মানুষের প্রতি আল্লাহতায়ালার প্রতিশ্রুতি
গোনাহের নানা প্রকার রয়েছে। তবে ব্যক্তিগত পাপের চেয়ে সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও পারিবারিক পর্যায়ের পাপ বেশি মারাত্মক। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পাপ ও কুপ্রথা চালু করা হলে তার প্রভাব হয় আরও বেশি। কোনো কোনো পাপ এমন যে, তার প্রভাব হাজার হাজার বছর ধরে অব্যাহত থাকে। যেমন, ইহুদি ও খ্রিস্ট ধর্ম সত্য ধর্ম হওয়া সত্ত্বেও একদল জ্ঞানপাপী এই ধর্ম দুই ধর্মে বিকৃতি এনেছে যে; হাজার হাজার বছর ধরে শত শত কোটি মানুষ সেই বিচ্যুতি থেকে মুক্ত হতে পারছে না।
এভাবে ধর্মীয়, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে যোগ্য নেতা নির্বাচন করতে ব্যর্থ হলে জনগণকে সেই পাপের দায় ও কুফল বহন করতে হয় যুগ যুগ ধরে। তাই যোগ্য নেতা ও সৎ আর ধার্মিক বন্ধু নির্বাচন পাপ থেকে মুক্ত থাকা ও আত্মোন্নয়নের এক মোক্ষম উপায়।
বলা হয়, সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎসঙ্গে সর্বনাশ। কোনো অবস্থাতেই নেতা নির্বাচনের সময় অবৈধ ও অন্যায্য সুবিধা নেওয়া যাবে না। এমন সুবিধা নেওয়ার কারণে যদি, যোগ্য ও সৎ মানুষ নেতৃত্বে না আসে তাহলে সমাজের কোনো বিপর্যয় দেখা দিলে কিংবা কোনো ক্ষতি হলে এর দায়ভার তাকেও নিতে হবে।
শয়তান সরলমনা মানুষকে অনেক সময় কুমন্ত্রণা দেয় এই বলে যে, নবী-রাসূলদের হুবহু অনুসরণ করা তো আমার মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়! সমাজের সঙ্গে কিছুটা হলেও তো তাল মিলিয়ে চলতে হবে! অত বেশি ভালো মানুষ হতে গেলে তো এ যুগে বেঁচে থাকা সম্ভব না! তাই এক-আধটু সুবিধাবাদের আশ্রয় নেওয়া তেমন দোষের কিছু না; পরে তওবা করে নিলেই হবে! এটা একেবারেই ভুল ধারণা।
ইসলামি স্কলাররা এ বিষয়ে বলেন, আল্লাহতায়ালা দেখবেন, আমরা পাপ থেকে মুক্ত থাকার জন্য যথাসাধ্য ও আন্তরিক চেষ্টা করছি কিনা? যথাসাধ্য ও আন্তরিক চেষ্টার পরও যদি কিছু অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহতায়ালা তা ক্ষমা করবেন। আর সে জন্যই নবী-রাসূলদের আদর্শকে যথাসাধ্য অনুসরণের চেষ্টা করতে হবে। তা ছাড়া মানুষকে মৃত্যু কখন গ্রাস করবে তা কেউ জানি না, তাই পরে তওবা করার সময় পাওয়া যাবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই; যার ভিত্তিতে এখন পাপ করার অবকাশ রয়েছে।
শয়তান মানুষকে নানাভাবে সৎ কাজ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে। শয়তান মানুষকে দারিদ্র্য ও ক্ষমতাসীনদের হাতে কঠোর শাস্তি ভোগের ভয় দেখিয়ে কিংবা ক্ষমতা ও সুবিধা হারানোর ভয় দেখিয়ে পাপে জড়ানোর কুমন্ত্রণা দেয়। অথচ পরিপূর্ণ মুমিন শুধু আল্লাহকেই ভয় করে।
মুমিন মনে করেন, তিনি যদি ন্যায়ের পথে অবিচল থাকেন; তাহলে আল্লাহ তাকে সাহায্য করবেন। তাকে রিজিক দেবেন অকল্পনীয় পন্থায়। এমনকি শেষ পর্যন্ত তাকেই বিজয়ী করবেন যদিও তা অকল্পনীয় মনে হয়।
আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যারা আল্লাহর পথে চলার জন্য (যথাসাধ্য) কঠোর চেষ্টা-সাধনা করে আল্লাহ তাকে অবশ্যই পথ দেখান। আর আল্লাহতায়ালার প্রতিশ্রুতি কোনো ঠুনকো বিষয় নয়।
সূরা মুহাম্মাদের সপ্তম আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য করো তাহলে তিনি তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পদক্ষেপগুলোকে সুদৃঢ় করবেন।’
অন্যদিকে যারা আল্লাহর এই ওয়াদায় বিশ্বাসী নয়, আল্লাহ তাদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন এবং তাদের স্থান জাহান্নামে হবে বলে উল্লেখ করে সূরা ফাতহের ষষ্ঠ আয়াতে বলেন, ‘তিনি কপট বিশ্বাসী পুরুষ ও কপট বিশ্বাসী নারী এবং অংশীবাদী পুরুষ ও অংশীবাদিনী নারীদেরকে শাস্তি দেন, যারা আল্লাহ সম্পর্কে মন্দ ধারণা পোষণ করে। তাদের জন্য মন্দ পরিণাম। আল্লাহ তাদের প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাদেরকে অভিশাপ করেছেন এবং তাহাদের জন্যে জাহান্নাম প্রস্তুত রেখেছেন। তাদের প্রত্যাবর্তন স্থল অত্যন্ত মন্দ।