মুজিব বর্ষে জাতীয় মসজিদের স্বীকৃতি পাচ্ছে বায়তুল মোকাররম
বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ হিসেবে পরিচিত বায়তুল মোকাররম। ১৯৬০ সালে এই মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৯৬২ সালে কাজ মোটামুটি শেষ হয়। সিন্ধুর স্থপতি এ এইচ থারানি এই মসজিদের নকশা প্রণয়ন করেন। বিশিষ্ট শিল্পপতি লতিফ বাওয়ানি ও তার ভাতিজা ইয়াহিয়া বাওয়ানি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন।
১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ থেকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এই মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। বায়তুল মোকাররম মসজিদটি আটতলা ভবন। নিচতলায় বিপণিবিতান ও গুদামঘর। দোতলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত প্রতি তলায় নামাজ পড়া হয়। তিনতলার উত্তর পাশে নারীদের নামাজের ব্যবস্থা আছে। এই মসজিদে একসঙ্গে ৪০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। বায়তুল মোকাররম মসজিদ ঢাকার গর্ব এবং পৃথিবীর সুন্দর মসজিদগুলোর একটি।
দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম, এমনকি স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার পাঠ্যপুস্তকে উল্লেখ আছে, বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম। কিন্তু বাস্তবতা হলো, কাগজে-কলমে এর কোনো ভিত্তি নেই; আনুষ্ঠানিক কোনো স্বীকৃতি নেই। এমতাবস্থায় মুজিব বর্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় মসজিদের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে বায়তুল মোকাররম।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আবদুল্লাহ বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, ‘বায়তুল মোকাররম- জাতীয় মসজিদ এটা সবাই জানে। কিন্তু এর কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। সেটা কেউ এতদিন খেয়াল করেনি। আমরা মুজিব বর্ষে এর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছি।’
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে বায়তুল মোকাররম মসজিদ। দেশের প্রধান ও বড় মসজিদ হিসেবে এটি দেশবাসীর কাছে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে এটি ‘জাতীয় মসজিদ’ হিসেবে পরিচিত। অথচ আনুষ্ঠানিকভাবে এ দৃষ্টিনন্দন ও গুরুত্বপূর্ণ মসজিদটিকে জাতীয় মসজিদ হিসেবে ঘোষণা বা স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।
এমতাবস্থায় বায়তুল মোকাররম মসজিদের সঙ্গে ‘জাতীয়’ শব্দ যুক্ত করা হলে এটির ভাবগাম্ভীর্য বাড়বে। একে কেন্দ্র করে দেশের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। এর জন্য অতিরিক্ত কোনো অর্থের প্রয়োজন নেই। তাছাড়া মুজিব বর্ষে জাতীয় মসজিদ হিসেবে বায়তুল মোকাররমকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিলে দেশ-বিদেশে এবং ধর্মীয় ক্ষেত্রে সরকারের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল হবে।
আশা করা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় মসজিদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিলবে।
এদিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বছরজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ইফার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।
কর্মসূচির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- দেশের ৭৮ হাজার স্থানে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে ১৭ মার্চ বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৬৪টি বিভাগীয় জেলা কার্যালয়, ৫০৮টি উপজেলা জোন, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের ৭৩ হাজার ৭৬৮টি কেন্দ্র, ৫৫০টি মডেল রিসোর্স সেন্টার, ১৫০০টি সাধারণ রিসোর্স সেন্টার, ৫৫৫টি মডেল লাইব্রেরী, ১০১০টি দারুল আরকাম মাদরাসা, ৫০টি ইসলামিক মিশন কেন্দ্র, ৪৬৫টি মক্তব ও ৭টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমীসহ মোট ৭৮ হাজার ৪৭৮টি স্থানে বিশেষ দোয়া হবে।
১৭ মার্চ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ১০০ জন কোরআনে হাফেজের মাধ্যমে ১০০ বার কোরআন খতম করা হবে। এছাড়া চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ ও জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ এবং রাজশাহীর হেতেম খাঁ মসজিদে কোরআন খতম ও বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। মুসলিম উম্মাহর ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও সকল ধর্মের অধিকার সুরক্ষায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান শিরোনামে ৮টি বিভাগীয়সহ মোট ৯টি আন্তর্জাতিক সেমিনার দেশি-বিদেশি খ্যাতিমান ইসলামি স্কলারদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে।