নবীর স্মৃতিধন্য গামামা মসজিদ
মসজিদে নববীর সবচেয়ে কাছের মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম মসজিদে গামামা। এ মসজিদকে মোসাল্লাও বলা হয়। আরবি শব্দ গামামা অর্থ মেঘমালা। একবার অনাবৃষ্টির সময় হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের নিয়ে এই মসজিদের স্থানে খোলা ময়দানে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়েন। নামাজের পর প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। পরে এই স্থানে মসজিদ নির্মাণ করা হয়।
বর্তমানে মসজিদে নববীর ব্যাপক সম্প্রসারণের প্রেক্ষিতে এটি মসজিদে নববীর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়েছে। মসজিদে নববীর ৬ নম্বর গেইট দিয়ে বের হলেই সামনে পড়ে গামামা মসজিদ। ১৮৬৯ ইংরেজী সালে তূর্কি শাসনামলে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মসজিদের স্থানে সর্বপ্রথম ঈদের নামাজ পড়েন হিজরি ২য় সালে। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নবী করিম (সা.) এ ময়দানকে দুই ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য ঈদগাহ হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
এই মসজিদটি আরও একটি কারণে বিখ্যাত। তাহলো আবিসিনিয়ার নও মুসলিম বাদশাহ নাজ্জাশির মৃত্যুর পর নবী করিম (সা.) তার জানাজার নামাজ এই স্থানে পড়ান। নাজ্জাশি চিঠির মাধ্যমে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দ্বীনের দাওয়াত পেয়ে খ্রিস্টান ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্ম কবুল করেছিলেন।
মসজিদে গামামার খুব কাছে মাত্র ৪০ গজের মধ্যে আরও তিনটি ছোট মসজিদ আছে। ওই মসজিদগুলো হলো- মসজিদে আবু বকর, মসজিদে ওমর এবং মসজিদে হজরত আলী।
ইসলামের প্রাথমিক যুগের এসব মসজিদ এখনও নবী করিম (সা.)-এর স্মৃতিধারণ করে আছে। মসজিদে নববীর আয়তন বিশালতা এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের কারণে এর বাইরের এসব মসজিদে এখন তেমন কাউকে নামাজ আদায় করতে দেখা যায় না।
আগেই বলেছি, মসজিদে গামামার স্থানে কোনো মসজিদ ছিলো না। খলিফা ওয়ালিদ বিন মালেক ৯১ হিজরির দিকে এখানে মসজিদ তৈরি করেন। ৭৪৮ হিজরি থেকে ৭৫২ হিজরি পর্যন্ত দ্বিতীয়বার হুসাইন বিন কালাউন মসজিদে গামামার সংস্কার কাজ করেন। অতপর ৮৬১ হিজরি আল আশরাফির যুগে পুনরায় এই মসজিদের মেরামত কাজ হয়। শেষের দিকে ওসমানি খলিফা সুলতান আব্দুল হামিদ খান এই মসজিদ সংস্কার করেন। এরপর ১৮৬১ সালে সুলতান আব্দুল মাজিদ খান ওসমানি এই মসজিদ সংস্কার করেন। বর্তমানে যে দালান আমরা দেখতে পাই, তা সুলতান আব্দুল মাজিদ খান ওসমানির যুগের।
সর্বশেষ সৌদি সরকার ওসমানি ইমারত বহাল রেখে সে মোতাবেক মসজিদের সংস্কার করেন। তাতে ব্যায় হয় ২ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল। বর্তমানে মসজিদটি মদিনা আওকাফ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।
মসজিদে গামামা পূর্ব ও পশ্চিমে লম্বা। দুই অংশবিশিষ্ট। দক্ষিণ অংশ বড়। একটি গম্বুজ দ্বারা ছাদ। উত্তর দিকে ছোট ছোট পাঁচটি গম্বুজ রয়েছে। উত্তর দিকে দু’টি লোহার গম্বুজ দ্বারা প্রবেশদ্বার। মসজিদটির দৈর্ঘ ৩২.৫ মিটার ও প্রস্থ ২৩.৫ মিটার, মোট আয়তন ৭৬৩.৭ বর্গমিটার। উচ্চতা ১২ মিটার। প্রাচীর ১.৫ মিটার প্রস্থ। পূর্বের দিকে পাথর দিয়ে সাজানো ছোট একটি মিনারা মসজিদের সৌর্ন্দয্যকে আরও মনোরম করেছে।