ক্রোয়েশিয়ার ব্যতিক্রমী নকশার রিজেকা মসজিদ



মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম, বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার উত্থান অনেকটা রূপকথার মতো। ইউরোপের দেশটি টানা দ্বিতীয়বারের মতো ট্রাইবেকারে জয়ী হয়ে ১৯৯৮ সালের পর আবারও সেমিফাইনালের স্বাদ পেলো। তাদের এ জয়ে রাজধানী জাগ্রেবে উৎসবের আমেজ দেখা গেছে।

৫৬ হাজার ৫৯৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশ ক্রোয়েশিয়ায় ২০১৫ সালে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন কোলিনদা গ্রেবার কিতারোভিচ। তিনি ক্রোয়েশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর রিজেকা’র বাসিন্দা।

ক্রোয়েশিয়ার মোট জনসংখ্যা ৪৫ লাখের মতো। তন্মধ্যে মুসলমান ৭০ হাজারের কাছাকাছি। ইসলাম ক্রোয়েশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্ম। দেশটিতে বসবাসকারী মুসলিমদের বেশিরভাগ আলবেনিয়া, বসনিয়া ও হারজেগোভিনা থেকে আগত। ক্রোয়েশিয়ায় ইসলামের আগমন অটোম্যান আমলে হলেও দেশটিতে প্রথম মসজিদ প্রতিষ্ঠিত গুঞ্জায় ১৯৬৯ সালে।

/uploads/files/hhqYpes0Kp5MCBSlQE6Rs5BRvNgyJNYTkgCV5Jsn.jpeg

রাজধানীতে অবস্থিত জাগ্রেব মসিজদ দেশের বৃহত্তম মসজিদ। এটি ১৯৮৭ সালে নির্মিত হয়। সরকার অনুমোদিত বেশকিছু নামাজখানা ছাড়া আরও ১১টি মসজিদ রয়েছে ক্রোয়েশিয়ায়। এর অন্যতম একটি হলো- ক্রোয়েশিয়ার উপকূলীয় শহর রিজেকা ইসলামিক সেন্টার ও মসজিদ।

মসজিদটি বিশ্বের অন্যতম সৌন্দর্যমণ্ডিত একটি মসজিদ। এর স্থাপত্যশৈলী সহজেই যেকোনো মানুষের মন কাড়ে। রাতে মসজিদটিকে আরও বেশি সুন্দর দেখায়।

দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদের নকশা করেছেন ক্রোয়েশিয়ান স্থপতি দসান দজমোঞ্জ (১৯২৮-২০০৯)। তিনি মেটাল ভাস্কর্য নিয়ে বেশি কাজ করেন, এ জন্যই তিনি বিখ্যাত। তিনি সর্বপ্রথম রিজেকা ইসলামিক সেন্টারের একটি সংক্ষিপ্ত জিজাইন করেন। পরে স্থাপত্যবিদ ডার্কো ভ্লাও ভিও এবং ব্রংকো ভুনিভোইচ তার নকশায় কিছুটা পরিবর্তন করে নতুন ডিজাইন করেন। এখন যে নকশার ওপর মসজিদ কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠিত।

নতুন ডিজাইনে দেখা যাচ্ছে, মসজিদের গম্বুজগুলো প্রচলিত অন্য গম্বুজের মতো নয়। দূর থেকে দেখলে মনে হবে সিলভার কালারের গম্বুজগুলো ডিমের ভাঙা খোসার মতো। এগুলো মাটি থেকে উত্থিত হয়ে একটি অন্যটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে। গম্বুজের ওপরে আলাদা কোনো কিছু ব্যবহার করা হয়নি।

মসজিদ ভবন থেকে একটু দূরে অবিস্থত মসজিদের একমাত্র মিনারটি বেশ দৃষ্টিনন্দন। ছাই রঙের পিলারকে মেটালিকের পাত দ্বার মুড়িয়ে মিনারটি নির্মিত। মিনারে শিখরে প্রচলিত মিনারের মতো একটি সূক্ষ্ণফলা ও চাঁদের মতো দু’টো গোলাকার স্বর্ণালী পিণ্ড রয়েছে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, মিনারটি আপনমনে খেলছে খোলা আকাশে। এটাই শিল্প, শিল্পের সৌন্দর্য।

/uploads/files/0tXjMKgbgRrJVSQaQ5YsPcrMZiR0jbyqUEE9Vx7I.jpeg

মসজিদের ভেতরের নকশা খুবই মনোমুগ্ধকর ও অসাধারণ। যা মুসল্লিদের মনে এনে দেয় আধ্যাত্মিক ও শান্ত এক অনুভূতি। একটিমাত্র প্রবেশপথ ছাড়া মসজিদটির আর কোনো প্রবেশপথ নেই, নেই কোনো জানালাও। মসজিদের গম্বুজগুলোর ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে আলো-বাতাস প্রবেশের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা।

এই মসজিদ কমপ্লেক্স স্থাপনের ইতিহাস বেশ লম্বা। রিজেকার মুসলমানরা ১৯৬৮ সালে এখানে প্রথম মসজিদ স্থাপনের প্রস্তাব করেন। পরে তাদেরকে ১০ হাজার বর্গমিটার জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখানে অস্থায়ী স্থাপনায় মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়।

অবশেষে নানা ঘটনা-পরিক্রমা শেষে এই ডিজাইনে মসজিদ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয় ২০০৮ সালে, আর তা শেষ হয় ২০১৩ সালে।

ক্রোয়েশিয়ার মসজিদগুলোতে ইসলাম ও কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। মুসলিমদের বিয়ে, ইসলামি বিভিন্ন অনুষ্ঠান এসব মসজিদকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয়। ক্রোয়েশিয়ায় তাবলিগের কাজ চলে, নারীরা বোরকাসহ চলাফেরা করতে পারেন। প্রায় সব শপিংমলেই হালাল খাবারের দোকান রয়েছে।

হজ বিষয়ে জানতে আরও পড়ুন

** হজ: আল্লাহপ্রেমিকদের মিলনমেলা

** হিসাব রক্ষক ও ফিল্ড সুপারভাইজার এখন সরকারি হজগাইড!

** শ্রেষ্ঠ আমল হজ, বিনিময়ে জান্নাত

** নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ?

** যেসব পদ্ধতিতে হজ আদায় করা যায়

   

সৌদি পৌঁছেছেন বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩ লাখ হজযাত্রী



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সৌদি পৌঁছেছেন বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩ লাখ হজযাত্রী, ছবি: সংগৃহীত

সৌদি পৌঁছেছেন বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩ লাখ হজযাত্রী, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজফ্লাইট শুরুর পর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৩ লাখ হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। হজযাত্রীরা মক্কা এবং মদিনায় অবস্থান করছেন। এসব হজযাত্রীর মধ্যে ৩২ হাজারের বেশি বাংলাদেশি হজযাত্রী রয়েছে।

মঙ্গলবার (২১ মে) সৌদি প্রেস এজেন্সির সূত্রে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের ডিরেক্টর জেনারেল অফ পাসপোর্ট অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বিমান, স্থল এবং সমুদ্রপথে সৌদি আরব পৌঁছেছেন ২ লাখ ৯৭ হাজার ৬৫৭ জন হজযাত্রী।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির পাসপোর্ট অধিদপ্তর জানিয়েছে, হজযাত্রীদের প্রবেশের পর প্রাপ্ত তথ্য থেকে এ সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ সংখ্যা ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে।

খবরে আরও বলা হয়, হজযাত্রীদের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। প্রবেশ পথগুলোতে সম্পূর্ণ প্রশিক্ষিত ও বিভিন্ন ভাষায় দক্ষ কর্মীরা তাদের স্বাগত জানাচ্ছেন।

জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছর হজের আনুষ্ঠানিকতা ১৪ জুন শুরু হয়ে ১৯ জুন শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

হজযাত্রীদের বহনকারী ফ্লাইট ৯ মে থেকে সৌদি আরব আসা শুরু করে। তখন থেকে ২১ মে মধ্যরাত পর্যন্ত ৩২ হাজার ৭১৯ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন বলে হজ ব্যবস্থাপনা পোর্টালের সবশেষ বুলেটিনে জানানো হয়। এছাড়া এখন পর্যন্ত হজে গিয়ে দুইজন বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ৮২টি ফ্লাইটে এসব হজযাত্রী সৌদি পৌঁছেছেন।

এর আগে, গত ৯ মে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রথম ডেডিকেটেড ফ্লাইট ৪১৫ জন হজযাত্রী নিয়ে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এর মাধ্যমে চলতি বছর হজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। শেষ হবে ১০ জুন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ২০ জুন এবং শেষ হবে ২২ জুলাই।

;

হজযাত্রীদের জন্য বিশেষ ছাতা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজযাত্রীদের জন্য বিশেষ ছাতা, ছবি: সংগৃহীত

হজযাত্রীদের জন্য বিশেষ ছাতা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজযাত্রীদের জন্য বিশেষ ছাতার ব্যবস্থা করেছে সৌদি আরবের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (২১ মে) ইসলামিক ইনফরমেশনের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশেষভাবে ডিজাইন করা ছাতাগুলো হজযাত্রীদের সূর্যের আলো থেকে বিশেষ সুরক্ষা প্রদান করবে। যেহেতু ২০২৪ সালে হজের সময় প্রচণ্ড গরম থাকবে, তাই বিশেষ এই ছাতার প্রবর্তন করা হয়েছে। এতে হজযাত্রীদের জন্য হজের আমলগুলো করা সহজ হয়ে যাবে।

বিশেষ এই ছাতাগুলোর বৈশিষ্ট্য হলো, এটি পরে দীর্ঘসময় সূর্যের নিচে থাকলেও আলো থেকে তা সুরক্ষা প্রদান করবে। এ ছাড়া প্রতিটি ছাতার মধ্যে একটি পকেট রয়েছে। এতে হজযাত্রীরা নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে রাখতে পারবেন। বিশেষ করে পানির বোতল ও জায়নামাজ বহন করতে পারবেন- যা হজযাত্রীদের ইবাদত-বন্দেগির জন্য সহায়ক হবে।

ছাতাগুলোর আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলোকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যেন তা মাথায় থাকা অবস্থায়ও মুসল্লি সেজদা করতে পারে। সহজের চলাচল করতে পারবে। বাতাসে তা উড়ে যাবে না।

হজযাত্রীরা ছাতাগুলো মক্কা, মিনা ও আরাফাতের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।

উল্লেখ্য যে, আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া হজের সময় সৌদি আরবের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকতে পারে। এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন সৌদি ন্যাশনাল সেন্টার অব মেটিওরোলজির প্রধান আয়মান গোলাম।

আসন্ন হজে উচ্চ তাপমাত্রার জন্য সতর্ক করে প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আয়মান গোলাম বলেছেন যে, এ বছর হজের মৌসুম চলবে জুনের মাঝামাঝিতে। হজের মৌসুম সৌদি আরবে বছরের সবচেয়ে গরম সময়ের সঙ্গে মিলে গেছে।

বছরের এই সময়ে সাধারণত সৌদি আরবে তাপমাত্রা এবং বাতাসের আর্দ্রতা দুটোই অনেক বেশি থাকে। ফলে হজে অংশগ্রহণকারীদের সতর্ক থাকতে অবহিত করা হয়েছে।

;

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে হজ ভিসা সম্পন্ন

আবারও কেলেঙ্কারিতে লুৎফুর রহমান ফারুকীর নাম



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
মন্ত্রণালয়ের চিঠি ও মুফতি লুৎফুর রহমান ফারুকী, ছবি: সংগৃহীত

মন্ত্রণালয়ের চিঠি ও মুফতি লুৎফুর রহমান ফারুকী, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সরকারি ও বেসরকারি হজযাত্রীদের ভিসা কার্যক্রম শেষের পথে। চূড়ান্ত নিবন্ধনের পরও অনেকেই হজপালনে যাবেন না, কিংবা অসুস্থ এমন কিছু যাত্রীর ভিসা বাদে অন্যদের ভিসা হয়েছে। তবে সৌদি আরবের দেওয়া নির্ধারিত সময়েও পরও ভিসা প্রক্রিয়া চলমান রাখতে ধর্ম মন্ত্রণলায় ও হাব কর্তৃপক্ষকে প্রচুর দৌঁড়-ঝাপ করতে হয়। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হস্তক্ষেপ করতে হয়, তিনি সৌদি রাষ্ট্রদূতকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন।

ঠিক এমন সময় কয়েকটি হজ এজেন্সির নানাবিধ গাফিলতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কথা প্রকাশ পায়। প্রায় তিন হাজার হজযাত্রীর হজগমন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয় বারবার চিঠি দিয়ে এবং হাব কর্তৃপক্ষ হজ এজেন্সির মালিকদের নিয়ে বসে সমস্যা সমাধানে ব্যাপক তৎপরতা চালান।

তখনই সামনে আসে আকবর হজগ্রুপের চেয়ারম্যান মুফতি লুৎফুর রহমান ফারুকীর অনিয়ম। দুইটি হজ লাইসেন্স ভাড়া নিয়ে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে আল রিসান ট্রাভেলস এজেন্সির (০৬৭২) অধীনে ৪৪৮ জন এবং নর্থ বাংলা হজ ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরসের (১০৮৬) অধীনে ২৬০ জন হজযাত্রীর চূড়ান্ত নিবন্ধন করেছেন। কিন্তু তাদের ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করেননি। এতে করে ৭ শতাধিক হজযাত্রী, তাদের আত্মীয়-স্বজন, ধর্মমন্ত্রণায় এবং হাব নেতৃবৃন্দকে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে সময় পার করতে হয়। পরে হাব সভাপতির তৎপরতায় প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্নের পর তাদের ভিসা পাওয়া যায়।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রতি বার হজ গমনের শেষসময়ে এমন ঘটনা কেন ঘটে? আর ঘুরেফিরে একজনের নামই কেন সামনে আসে? তিনি হচ্ছেন মুফতি লুৎফুর রহমান ফারুকী। বিভিন্নজনের কাছ থেকে লাইসেন্স ভাড়া নিয়ে একেক বছর একেক লাইসেন্স নিয়ে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা একাধিক লাইসেন্স ব্যবহার করেন না।

তার কারণে ২০১৮ সালে শত শত প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রী অনিশ্চতার মুখে পড়েছিলেন। পরে পুলিশের তৎপরতার সমস্যা সমাধান করা হয়। তখন পুরানা পল্টনস্থ আল-রাজী কমপ্লেক্সে আকবর হজগ্রুপের অফিসে তল্লাশিও চালিয়েছিল পুলিশ। ওই সময়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে সৌদি আরব পালিয়েছিলেন। তবে বিদেশ পালিয়ে যাবার সময় তার স্ত্রী তামান্না রহমানকে (আবাবিল ওভারসিজের মালিক) চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে দুই হাজার হজযাত্রীর প্রায় ৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। তখন পুলিশ বলেছিলেন, আবাবিল ওভারসিজ, নিয়ার অ্যান্ড ফার, সুমাইয়া এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, আকবর ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, আফতাব ট্রাভেলস, সিরাজাম মুনিরা এয়ার ট্রাভেলস, সানরাইজ এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, সুন্দর এয়ার এক্সপ্রেস ও সুহাইল এয়ার ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে নানা অনিয়ম করছেন লুৎফুর রহমান। হজ নিয়ে নানা অনিয়মের কারণে লুৎফুর রহমান ফারুকী একাধিকবার গ্রেফতার হন, তারপরও থামেনি তার অপতৎপরতা।

হাবের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, আকবর হজগ্রুপের চেয়ারম্যান ও গাজীপুর এয়ার ট্রাভেলস(৭৮২)-এর স্বত্বাধিকারী। আকবর হজগ্রুপ বাংলাদেশ(৬১৫) নামে বেনামে প্রায় ১০টি হজ এজেন্সির মাধ্যমে হজের কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

বারবার হজ কেলেঙ্কারিতে তার নাম আসার পরও তিনি কিভাবে হাজি পান, এমন প্রশ্নের উত্তরে হাবের ওই নেতা বলেন, ‘সরকার ঘোষিত সর্বনিন্ম হজ প্যাকেজের চেয়ে কম টাকায় হজ করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে হজযাত্রী সংগ্রহ করেন তিনি। আর এ কাজে ব্যবহার করেন বিভিন্ন অঞ্চলের ইমাম-মুয়াজ্জিন ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের। তিনি কখনও হাজিদের মুখোমুখি হন না, সবকিছু করেন মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে।

হজ ট্রেড সেক্টরে কম টাকায় হজ করানোর আলোচিত ব্যক্তি মুফতি লুৎফুর রহমান ফারুকী। সারাদেশে গ্রুপ লিডারদের মাধ্যমে আল ক্বিবলা হজ ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস(০৬৭০), মৌসুমী এয়ার ট্রাভেলস(১০৫), আবাবিল ওভারসীজ (১৬), আফতাব ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল(৫৮৪), মনিরামপুর এয়ার ট্রাভেলস (১৩৭৫)-এর মাধ্যমে কম টাকায় হজযাত্রী সংগ্রহ করে থাকেন।

চলতি হজ মৌসুমে ‘নর্থ বাংলা হজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস’-এর মোনাজ্জেম হিসেবে বর্তমানে সৌদি আরব অবস্থান করছেন। তার পরও হজ ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বে অবহেলাসহ নানা কারণে ভবিষ্যতে তাকে হজ কার্যক্রমের আওতার বাইরে রাখার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগ একটি চিঠি দিয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, হজ ২০২৪ এ বাংলাদেশের ২৫৯টি এজেন্সি সৌদি আরবে হজপালনের জন্য হজ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত রয়েছে। প্রত্যেক এজেন্সির একজন নির্ধারিত ব্যক্তি মোনাজ্জেমের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। যিনি ওই এজেন্সির সব হজযাত্রীর হজের যাবতীয় দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ। মোনাজ্জেমের সব তথ্য সৌদি ই-হজ সিস্টেমে (নির্দিষ্ট নম্বর সম্বলিত) রয়েছে। কাজেই একজন মোনাজ্জেম হজের নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কাজগুলো যথাযথভাবে না করতে পারলে হজযাত্রীর হজে গমন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

‘নর্থ বাংলা হজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস’ নামে প্রতিষ্ঠানটির মোনাজ্জেম হিসেবে লুৎফর রহমান ফারুকী দায়িত্ব পালন করছেন উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, এই এজেন্সির মাধ্যমে হজ-২০২৪ মৌসুমে গাইডসহ ২৬০ জন নিবন্ধিত হজযাত্রী রয়েছে। গত ৯ মে ২০২৪ হতে হজযাত্রীর সৌদি আরবে গমন শুরু হয়। এ সময়ের মধ্যে অন্যান্য এজেন্সির হজযাত্রীদের ভিসা সম্পন্ন হলেও তার এজেন্সির কারও ভিসা হয়নি।

প্রতিষ্ঠানটির মোনাজ্জেমের নির্ধারিত মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি এবং গত ১৫ মে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) মো. মতিউল ইসলামের দফতরে উপস্থিত হয়ে হজযাত্রীর টিকিটের পে-অর্ডার না করার যথাযথ ব্যাখ্যা প্রদানে তিনি কোনো দায়িত্ব পালন করেনি বলেও চিঠিতে বলা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, ১৬ মে আইবিএএন-এর হিসাব নম্বরের তথ্য তিনি গোপন রেখেছেন। এতে করে হজযাত্রীদের সময়মত বাড়িভাড়া ও ভিসা প্রসেসিংসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে মোনাজ্জেম হিসেবে ব্যর্থ হয়েছেন। তার এই দায়িত্ব অবহেলায় হজ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করণে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে যার ফলে নর্থ বাংলা হজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের ২৬০ জন হজযাত্রীর হজ গমনে অনিশ্চয়তার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে।

এমতাবস্থায় পবিত্র হজের সময়াবদ্ধ দায়িত্ব পালনে মোনাজ্জেম হিসেবে তার দায়িত্ব অবহেলার যথাযথ ব্যাখ্যা এবং ভবিষ্যতে হজ কার্যক্রম আওতার বাইরে কেন রাখা হবে না, তা আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে এ মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগে জানানোর জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নর্থ বাংলা হজ ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরসের (১০৮৬) মালিক মো. হাবিবুল ইসলাম (অপু)। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি ২০১৯ সালে রংপুরের আবদুল্লাহ আল কাদিরের কাছে লাইসেন্সটি বিক্রি করে দিয়েছি। এর মধ্যস্থতা করেছেন রংপুরের গ্রুপ লিডার মাওলানা বদরুল আলম। যদিও হাব সূত্রে জানা গেছে, যথাযথভাবে লাইসেন্স হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।

হজযাত্রী হয়রানিসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়ে কথা বলতে সৌদি আরবে অবস্থান করা মুফতি লুৎফর রহমান ফারুকীর মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

চলতি হজ মৌসুমে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে বেসরকারি ২৫৯টি এজেন্সি হজ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাদের মাধ্যমে ৮০ হাজার ৬৯৫ জন হজযাত্রীর সৌদি আরব গমনের কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে ৯ মে শুরু হওয়া হজফ্লাইটে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ২৭ হাজার ৬৩ হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৪ সনের হজ অনুষ্ঠিত হবে ৬ জুন। এক্ষেত্রে হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি হবে ফ্লাইট ২০ জুন এবং শেষ ফিরতি ফ্লাইট হবে ২২ জুলাই।

;

হজের সময় কোরআন হেফজের জন্য ১ হাজার সেশন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মসজিদে নববিতে পবিত্র কোরআন পড়ছেন শিশু শিক্ষার্থীরা, ছবি: সংগৃহীত

মসজিদে নববিতে পবিত্র কোরআন পড়ছেন শিশু শিক্ষার্থীরা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজ মৌসুমে পবিত্র কোরআন হেফজের (মুখস্থের) জন্য বিশেষভাবে ১ হাজারটি সেশন চালুর অনুমোদনসহ আসন্ন হজের কার্য পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে।

রোববার (১৯ মে) মসজিদে হারাম ও নববির পরিচালনা বিষয়ক প্রধান শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস নতুন পরিকল্পনায় ঘোষণাকালে বলেন, সমন্বিত ব্যবস্থায় সর্বোচ্চমানের সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। ভিশন ২০৩০-এর সঙ্গে মিল রেখে অতীতের সাফল্য ও অভিজ্ঞতার আলোকে সৌদি সরকারের ২০২৪ সালের কৌশলগত লক্ষ্য বাস্তবায়নে এবারের কার্য পরিকল্পনাটি প্রস্তুত করা হয়েছে।

সৌদি প্রেস এজেন্সির খবরে বলা হয়, মক্কা ও মদিনায় হজযাত্রীদের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেনারেল প্রেসিডেন্সির আওতায় বিভিন্ন ভাষায় হজযাত্রীদের অনুবাদ সেবা দেওয়া হবে। তা ছাড়া মসজিদে থাকবে পবিত্র কোরআন পাঠ, মুখস্থ ও শিক্ষা বিষয়ক নানা প্রোগ্রাম।

এসব প্রোগ্রামের মধ্যে কোরআন পাঠ ও হেফজের বিষয়টি অন্যতম। আসন্ন হজ মৌসুমে সৌদি আরব ১ হাজারটি কোরআন হেফজের সেশন পরিচালনা করবে। যোগ্য-অভিজ্ঞ শিক্ষকরা হজযাত্রীদের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করতে এই প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেবেন। কোরআন মুখস্থের অভিজ্ঞতা হজযাত্রীদের নানাভাবে উপকৃত করবে, এটা তাদের আত্মনিবেদনে বিশাল ভূমিকা রাখবে। উদ্যোগটি বিশ্বব্যাপী কোরআনের নৈতিকতা এবং এর মধ্যপন্থী বার্তা প্রচারের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ।

শায়খ আস-সুদাইস বলেন, এই কর্মসূচির লক্ষ্য হলো- কোরআন মাজিদের শিক্ষার পরিধি বিস্তৃত করা। পরিকল্পনা মতে, মসজিদে হারাম ও নববিতে যে কেউ যেকোনো সময় যেকোনো পরিমাণ কোরআন মুখস্থ করে সেখানে অবস্থানরত শিক্ষককে শুনাতে পারবেন।

পরিকল্পনা ঘোষণাকালে মসজিদে হারামের প্রধান ইমাম আরও বলেন, ১৬ হাজার কর্মীর পাশাপাশি এবার জেনারেল প্রেসিডেন্সির আওতায় হজের মৌসুমে ১০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবে। তারা পবিত্র দুই মসজিদের ১০টি ক্ষেত্রে দুই লাখের বেশি কর্মঘণ্টা সেবায় নিয়োজিত থাকবে।

এ ছাড়া মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুই মসজিদে তিন লাখের বেশি কোরআনের কপি, দুই মসজিদের ৩০ হাজার পয়েন্টে হজের সময় প্রতিদিন অন্তত ২০ লাখ বোতলে ৪০ মিলিয়ন লিটার জমজম পানি বিতরণ করা হবে। গত কয়েক বছরের মতো এবারও সেবা দিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, অ্যাপ ও রোবট ব্যবহৃত হবে।

;