কোরআন মানব জীবনের মহান পথপ্রদর্শক



ইসলাম ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
কোরআন মানব জীবনের মহান পথপ্রদর্শক, ছবি: সংগৃহীত

কোরআন মানব জীবনের মহান পথপ্রদর্শক, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

যা বারবার পড়তে হয়, তাকেই কোরআন বলা হয়। ‘কোরআন’ আরবি শব্দ। কোরআন যেহেতু বারবার পঠিত হয়, তাই এর এরূপ নামকরণ। অথবা কোরআন অর্থ সংযুক্ত করা। যেহেতু এক আয়াত অন্য আয়াতের সঙ্গে এবং এক সূরা অন্য সূরার সঙ্গে সংযুক্ত করে কোরআন শরিফকে গ্রন্থে রূপদান করা হয়েছে, তাই এরূপ নামকরণও সার্থক হয়েছে।

ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের সুদীর্ঘ ২৩ বছর জীবনকালে হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন সময় প্রয়োজন অনুযায়ী যে বাণী অবতীর্ণ করেছেন, তার সংকলিত রূপই হলো- কোরআন। কোরআন সম্পূর্ণ অবিকৃত অবস্থায় বর্তমানের মানবজাতির নিকট মজুত আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে- ইনশাআল্লাহ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি কোরআন নাজিল করেছি এবং আমিই এর হেফাজতকারী।’

তথ্য-প্রযুক্তির চাকচিক্যময় চোখ ধাঁধানো এ যুগেও যে গ্রন্থটি সম্পর্কে বিশ্ববাসীর বিস্ময়ের অন্ত নেই তার নাম কোরআনে কারিম। কোরআন একাধারে বিশ্ব পরিচালনার সংবিধান, বিজ্ঞান গ্রন্থ, সমাজ বিজ্ঞান এবং একটি আধ্যাত্মিক গ্রন্থ। জ্ঞানের এমন কোনো শাখা আজও উদ্ভব হয়নি, যে সম্পর্কে কোরআনে উল্লেখ নেই। কিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতির সব চাহিদা ও জিজ্ঞাসার জবাব এই কোরআন।

কোরআনের ব্যবহারিক পরিচয়
সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব: কোরআন ১০৪ খানা আসমানি কিতাবের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ বিধান গ্রন্থ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘এটা অতীতের সব কিতাবের সত্যতা প্রমাণকারী।’

পরিপূর্ণ জীবন বিধান: আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আজকের এই দিনে আমি দ্বীনকে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিলাম।’ বস্তুত কোরআন নাজিল শেষ করার পরই আল্লাহ এই ঘোষণা প্রদান করেন। কিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতির জীবন সমস্যার সকল সমাধান কোরআনে রয়েছে।

সর্বশেষ আসমানি কিতাব: কোরআন নাজিলের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা দ্বীনকে মানব জাতির জন্য পূর্ণাঙ্গ রূপদান করেছেন। বন্ধ করে দিয়েছেন নবুওয়ত ও আসমানি কিতাবের দরজা সুতরাং এটা সর্বশেষ খোদায়ী বিধান গ্রন্থ।

ইসলামি আইনের উৎস: ইসলামি আইন হচ্ছে, বিশ্বমানবতার জন্য সর্বাপেক্ষা নিরপেক্ষ ও ইনসাফপূর্ণ আইন। আর এর উৎস হচ্ছে- কোরআনে কারিম।

কোরআনের ভাষাগত মাহাত্ম্য
কাব্যিক অনুরণন: কোরআনের ভাষার কাব্যিক অনুরণন সবচেয়ে আকর্ষণীয়। অতি শক্তিশালী ভাবসম্পন্ন এবং গুরুগম্ভীর বিষয় ও ছন্দের ঝঙ্কারে এর ভাষা হৃদয়গ্রাহী হয়ে ওঠে। পৃথিবীর আর কোনো গ্রন্থে কাব্যিক সৌন্দর্য ও শক্তিশালী মতবাদের এমন সহাবস্থান লক্ষ্য করা যায় না।

আবেদনময় ভাষা: কোরআনের ভাষা সহজেই মনকে প্রভাবিত করে। এর ভাষার যে শক্তিশালী মিল, বন্ধনগত আবেদন রয়েছে তা অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। তবে যে ব্যাপারটি লক্ষণীয়, তা হলো- ভাষার বন্ধন শক্তিশালী করতে গিয়ে কখনও ব্যাকরণের নিয়ম লঙ্ঘিত হয়নি। মরিস বুকাইলি তাই বলেছেন, ‘কোরআন ভাষাবিদদের জন্য শব্দকোষ আর ব্যাকরণবিদদের জন্য ব্যাকরণ গ্রন্থ।’

উৎকৃষ্ট সাহিত্যমানসম্পন্ন ভাষা: আরবের তৎকালীন সমস্ত কবিভাষ্যবিদরা মিলেও কোরআনের একটি আয়াতের সমতুল্য আয়াত রচনায় সক্ষম হননি। এর আঙ্গিক সৌন্দর্য ও অভ্যন্তরীণ সুষমায় বিশ্বের অসংখ্য খ্যাতনামা সাহিত্যিক হতবাক হয়েছেন। ছন্দবদ্ধ পদ্য ও গদ্যের অপূর্ব সমাহারে ভরপুর এই গ্রন্থ সর্বকালের অপ্রতিদ্বন্দ্বী সাহিত্য।

মানবজীবনের পথপ্রদর্শক হিসেবে কোরআন
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘এই কিতাবে সব মানুষের জন্য ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় স্থায়ী কার্যকারিতা ও হক না হকের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। আর পথনির্দেশ ও নসিহত রয়েছে মুত্তাকিদের জন্য।’

নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
ব্যক্তিগত জীবনে কোরআন: মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের যাবতীয় দিক যথা তার আচরণ, তার জীবনযাত্রা, তার সামগ্রিক জীবনযাপনের প্রণালী কোরআনে কারিমে রয়েছে।

পারিবারিক জীবনে কোরআন: পরিবারের গঠন, পরিবারের সদস্যদের দায়িত্ব-কর্তব্য ও তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক সম্বন্ধে কোরআনে কারিমে আলোচনা রয়েছে।

সমষ্টিগত জীবনে কোরআন: বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের গঠনরীতি, এগুলোর সদস্য হিসেবে মানুষের আচরণ কেমন হবে সে ব্যাপারে কোরআনে কারিমে নির্দেশিকা রয়েছে।

সাংস্কৃতিক জীবনে কোরআন: মুসলিম সংস্কৃতির কাঠামো, সংস্কৃতির উপাদান, সাংস্কৃতিক পবিত্রতা ইত্যাদির বিষয়েও কোরআনে নির্দেশ আছে।

ধর্মীয় জীবনে কোরআন: ধর্মের মূলনীতি, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, ধর্মের গঠন ইত্যাদি কোরআনে কারিমে আলোচিত হয়েছে বিশদভাবে।

রাজনৈতিক জীবনে কোরআন: রাষ্ট্রীয় জীবন, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, রাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিবেশের প্রকৃতি কেমন হবে সে ব্যাপারেও কোরআনে কারিমে নির্দেশ আছে। তেমনি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলদের দায়িত্ব স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে।

অর্থনৈতিক জীবনে কোরআন: ইসলামি অর্থব্যবস্থার গঠন-প্রকৃতি, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের গঠনসহ সব অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের প্রকৃতি সম্পর্কে কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক জীবনে কোরআন: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসলামি রাষ্ট্রের ভূমিকা, আন্তর্জাতিক নীতি কেমন হবে সে ব্যাপারেও কোরআনে নির্দেশিকা রয়েছে।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায়, কোরআন মাজিদ এমন এক পরিপূর্ণ বিধান গ্রন্থ যা মানবজীবনের সব দিক নিয়ে আলোচনা করেছে এবং মানুষের জীবন প্রণালী সম্পর্কে সঠিক দিক-নির্দেশনা দেয়। এ কারণে ইসলামকে আল্লাহ দীন হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং এটি তথাকথিত ধর্মের মতো কোনো ধর্ম নয়।

   

রোজার প্রথম সপ্তাহে মসজিদে নববিতে ৫২ লাখ মুসল্লি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ আদায়ের দৃশ্য, ছবি : সংগৃহীত

মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ আদায়ের দৃশ্য, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরবে পবিত্র রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহ অতিবাহিত হয়েছে। এ সময়ে মদিনার মসজিদে নববিতে ৫২ লাখের বেশি মুসল্লি উপস্থিত হয়েছে। তারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগিতে অংশ নিয়েছেন।

মসজিদে নববি তত্ত্বাবধানকারী জেনারেল অথরিটি বিভাগ রমজান মাসে মুসল্লিদের পরিষেবাবিষয়ক এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, রমজানের প্রথম সপ্তাহে ৪১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৮ জন পবিত্র রওজা শরিফে নবী কারিম (সা.)-কে সালাম নিবেদন করেছে। একই সময়ে রওজা শরিফে নামাজ পড়েছেন ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৭ জন পুরুষ ও ১০ লাখ সাত হাজার ৬৯৭ জন নারী। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ এ স্থানে শৃঙ্খলাপূর্ণ ব্যবস্থাপনা নারী-পুরুষ সব মুসল্লির যাতায়াত সুনিশ্চিত করা হয়।

তাতে আরও বলা হয়, গত সপ্তাহে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ১০ হাজার ৪৮২ জন বিশেষ পরিষেবা পেয়েছেন।

তা ছাড়া বিভিন্ন দেশের ১০ লাখ ১০ হাজার ৪১২ জনকে একাধিক ভাষায় যোগাযোগ সেবা দেওয়া হয়। আর মসজিদের লাইব্রেরিতে শিক্ষামূলক পরিষেবা থেকে উপকৃত হয়েছেন ১২ হাজার ২৭৯ জন এবং মিউজিয়ামে চার হাজার ৫৬৭ জন পরিদর্শন করেছেন।

এদিকে মসজিদে আসা এক লাখ ৪৯ হাজার ১৪৯ জন দর্শনার্থীকে নানা রকম উপহারসামগ্রী দেওয়া হয় এবং মসজিদের সমন্বিত পরিষেবার মাধ্যমে ছয় লাখ ৪৮ হাজার ৪১১ জনকে সেবা দেওয়া হয়। তা ছাড়া এক লাখ ৪৪ হাজার জমজম পানির বোতল বিতরণ করা হয় এবং রোজাদারদের মধ্যে ১৫ হাজার ২৪৩টি ইফতারির খাবার বিতরণ করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে ২৮ কোটির বেশি মুসল্লি পবিত্র মসজিদে নববিতে আগমন করে। একই বছর এক কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি মুসলিম ওমরাহ পালন করে, যা ছিল সৌদি আরবের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যা। আগামী হজ মৌসুম শুরুর আগেই দুই কোটির বেশি মুসল্লি ওমরাহ পালন করবে বলে আশা করছে সৌদি আরব।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ জুন পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হবে।

;

যেসব কারণে রোজা নষ্ট হয়ে যায়



মুফতি মো. আবদুল্লাহ
রোজার মাসয়ালা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন, ছবি : সংগৃহীত

রোজার মাসয়ালা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পবিত্র মাহে রমজানের ফরজ রোজা আদায় করছেন। কিন্তু কি কারণে রোজার পবিত্রতা নষ্ট হয়, কি কারণে রোজা ভঙ্গ হয় এবং কি কারণে ভঙ্গ হয় না, তা অনেকের কাছে অজানা। আজকে এ জাতীয় মাসয়ালা নিয়ে আলোচনা করা হলো-

রোজা নষ্ট হওয়ার কারণসমূহ
১. কানে ও নাকে ঔষধ ঢেলে দেওয়া।
২. ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করা।
৩. কুলি করার সময় গলার ভেতরে পানি চলে যাওয়া।
৪. কোনো নারীর সঙ্গে আলিঙ্গন বা মাখামাখিতে বীর্যপাত হয়ে যাওয়া।
৫. এমন কোনো বস্তু গিলে ফেলা যা সাধারণত খাওয়া হয় না। যেমন কাঠ, লোহা, কাঁচা গম ইত্যাদি।
৬. লোবান বা উদ কাষ্ঠ ইত্যাদির ধোঁয়া ইচ্ছাকৃতভাবে নাক দিয়ে বা কণ্ঠনালীর ভেতরে টেনে নেওয়া; বিড়ি, সিগারেট ও হোক্কা পান করারও একই বিধান।
৭. ভুলে পানাহার করার পর এমনটি ধারণা করে যে, আমার রোজা নষ্ট হয়ে গেছে; অতপর পানাহার করা।
৮. রাত বাকী আছে মনে করে সুবহে সাদেকের পর পানাহার করা।
৯. সূর্য ডুবে গেছে মনে করে সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করা। উল্লেখ্য, এসব ক্ষেত্রে রোজা ভেঙে যায় এবং শুধু রোজা কাজা করতে হয়; কাফফারা আবশ্যক হয় না।
১০. ভুলে নয়, জেনে-বুঝে সুস্থ-সবল অবস্থায়, কোনো ওজর-সমস্যা ব্যতীত দিনের বেলায় পানাহার করলে অথবা স্ত্রী-সঙ্গম করলে, সেই রোজার কাজাও করতে হয় এবং কাফফারাও প্রদান করতে হয়। ‘কাফফারা’ হলো, একটি ক্রীতদাস মুক্তকরণ; অথবা একাধারে ৬০টি রোজা পালন করা। আর যদি রোজা রাখার শক্তি না থাকে, সেক্ষেত্রে ৬০জন মিসকিনকে দু’বেলা পেটপুরে খাবার খাওয়াতে হবে। এ যুগে যেহেতু শরিয়তসম্মত ক্রীতদাস বাস্তবে নেই, সে কারণে কাফফারার ক্ষেত্রে শেষোক্ত দু’টির যেকোনো একটি পালন করতে হবে।

যেসব কারণে রোজা মাকরূহ হয়
১. রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় অপ্রয়োজনে কোনো বস্তু চিবানো অথবা লবণ ইত্যাদি জিহবায় দিয়ে থু থু ফেলে দেওয়া; টুথপেস্ট বা মাজন বা কয়লা দ্বারা দাঁত মাজা বা পরিস্কার করা।
২. সারাদিন গোসল ফরজ অবস্থায় অপবিত্র কাটিয়ে দেওয়া।
৩. একান্ত প্রয়োজন ছাড়া শিঙ্গা লাগানো এবং দূর্বল হয়ে পড়ার ভয় থাকলে নিজ শরীর থেকে অন্যের জন্য রক্তদান করা মাকরূহ; কিন্তু তাতে রোজা নষ্ট হয় না।
৪. রোজা অবস্থায় গীবত করা তথা কারও অবর্তমানে তার দোষ বর্ণনা করা রোজার ক্ষেত্রে মাকরূহ বটে; কিন্তু এ গীবত কর্মটি অন্যতম একটি হারাম কাজ ও কবিরা গোনাহ বটে। মাহে রমজানে এর পাপ আরও অনেক গুণ বেড়ে যায়।
৫. রোজা অবস্থায় ঝগড়া-বিবাদ, গালি-গালাজ করা; হোক তা কোনো মানুষের সঙ্গে বা কোনো জীবজন্তুকে বা কোনো প্রাণহীন জড় বস্তুকে; এসব কারণেও রোজা মাকরূহ হয়ে যায়।

যেসব কারণে রোজা নষ্ট হয় না, মাকরূহও হয় না
১. মিসওয়া করা।
২. মাথায় বা মোচ-দাড়িতে তেল ব্যবহার করা।
৩. চোখে ঔষধ বা সুরমা দেওয়া।
৪. আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৫. গরম ও পিপাসার কারণে গোসল করা।
৬. যেকোনো রকম ইনজেকশন বা টিকা দেওয়া।
৭. ভুলবশত পানাহার করা।
৮. অনিচ্ছাবশত গলায় ধোঁয়া বা ধুলোবালি বা মাছি ইত্যাদি প্রবেশ করা।
৯. কানে পানি দেওয়া (২/১ ফোটা) অথবা অনিচ্ছাকৃত প্রবেশ করা।
১০. অনিচ্ছাকৃত বমি হওয়া।
১১. শোয়া অবস্থায় স্বপ্নদোষ হয়ে যাওয়া।
১২. দাঁত হতে রক্ত বের হওয়া এবং তা গলা অতিক্রম না করা।
১৩. ঘুমের মধ্যে বা সহবাসের কারণে রাতে গোসল ফরজ হয়েছিল, অথচ সুবহে সাদেকের পূর্বে গোসল করা হয়নি; আর এমতাবস্থায় রোজার নিয়ত করে নেওয়া হয়েছে; তাতেও রোজার কোনো ক্ষতি নেই।

লেখক : মুফতি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, গবেষণা বিভাগ।

;

অশ্লীলতামুক্ত সাইবার গঠনে ১৯ বছর বয়সী আবদুল রহমানের স্বপ্ন



ফাতেমা বিনতে আশরাফ
রাইডার্স ক্রিয়েশন ও রাইডার্স মার্টের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল রহমান, ছবি : সংগৃহীত

রাইডার্স ক্রিয়েশন ও রাইডার্স মার্টের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল রহমান, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আমাদের জীবন এখন অনলাইননির্ভর। ছোট থেকে বড় সবধরনের কাজ এখন অনলাইনে করা যায়। এ জন্য আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রতিনিয়ত নানা সেবা নিচ্ছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে সবচেয়ে বিব্রতকর বিষয় হলো- অনলাইনের বিস্তৃত অঙ্গনজুড়ে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি। তাই মাদরাসাশিক্ষার্থী আবদুল রহমান (Abdul Rahman) স্বপ্ন দেখেন এ অঙ্গনকে অশ্লীলতামুক্ত করে গড়ে তোলা। সে লক্ষ্যে তিনি কাজও শুরু করেছেন।

আবদুল রহমান (Abdul Rahman) রাইডার ভাউ অফিসিয়াল, রাইডার্স ক্রিয়েশন এবং রাইডার্স মার্টের প্রতিষ্ঠাতা। এটি বাংলাদেশের একটি সুপরিচিত আইটি সলিউশন কোম্পানি। তার তীক্ষ্ণ ব্যবসায়িক দক্ষতা এবং উচ্চমানের পরিষেবা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে, তিনি সফলভাবে কোম্পানিটিকে আইটি সমাধান এবং পরিষেবা প্রদানকারী একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলেছেন।

পাশাপাশি তিনি আরও একটি নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। নাম রাইডার্স ফাউন্ডেশন। খুব শিগগির-ই এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন আবদুল রহমান। তার উদ্দেশ্য, এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজের অসহায় ও দুস্থ মানুষের সেবা করা। অভাবে কেউ কষ্ট না পাক এবং সবার মুখে হাসি থাকুন- এই প্রত্যাশা থেকেই তিনি এটি গড়ে তুলেছেন।

আবদুল রহমান (Abdul Rahman) বেশ কয়েকটি অলাভজনক সংস্থার সঙ্গে কাজ করছেন, ছবি : সংগৃহীত

উদ্যোক্তা প্রচেষ্টার পাশাপাশি, আবদুল রহমান (Abdul Rahman) সোশ্যাল মিডিয়া এবং সাইবার নিরাপত্তায় দক্ষতার জন্যও স্বীকৃত। তিনি পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই সেক্টরে কাজ করছেন এবং তার অশ্লীলতামুক্ত অনলাইন গড়ার বিষয়টিসহ তার এসব কাজকর্ম নিয়ে জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া এবং সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে আবদুল রহমানের সুগভীর জ্ঞান তাকে বিশ্বব্যাপী সাইবার অঙ্গনে কাঙ্ক্ষিত স্পিকার হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে।

ব্যবসায়িক উদ্যোগের পাশাপাশি আবদুল রহমান তার এ অঙ্গনের মানুষদের সহযোগিতার জন্যও নিবেদিত। তিনি বেশ কয়েকটি অলাভজনক সংস্থার সঙ্গে কাজ করছেন এবং অন্যদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে তার দক্ষতা এবং জ্ঞান ব্যবহার করে প্রশংসিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

আবদুল রহমান একজন বাংলাদেশী উদ্যোক্তা, সোশ্যাল মিডিয়া সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ। পিরোজপুরে তার জন্ম। তিনি তার কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ় সংকল্প এবং উদ্ভাবনের প্রতি আবেগের মাধ্যমে আইটি এবং সোশ্যাল মিডিয়া শিল্পে নিজের একটি অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছেন।

আবদুল রহমানের কে.এম. লতীফ ইনস্টিটিউশন থেকে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট রয়েছে। একই স্কুল থেকে মাধ্যমিক সার্টিফিকেট, যেখানে তিনি বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত করেছেন। বর্তমানে তিনি মাদারীপুর ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার থেকে কোরআন-হাদিসে স্নাতকোত্তর করছেন।

সামগ্রিকভাবে আবদুল রহমান তার বুদ্ধিমত্তা, দৃঢ়তা এবং উদ্ভাবনের প্রতি তার যে আবেগ, তা দিয়ে সমাজে অবদান রাখতে চান এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি; অশ্লীলতামুক্ত অনলাইন গড়ে আগামী দিনগুলোতে সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার স্বপ্ন দেখেন।

;

রমজানে দশ কাজ থেকে বিরত থাকা



আহমদ যাকারিয়া, অতিথি লেখক, ইসলাম
রোজা একটি ফরজ ইবাদত, ছবি : সংগৃহীত

রোজা একটি ফরজ ইবাদত, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের মুসলমানরা পবিত্র রমজান মাস পালন করছেন। রোজা একটি ফরজ ইবাদত। এই ইবাদতটি যেনো সুন্দরভাবে আদায় করা যায়, এ জন্য সবার সর্বাত্মক চেষ্টা করা দরকার। ইসলামি স্কলারদের মতে, রমজানের ১০টি কাজ থেকে বিরত থাকা দরকার; তাহলে রোজা হবে পরিপূর্ণ। ওই দশ কাজ হলো-

সেহরি না খাওয়া : অনেকে সেহরি খান না, অনেকে আবার আগ রাতে খেয়েই শুয়ে পড়েন। এটা সুন্নতের পরিপন্থী। ইসলামে সেহরি খাওয়ার আলাদা গুরুত্ব রয়েছে, কারণ ইহুদি ও খ্রিস্টানরা সেহরি খায় না। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমাদের ও আহলে কিতাবিদের (ইহুদি ও খ্রিস্টান) রোজার মাঝে পার্থক্য হলো- সেহরি গ্রহণ।’ -সহিহ মুসলিম : ২৬০৪

বিলম্বে ইফতার করা : রোজার পূর্ণ সওয়াব পাওয়ার জন্য বিলম্বে ইফতার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সাহাবি হজরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, হরজত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দীন বিজয়ী হবে, যে যাবৎ মানুষ দ্রুত ইফতার করবে। কারণ, ইহুদি-নাসারারা তা বিলম্বে করে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২৩৫৫

লাইলাতুল কদর তালাশ না করা : পবিত্র রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ -সুরা কদর : ৪

হরজত রাসুলুল্লাহ (সা.) (রমজানের) শেষ দশদিন লাইলাতুল কদর তালাশ করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশদিনের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত খোঁজ।’ -সহিহ বোখারি : ২০২০

মিথ্যা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা : একজন রোজাদার মিথ্যা কথা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না, তার রোজা রেখে শুধু পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ -সহিহ বোখারি : ৬০৫৭

সুন্নত ত্যাগ করা : আমাদের প্রত্যেকটি আমল হবে সুন্নত মোতাবেক। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এমন অনেক রোজাদার আছে, যার রোজা থেকে প্রাপ্তি হচ্ছে শুধু ক্ষুধা ও তৃষ্ণা। তেমনি কিছু নামাজি আছে যাদের নামাজ কোনো নামাজই হচ্ছে না। শুধু যেন রাত জাগছে।’ -মুসনাদে আহমাদ : ৮৮৪৩

দান-সদকা না করা : পুণ্য অর্জনের মাস রমজান। এ মাসে রোজা-নামাজ ইত্যাদির পাশাপাশি দান-সদকার মাধ্যমেও ফজিলত অর্জন করতে হবে। বেশি বেশি দান-সদকা করার চেষ্টা করতে হবে। এতিম, বিধবা ও গরীব-মিসকিনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। যাদের ওপর জাকাত ফরজ, তাদের জন্য হিসাব করে এ মাসে জাকাত দেওয়া উত্তম। কেননা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এ মাসে বেশি বেশি দান-খয়রাত করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল, আর রমজানে তার এ দানশীলতা আরও বেড়ে যেত।’ -সহিহ বোখারি : ১৯০২

অপচয় ও অপব্যয় করা : প্রয়োজনের অতিরিক্ত অপচয় করা থেকে বিরত থাকা। অনেকে রমজান মাসে ইফতার ও সেহরিতে এমন খরচ করেন- যার প্রয়োজন নেই। কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘হে বনী আদম! তোমরা প্রতি নামাজে তোমাদের সাজসজ্জা পরিধান করো এবং খাও, পান করো ও অপচয় করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ -সুরা আরাফ : ৩১

তাড়াহুড়ো করে কোরআন খতম করা : শুধু খতম দেওয়া বা পড়া শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করে কোরআন মাজিদ তেলাওয়াতা করলে কোরআনের হক আদায় হয় না। বিশেষ করে খতম তারাবিতে খতম শেষ করা বা ২০ রাকাত তারাবি শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করে কোরআন পড়া। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কোরআন সুন্দর উচ্চারণে পড়ে না, সে আমার উম্মতের মধ্যে শামিল নয়।’ -সহিহ বোখারি : ৭৫২৭

ফরজ নামাজ আদায়ে অলসতা করা : রোজা পালনের সঙ্গে সঙ্গে ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হবে। অনেকে ফরজ নামাজ আদায়ে উদাসীন থাকেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়।

দুনিয়ার ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা: ইবাদত-বন্দেগি মাস রমজানে বেশি বেশি আমলের কথা রয়েছে। কিন্তু আমরা অনেকেই ব্যস্ত থাকি দুনিয়ার নানা কাজে। এটা কাম্য নয়। এ মাসে বেশি বেশি ইবাদত, দোয়া-দরুদ ও তওবা-ইস্তেগফার করা উচিত।

;