উদ্বোধনের অপেক্ষায় মধ্য এশিয়ার বৃহত্তম মসজিদ
তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশানবেতে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে মধ্য এশিয়ার বৃহত্তম মসজিদ। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে কাতারের আমিরের উপস্থিতিতে মসজিদটি উদ্বোধন হওয়া কথা ছিল। কিন্তু তার সফর স্থগিত হওয়ার কারণে চলতি বছরের মার্চ মাসের প্রথম শুক্রবার জুমার নামাজ শুরুর মাধ্যমে মসজিদ উদ্বোধনের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
পৃথিবীর ছাদ খ্যাত পামির মালভূমির দেশ তাজিকিস্তান। দক্ষিণ-পূর্ব মধ্য এশিয়ার স্থলবেষ্টিত দেশটির উত্তরে কিরগিজস্তান, উত্তর ও পশ্চিমে উজবেকিস্তান, পূর্বে গণচীন এবং দক্ষিণে আফগানিস্তান।
দেশের সর্ববৃহৎ শহরের নাম দুশানবে, এটি তাজিকিস্তানের রাজধানী। ১ লাখ ৪৩ হাজার ১শ’ বর্গকিলোমিটার আয়তনের তাজিকিস্তান ১৯২৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গ হয়ে যায়। তবে ১৯৯১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ফের স্বাধীনতা লাভ করে।
তাজিকিস্তানের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসা প্রজাতন্ত্রগুলোর মধ্যে এটিই একমাত্র দেশ, যেখানে ইসলাম ২০০৯ সালে রাষ্ট্রীয় ধর্মের মর্যাদা লাভ করে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের হিসেব মতে, দেশটির জনসংখ্যার ৯৮ শতাংশ মুসলমান যাদের ৯৫ শতাংশ সুন্নি এবং ৩ শতাংশ শিয়া। এছাড়া রয়েছে কিছু সুফিবাদী। সুন্নিদের অধিকাংশই হানাফি মাজহাবের অনুসারী।
তাজিকিস্তানে ইসলামের প্রচার-প্রসার ঘটেছে সপ্তম শতাব্দীতে আরবদের মাধ্যমে। সে সময় থেকেই ইসলাম তাজিক সংস্কৃতির অংশে পরিণত হয়। তবে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর সেখানে ধর্মচর্চার ব্যাপক প্রসার লাভ করে। জনগণকে বেশি বেশি ধর্ম পালনে মনোযোগী দেখা যায়। এমনকি পবিত্র রমজান মাসে রোজা পালনকারীর সংখ্যা ৯৯ শতাংশে গিয়ে পৌঁছে।
তাজিকিস্তানের জনগণ ধর্মভীরু এবং তারা নিজেদের মতো ধর্মচর্চা করার সুযোগ পান। তবে ২০০৫ সালে দেশটির সেক্যুলার স্কুলগুলোয় মেয়েদের হিজাব পরিধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু দেশটির মহিলারা নিজেদের ঐতিহ্য হিসেবে হিজাব পরে থাকেন।
রাজধানী দুশানবেতে শতাধিক মসজিদ রয়েছে। দেশটির গ্র্যান্ড মসজিদের নাম ইমাম আবু হানিফা মসজিদ। এখন পর্যন্ত তাজিকিস্তানে এটাই সবচেয়ে বড় মসজিদ ছিলো। তবে নতুন মসজিদ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ইমাম আবু হানিফা মসজিদ বড় মসজিদের শ্রেষ্ঠত্ব হারাতে যাচ্ছে।
২০০৯ সালের অক্টোবরে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মসজিদের নকশা করেছেন তাজিকিস্তান এবং কাতারের পেশাদার ডিজাইনাররা। নকশায় পুরোনো মুসলিম ঐতিহ্যের ছাপ রয়েছে।
নবনির্মিত মসজিদে বড় চারটি মিনার, একটি বড় প্রধান গম্বুজ এবং ২০টি ছোট গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের একসঙ্গে লক্ষাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন।
মসজিদটি দুশানবের উত্তরের উপকূলে অবস্থিত। মসজিদ কমপ্লেক্সে একটি গ্রন্থাগার, একটি সংগ্রহশালা ও বড় সভাকক্ষ রয়েছে। পুরো প্রকল্প শেষ করতে খরচ হবে ১শ’ মিলিয়ন ডলার।