ফিজির মুসলিম জাগরণ চোখে পড়ার মতো

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ফিজিতে মুসলিমদের মধ্যে ধর্মীয় অনুরাগ বাড়ছে, ছবি: সংগৃহীত

ফিজিতে মুসলিমদের মধ্যে ধর্মীয় অনুরাগ বাড়ছে, ছবি: সংগৃহীত

দুই হাজার চৌদ্দ সালের এক জরিপে এসেছিল, পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশের নাম ফিজি। দেশটি যে আক্ষরিত অর্থেই সুখী, তার প্রমাণ আবারও মিললো। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্র ফিজি এখন করোনাভাইরাসমুক্ত। করোনা মহামারির যুগে এর চেয়ে সুখের কথা আর কী হতে পারে?

শুক্রবার (৫ জুন) এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক বাইনিমারামার মতে, প্রার্থনা, পরিশ্রম ও বিজ্ঞান দিয়ে করোনা জয় করেছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

ফিজির সবশেষ কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পাওয়ার পর দেশটি নিজেকে করোনামুক্ত ঘোষণা করে। এতে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফিজিকে একটি সফল দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

মার্চের মাঝামাঝি ফিজিতে প্রথম করোনা সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর দেশটির কর্তৃপক্ষ করোনার বিস্তার ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

বিজ্ঞাপন

আইসোলেশনের ক্ষেত্রে ফিজির নেওয়া পদক্ষেপ ছিল বেশ কড়া। তা ছাড়া তারা সীমান্ত নিয়ন্ত্রণেও ছিল বেশ কঠোর। এসব কারণে ফিজিতে করোনা খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেনি। দেশটিতে সর্বোচ্চ ১৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। গত ৪৫ দিন ধরে দেশে কোনো নতুন রোগী শনাক্ত হয়নি। ফিজিতে কেউ মারা যায়নি, আক্রান্ত রোগীদের সেরে ওঠার হার ১০০ শতাংশ।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক বাইনিমারামা শুক্রবার টুইট করে ঘোষণা দেন, ফিজির সবশেষ কোভিড-১৯ রোগীকে সুস্থতার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফিজির সাফল্যের রহস্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক বাইনিমারামা স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা, কঠোর পরিশ্রম ও বিজ্ঞানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ফিজির একটি মসজিদ, ছবি: সংগৃহীত

প্রার্থনা, পরিশ্রম ও বিজ্ঞান দিয়ে করোনা জয় করার কথার প্রেক্ষিতে দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, করোনা বিস্তারে মুসলিমদের কাছ থেকে দেশের নাগরিকরা নিয়মানুবর্তিতার বিষয়টি আয়ত্ত করেছেন। আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে মুসলমানদের দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে অজুর বিষয়টি যেমন স্বভাবজাত, তারা এটাকে নিজের দৈনন্দিন জীবনের অভ্যাসে পরিণত করেছেন, অন্যরা এখান থেকে শিক্ষা নিয়েছেন।

ফিজির রাজধানী সুভা সিটি। দ্বীপ রাষ্ট্রটির মোট আয়তন ১৮ হাজার ৩০০ কিলোমিটার। ফিজি দ্বীপপুঞ্জে ৮৩০টি দ্বীপ রয়েছে। ফিজির সমাজ মিশ্র ধর্মীয়। জনসংখ্যা ৯ লাখ ১৫ হাজারের মতো। মোট জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশ খ্রিস্টান, ২৭ শতাংশ হিন্দু ও ৬.৩ শতাংশ মুসলিম। সে হিসেবে মুসলিমদের মোট সংখ্যা ৬৫ হাজারের মতো। এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এখানকার বেশিরভাগ মুসলিম ভারতীয় বংশোদ্ভূত। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে তারা ফিজিতে শ্রমিক হিসেবে আগমন করেন।

ফিজিকে বলা হয়, সূর্যোদয়ের দেশ। এই দেশেই প্রথম আজান উচ্চারিত হয়। ইন্দোনেশিয়ার সময় থেকে প্রায় ৪ ঘন্টা আগে এখানে ফজেরর আজান হয়, আর জাপানের সময় থেকে ২ ঘন্টা আগে। এখানেই প্রতিদিন সবার আগে সূর্য ওঠে।

১৯ শতাব্দীর শুরুতে ইউরোপীয় অধিবাসীরা ফিজি এসেছিল। তার আগে ১৬৪৩ সালে একজন ডাচ আবেল তাসমান ফিজি আসেন। ১৮৭৪ সালে ফিজি ব্রিটেনের উপনিবেশে পরিণত হয়। ১৯৭০ সালের ১০ অক্টোবর ফিজি স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৯৮ সালের ২৭ জুন দেশটির নতুন সংবিধান কার্যকর হয়। একই সঙ্গে দেশের নাম ফিজি দ্বীপপুঞ্জ প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়।

ফিজির এক মুসলিম নামাজ আদায় করছেন, ছবি: সংগৃহীত

সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজরা যখন এই অঞ্চলে তাদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে, তখন ভারতীয় চাষীদের এখানে নিয়ে আসা হয়। তাদের একটা অংশ মুসলমান ছিল। তাদের মাধ্যমে এ অঞ্চলে ইসলামের প্রচার ঘটে। সর্বপ্রথম যারা এখানে এসেছিলেন, তারা নামাজ-রোজা প্রভৃতি ধর্মীয় মৌলিক বিষয় মেনে চলতেন। তারা ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর প্রতি যত্নবান ছিলেন। তারাই এখানে প্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন। শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্যে মক্তব প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৭ সালে সর্বপ্রথম জাম্বিয়া থেকে তাবলিগ জামাতের আগমন ঘটে ফিজিতে।

বর্তমানে ফিজিতে মুসলিমদের মধ্যে ধর্মীয় অনুরাগ বাড়ছে। দেশটির মুসলিম যুবকরা দিন দিন ধর্ম পালনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ইসলামবিরোধী নানা প্রচারণা থাকার পরও ফিজির সাধারণ মানুষ ইসলামের প্রতি ঝুঁকছে। বাড়ছে মসজিদমুখী মুসল্লির সংখ্যা। ফিজির রাজনীতি ও অর্থনীতিতে মুসলিমদের জাগরণ চোখে পড়ার মতো। সেখানকার জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় তাদের।

২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ফিজির মুসলমানরা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লৌটোকাতে সর্ববৃহৎ মসজিদ নির্মাণ করেছেন। দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন মসজিদটি নির্মাণে খরচ পড়েছে দেড় মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় এক কোটি বিশ লাখ টাকা)। ২৫টি মসজিদ রয়েছে ফিজিতে। রয়েছে ১৩টি প্রাথমিক ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্র ও বেশ কিছু মাদরাসা।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিবসে ফিজিতে সরকারি ছুটি রয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য ধর্মের বিশেষ দিনগুলোতেও ছুটির নিয়ম রয়েছে। ফিজির মুসলমানরা সবাই সুন্নি। তারা হানফি মাজহাব অনুসরণ করেন। ফিজিতে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ বেশ সক্রিয়। টঙ্গির ইজতেমায়ও ফিজির তাবলিগিরা যোগ দেন। ভারতবর্ষে শিক্ষা নেওয়া অনেক আলেম সে দেশে রয়েছেন। তাদের দাওয়াতের কারণে ফিজির জনগণের কাছে দিন দিন ইসলামের সৌন্দর্য ফুটে ওঠছে। 

-ফিজি সান অবলম্বনে