারাপ হয়ে যাবে তখন আর তোমাদের কোনো মঙ্গল নেই। আমার উম্মতের মধ্যে একদল সব সময় বিজয়ী থাকবে, তাদের যারা লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করবে তারা কেয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত তাদের কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। -জামে তিরমিজি : ২১৯২
আমাদের উচিত শামের বরকত ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব উপলব্ধি করা। শামের জন্য দোয়া করা, কারণ এটি একটি পবিত্র স্থান। শামের মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকা এবং তাদের সাহায্য করা।