রমজান প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের মাস



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
রমজানে ইবাদত করছেন এক মুসলমান, ছবি: সংগৃহীত

রমজানে ইবাদত করছেন এক মুসলমান, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র রমজান মাসের বার্তা দিয়ে নতুন চাঁদের নূরানী আলোয় সমগ্র জগৎ উদ্ভাসিত হয়েছে। সর্বত্র উচ্চকিত হচ্ছে স্বাগতম-ধ্বনি- ‘আহলান ওয়া সাহলান’, ‘খোশ আমদেদ মাহে রামাদ্বান।’ ‘রামাদ্বান কারীম’ বলে বিশ্বব্যাপী মুসলমান পবিত্র মাসকে বরণ করে নিয়েছে। যে মাসে রয়েছে রহমত, বরকত, মাগফেরাত ও নাজাতের সওগাত।

মুসমানদের কাছে অত্যন্ত মর্যাদা ও বরকতময় মাস রমজান। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ১৮৩-১৮৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘রমজান মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে আল কোরআন। যা মানব জাতির জন্য সঠিক পথপ্রদর্শনকারী। সঠিক পথে চলার জন্য সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী, হক/সত্য ও বাতিল/মিথ্যকে পরিষ্কারভাবে উপস্থাপনকারী। তোমাদের মথ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে সে পুরো মাসটিতে রোজা রাখবে।’

পবিত্র কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী মানুষের মধ্যে ‘তাকওয়া’র গুণ সৃষ্টির লক্ষ্যে রোজা পালনকে ফরজ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ‘তাকওয়া’র অর্থ হলো- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি ভালোবাসা ও ভয়ের অনুভূতি। আল্লাহতায়ালার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস এবং তার সীমাহীন অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তার প্রতি মানুষের ভালোবাসা জাগ্রত হয়। আর তার অন্যান্য গুণাবলী, যেমন রাগ-ক্ষোভ ও শাস্তি দানের ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস লালনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে তার প্রতি ভয়ের ও মান্যতার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। ভালোবাসা ও ভয়ের এ মিলিত মানসিক অবস্থার নাম ‘তাকওয়া’।

বস্তুতপক্ষে, ‘তাকওয়া’ হলো- সকল ভালো কাজের উৎস; সকল মন্দ কাজ থেকে বাঁচার সত্যিকার উপায়। ‘তাকওয়া’র গুণাবলী অর্জনকারী ‘মুত্তাকি’ নামে অভিহিত, যে নিজে সৎ কর্মশীল থেকে আপামর মানুষকে সৎ কাজের প্রতি আদেশে দিতে পারঙ্গম আর নিজে সর্ব প্রকার অসৎ থেকে বিরত থেকে তাবৎ মানব-প্রজন্মকে অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকবার কাজে নিষেধ প্রদান করতে সক্ষম এবং তিনি মানুষকে আহ্বান জানাবেন কল্যাণের পথে। আর এ কথা তো সকলে জানা যে, প্রকৃত প্রস্তাবে মুসলমানদেরকে সৃজন করাই হয়েছে মানব জাতিকে সকল প্রকার অকল্যাণ থেকে বিরত রেখে কল্যাণের পথ দেখানোর জন্য। এ মহান কাজেই পুরোটা জীবন উৎসর্গ করে গেছেন রাহমাতুল্লিল আলামীন নবী মুহাম্মদ মুস্তফা আহমাদ মুজতাবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। জাগতিক ধন-সম্পদ আহরণ বা পদ-পদবী গ্রহণের বদলে তিনি জীবন উৎসর্গ করে গেছেন আল্লাহতায়ালা কর্তৃক একমাত্র মনোনীত পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা ইসলামকে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যক্তি, রাষ্ট্র ও সমাজের কল্যাণকামী কাঠামোতে উপস্থাপনের ঐশী দায়িত্ব পালনের কাজে।

রমজান মাসে কৃচ্ছতার মাধ্যমে মানুষ নিজের রিপুকে দমন করতে পারে। খোদাভীতির গুণে সমৃদ্ধ হতে পারে। আল্লাহর পথে চলার প্রেরণাও লাভ করা সম্ভব রমজানের ঐতিহাসিকতার আলোকে। কারণ, ইসলামের আবির্ভাবের পর প্রথম যে রমজান মাস এসেছিল, তার ১৭ তারিখ আরবের কাফেররা হামলা চালায় নতুন ধর্মকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে। বদরের ময়দানে হাজার হাজার কাফেরের আগ্রাসী-আক্রমনকারী সুসজ্জিত বাহিনীকে মাত্র ৩১৩ জন মুসলমান সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করে ইসলামের শান্তি ও কল্যাণের ঝাণ্ডাকে সমুন্নত রেখেছিলেন এই ‘তাকওয়া’ বা খোদাপ্রেম ও ভীতির মিলিত শক্তিতে। সেদিন ইসলামের বিজয়ের জন্য কাফেরদের জাগতিক শক্তি কোনও প্রতিরোধ গড়তে পারেনি, ‘তাকওয়া’র শক্তির সামনে পরাজিত ও অবনত হয়েছিল।

ঈমান ও তাকওয়ার শিক্ষা নিয়ে আল কোরআন নাজিল হয়েছে রমজানের এক মহিমান্বিত রজনীতে, যে রজনীর নাম শবেকদর, হাজার মাসের চেয়েও উত্তম যে রাত। রমজানে সুযোগ রয়েছে ইতেকাফের।

পবিত্র কোরআন অবর্তীণ হওয়ার মাস রমজান আমাদের সামনে অনেক সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে। এ মাসে পবিত্র কোরআন অধ্যয়নের মাধ্যমে আর ইসলামের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন-কর্ম-কথায় অনুসৃত আদর্শ বা সুন্নত পালনের মাধ্যমে মুসলমানরা তাকওয়ার গুণে আত্ম-উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালাতে পারে। নিজেদেরকে উজ্জ্বল আদর্শস্বরূপ উপস্থাপন করতে পারে উত্তম জীবনের পথে, মানবতার কল্যাণে। নিপীড়ণ-আগ্রাসনমুক্ত শান্তি বিশ্ব গড়ার শপথ নিতে পারে।

কারণ মাহে রমজান হলো- প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের মাস। রোজাব্রত পালনের কৃচ্ছতা সাধনের মাধ্যমে আমরা যেমন নিজের চিন্তা-চাহিদা ও চেতনার সকল অশুভ তাগিদকে পরাজিত করতে পারি, তেমনি পারি বিশ্বের সকল অকল্যাণকে মিটিয়ে দিতে; আধিপত্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ, সাম্রাজ্যবাদের মত মানবতা-বিরোধী কাজের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে।

পবিত্র মাহে রমজানে প্রতিটি দিনে রোজা এবং রাতে নামাজ ও তেলাওয়াতের প্রশিক্ষণ ও প্রচেষ্টার পথে তাকওয়ার রঙে জীবনকে রাঙানোর যে অমূল্য সুযোগ এসেছে, তা কাজে লাগাতে পারলেই মুসলমানের ব্যক্তি জীবন সফল হবে। একটি কথা কোনোভাবেই ভুলে গেলে হবে না যে, পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালার স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, ‘তোমাদেরকে পাঠানো হয়েছে কল্যাণের জন্য। কারণ তোমরা মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকবে। সৎ কাজের আদেশ করবে আর অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে।’

অন্যত্র আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে মানুষকে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর দিকে, কল্যাণের দিকে ডাকে উত্তম ভাষা ও সদুপদেশের মাধ্যমে।’

অতএব, মুসলমান যদি তার উপর অর্পিত বিশ্বব্যাপী সার্বজনীন-কল্যাণকামীতার দায়িত্ব বিস্মৃত হয়, তাহলে পুরো বিশ্বের মতো তারাও অকল্যাণে নিপতিত হবে। আর যদি কল্যাণকামীতার প্রচার ও প্রসারে কুরআন ও সুন্নাহর প্রদর্শিত পথে চলে, তাহলে নিজেদের কল্যাণের সঙ্গে সঙ্গে সারা দুনিয়ার কল্যাণও নিশ্চিত করতে পারবে।

পবিত্র মাহে রমজানের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সার্বজনীন-কল্যাণের শ্বাশত চেতনায় সকল অকল্যাণ ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মানবতাকে বিজয়ী করার পথে আমাদের এগিয়ে দিক।

   

মক্কা প্রবেশে কঠোর বিধি-নিষেধ, ১৩৮ ভাষার অনুবাদ ডিভাইস



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মক্কার একটি চেকপয়েন্ট, ছবি: সংগৃহীত

মক্কার একটি চেকপয়েন্ট, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরবের স্থানীয় হিসাবে বৃহস্পতিবার জিলকদ মাসের ১৫ তারিখ। আজ থেকে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে প্রবেশে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ শুরু হয়েছে। পবিত্র হজের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এ নির্দেশনা জারি করেছে দেশটির জননিরাপত্তাবিষয়ক অধিদপ্তর।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে, ১৫ জিলকদ) থেকে শুরু হওয়া এ বিধি-নিষেধ হজের পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত জারি থাকবে। এ সময়ে স্থানীয়দের মক্কায় প্রবেশে প্রয়োজন হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন।

আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, আসন্ন হজের প্রস্তুতি এবং হজযাত্রীদের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে বিনা অনুমতিতে মক্কায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে হজের স্থানগুলোতে কাজ করার অনুমোদন, মক্কায় বসবাসকারীর আইডি ও হজের অনুমোদন ছাড়া মক্কায় প্রবেশ করতে পারবে না।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়, অনুমোদন ছাড়া যারা মক্কায় প্রবেশ করতে চাইবে তাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ফিরিয়ে দেবে।

সব ধরনের ভিজিট ভিসায় মক্কায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধুমাত্র হজ ভিসাধারীরা মক্কায় প্রবেশ করতে পারবেন। ভিজিট ভিসার ধরন যাই হোক না কেন, এটি হজ পারমিট নয় এবং এই ধরনের ভিসাধারী ব্যক্তিদের হজ করার অনুমতি নেই'। মন্ত্রণালয় সতর্কতা জারি করে আরও বলেছে, কোনো ভিজিট ভিসাধারী যদি মক্কায় থাকে, তাদের অবিলম্বে চলে যেতে হবে। হজ ভিসা ব্যতীত অন্য যেকোনো ধরণের ভিসাধারীরা মক্কায় প্রবেশের চেষ্টা করলে বা মক্কার ভেতরে পাওয়া গেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৩৮ ভাষায় তাত্ক্ষণিক অনুবাদ ডিভাইস
সৌদি পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন বিভাগের মুখপাত্র মেজর নাসির আল ওতাইবি জানিয়েছেন, ‘বিভিন্ন দেশ থেকে আগত হজযাত্রীদের সেবা করার জন্য, কর্মকর্তাদের ১৩৮ ভাষায় দ্রুত অনুবাদের ডিভাইস সরবরাহ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে হজযাত্রীদের সম্ভাব্য সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

তিনি আরও জানিয়েছেন, আকাশ, স্থল ও সমুদ্রপথে বিভিন্ন দেশ থেকে ৩ লাখের বেশি হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন।

;

৬৫ বছর বয়সী ভ্যানচালকের উমরার স্বপ্নপূরণ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ভ্যানচালক মো. ফরিদ বেপারী, ছবি: সংগৃহীত

ভ্যানচালক মো. ফরিদ বেপারী, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দীর্ঘ দিনের ইচ্ছে ছিল সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহতায়ালার ঘর তওয়াফ ও মদিনা শরিফে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মোবরক জিয়ারত করার, রাসুলের রওজায় সালাম পেশ করার। অবশেষে লালিত সেই স্বপ্ন ২০২৪ সালের ২ মে পূরণ করেছেন ভ্যানচালক মো. ফরিদ বেপারী। ৬৫ বছর বয়সী এই ভ্যানচালক বরিশালের মুলাদী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড বড়চর মাধবপুরের মো. আ. রব বেপারীর ছেলে।

পবিত্র উমরার স্বপ্নপূরণ প্রসঙ্গে ফরিদ বেপারী বলেন, ‘ভালো কাজের নিয়ত করলে আল্লাহতায়ালা তার ব্যবস্থা করে দেন। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতেই আমার উমরা পালন করা সম্ভব হয়েছে।’

জানা গেছে, ভ্যান চালিয়ে মাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকা আয় করেন। সংসারের খরচ চালানোর পরে হাতে কিছুই থাকে না। তার পাঁচ ছেলে সন্তান রয়েছে। ছোট ছেলে তার সঙ্গে থাকে। বাকি ছেলেরা আলাদা সংসার করে। নিজের আয় দিয়েই উমরা পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ জন্য তিনি দিন-রাত ভ্যান চালিয়ে টাকা সংগ্রহ করেন।

গত ৩০ বছর ধরে তিনি ভ্যান চালিয়ে যাচ্ছেন। স্ত্রীর শরীরের অবস্থা ভালো না থাকায় উমরা পালনে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেননি বলে মনে অনেক দুঃখ তার। উমরা পালন করতে তার খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। উমরা পালন করতে কোনো ঋণ করেননি তিনি। কষ্ট করে ভ্যান চালিয়ে টাকা উপার্জন করে উমরা পালন করেছেন তিনি।

ফরিদ বেপারী আবারও উমরা পালন করার আশা করছেন। এ জন্য সবার দোয়াও কামনা করেন তিনি।

;

ইন্দোনেশিয়ান নারীর ২২ বার হজ-উমরার অবিস্মরণীয় স্মৃতি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ইন্দোনেশিয়ান হজযাত্রী মরিয়ম মোহাম্মদ মুনির, ছবি: সংগৃহীত

ইন্দোনেশিয়ান হজযাত্রী মরিয়ম মোহাম্মদ মুনির, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

১৯৬৪ সালে ছয় বছর বয়সী ইন্দোনেশিয়ান মরিয়ম মোহাম্মদ মুনির বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রথমবারের মতো হজপালন করতে সৌদি আরব যান। তারপর থেকে তিনি উমরা এবং হজপালনের জন্য আরও ২২ বার মক্কা-মদিনা ভ্রমণ করেছেন।

সুরাবায়া বিমানবন্দরের মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভ হলে মরিয়ম মুনির তার ২২ বার সৌদি আরব ভ্রমণের স্মৃতি ও অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে আলাপ করছিলেন সৌদি প্রেস এজেন্সির এক প্রতিনিধির সঙ্গে।

আলাপকালে তিনি বলেন, আজ থেকে ৬০ বছর আগে, তার পরিবার হজ করার জন্য প্রথম ভ্রমণ করেন, ভ্রমণটি ছিল বেশ ব্যয়বহুল। একটি পুরোনো জাহাজে করে সৌদি আরব আসতে পাঁচ থেকে আট মাস সময় লেগেছিল।

জাহাজগুলো প্রথমে জাকার্তা বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। পরে ভারত, আরব সাগর এবং লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে জেদ্দা বন্দরে পৌঁছায়। তিনি বলেন, যাত্রাটি বিপদ, চ্যালেঞ্জ এবং ভয়ে পরিপূর্ণ ছিল। তবে, ফরজ ইবাদতপালনের বাধ্যবাধকতার জন্য তার পরিবারের ইচ্ছা ও সাধনা পথের কষ্ট সেভাবে দাগ কাটেনি। বরং এ সময়টা আমাদের আরও শক্তি জুগিয়েছে। কাবা দেখার ইচ্ছাকে প্রবল করেছে। মসজিদে নববিতে যাওয়ার এবং রাসুলের রওজা জিয়ারতের ভালোবাসা সব কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, মক্কা নগরিতে পৌঁছার পর আমাদের শরীর পুরোপুরি সতেজ হয়ে উঠে। আর মসজিদে নববিতে যেয়ে মনে হতো, আত্মা যেন সতেজ হয়ে উঠছে।

মুনির অতীতে হজকে ঘিরে ইন্দোনেশিয়ানদের বিভিন্ন ঐতিহ্য সম্পর্কেও কথা বলেন।

ইন্দোনেশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ হজপালনে সৌদি আরব যান

মরিয়ম মোহাম্মদ মুনির বলেন, হজযাত্রীরা সবাই জাকার্তায় জড়ো হবেন এবং যাত্রার আগে তাদের পরিবারের সদস্যদের বিদায় জানাবেন- এটাই আমাদের রীতি। হজ শেষ করে দেশে ফেরার পর হজযাত্রীদের পরিবার তাদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তন এবং তাদের ধর্মীয় যাত্রার পরিপূর্ণতা উদযাপন করে বিভিন্ন উপহার দিয়ে উষ্ণভাবে স্বাগত জানায়।

মরিয়মের মতে, উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মক্কায় ভ্রমণ এখন অনেক সহজ হয়েছে, যার ফলে পবিত্র নগরীতে উমার ও হজপালনকারীদের সংখ্যা বাড়ছে। অতীতের হজযাত্রাকে বর্তমান যাত্রার সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় ভিন্নতার জগৎ।

তিনি বলেন, এখন মনে হচ্ছে তারা এখানে (ইন্দোনেশিয়া) বসে মক্কায় পৌঁছেছে। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা সৌদি সরকারের একটি অনুকরণীয় অর্জন। এ সময় মুনির সৌদি সরকারের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

জনসংখ্যার নিরিখে ইন্দোনেশিয়া হলো, সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি হজযাত্রী প্রতিবছর হজপালনে সৌদি আরব যান। চলতি বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে ২ লাখ ৪১ হাজার হজযাত্রী সৌদি আরব যাবেন। ১২ মে থেকে দেশটির হজফ্লাইট শুরু হয়েছে।

;

হজের প্রস্তুতিতে ওপরে তোলা হলো কাবার গিলাফ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজের প্রস্তুতিতে ওপরে তোলা হলো কাবার গিলাফ, ছবি: সংগৃহীত

হজের প্রস্তুতিতে ওপরে তোলা হলো কাবার গিলাফ, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র কাবাঘরের কিসওয়া তথা কালো গিলাফ নিচ থেকে ওপরে তিন মিটার তুলে তাতে সাদা কাপড়ে মোড়ানো হয়েছে। কেউ বলেন, কাবাকে ইহরাম পড়ানো হয়েছে, এর মাধ্যমে হজের প্রস্তুতির স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।

বুধবার ২২ মে (১৫ জিলকদ) প্রতিবছরের মতো এবারের হজের প্রস্তুতি হিসেবে তা করা হয়। কিন্তু প্রতিবছর এভাবে কাবার গিলাফের নিচের অংশ ওপরের তোলার কারণ কী, তা অনেকের অজানা।

মূলত হজের সময় পবিত্র মসজিদে হারামে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। কাবা ঘরের কালো গিলাফের কিছু অংশ ওপরে উঠিয়ে রাখা এর অন্যতম। এর বদলে একটি সাদা কাপড় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সেই কাপড়টি আড়াই মিটার চওড়া এবং চার দিকে ৫৪ মিটার দীর্ঘ।

কিসওয়াটি বেশ কয়েকটি পর্যায়ে উত্তোলন করা হয়। প্রথমে চারদিক থেকে কভারের নীচের অংশটি খুলে দেওয়া হয়, ফলে কোণগুলো আলাদা হয়ে যায়। তার পর নীচের দড়ি খুলে ফিক্সিং রিং থেকে সরিয়ে ওপরের দিকে টেনে তোলা হয়।

ইসলামের সূচনাকাল থেকে হজের সময় কাবার গিলাফ সুরক্ষায় এই রীতি চলে আসছে। অতীতে গিলাফের কিছু অংশ হাতের কাছে পেয়ে কিছু অংশ কেটে ফেলার ঘটনা ঘটে।

অনেকে গিলাফকে নিজের উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক বস্তু বলে মনে করে। অনেকে সেই কাপড়ে নিজের নাম লিখে স্বস্তিবোধ করে। অথচ এসব কাজের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তাই হাজিদের ভিড়ের মধ্যেও গিলাফ সুরক্ষিত রাখতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

কাবার গিলাফ ওপরে তোলা হচ্ছে, ছবি: সংগৃহীত

আর খালি স্থানে সাদা কাপড় দিয়ে কাবাঘর মোড়ানো হয়। মূলত এর মাধ্যমে হজের সময় ঘনিয়ে আসার কথা স্মরণ করানো হয়। কাবার দেয়ালের সাদা কাপড় হজের পূর্বপ্রস্তুতির জানান দেয়। হজের শেষ সময় পর্যন্ত সাদা কাপড় থাকে। এরপর আগের মতো পুনরায় কালো গিলাফ নামিয়ে দেওয়া হয়।

প্রতিবছর ১৫ জিলকদ বা এর এক দিন আগে-পরে কাবার গিলাফের অংশ ওপরে তোলা হয়। এরপর থেকেই হাজিদের ভিড় ও তাওয়াফ শুরু হয়। প্রচণ্ড ভিড়েরর কারণে তখন আর গিলাফ ওপরে তোলা সম্ভব হয় না।

কাবার গিলাফ ওপরে তুলতে বুধবার রাতে নিরাপত্তা কর্মীরা পবিত্র কাবাকে ঘিরে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেন। এ সময় বিশেষ প্রযুক্তিগত দল কিসওয়া ওপরে উঠানোর কাজ করে। ১০টি ক্রেনের সাহায্যে ৩৬ জন কর্মী কাজটি সম্পন্ন করেন।

রীতি অনুযায়ী ৯ জিলহজ পর্যন্ত সাদা কাপড় থাকবে। এরপর হজের দিন নতুন গিলাফ লাগানো হয়।

;