সিঙ্গাপুরের সুলতান মসজিদ গৃহহীনদের থাকার জায়গা দিল
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুরের মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ মুসলমান। পুরো সিঙ্গাপুরে ৭০টির মতো মসজিদ রয়েছে। তন্মধ্যে সুলতান মসজিদকে বিবেচনা করা হয় সিঙ্গাপুরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ হিসেবে। মসজিদটি নির্মাণ হওয়া থেকে এখন পর্যন্ত অপরিবর্তিত অবস্থায় রয়েছে। অর্থাৎ যেভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল এর মূল ডিজাইনে কোনো ধরনের মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়নি। এর নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৮২৪ সালে এবং শেষ হয় ১৮২৬ সালে।
বহু বছরের প্রাচীন এই মসজিদ কর্তৃপক্ষ দেশটির গৃহহীন মানুষদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। মসজিদ কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে, ওই দেশের গৃহহীন মানুষের অস্থায়ীভাবে থাকার জায়গা দেবেন তারা। সিঙ্গাপুরে অসহায় মানুষের জন্য দেশটির প্রথম কোনো মসজিদ এমন ঘোষণা দিল।
ঘোষণামতে, গৃহহীনরা রাতে ঘুমানোর জন্য মসজিদে স্থান পাবেন। মসজিদের ডানপাশে অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ের বেজমেন্টে গৃহহীনরা রাত ১০টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান ও ঘুমানোর সুযোগ পাবেন।
‘দ্য পাটনার্স এংগেজিং অ্যান্ড এমপাওয়ারিং স্লিপারস নেটওয়ার্ক’ (পিয়ারস) নামের একটি সংস্থা দুইশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদ এবং দেশটির সোশাল ও ফ্যামেলি ডেভেলপমেন্ট (এমএসএফ) মন্ত্রণালয়ের আওতায় এ কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
দ্য স্ট্রেইট টাইমস জানিয়েছে, সংস্থাটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে গৃহহীন জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করবে। যাতে গৃহহীনরা স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের দেওয়া সহযোগিতা গ্রহণ করতে পারেন।
সুলতান মসজিদের সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আইজুদ্দিন জামালউদ্দিন জানিয়েছেন, ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি গৃহহীন মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসা আমাদের দায়িত্ব। তাই তাদের থাকার জন্য মসজিদের মূল ভবনের একটু দূরে এসব মানুষের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের এই উদ্যোগ মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিদের কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না। কারণ গৃহহীন মানুষের থাকার ঘরে প্রবেশের জন্য সেখানকার অন্য আরেকটি প্রবেশপথ রয়েছে।
মসজিদের বেজমেন্টে পাঁচজনের থাকার মতো রুম রয়েছে। যেখানে নতুন ফ্যান, পরিস্কার বালিশ এবং আরামদায়ক বিছানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া রুমের ভেতরে রয়েছে বোতলজাত পানিরও সুব্যবস্থা আছে।
তবে এখানে থাকার জন্য আসা গৃহহীনদের মসজিদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের কাছে নিবন্ধন করতে হবে। জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই আশ্রয়কেন্দ্রে শুধুমাত্র পুরুষরা থাকতে পারবেন।
মসজিদ কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা রয়েছে, ভবিষ্যতে এই উদ্যোগটি আরও বিস্তৃত আকারে করার।
চাকচিক্য আর বিলাসিতার ছোঁয়ায় সিঙ্গাপুরকে রঙিন শহর বলা হলেও এখানে রয়েছে হাজারও মানুষের নীরব কান্না। দেশটির অনেকেরই নেই মাথা গুজার মতো কোনো ঠাঁই। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, সিঙ্গাপুরে হাজারও মানুষ রাতে রাস্তার পাশে ফুটপাতে ঘুমিয়ে রাত কাটিয়ে দেন।
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের একটি জরিপে দেখা গেছে, এক হাজারেও বেশি মানুষ প্রতিনিয়ত সিঙ্গাপুরের রাস্তায় ঘুমিয়ে থাকেন। যাদের নেই কোনো ঘর, নেই কোনো স্বচ্ছল জীবনযাপনের ন্যূনতম সক্ষমতা।
রাস্তায় ঘুমানো এসব মানুষের বেশিরভাগই পুরুষ। যারা দীর্ঘ ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে এমন গৃহহীন রয়েছেন। আর এর কারণ হলো, কর্মহীনতা, অল্প বেতনের চাকরি ও পারিবারিক সমস্যা। এই লোকদের বেশিরভাগ অস্থায়ীভাবে বিভিন্ন কাজ করে জীবন নির্বাহ করেন।